গোপাল ঠাকুরের জামা তৈরির পদ্ধতি
নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন। আজকে আমি আপনাদের সকলের সাথে শেয়ার করতে চলেছি গোপালের জামা বানানোর পদ্ধতি।
আপনারা সকলেই জানেন আজকে জন্মাষ্টমী ছিল। তাই প্রথমেই সকলকে শুভ জন্মাষ্টমীর অনেক অনেক শুভেচ্ছা। ভগবান আপনাদের সকলের মঙ্গল করুক।
আপনারা যারা আমার পোস্ট মাঝেমধ্যেই পড়ে থাকেন, তারা জানবেন আমার বাড়িতে একটা ছোট্ট গোপাল ঠাকুর আছে। গোপাল ঠাকুরের সাইজ পুরো জিরো। দোকান থেকে জামা কাপড় তো কিনে আনাই হয়। তবে প্রত্যেকবার জন্মাষ্টমীতে আমি নিজের হাতে ওর জন্য জামা কাপড় তৈরি করে থাকি। আসলে এটা একেবারেই আমার নিজের ভালোবাসা এবং ওর জন্য বানাতেও ভালো লাগে।
এইবারে জন্মাষ্টমীর আগে পরপর যেভাবে পরিশ্রম হয়েছে। আমি ভাবলাম হয়তো এবার গপুর জন্য জামা বানাতে পারবো না। তবে ঠাকুরের কৃপায় সেটা এবারও হয়ে গেল ।আসলে ঠাকুর যদি কিছু না করাই তাহলে সত্যিই গাছের একটা পাতাও পড়ে না। আমার ক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। ভগবান হয়তো নিজেই চেয়েছেন আমার হাতের তৈরি এই জামাটা পড়বেন। আমি জন্মাষ্টমীর আগের দিনকেই ওর জন্য কত সুন্দর একটা জামা তৈরি করে ফেললাম। আপনাদের সাথে সেই জামা বানানোর পদ্ধতি আজকে শেয়ার করছি।
প্রথম ধাপ
প্রথমেই বলি আমার কাছে বেশ অনেকগুলো কাপড় আগে থেকে কেনা ছিল।। গোপালের জামা তৈরি করি বলে কাপড়ের দোকান থেকে অনেকগুলো পিস কিনে নিয়ে এসেছিলাম অনেক ধরনের রঙের। তার সাথে একটা লাল রঙের ভেলভেটের কাপড়ও ছিল। এর আগে কখনো গোপালের জন্য এই লাল রঙের ভেলভেটের কাপড় দিয়ে কোন জামাকাপড় বানাইনি। তাই প্রথমেই কাপড়টাকে চুজ করলাম।
কাপড়টাকে আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন আমি সরু এরকমভাবে কেটে নিয়েছি। আসলে গোপালের সাইজ অনুযায়ী আমাকে কাটতে হয়েছে। গোপালটা যেহেতু অনেকটাই ছোট, তাই সরু করে এরকম কাটতে হয়েছে ,এইটা দিয়েই গোপালের জামার ঘেরের অংশটুকুনি তৈরি হবে।।
দ্বিতীয় ধাপ
এবারে কাপড়টা কেটে নেওয়ার পর কাপড়ের দু দিকটা মুড়িয়ে মুড়িয়ে হাত দিয়ে সেলাই করে নেব লাল সুতো দিয়ে। এই সময় সত্যি মনে হয় বাড়িতে যদি একটা সেলাই মেশিন থাকতো। তবে ছোটখাটো জামা। তাই হাত দিয়ে সেলাই করতে অসুবিধা হয় না।
কিন্তু সেদিনকে ভেলভেটের কাপড়টা মোটা থাকাতে হাত দিয়ে সেলাই করতে গিয়ে হাতে খুব প্রেসার পড়ছিল। আর আমার হাতে যেহেতু একটু সমস্যা রয়েছে তাই সেদিনকে একটু অসুবিধাই হয়েছে।
তৃতীয় ধাপ
যেমন আমার কাছে বিভিন্ন ধরনের কাপড় আছে, তেমন রয়েছে আমার কাছে সুন্দর সুন্দর লেজ। আমার কাছে এই লেজ অনেকদিন ধরেই পড়েছিল। এটা আমি একদিকে আবার সেলাই করে দিয়ে দিলাম। আমার মনে হল এটা একদম পারফেক্ট যাবে ,এই কালারটার সাথে। আর সেলাই করার পর সত্যিই একদম পারফেক্ট লাগছিল।
চতুর্থ ধাপ
এবার পুরোপুরি কাপড়টা তৈরি হয়ে গেছে।। একটার পর একটা ভাজ ফেলে ফেলে ভাঁজগুলোকে ঠিক এইভাবে সেলাই করে নিচ্ছি। আশা করছি আপনারা বুঝতে পারছেন। সেলাই করতে করতে জিনিসটাকে ঘোরাতে থাকবো অর্থাৎ পুরো গোল করে নেব।
পঞ্চম ধাপ
যে অংশে গিয়ে থামবে সেখানে আর একটা লেজ এইভাবে সেলাই করে লাগিয়ে দিচ্ছি। সত্যি এত মোটা একটা কাপড়, তার ওপর লেজ লাগাতে গিয়ে হাতে খুব লাগছিল।
ষষ্ঠ ধাপ
আবারো আপনারা দেখতে পাচ্ছেন আরো একটা লেজ। এটাকে আমি একেবারে হাতা হিসাবে কাজে লাগাবো। প্রথমে একটা ভি আকৃতি করে নিচ্ছি। তারপর ভি এর নিচের অংশটাকে ঘেরের নিচের অপজিটের বর্ডারে মাঝ বরাবর সেলাই করব। আর ভি এর লাস্টের যেখানে লেজ লাগিয়েছি ,পিছন দিকের অংশে দুদিকে লাগিয়ে দেবো। আশা করছি লেখাতে আপনারা না বুঝতে পারলেও, ছবি দেখে বুঝতে পারছেন ।
আর এভাবেই তৈরি হয়ে গেছে এত সুন্দর একটা গোপাল ঠাকুরের জামা। নিজের হাতে তৈরি রান্নার যেমন স্বাদ আলাদা হয় ,তেমন নিজের হাতে বানানো জিনিসের একটা আলাদাই ব্যাপার থাকে। তাতে জড়িয়ে থাকে ভালোবাসা ,শ্রদ্ধা আর যত্ন।
আমার গোপুকে এই জামাটা পড়ে অনেক সুন্দর লাগছিল। এইটা আজকে আর শেয়ার করছি না। পরের দিন যখন জন্মাষ্টমীর পোস্ট লিখব, সেদিন আমার গোপাল ঠাকুরকেআপনারা দেখতে পারবেন। আজকে এখানেই শেষ করলাম ।সকলে ভালো থাকবেন।