রাত দুপুরে বিবাহ বার্ষিকী সেলিব্রেশন
নমস্কার বন্ধুরা, গতকাল যেখানে শেষ করেছিলাম, তার পর থেকেই আজ লিখছি।আমার বাবার সব কোন বন্ধু আর তাদের ওয়াইফ রা সকলের বারোটা অব্দি জেগে এই সমস্ত প্ল্যান করে আমাদেরকে সারপ্রাইজ দিতে এসেছে ।সাথে নিয়ে এসেছে কেক ,ফুলের মালা ,ফুলের তোড়া। আমরা তো সত্যিই ভাবতে পারিনি। মা বাবা সকাল থেকে ভীষণ পরিশ্রম করে ক্লান্ত ছিল তাই ওরাও ঘুমিয়ে গিয়েছিল। মধ্যরাতে এরকম যে একটা সারপ্রাইজ পাবে, ওরা কল্পনা করতে পারেনি।।
ওরা হই হই করতে করতে বাড়িতে ঢুকলো। রাত দুপুর বেলায় বাবার বন্ধু উত্তম জেঠু, শুভ বিবাহ বার্ষিকী বলার জায়গায় জোরে জোরে চেঁচিয়ে বলছিল- শুভ জন্মদিন ,শুভ জন্মদিন।। ওদের জন্য সারা পাড়ায় যারা যারা ঘুমিয়ে গিয়েছিল, তারা শিওর জেগে গিয়েছিল। স্বাভাবিক অত রাতে এত চেঁচামেচি শুনলে পাড়ার লোকজন উঠে তো দেখবেই। মৌসুমী বৌদির কাছ থেকে পরে গল্প শুনেছি, মৌসুম বৌদি নাকি গায়ে জল ঢেলে দিতে যাচ্ছিল।
কুকুরগুলো অতিরিক্ত ডাকছে বলে এই মৌসুমী বৌদি, জল ঢেলে দেওয়ার প্ল্যান করেছিল।কুকুর গুলো ওদের দেখে খুব ডাকছিল । আসলে পাড়ায় যে কুকুরগুলো থাকে তারা অচেনা কাউকে দেখলে এই ভাবেই ডাকাডাকি করে তাও আবার অত রাতে যেহেতু ওরা এসেছে।যখন জল দিতে যাবে তখন গিয়ে দেখে নিচে কুকুরগুলোর সাথে দাঁড়িয়ে রয়েছে আরও কিছু লোকজন।
মৌসুমী বৌদি ছাদ থেকেই ওদের সাথে কথা বলে। আর তখনই আমি টের পেয়েছিলাম। যাইহোক আমার বাবা-মা রেডি হতে চাইলেও ওরা কোন কিছুতেই রেডি হতে দেয়নি। ওই অবস্থাতেই ওরা বাবা-মাকে কেক কাটানো করিয়েছে। এর সাথে মালা বদল। এর জন্য ওরা মালা নিয়ে এসেছিল রজনীগন্ধার । ঘুমের ঘোরে একেবারে একটা ভাবা চাকা মত অবস্থা। তারপর অনেকক্ষণ ধরে অনেক অনেক গল্প আড্ডা। আমি রাত দুপুর বেলায় সবাইকে কি দেবো বুঝতে পারছিলাম না ।কেক যেটা কাটা হয়েছিল সেটাই বাটি করে সকলকে দেয়া হলো, এর সাথে বাড়িতে মিষ্টি ছিল সেটাই দেয়া হলো।। আর চা করে দিয়েছিলাম।
বাবার বন্ধুরা সবাই আসলেও বাবার আর এক বন্ধু কিছুতেই ফোন ধরছে না বলে তাকে নিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। তার বাড়ি আমার বাড়ি থেকে হাঁটা পথে তিন মিনিট। তাই ওই রাত দুপুরে সবাই মিলে ছুটলো কাকাকে আনতে।। ওই কাকার নাম রাজু। এরা সবাই গিয়ে রাজু কাকার বাড়িতে বলতে লাগল , শিগগির দরজা খোল ,সঞ্জয়ের শরীরটা ভালো নেই। তাড়াতাড়ি তোকে যেতে হবে।।
স্বাভাবিকভাবেই অত রাতে রাজু কাকা ঘুমিয়ে পড়েছিল ফোন সুইচড অফ করে।। ওদের কথা শুনে ঝড়পড় করে উঠে পড়ে এবং বাবার এরকম বাজে কিছু হয়েছে শুনে ওদের সাথে ছুটতে ছুটতে বাড়িতে এসে দেখে আমার বাবা দিব্যি খাটের উপর বসে আছে মায়ের সাথে ,গলায় রজনীগন্ধার মালা।
সে তো রীতিমুক্ত হাসাহাসি শুরু করে। দু একটা মারও দিয়ে দেয় বদমাইশি করার জন্য। কিন্তু সবাই এটাই বলতে থাকে, তুই যেমন ফোনটা সুইচড অফ করে রেখেছিস, ঠিক করেছি আমরা। কেমন চমকে দিলাম সেটা বল।
বাবা মায়ের এনিভার্সারি নিয়ে সকলে নানান রকম প্ল্যানিং করতে থাকে। বাবা বিবাহ বার্ষিকের আগের দিনকেই মায়ের বিয়ের খাটটা সুন্দর করে পালিশ করে ঘরের মধ্যে রেখেছিল। এই খাট বহুকাল এর। পুরনো জিনিসের মর্যাদাই আলাদা।
ওদের হাসি-ঠাট্টার সাথে সাথে ওরা বলতে থাকল, এবার এক এক করে সবার বিবাহ বার্ষিকী পালন করা হবে। বাবা-মার বিবাহ বার্ষিকীর পর যার বিবাহ বার্ষিকী আছে তার বিবাহ বার্ষিকীর অনুষ্ঠানের কথা গল্প হচ্ছিল।। আমি ঈশান সবাই জেগে ছিলাম যতক্ষণ না পর্যন্ত ওরা না গিয়েছে। ওরা যেতে যেতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল।
সবশেষে সবাই প্ল্যান করে নিয়েছিল যে কবে খাওয়া দাওয়ার আয়োজন করা হবে।
সেটা নিয়ে খুব তাড়াতাড়ি আরও একটা পোস্ট লিখব।
বাবা আর বাবার বন্ধুদের মধ্যে এখনো অব্দি যে এত সুস্থ এবং বাচ্চাদের মতন সম্পর্ক রয়েছে এটা দেখেই ভালো লাগে। ওদের সম্পর্ক এ রকমই অটুট থাকুক।এটাই প্রার্থনা করি।
সেদিন রাতে বিবাহ বার্ষিকীর চমক দিতে এসে আমি চমকে গিয়েছিলাম সত্যিই সেদিন রাত্রিবেলা রাস্তার কুকুরগুলো ভীষণ জ্বালাতন করছিল। আমি তো শেষে বিরক্ত হয়েই ওই কান্ডটা করতে গিয়েছিলাম। আমিও দেখছিলাম সকলেই গেটের সামনে কেক রজনীগন্ধার মালা ফুলের তোড়া নিয়ে এসে হাজির হয়েছে। আর উত্তম জেঠুর গলা তো মনে হয় সারা পাড়ার লোক পেয়ে গিয়েছিল যা জোরে জোরে চিৎকার করছিল হ্যাপি বার্থডে বলে। সেদিন সত্যিই খুব হাস্যকর ঘটনা ঘটেছিল। তোমার পোস্ট পড়ে আরো একবার সব মনে পড়ে গেল।
You have been supported by the team:
Curated by: @dove11