প্রাধান্য
নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন।আজকে আমি আপনাদের সকলের সাথে আমাদের বাড়ি ফিনিশ হওয়ার আগে যখন ইলেকট্রিকের কাজ হচ্ছিল ,তখনকার সময়ের কথা শেয়ার করছি।
বাড়ি ফিনিশ হওয়ার আগে যখন লাইট ফ্যানের বিষয়ে আসছে ,তখন আমার বাবা আমার মতামত ছাড়া এক পাও এগোয় নি। এর আগে অনেক ধরনের কেনাকাটার ব্যাপারে আমি আমার বাবার এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য আপনাদের সামনে তুলে ধরেছিলাম।
আসলেই এই পৃথিবীতে বুকে আমার মতামতকে কি পরিমান প্রাধান্য দেয় আমার বাবা, আমি আপনাদের বলে বোঝাতে পারবো না ।বাবার এই বিষয়টা আমি হয়তো অন্য কারো কাছ থেকে জীবনে আর পাবো না। তবে এই নিয়ে আমার ভীষণ গর্ব বোধ হয়। আমার মতামত এর যে একটা মূল্য রয়েছে, তা অনেক আগে থেকেই আমাকে বাবা বুঝিয়ে দিয়েছে ।এখনো পর্যন্ত আমি সেটা বুঝতে পারি।
তবে এই ছোট ছোট ব্যাপার গুলো অনেক ম্যাটার করে। অন্তত আমার কাছে অনেকটাই ম্যাটার করে।। বাড়ির যাবতীয় সমস্ত কিছু থেকে শুরু করে ,বাবা নিজস্ব অফিসিয়াল কাজ ,ব্যবসার কাজ,এমনকি মনের ভেতরে জমে থাকা ব্যথা, যন্ত্রণা, দুঃখ ,ভালবাসা, আনন্দ সবকিছুই বাবা আমাকে খুব ভালোভাবে শেয়ার করে এবং কোনরকম মতামত যদি জানার থাকে ,সেটাও আমার কাছ থেকে শোনে।কোনদিনও আমি ছোট বলে আমাকে অবহেলা করেনি। বরঞ্চ শুনেছে। এরকম ভবিষ্যতে আর কে করবে, তা আমি সত্যিই জানিনা।
যাই হোক বাড়ির লাইট ফ্যান নিয়ে যখন কথা আসলো ।তখন আমি অনেক ভেবে চিন্তে বাবাকে বলেছিলাম ফ্যান কিনলে পলিক্যাবের কিনতে। এছাড়াও অনেক অনেক দামি কোম্পানির ফ্যান রয়েছে। যেমন ভি গার্ড ।কিন্তু আমার মতে পলিক্যাবটা বেশ ভালো লেগেছে ।
আমি সব গুলো ফ্যান-ই চাইছিলাম সাদা রঙের হোক ।বিশেষ করে ঘরের ফ্যানটা। বারান্দার ফ্যানগুলো কালো কিংবা চকলেট কালারের হলেও কোন অসুবিধা নেই। যেহেতু ঘরের কালার গুলো এতটা হালকা হয়েছে, তাই সাদা ঠিকঠাক লাগবে।
আবার অতিরিক্ত লাইট দেওয়া ফ্যান এখন যেমন বেরিয়েছে ,সেগুলো আমি চাইছিলাম না ।তবে এখনকার বেশিরভাগ ফ্যানই রিমোট এ কন্ট্রোল হয় অর্থাৎ bldc ফ্যান। তবে আমার কাছে নরমাল ফ্যান হাজারগুন ভালো। এখন একটু আধুনিকতার ছোঁয়া এসেছে বলে ,আমাদের উপরের ফ্লোর এর জন্য আমি এই bldc চুস করলাম। এটাতে শুনেছি কারেন্ট কম খরচ হয়। এ কারণেও আরো প্রাধান্য দিলাম।
যা সুইচ কেনা হলো সেগুলো ভিয়ান কোম্পানির সুইচ কেনা হয়েছে। সুইচ নিয়েও আমাদের অনেক রকম মতামত ছিল ।পরবর্তীতে বাবা আমাকে নিয়ে দোকানে চলে যায় এবং আমার মতামত অনুযায়ী সুইচ গুলো কেনে। এর আগেও বাবা দুইবার এটা ওটা দোকান ঘুরে এসেছে। কিন্তু নিজে থেকে কোন রকম ভাবে ডিসিসন নেয়নি। আমাকে নিয়েই তারপর ডিসিশন নিয়েছে।
এমনকি ফলস সিলিং এর যে লাইটগুলো রয়েছে। সেই লাইটগুলো কেমন ধরনের কালারের হবে, সেটা পর্যন্ত বাবা আমার কাছ থেকে শুনেছে। আমি প্রথম থেকেই চেয়েছিলাম লাইটে যেন দুই রকম কিংবা তিন রকম কালার হয় ।তবে লাল নীল সবুজ না। একটা সাদা, একটা হলুদ ,আর একটা ওয়ার্ম ।
সেইমতো আমরা কৃষ্ণনগরের দশ বারোটার বেশি দোকান ঘুরেছি, কিন্তু ৩ ওয়াটের এরকম লাইট আমরা কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম না ।কিন্তু অবশেষে একটা দোকান থেকে উদ্ধার হয়েছে।
আমরা মেয়েরা যেমন সাজগোজ দেখলে দাঁড়িয়ে যাই, কিংবা পুতুলের দোকান দেখলে দাঁড়িয়ে যাই। ঈশানের ক্ষেত্রে বরাবরই গাড়ি ,ইলেকট্রনিক্সের জিনিসপত্র বেশি পছন্দের। রাস্তাঘাটে এসব দেখলে ও দাঁড়িয়ে যায়।
ও স্কুল যাওয়ার পথে একটি দোকান প্রত্যেকদিন ফলো করতো ,যখন কোন দোকানে আমরা ওরকম লাইট পাচ্ছিনা ,অবশেষে হঠাৎ করে বলল আমার সাথে চলো, আমি একটা দোকান চিনি।
ওইটুকুনি ছেলে, ও নাকি দোকান চেনে। এটা একেবারেই অবাক ব্যাপার। কিন্তু ওই যে বললাম, আমার বাবা আমাদের সকলের কথার গুরুত্ব দেয়। ঈশান ছোট বলে যে ঈশানের কথা তুচ্ছ করে উড়িয়ে দিল, সেটা বাবা কখনোই করেনা ।আমার ক্ষেত্রেও করেনি ।
তাই ঈশান যখন বলল, বাবা ওকে নিয়ে সময় মতো ওই দোকানে গিয়ে হাজির হয়েছিল। আর ঠিক ঈশানের কথামতো ওই দোকানে কিন্তু এই সব লাইটগুলো পাওয়া গিয়েছিল। ফলস সিলিং এ যে ছোট ছোট লাইট রয়েছে ,সেই লাইটগুলোর কথাই কিন্তু আমি বলছি।
যাইহোক আজকে এখানেই লেখাটা শেষ করছি। বাড়িতে যখন আলো জ্বলে ওঠে, তখন যেন আলাদাই শোভা পায়। সমস্ত লাইটের কাজ হয়ে যাওয়ার পর ,বাড়িটা ওরকমই দেখতে লাগছিল ।
আজকের লেখার পিছনে দু'রকম গুরুত্ব রয়েছে ।প্রথমত কি কি কোম্পানির জিনিস আমরা ব্যবহার করেছি সেটা যেমন লিখেছি, তার সাথে আমি এখানে আমার বাবার একটা দূর্দান্ত চারিত্রিকের দিকের কথা তুলে ধরেছি। সত্যিই এরকম বাবা পেয়ে আমরা ধন্য।
Your post has been supported by SC-05. We support quality posts, quality comments anywhere, and any tags