ক্যালেন্ডার তৈরি
নমস্কার বন্ধুরা। আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন।। আজকে আমি আপনাদের সকলের সাথে নিজের হাতে বানানো একটা ক্যালেন্ডার শেয়ার করতে চলেছি।
আসলে হাতের কাজ করতে ছোট থেকেই বেশ ভালো লাগে। বিভিন্ন রকম ছবি আঁকা ,হাতের কাজ করা যেমন মনকে শান্তি দেয় ,তেমন মন মেজাজ খারাপ থাকলে এ কাজগুলো সম্পূর্ণ করার পর খুবই ভালো লাগে। ছোটবেলা থেকে পড়াশোনা তে টুকটাক ফাঁকি দিলেও কখনো এসব কাজে ফাঁকি দিইনি। কোন কাজ শুরু করলে সেটা শেষ করেছি। এতটাই মন দিয়ে করেছি যে ওই সময় কেউ আমাকে ডাকাডাকি করলেও আমি উঠতাম না।
বেশ কিছু বছর হল এইসব হাতের কাজ করা হয়ে ওঠে না। তবে মাঝেমধ্যে জন্মাষ্টমীর সময় আমার গোপাল ঠাকুরের জন্য জামা তৈরি করতে হয়। সেটা করে থাকি। এছাড়া বাড়িতে পুজো হলে একটু সাজানোর জন্য যেটুকুনি হাতের কাজ লাগে, সেটাই করে থাকি। তবে যখন স্কুলে পড়তাম ,মাধ্যমিক অব্দি আমাদের ওয়ার্ক এডুকেশনের ক্লাস হত ,আর তখন প্রচুর প্রচুর হাতের কাজ করতাম।
এখন এই বিএড এর পড়াশোনা করতে গিয়ে নানারকম হাতের কাজ করতে হচ্ছে।। এরমধ্যেই ছিল কোলাজ আর্ট, ক্যালেন্ডার তৈরি করা। আগের সেমিস্টার অর্থাৎ সেকেন্ড সেমিস্টারে আমাকে ক্যালেন্ডার তৈরি করতে হয়েছিল অর্থাৎ আগের বছর। তাই ক্যালেন্ডারটা কিন্তু ২০২৪ সালের।
কিভাবে ক্যালেন্ডার তৈরি করলাম, সেটা আপনাদের সাথে শেয়ার করব বলে ২০২৪ সালের শেষের দিকে সমস্ত ছবি তুলে রেখেছিলাম। আর আজকে সময় সুযোগ করে এটা শেয়ার করছি।। চলুন তাহলে দেখে নেওয়া যাক।
একটা ক্যালেন্ডার তৈরি করতে বেশি কিছু প্রয়োজন পড়ে না। প্রয়োজন পরে একটা মোটা আর্ট পেপার, পেন্সিল, রবার, স্কেল , কালো কালির পেন, লাল কালির পেন, আর আপনি যে ছবি আঁকবেন সেটার উপর ভিত্তি করে আরও কিছু রং। আমি যেমন এখানে ব্রাশ পেন আর কাঠ পেন্সিল ব্যবহার করেছি রঙের জন্য।
প্রথম ধাপ
প্রথমেই আর্ট পেপারের দুই ভাগের এক ভাগ আমি কেটে নিয়েছি। তারপর চারিদিকে বেশ কিছুটা জায়গা ছেড়ে মার্জিন দিয়েছি। তারপর যেখানে ছবি আকবো সেই জায়গাটা ফাকা রেখে, লাইন টেনে নিয়েছি। এরপর ছোট ছোটো ছক বারোটা মাসের জন্য। সেটাও আমি পেন্সিল দিয়ে স্কেল দিয়ে টেনে নিয়েছি।
দ্বিতীয় ধাপ
যেহেতু আমি ক্যালেন্ডারের উপরের ছবিটা পাঁচটা বাদ্যযন্ত্রের উপর রাখছিলাম। তাই বাদ্যযন্ত্রের ছবিগুলো আস্তে আস্তে একে নিচ্ছি ।প্রথমে দেখতে পাচ্ছেন তবলা এঁকে নিচ্ছি। এর সাথে এঁকে নিচ্ছি তানপুরা। এছাড়াও আমি একে নিয়েছি হারমোনিয়াম আর সরোদ ,সবকিছুর সাথে একটা বাঁশি এঁকেছি। টোটাল মিলিয়ে পাঁচটা বাদ্যযন্ত্র আমার আঁকা হয়ে গেছে।।
চতুর্থ ধাপ
আপনারা খেয়াল করে দেখুন এরপরে আমি ওই ছোট ছোট বক্সের মধ্যে সপ্তাহের তারিখগুলো লেখার জন্য সুন্দরভাবে মাপ যোগ করে ছোট ছোট বক্স কেটে নিয়েছি ।এক একটা বক্সে এক একটা মাসের তারিখ সমূহ থাকবে বলে আমি হালকা করে প্রত্যেকটা মাসের নামও লিখে নিয়েছি পেন্সিল দিয়ে।
পঞ্চম ধাপ
এবার পেনের কাজ শুরু করেছি। কালো রংয়ের মোটা জেলকালির পেন দিয়ে আমি বক্সগুলোকে কভার করেছি। আর এর সাথে তারিখগুলো লিখে নিয়েছি। তবে ছুটির দিনটাকে লাল রং রেখেছি। প্রত্যেকটা ঠিক এই ভাবেই করে নিয়েছি।।
কাজটা হয়ে যাওয়ার পর কত সুন্দর লাগছিল আপনারা নিজেরাই দেখুন। তারিখের জায়গাটা একদম সুন্দর তৈরি হয়ে গিয়েছিল।। তবে এটা খুবই ধৈর্যের কাজ। তারিখগুলো লিখতে বেশ বিরক্ত লাগছিল।
ষষ্ঠ ধাপ
প্রথমেই কালো পেনের সাহায্যে তবলার মাঝের অংশটা কালো করে নিলাম আর এর সাথে বাদামী রঙের এবং হালকা বাদামি রঙের কাঠ পেন্সিলের সাহায্যে হারমোনিয়াম এর রংটা করে নিচ্ছি।
সপ্তম ধাপ
কাঠ পেন্সিল আর ব্রাস পেন দিয়ে খুব সুন্দর করে ধীরে সুস্থে তানপুরার রংটাও সেরে ফেললাম। এর সাথে হারমোনিয়ামের আউটলাইন গুলো কালো কালি দিয়ে করে নিলাম।
অষ্টম ধাপ
ঠিক একইভাবে সরোদ আর বাঁশির রংটা করে নেয়ার পরেই তৈরি হয়ে গেল আমাদের পাঁচটা বাদ্যযন্ত্র।
ফাইনাল লুক
ক্যালেন্ডার এর ছবি আঁকতে যতটা না প্রবলেম হয়েছে ,তার থেকে বেশি প্রবলেম হয়েছে মাপ যোগ করে বারোটা মাস ঠিকভাবে সেট করতে। এবং তার সাথে ছিল তারিখগুলো। মাফযোগে ভুল হলে জিনিসটা দেখতে বাজে হয়ে যাবে। জ্যামিতিক একটা ফর্ম এ সমস্ত কিছু কাজ করতে হয়। না হলে ট্যারা লাগবে ।কোন বক্স যদি বড় হতো, কোন বক্স যদি ছোট হতো, একদমই ভালো লাগতো না দেখতে। তাই খুব বুঝেশুনে মন দিয়ে মাথা খাটিয়ে কাজটা করতে হয়েছে।
সবশেষে ক্যালেন্ডার তৈরি হয়ে গিয়েছে, ক্যালেন্ডার যখন আমি পরীক্ষার সময় বি এড কলেজে নিয়ে গিয়েছিলাম তখন উপরের দিকে আর নিচের দিকে দুটো মোটা প্লাস্টিকের রড টাইপের আটকে দিয়েছিলাম, যাতে হাওয়াতে ক্যালেন্ডার না ওড়ে ।আর সাথে দড়ি দিয়ে ঝোলানোর মতন করে দিয়েছিলাম।
তবে আমি ভীষণই দুঃখিত যে সেটা আমার কাছে আর নেই। ওরা পরীক্ষার সময় আমাদের সমস্ত হাতের কাজ নিয়ে নেয়। এক অবান্তর ব্যাপার। এত কষ্ট করে সবাই এত কিছু বানানোর পরে যদি সেটা জোর জবরদস্তি নিয়ে নেয়া হয় ,এটা একদমই ঠিক না ।বরঞ্চ কোন স্টুডেন্ট যদি মন থেকে কলেজকে কিছু দিতে চাইতো ,সেটা আলাদা ব্যাপার। এই নিয়ে পরীক্ষার সময় অনেক তর্কাতর্কিও হয়েছে।
যাইহোক আজকে আপনাদের সকলের সাথে নতুন কিছু শেয়ার করতে পেরে আমারও খুব ভালো লাগলো । সকলে ভাল থাকবেন।
তোমার মধ্যে সব রকম প্রতিভা রয়েছে সেটা আমারও খুব ভালো লাগে। যখনই কোন কিছু দরকার বা শেখার হয় তাই আমি তোমার কাছে আগে ছুটে যাই। তোমার মত প্রতিভাবান আমাদের বাড়িতেও একজন রয়েছে কিন্তু তাকে দিয়ে আমার কোনরকম কাজ হয় না। তুমি যেমন সুন্দর গান গাইতে পারো ঠিক তেমন সুন্দর আঁকতে ও পারো। তোমার হাতের লেখা ও খুব সুন্দর সবকিছুই আমি খুব কাছ থেকেই দেখেছি এমনকি তোমাকে দেখেই নিজেও কিছু শেখার চেষ্টা করি। ক্যালেন্ডার টা এত সুন্দর করে তৈরি করেছ মনে হচ্ছে কোন প্রিন্টার থেকে বার করা হয়েছে। ক্যালেন্ডার এর ওপরে যে বাদ্যযন্ত্র গুলোর ছবি দিয়েছো সেগুলো তো আরো দুর্দান্ত লাগছে। সত্যিই তোমার পোস্টে নতুন কিছু দেখতে পেয়ে আমারও খুব ভালো লাগলো।
বাঃ! কি সুন্দর এঁকেছিস রে। এই বি.এড, ডি.এল.এড এ যে এরকম কত কিছু লিখতে হয় আর বানাতে হয় সেটা শুধুমাত্র যারা এই কোর্সগুলোর সঙ্গে যুক্ত আছে তারাই বুঝতে পারবে।
আমি যেহেতু বর্তমানে ডি.এল.এড করছি তাই আমিও একই রকম ভাবে বিভিন্ন রকম জিনিস আঁকছি এবং বানাচ্ছি। এই পর্ব যেন শেষই হচ্ছে না। মাঝে মাঝে তো ধৈর্য হারিয়ে ফেলছি। তবে কোর্সে যখন ভর্তি হয়েছি তখন এইসব হ্যাপা তো সহ্য করতেই হবে।
যাইহোক, তোর বানানো ক্যালেন্ডারটা কিন্তু অসাধারণ হয়েছে। এত সুন্দর মাপ করে প্রত্যেকটা মাস এঁকেছিস যে সত্যিই প্রশংসা করতে হয়। আর তাছাড়া ক্যালেন্ডার এর ওপরে যে বাদ্যযন্ত্র গুলো এসেছে সেগুলো অসাধারণ হয়েছে।
আরে বাহ আপনি চমৎকারভাবে ক্যালেন্ডারে তারিখে এবং তার মধ্যে বেশ কিছু ছড়িয়ে গেছেন যেটা দেখতে সত্যিই অসাধারণ লাগছে আসলে ছোটবেলা থেকে যখন হাতের কাজগুলো করতে করতে একটা পর্যায়ে এসে যায় তখন তা সৌন্দর্য টা অনেক বেশি বেড়ে যায় যেমনটা আপনার ক্যালেন্ডারটা অনেক বেশি সুন্দর হয়েছে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাল থাকবেন।