দোতলার বেসিন এরিয়া
নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি সকলে সুস্থ আছেন। গতকাল আমি আপনাদের সকলের সাথে আমাদের বাড়ির ফিনিশের পথে এ নিয়ে একটা পোস্ট করেছিলাম। পোস্টে রংয়ের কাজ নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করেছিলাম। এর সাথে ছিল আমার নিজস্ব কিছু অনুভূতি।
আজকে আমাদের বাড়ির দোতলার বেসিনের সেকশনটা নিয়ে আলোচনা করছি।
পরপর বাড়ির সমস্ত কাজ যখন হচ্ছে আমাদের মাথা তে ছিল যে আমরা পুজো দিয়ে একেবারে দোতলায় উঠে যাব, আবার নিচের তলা ফাঁকা হয়ে যাবে এবং নিজের তলায় মিস্ত্রি কাজে লাগবে। তাই যত তাড়াতাড়ি পারা যায়, দোতলার সমস্ত কাজ কমপ্লিট করা ভালো। পুজো না দেওয়া অব্দি দোতলায় রাত্রি বাস করা যাবে না এটাই আমার মায়ের ডিসিশন। তাই ঠিক হয়েছিল বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন পুজো দেয়া হবে। সেদিন আমাদের বাড়িতে এমনিতেও পুজো থাকে, সেই পুজোটাই দোতলাই করা হবে ।
যাইহোক পুজোর আগে মোটামুটি বাড়ির সমস্ত কাজ শেষ করে নিতে হবে। বেসিনের জায়গাটা আমার বাবা মাথা থেকে প্রায় আউট করে দিয়েছিল। আসলে একটা মানুষের মাথায় এত কিছু ধরে রাখা সম্ভব নয়। তবে এই জায়গাটাও যে পুজোর আগে প্রয়োজন সেটা বাবার মাথাতে ছিল না। আমি একদিন বাবাকে কথায় কথায় বললাম যে বেসিনের জায়গাটাও ঠিকঠাক করে নাও
কিন্তু ততদিনে কাঠের সমস্ত কাজ শেষ, কলের মিস্ত্রি কাজ করে চলে গেছে, পাথরের কাজও কমপ্লিট। তার মানে আবার যদি বেসিনের কাজে হাত দেওয়া হয়। তাহলে মিস্ত্রি গুলোকে আবার ডাকতে হবে। বাবা প্রথমে বলল মিস্ত্রি ডাকার আগে চল একবার ঘুরে আসে যদি রেডিমেড কিছু পাওয়া যায়।
তাই একদিন বিকেল বেলায় আমি এর বাবা আমাদের গাড়ি নিয়ে চলে গিয়েছিলাম আমাদের বাড়ি থেকে মোটামুটি ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত দেবনাথ মার্বেলস এ । এই জায়গা থেকে আমাদের বাড়ির সমস্ত টাইলস ,গ্রানাইট এবং পাথর কেনা। গিয়ে কোনমতেই বেসিনের রেডিমেড কোন কিছু আমার পছন্দ হচ্ছিল না আমি যেমনটা চাইছিলাম ,সেরকম আমি পাচ্ছিলাম না। আবার ওখান থেকে বেরিয়ে আমাদের শহরের মধ্যেই একটা জ্যাকোয়ার এর শোরুমে ঢুকলাম।
সেখানে ঢোকার পর অনেকগুলো বেসিনের টেবিল টপ পছন্দ হচ্ছিল। অর্থাৎ যে মেশিন গুলো টেবিলের ওপর বসানো থাকে। রেডিমেড বেসিনগুলো প্রচন্ড পরিমাণে দাম চাইছিল। কিন্তু সেই তুলনায় জিনিস কিন্তু আমার পছন্দ হচ্ছিল না। কোনটা ২৭ হাজার, কোনটা আবার ৩১ হাজার। আমি তখনই বুঝতে পারছিলাম এর থেকে যদি আমি বুদ্ধি করে ৩-৪ জন মিস্ত্রি দিয়ে নিজের মন মত বানিয়ে নিই তাহলে অনেক কম খরচে মজবুত জিনিস তৈরি হবে।
তাই সেদিনকে শুধুমাত্র ওই দোকান থেকে টেবিল টপ টা কেনা হলো। জাকুয়ার কোম্পানির টেবিল টপ অর্থাৎ বেসিন এর দাম পরল ৪৫০০ টাকা। এর সাথে ওয়েস্টেজ ছিল। সব মিলিয়ে 4800 টাকা বিল হল। ভারতীয় দামে মোটামুটি ৩৭০ steem।
এরপরে বাড়ি এনে কাঠের মিস্ত্রিকে ফোন করলাম। কাঠের যে মিস্ত্রি আমাদের বাড়িতে সমস্ত কাজ করেছে, তিনি শুনে ই বলতে লাগলেন যে, তোমরা যখন বাকি কাজগুলো করাচ্ছিলে তখন একবার এটা করে নিলে না কেন। হাতে সময় কম ছিল। ওদের দুদিনের মধ্যে কাজ কমপ্লিট করে দিতে বলা হলো।। ওরা পরের দিন থেকে আমার বাড়িতে কাজ করা শুরু করল। পিভিসি বোর্ড কেনা হলো পছন্দ মতো রংয়ের। এর সাথে কেনা হলো মোটা দামি প্লাই উড। এই সেকশানে কেমন খরচা পড়েছে, আমি ঠিক বলতে পারবো না। সানমাইকার বসালে জিনিসটা তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাবে কারণ এটা জলের জায়গা। তাই আমরা পিভিসি বোর্ড দিয়ে কাজ করেছি।
একদিকে কাঠের মিস্ত্রি বেসিনের সেলফ গুলো করতে থাকলো। অন্যদিকে আমরা আবার দেবনাথ মার্বেল থেকে একটা গ্রানাইট কিনে আনলাম। মোটামুটি ৩২ ইঞ্চি চওড়া গ্রানাইট কেটে আনা হলো। এটার দাম ২০০০ টাকা পড়েছে। বেসিনের টপের নিচে যে গ্রানাইটটা আপনারা দেখতে পাচ্ছেন । অর্থাৎ ভারতীয় দামে ১৫৩ steem।
কাঠের কাজে সময় বেশি লাগলো। ওরা তাই আড়াই দিন মত কাজ করলো। প্রথমে প্লেই কেটে কেটে বক্স রেডি করল। তারপর এর ভেতরে সেলফ গুলো। সব কাজ এই সাথে সাথে ওরা পিভিসি বোর্ড গুলোকে প্লায়ের সাথে আটকে দিচ্ছিল।
এইভাবে কাজ শেষ হয়ে যাওয়ার পর বক্সটাকে দেওয়ালের সাথে সেট করে তার ওপরে গ্রানাইট বসানো হলো। তার ওপর রাখা হলো টেবিল টপ। টেবিল টপের ওয়েস্টেজ অনুযায়ী গ্রানাইট এ ছিদ্র করা হলো পাথরের মিস্ত্রিকে দিয়ে। তারপর আবার কলের কাজ হল।
জিনিসটাকে যত সিম্পল আর সুন্দর দেখতে লাগছে। জিনিসটা তৈরি করতে কিন্তু প্রচুর কাজ করতে হয়েছে। অনেক ধরনের মিস্ত্রি একটা জিনিসের উপর কাজ করেছে। বাবা প্রথম থেকেই চাইছিল বেসিনের নিচের দিকটা যেন ফাঁকা থাকে, সবাই যেন আমরা পরিষ্কার করতে পারি অন্তত। এ কারণে যায় বেসিনের বক্সের নিচের তলাটা পুরো ফাঁকা রাখা হয়েছে।
সব মিলিয়ে দেখতে গেলে আড়াই দিনের মাথায় ওরা খুব সুন্দর ভাবে সমস্ত কাজ শেষ করে দিয়েছে।। মোটামুটি এই টোটাল কাজটা করতে খরচ পড়েছে ১৫,০০০ টাকা। ভারতীয় দামে ১১২৭ স্টিম । আজকের মত এখানেই শেষ করছি। আপনারা যদি বাড়ির কাজে এরকম একটা বেসিনের সেকশন তৈরি করতে চান। কাস্টমাইজ করে। তাহলে মোটামুটি এরকম খরচা পড়বে সেটা ধরেই রাখুন। আশা করছি আপনাদের পোস্টটা কাজে লাগবে। আজকের মত এখানেই শেষ করলাম। সকলে ভালো থাকবেন।
তোমাদের দোতলা সমস্ত কাজই খুব ভালো হয়েছে। কিন্তু সব থেকে ভালো হয়েছে বেশি নেই জায়গাটা আমার খুব পছন্দ হয়েছে আমি গিয়েই যখন দেখলাম আমি নিজে থেকেই সমস্ত টা খুলে খুলে নিজেই দেখে নিয়েছিলাম। কারণ সুন্দর জিনিস সবার আগে চোখে পড়ে। নিজের বাড়ি নিজের মতো করে সাজাতে সকলেই পছন্দ করে। বেশিন তৈরি করতে কত খরচ পড়েছে সমস্ত কিছুই তুমি পোস্টে তুলে ধরেছ। কোন কিছু সুন্দর করতে গেলে তার পেছনে বেশি পরিমাণে পরিশ্রম করতে হয়। যাই হোক তোমাদের বাড়ি সবকিছুই আমার ভীষণ পছন্দ হয়েছে যদি কখনো নিজের স্বপ্ন পূরণ করতে পারি। তাহলে আমিও ঐরকম ভাবেই সবকিছু তৈরি করে নেব।