অনেক দিন পর বন্ধুর সাথে দেখা
নমস্কার বন্ধুরা ।আশা করছি সকলের সুস্থ আছেন। আজকে আমি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করতে চলেছি বেশ কিছুদিন আগের কিছু মুহূর্ত ।যে দিনটা আমার কাছে একটু অন্যরকম ছিল ।
আসলে যখন আমি কলকাতা ছিলাম, তখন খুব কম সংখ্যক মানুষের সাথে আমার ঠিকঠাকভাবে বন্ধুত্ব হয়েছিল। এবং যখন কলকাতা থেকে ফিরেছি সেই সংখ্যাটা কমে গিয়েছিল অনেকটাই। তবে যে সংখ্যা তে এসে থেমেছিল অর্থাৎ যাদের সাথে বন্ধুত্বটা টিকিয়ে রেখেই বাড়ি ফিরেছি, তাদের সাথে এখনও আমার খুবই ভালো বন্ধুত্ব রয়েছে। তারা আমার বাড়ির মানুষের মতন হয়ে গিয়েছিল ওই সময়। আর দেখতে গেলে এখনো তাদেরকে আমার নিজের বাড়ির মানুষের মতনই মনে হয়।।
মেসের কথা তো আলাদাই , মেসের সকলের সাথে বন্ধুত্ব থাকলেও শেষ দিকে দুইজনকে আমার এত কাছের মনে হতো, এখনো তাদের সাথে ঠিক সেরকমই যোগাযোগ রয়েছে। ফোনে কথাবার্তাও ঠিক সেরকম ভাবেই হয়। মনে হয় না ,আমরা দূরে আছি। এখনো ফোন করলে আমার মনে এবং তাদের মনেও একটা আলাদাই আনন্দ আর খুশির অনুভূতি জেগে ওঠে। এ কারণে মেসের জীবনটা সত্যিই অনেক মিস করি।
ইউনিভার্সিটিতে পড়তে পুরো কলেজের মধ্যে আমার সবথেকে কাছের বন্ধু ছিল মানস । কলেজের প্রথম দিন থেকেই ওর সাথে একটা আলাদাই সম্পর্ক। ছেলেটা এতই ঠাকুর ভক্ত এবং ভীষণই কালচারাল। এটা দেখে আমার খুবই ভালো লেগেছিল ।এর সাথে অবশ্যই ওর মনটা অনেকটাই ভালো।
কলেজের মধ্যে নানান রকম বন্ধু-বান্ধব থাকলেও ওর সাথে যে বন্ডিংটা ছিল ,সেটা এখনো পর্যন্ত আমাদের বন্ধুত্বটা টিকিয়ে রেখেছে। আমার পড়াশোনার সঙ্গী হিসাবে প্রচন্ড পরিমাণে হেল্প করেছে মানস। এর ওপর প্রত্যেকটা পরীক্ষায় ও আমার পেছনের বেঞ্চে বসত।। আর আমরা দুজন মিলে পরীক্ষার কোশ্চেন সলভ করতাম। ইউনিভার্সিটিতে পড়তে কিছু কিছু সেমিস্টারে এমনও হয়েছে, এত অস্বাভাবিকভাবে কঠিন কোশ্চেন এসেছে। কিন্তু আমরা দুই বন্ধু একসাথে ছিলাম বলে একে অপরকে খুব ভালোভাবে সাহায্য করতে পেরেছিলাম ।
অসময়ে যে সাথে থাকে সে হচ্ছে প্রকৃত বন্ধু। আর এই জিনিসটা আমি ভীষণ বিশ্বাস করি। এত দিনের পরেও যারা আমার সাথে এখনো যোগাযোগ রেখেছে, তাদেরকে তো আমার প্রকৃত বন্ধু বলতেই হয়।।
ইউনিভার্সিটিতে পরীক্ষার দিন তোলা একটি ছবি
এতগুলো কথা বলছি এর পেছনে একটাই কারণ, মে মাসের ১৬ তারিখে প্রায় দুই বছর এর বেশি সময় পর আমার বন্ধু আমার বাড়িতে এসেছিল। আসলে আমরা নেট সেটের জন্য পড়াশোনা করছি। তো ওর কিছু নোটস নেওয়ার ছিল ,যেটা আমার কাছেই ছিল। বাইরে থেকে বা কোন ইনস্টিটিউট থেকে কিনলে নোটগুলোর দাম প্রচন্ড বেশি। এ কারণে ও আমার কাছ থেকে নোটস গুলো নিতে এসেছিল। এবং বলেছিল জেরক্স করে আবার ফেরত দিয়ে যাবে।
ওর বাড়ি ক্যানিংয়ে। আর এখন ও বর্তমানে বি এড করছে রামকৃষ্ণ মিশন থেকে। এর সাথে ও সাংঘাতিক ভালো একটা ওডিসি ডান্সার। কোনদিন সুযোগ হলে ওর নাচ আপনাদের সামনে আমি তুলে ধরবো।।
বন্ধু সকাল সকাল ফোন করে যখন জানালো, ও আমাদের বাড়ির দিকে আসছে আমি সত্যিই অনেক খুশি হয়েছিলাম। একটা সময়ে যারা আমার প্রচন্ড পরিমাণে পাশে থেকেছে, ওই অজানা শহরে নিজের বাড়ির মতন মনে হয়েছে যাদেরকে, তারা যখন বাড়িতে আসে, সত্যিই ভালো লাগে।
আমি যেমন এখনো খুব মিস করি মহিমা আর হাবিবা কে। আমি জানি ওরা হয়তো এর মধ্যে আর এদিকে আসতে পারবে না।। কারণ সকলের বাড়ি অনেক দূরে। কাজের সূত্র ছাড়া আমার বাড়ির দিকে আসা ওদের পক্ষে সম্ভব নয়।। তবে আমি সবকটাকে বলে রেখেছি, যদি আমার বিয়েতে না আসে, তাহলে সকলের কপালে কষ্ট আছে।।
মানসের আস্তে আস্তে দুপুর হয়ে গিয়েছিল। তারপরে ও খাওয়া দাওয়া করল। ও আসছে বলে বাড়িতে যেটুকুনি আয়োজন হয়েছিল ,তাতেই ও সন্তুষ্ট হয়েছে। তারপরে অতটা জার্নি করে আসার জন্য খানিকক্ষণ রেস্ট করে নিয়েছিল ।এরপর ওর সাথে অনেকক্ষণ গল্প হয় ।যখন ও ঘুম থেকে ওঠে। আমি বাবা-মা সকলে বসে ওর নাচের কিছুটা ঝলক দেখি। আমাদের ওপরের ঘরে বেশ ফাঁকা জায়গা পেয়ে ,ও সুন্দরভাবে নাচ পরিবেশন করলো।
তারপর আবার বন্ধুকে গুডবাই জানাতে হলো। সময়গুলো কিভাবে চলে যায়। কোথাকার মানুষ কোথায় এসে দাঁড়ায়। ভগবানের এই লীলা খেলা সত্যিই অবাক করে।
বন্ধুকে অনেকদিন পরে দেখে আমি অনেক খুশি হয়েছিলাম। সেই মুহূর্তগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পেরে বেশ ভালো লাগলো।