ভালোবাসার মানুষ
নমস্কার বন্ধুরা, আশা করছি আপনারা সকলে সুস্থ আছেন।। কেনাকাটার গল্প গুলোর মধ্যে থেকে আজকে একটু ভিন্ন টপিক নিয়ে আলোচনা করি।আজকের টপিক - আমার হবু শাশুমা।হিহিহি। আমি বর্তমানে তাকে কাকিমা বলেই ডাকি।
সত্যি বলতে মানুষের সাথে কিভাবে যে আমরা এত মিশে যাই ,আমরা নিজেরাও টের পাই না। কিভাবে কখন অল্প সময়ের মধ্যেই কিছু মানুষ এত কাছের হয়ে যায়, আবার অল্প সময়ের মধ্যেই বহু কাছের মানুষ দূরে চলে যায় ,এই সমস্ত কিছুই আমাদের এক পলকের মধ্যে হয়ে যায়।
যে মানুষটাকে আমি চিনলেও ঠিকভাবে পরিচিত ছিলাম না ,অথবা শুধুমাত্র কোথাও না কোথাও দেখেছি ,সেই মানুষটাই আজকে কতটা আপন হয়ে গেছে। কিছুটা সময় পরে যদি ঠাকুরের আশীর্বাদ থাকে ,এই মানুষটার কাছেই আমাকে সারা জীবনটা থাকতে হবে, আবারও আমার একজন মা হবে।
এ মানুষটি যেভাবে আমাকে ভালবাসছেন। এটা একেবারেই ন্যাচারাল প্রসেস। ওই যে বললাম কিছু বছর আগেও কোনরকম যোগাযোগ ছিল না। এ সত্ত্বেও অল্প সময়ের মধ্যে এই যে একটা সম্পর্ক তৈরি, একটা ভালোবাসা তৈরি, এটা সত্যিই অবাক করে দেয়।
আমি জানিনা আমার ভাগ্যে কি লেখা আছে, ভগবানের আশীর্বাদ থাকলে হতে পারে সবকিছু সম্পূর্ণ হবে ভালোভাবে। আমি জানিনা তখন ওনার সাথে আমার সম্পর্কটা কেমন থাকবে। তবে সেটা নিয়ে আমার ভয় হয় নেই। কারণ আমাদের পৃথিবীতে শাশুড়ি বৌমার যুদ্ধটা বরাবরই ফেমাস। কিছু জন কিছুটা প্রকাশ্য রাখে, আবার কিছু জন সেটা রাখে না।
কিন্তু সবার সংসারেই এ বিষয়টা লেগে আছে। এ নিয়ে আমি কোনদিনও ভয় পাইনি। কারণ একটা জায়গায় থাকতে গেলে সকলের মধ্যেই বিবাদ বাঁধে। আমাদের নিজেদের সংসারে বাবা মার সাথে ছেলেমেয়েদেরই কত বিবাদ হয়, আর সেই জায়গায় রক্তের সম্পর্কের বাইরে গিয়ে অন্য ঘরের একটা মেয়ে যখন বাড়িতে আসে, সেখানেও বিবাদ হওয়াটা অস্বাভাবিক কোনো বিষয় না।
আমার কাছে সব থেকে বেশি ম্যাটার করে টিকে থাকা, টিকিয়ে রাখা। এ জীবন সংগ্রামে আমরা প্রতিনিয়ত যেভাবে টিকে রয়েছি ,সংসারেও ঠিক সেই ভাবেই সবকিছু নিয়েই আমাদের টিকে থাকতে হয়।
সে যাই হোক, আজকের আসল কথায় আসি। ভবিষ্যতের কল্পনা বাদ দিলাম। বর্তমানে এই মানুষটির সাথে সত্যিই আমার খুব মধুর সম্পর্ক। আমার পার্টনারের মা বলেই যে এই সম্পর্ক তা কিন্তু নয়। আসলে মানুষের ব্যবহারেই ভালোবাসা আসে।
কাকিমার সাথে যেদিন আমি প্রথম আলাপ করলাম, সেদিনকে কাকিমাকে প্রথম দেখেই মনে হচ্ছিল কাকিমা কি সুন্দর দেখতে ,বেশ ফর্সা।গাল দুটো পুরো আপেলের মতন। পরবর্তী সাক্ষাতে কাকিমার আমাদের বাড়িতে আসে । আর হারমোনিয়াম নিয়ে দুজন মিলে কীর্তনে মগ্ন হয়ে গিয়েছিলাম ।
কাকিমাও ছোটবেলায় গান শিখত। নিজের হারমোনিয়াম আছে। আমিও যেহেতু গানের লোক। এ কারণে বেশ ভালই মিল হয়েছে। কাকিমা আমার কাছ থেকে গান শেখার অনেক আবদার রাখে মাঝেমধ্যেই। আমি গান শোনাতে চাইলে কাকিমা গান শোনে, আবার কখনো নিজে থেকেই নানান ধরনের গান গাওয়ার আবদার করে।
এই তো কিছুদিন আগে থেকে আমাকে বারবার বলছে ,ঈশা তুমি "ভালোবেসে সখী নিভৃতে যতনে" ওই গানটি রেকর্ড করে আমাকে পাঠিও। কাকিমার এই আবদার যে আমি রাখবো, সেই সময় আমার হয়ে উঠছে না।।
কাকিমার সাথে শপিং করতে যাওয়া, ঘুরে বেড়ানো সবকিছুই আমার ভালো লাগে। এই মানুষটিও আমার মতন ঘুরতে ভালোবাসে। সংসারটাকে কিভাবে আগলে ধরে রেখেছে, সেটা দেখলেই আমি অবাক হয়ে যাই। বাড়িতে তিনটে ছেলে একেবারে নাজেহাল করে ছাড়ে এই মানুষটিকে। তারপরেও কতটা ধৈর্য ধরে একটা সংসার সামলে চলেছে ,কতগুলো বছর হয়ে গেল। একেবারে আমার মায়ের মতন।
মা বলতেই হয়তো এরকম হয়। মায়েদের ধৈর্য্য কোটি কোটি গুণ বেশি হয়। আর এই ধৈর্যের তুলনা কারোর সাথেই করা যাবে না।
সব থেকে বেশি আমার আর কাকিমার মিল একটা জায়গায় রয়েছে। সেটা হল আমার পার্টনার। আমরা দুজনেই ওই মানুষটিকে প্রচন্ড ভালোবাসি। আর ওই একটি মানুষকে ভালোবাসার টানে আমাদের দুজনের মিল টা সবথেকে বেশি। মাঝেমধ্যেই কাকিমা নিজের ছেলে অর্থাৎ আমার পার্টনারকে নিয়ে নানান ধরনের নালিশ আমাকে করে। আমিও অনেক অনেক নালিশ করি। ভালো খারাপ মিশিয়ে সম্পর্কটা ঠিক এভাবেই তৈরি হয়েছে।
এখন অনেকেই বলতে পারেন ,বিয়ের আগে তাই হয়তো এত গলায় গলায় ভাব। হতেই পারে। কারণ সত্যিই তো এখনও আমরা দুজন এক জায়গায় নেই। মাঝেমধ্যে দেখা হচ্ছে, আলাপ হচ্ছে ,কথা হচ্ছে, মজা হচ্ছে। এক জায়গায় থাকলে খুঁটিনাটি বাঁধতেই পারে। ওই যে বললাম এতে আমার ভয় নেই।
সবশেষে ওই একই জায়গায় ফিরে আসাটাই কিন্তু সব থেকে বেশি ম্যাটার করে। সবকিছুর পরে ওই একটা মানুষকে কেন্দ্র করে বেঁচে থাকাটা সবথেকে বেশি ম্যাটার করে। ছেড়ে যাওয়া, ঝামেলা করা, ঝগড়া করা, এগুলো সব কিছুই সহজ। কিন্তু টিকিয়ে রাখা খুব কঠিন কাজ। আজকালকার যুগে এটা সত্যিই অনেক কঠিন।
এবার আমি এত ভাষণ দিচ্ছি, তাই বলে এই নয় যে আমি অন্যায় সহ্য করতে বলছি। অন্যায় কখনোই সহ্য করা উচিত নয়। তবে সহজেই একটুতেই কোন জিনিস ভেঙে ফেলা , এটার সহমতে আমি নেই।
বাকি ভগবান জানেন।
আজ এখানেই শেষ করলাম।
