বাবার বন্ধুর জন্মদিন সেলিব্রেশন
নমস্কার বন্ধুরা। আশা করি সকলে সুস্থ আছেন। আজকে আমি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করতে চলেছি, গতকালের কিছু মুহূর্ত।
গতকাল আমার পরীক্ষা ছিল, এ কারণে আমি সকাল থেকেই প্রচন্ড পরিমাণে ব্যস্ত ছিলাম। সারাদিনে কি হতে চলেছে তা আমার কোন প্ল্যান ছিল না। শুধু জানতাম পরীক্ষা দিতে যেতে হবে আর পরীক্ষা দিয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ি ঢুকে যাব।। যে পরিমাণে গরম গতকালকে ছিল এর থেকে বেশি মাথায় অন্য কিছু কাজ করার কথা নয়। মোটামুটি যখন বাজে দুপুর তিনটে তখন বাড়ি এসেছি। সকাল বেলা থেকে উঠেই কাজের মধ্যে ব্যস্ত ছিলাম তারপর তো এগারোটার আগেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে গিয়েছিলাম পরীক্ষা দিতে যাওয়ার জন্য।
বার্থডে বয় রাজু কাকা আর কাকিমার সাথে
দুপুর বেলার দিকে খাওয়া-দাওয়া করে রেস্ট করেছি। হঠাৎ সন্ধ্যে সাতটার পর জানতে পারছি যে আমাদের নিমন্ত্রণ আছে। বাড়িতে পুজো থাকায় পিসিরা আমার বাড়িতে ছিল। গতকাল সন্ধ্যেবেলা ওরা সবাই চলে যায়। তাই মনটাও খারাপ করছিল। কিন্তু যখন নিমন্ত্রণের কথা শুনলাম, আমার কিছুতেই বাড়ির বাইরে যেতে ইচ্ছা করছিল না। আসলে বিএড কোর্সের থার্ড সেমিস্টারে যে পরিমাণে চাপ গিয়েছে। সত্যি কথা বলতে গতকাল পরীক্ষা হওয়ার পর যেন মনে হলো বিশাল বাঁচা বাঁচলাম। এরকম স্বস্তি আর শান্তি কোনদিনও পাইনি। তাই গতকাল কিছুতেই অন্য কোথাও আর যেতে ইচ্ছা করছিল না।।
এমনি সময় আমাকে কেউ ঘুরতে ডাকলে বা ঘোরার কথা উঠলে আমি আগে ছুটি। কিন্তু গতকালের দিন টা আমি চাইছিলাম আমার কাছে যেন একটা রিলেক্সের দিন হয়। সেইমতো নিমন্ত্রণ খেতে আমি যাব না ঠিক করলাম। মা বাবা যাবে, আমি আর ঈশান বাড়িতেই থাকবো। মা-বাবা রেডি হয়ে বেরিয়ে গেল। এদিকে ঈশানকে সেই সময় পড়াতে এসেছে। ঈশান পড়ছে।
রাত যখন প্রায় দশটা বাজে তখন মা ফোন করে বলল শিগগিরই রেডি হয় সবাই এখানে তোকে ডাকছে।। আসলে বাবার এক বন্ধুর জন্মদিন ছিল গতকাল। বাবার বন্ধুরা সবাই মিলে উদযাপন করছিল সেই জন্মদিন। খাওয়া-দাওয়ার সমস্ত খরচ যার জন্মদিন তার কাছ থেকে নেয়া হয়েছিল। বাকি সমস্ত কিছু আয়োজন বাবার বন্ধুদের।
আমি আর ভাই যাচ্ছি না দেখে সেটা ওরা জানতে পেরে বারবার ডাকাডাকি করতে লাগলো। রাতের বেলায় কোনরকম খেয়ে শুয়ে পড়বো ভেবেছিলাম। কিন্তু ওদের কথা শুনে আবার রেডি হয়ে নিতে হলো। আমি আর ভাই রেডি হয়ে নিলাম। তারপর বাবা আমাদের এসে নিয়ে গেল।
গিয়ে দেখি সবাই ওখানে চলে এসেছে। আমার সমবয়সী শুধু সহেলি দি ছিল। বাকি সবাই ঈশানের সমবয়সী। আর বাবার বন্ধু রা এর সাথে কাকিমারা। বাবার বন্ধুরা সবাই মিলে মজা করে যার জন্মদিন অর্থাৎ রাজু কাকাকে বাচ্চাদের মতন জন্মদিনের টুপি পড়াচ্ছিল। এসব কাণ্ডকারখানা দেখে এত হাসি পাচ্ছিল যে আপনাদের বলে বোঝাতে পারবো না।
সবাই বাচ্চাদের মতো বেলুন ফুলিয়ে ফুলিয়ে ব্যাকগ্রাউন্ডটাকে সাজাচ্ছিল। আমার বাবার বয়সী সবাইকে অর্থাৎ বাবার বন্ধুদেরকে এত আনন্দ আর মজা করতে দেখে সত্যিই অনেক ভালো লাগছিল। কাউকে মনে হচ্ছিল না এদের ৫০ থেকে ৬০ এর মধ্যে বয়স। মনে হচ্ছিল এরা সেই ছোট্টটি রয়ে গেছে।
আমি আমার বাবাকে এরকম আনন্দ মজা করতে আগে দেখিনি। বিগত দু-তিন বছর ধরে বাবা এবং বাবার বন্ধুদের খেয়াল করছি এরা একটু বাচ্চাদের মতন করেই মজা করে। বাবা সব সময় বলে, আর কতদিনই বা আছি, যেটুকু সময় আছে হাতে এইভাবে আনন্দের মজাতেই সময়টা কাটাতে চাই। জীবনে অনেক পরিশ্রম গেছে এখন একটু সুখে শান্তিতে জীবনটা কাটাতে চাই। এই কথাটা আসলেই সঠিক। সারা জীবন একটা মানুষ পরিশ্রম করবেই বা কেন। একটা সময় পরে সত্যি মনে হয় যা আছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট হয়ে তা নিয়েই মজা করে থাকি।
কাকাকে বার্থডে বয়ের ট্যাগ পড়ানো হল। তারপর সবাই মিলে আনন্দ করে একসাথে দাঁড়ালাম কাকার পাশে। আর কাকাকে কাটলো। তারপর কাকা সকলকে প্রণাম করলো যারা বড় ছিল। আমিও কাকাকে কেক খাওয়াতে গিয়ে প্রণাম করলাম। তারপর রাতে খাওয়া দাওয়া হল। আমি রাত বারোটা নাগাদ বাড়ি চলে এসেছি ভাইয়ের সাথে। কারণ রোজ রোজ রাত করতে একদম ভালো লাগেনা। এখন থেকে তো আমি ঠিক করেই নিয়েছি, রাত কোথাও করব না।
রাজু কাকার দুই ছেলে মেয়ে। মেয়ের নাম স্বস্তিকা। আর ছেলের নাম অংশুমান। অংশু আমার ভাইয়ের সাথে একই স্কুলে পড়ে।ওদের সেকশন এক। বাবার বন্ধুর ছেলে আমার ভাইয়ের ও বন্ধু। তবে স্বস্তিকা আমার থেকে অনেক ছোট। সমস্ত কাজ হয়ে যাওয়ার পর কাকা কাকিমা দের সাথে ছবি তুললাম।
সমস্তটা আমি আপনাদের সাথে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কানের পর আমার বাবা রাজু কাকাকে জড়িয়ে ধরে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাচ্ছিলো। বাবা আর রাজু কাকা একেবারে ছোটবেলা থেকে বন্ধু। তখন ওরা স্কুলেও ভর্তি হয়নি। তাই সম্পর্কটা খুবই গভীর।
আমরা যখন খাওয়া দাওয়া করছিলাম তখন রাজু কাকার ছেলে অর্থাৎ অংশু আমাদের সকলকে মাউথ অর্গান বাজিয়ে শোনাচ্ছিল। ও ভীষণ ভালো বাজাতে পারে। গতকাল ও আমাদের শুনিয়েছে - জিনা ইয়াহা মারনা ইয়াহা, এই গানটির মিউজিক বাজিয়ে। এর সাথে খাওয়া-দাওয়াার আগে আমাকে আবদার করাতে আমিও দুটো রবীন্দ্র সংগীত শুনিয়েছিলাম। একটা জেঠু মান্নাদের একটা গান শোনালেন। আর আমার বাবা একটা রবীন্দ্র সংগীত শুনিয়েছিল।
কাকার বাড়িতে ঢোকার আগে একটা সুন্দর ফটোগ্রাফি করেছিলাম চাঁদের। কিছুদিন আগেই পূর্ণিমা গিয়েছে তাই চাঁদটাকে সজনে গাছের ফাঁক দিয়ে উঁকি মারতে দেখে খুব ভালো লাগছিল, তাই ক্যামেরা বন্দি করেছি।
কাকার বাড়িতে ঢোকার আগে কাকাদের বাড়ির সামনেই একটা হলুদ ফুলের গাছ ছিল। সেখানেও একটা ফটোগ্রাফি করেছি। যাই হোক গতকাল বেশ ভালই মজা করেছি। আজকে এখানেই শেষ করছি। আপনাদের সাথে আমার প্রত্যেক দিনের মুহূর্তগুলোকে এইভাবে গুছিয়ে তুলে ধরতে খুবই ভালো লাগে আমার। সকলে ভালো থাকবেন।
এ বছরে তোমাদের বিবাহ বার্ষিকী জন্মদিন পুজো কোন কিছুই যেন শেষ হচ্ছে না। যাইহোক সকলে মিলে রাজু কাকার জন্মদিন পালন করতে চলে গিয়েছিলে রাজু কাকার বাড়িতে। কাকাকে একদম বাচ্চাদের মত সাজিয়ে গুছিয়ে জন্মদিন পালন করেছো। আমার তরফ থেকে জানাই কাকার জন্মদিনের অনেক শুভেচ্ছা। আসলে এইসব ছোট ছোট মুহূর্তগুলো আমাদের জীবনে আরো আনন্দিত করে তোলে জন্মদিনের সুন্দর মুহূর্ত শেয়ার করার জন্য তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।