গোপাল ঠাকুরের স্নান অভিষেক
নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন। কিছুদিন ধরেই গোপাল ঠাকুর নিয়ে অনেকগুলো পোস্ট করছি ।জন্মাষ্টমীর পর্ব এখনো কিছুদিন চলতে থাকবে। আশা করছি আপনারা বোর হচ্ছেন না। প্রত্যেকটা ধর্মের বিভিন্ন ধরনের রিচুয়াল থাকে। আপনাদের সাথে আমার ধর্মের এই রিচুয়াল গুলো এবং গল্পগুলো শেয়ার করতে আমার বেশ ভালো লাগে।।
গত দিন পোস্টে শেয়ার করেছিলাম আমার ছোট্ট গোপাল ঠাকুরের জন্য আমি কি কি ভোগের আয়োজন করেছিলাম সেটা নিয়ে। আজকে আমার গোপালের স্নান পর্ব শেয়ার করছি।
হিন্দু ধর্মে যেকোনো দেবতার বিগ্রহ মূর্তি স্থাপনের সময় অথবা স্নানের সময় বিভিন্ন বস্তু দিয়ে তাকে অভিষেক করানো হয়। অভিষেকের সময় শঙ্খ ব্যবহার করা হয়। শঙ্খের মধ্যে সে বস্তুগুলি ঢেলে নিয়ে তারপর শঙ্খের সরু সূচালো মুখটা দিয়েই সমস্ত অভিষেক সারা হয়।
প্রত্যেকটা মন্দিরে দেব দেবীদের ঠিক এইভাবে স্নান করানো হয়। স্নানের পর যা বস্ত্র আছে এবং যা সাজসজ্জার জিনিস আছে, সেগুলো সুন্দরভাবে পরিয়ে দেওয়া হয়।। তারপরেই পূজা শুরু হয় ,আরতি শুরু হয়। বাড়িতে বিগ্রহ মূর্তি থাকা মানে একটা এক্সট্রা চাপ বলা যেতে পারে। বাচ্চাদেরকে যেমন প্রত্যেকদিন স্নান করানো হয় অথবা আমরা যেমন প্রত্যেকদিন স্নান করি ,তেমন এই বিগ্রহ মূর্তিকেও প্রত্যেকদিন স্নান করানোর নিয়ম রয়েছে ,তবে অনেকে করতে পারে , আবার অনেকে পারে না।।
সেটা একেবারেই যার যার বাড়ির পরিস্থিতির ওপরই নির্ভর করে। প্রত্যেকদিন সাজসজ্জা পরিবর্তন করা ,স্নান করানো সত্যিই একটা এক্সট্রা কাজ ।তবে বিগ্রহ মূর্তি পুজো করলে এই সেবাগুলো দিতেই হয়। কিন্তু পটের চিত্র তে কোন বাধা-নিষেধ নেই। কোনরকম নিয়ম নেই। তাই হিন্দু ধর্মের প্রত্যেকের বাড়িতেই বেশিরভাগ সময় পটচিত্র দেখতে পাওয়া যায় মূর্তির বদলে।
বাড়ির ঠাকুরকে গঙ্গাজল কিংবা দুধ দিয়ে স্নান করানোর কথা বলা হয়ে থাকে শাস্ত্রে । বিশেষ করে ঘি, মধু ,দুধ, দই এবং চিনি অর্থাৎ পঞ্চামৃত সহকারে স্নানের আয়োজন করা হয়।। সমস্ত বস্তুগুলো দিয়ে পরপর অভিষেক করানোর পর তুলসী পাতা এবং ফুল দিয়ে আবার ভগবানকে বরণ করে নেয়া হয়। তারপর পুনরায় গঙ্গা জলের মাধ্যমে সমস্ত কিছু পরিষ্কার করে গঙ্গা জল দিয়ে বিগ্রহ মূর্তিটি কে স্নান করানো হয়।।
এই পদ্ধতি অবলম্বন করে আমাদের বাড়িতেও পূজা করা হয়ে থাকে জন্মাষ্টমী তিথিতে । ভগবানকে নতুন পোশাক পরানোর আগে ঠিক এই ভাবেই স্নান করানো হয় এবং অভিষেকপর্ব সারা হয়।
ছোট্ট গোপু কে স্নান করানোর সময় ওকে দেখতে অনেক কিউট লাগে। আমাদের গোপালটা ছোট হলেও দেখতে কিন্তু অনেক মিষ্টি। ভাগ্যিস বাবা ছোট দেখে একটা বিগ্রহ নিয়ে এসেছিল। না হলে, একটু বড় নিয়ে আসলে স্নান করানো অথবা বাকি কাজ সত্যিই অনেক চাপের হয়ে যেত। অনেক ছোটবেলায় বাবাকে দেখেছি এই মূর্তিটি আমাদের বাড়িতে স্থাপন করতে।। কাজের সূত্রে বাবা যখন হরিয়ানা কুরুক্ষেত্রের দিকে ছিল ।তখন যে জায়গায় গীতার বাণী প্রদান করেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে ,ঠিক সেই জায়গা থেকে বাবা এই বিগ্রহ মূর্তিটি নিয়ে এসেছিল।
গোপালের স্নান পর্বের সাথে সাথে আপনাদের সাথে অনেক কথা শেয়ার করা হয়ে গেল। আজ এখানেই শেষ করছি। সকলে ভালো থাকুন।
