এই প্রথম,আমার মাসিক বাজার করা ।

in Incredible Indialast month

মাঝেমধ্যে নিজেকে দেখে নিজে অবাক হই, নিজেকে বলতে ইচ্ছা হয় আজ আমি অনেক বড় হয়ে গিয়েছি। ভাবা যায় এবছর নিজের জীবন থেকে 24 টা শেষ করেছি। একটা সময় ছিল আমি বাজারে যেতেই ভয় পেতাম ওই ভাবে কখনো যায়নি আর এখন নিজেই বাজার করি। পরিস্থিতি মানুষকে কত কিছু শিখায় তাই না?

গত মাসের বাজার টা হাজবেন্ড করে দিয়ে গিয়েছিলো এরপরে বাকি টুকটাক ও গুলো আমি এবং আমার শাশুড়ি আম্মা দুজনে মিলেই করেছি। কিন্তু এই মাসে বাজার টা কে করবে আমার শাশুড়ি আম্মা তো পারবে না কারণ, সে অসুস্থ তার উপরে আবার বাজার করা এটা তার জন্য অসম্ভব।

অন্যদিকে আমার বাবু ছোট, তারপরে আবার এত এত কিছু কেনাকাটা এটা অনেক সময় সাপেক্ষ ব্যাপার এবং অনেক ঝামেলাও আছে। কিন্তু কি আর উপায় আমাকে যেতে হবে, কারন, আমি কারো কাছে না বলতে পারব না। আর না বলার জায়গাটা ও নেই। কারণ এটা আমার সংসার খেতে হলে আমাকে করতে হবে।

কি আর করার রেডি হয়ে নিলাম, বাজারে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সাথে আবার দুইটা বড় বড় ব্যাগও নিলাম, সত্যি আমার যে কি লজ্জা লাগছিলো,তখন আমার শাশুড়ি আম্মা বললো এই টা কোনো ব্যাপার না বর্তমান যুগে এসে কম বেশি সব মেয়েরাই বাজার করে প্রয়োজনের ক্ষেত্রে।

IMG_20250707_203232.jpg

এরপরে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়ে যেহেতু বাসার সাথে রাস্তা তাই খুব তাড়াতাড়ি গাড়ি পেয়েছিলাম। ও অটোতে উঠে পড়ি। প্রথমেই চলে গিয়েছিলাম ব্যাংকে, বাজার করার জন্য আমি সেখান থেকে প্রথমে টাকা তুলি, প্রায় বিশ মিনিটে মত সময় লেগেছিল ওখানে। এরপর আমি প্রথমেই গিয়েছিলাম ফার্মেসিতে ওখান থেকে শাশুড়ি আম্মার জন্য ওষুধ কিনলাম। পেশার, থাইরক্স, গ্যাসের, ও মাথাব্যথার একটা ওষুধ ছিলো,সেই সাথে বাবুর জন্য ওষুধ কিনেছিলাম। সব মিলিয়ে আমি ৬০০ টাকার ওষুধ কিনেছি।

এরপর আমি বড় একটা মুদির দোকানে যাই, এবং সেখানে গিয়ে আমি আমার লিস্ট দেখে বলতে থাকি,আজ অনেক কিছুই কেনাকাটা করা হয়েছে। তার মধ্যে ছিলো পোলার চাল ৪ কেজ, চিনি, জিড়া, সেমাই,নুডুলস ,চকলেট, সোয়াবিন ৫লিটার,টোস্ট,ও বিস্কুট, বুটের ডাল সাবান, ভীম সাবান, হুইলের গুড়া,গ্যাস লাইট ২, লবন, রান্না ও খাওয়ার,জন্য ২, মুড়ি , আরো দুই একটা হবে সবগুলো মনে পড়ছে না এখন।

যাই হোক এগুলো কেনাকাটা শেষ করলাম, ওখানে আমি প্রায় ২০৫০ টাকা বিল দিয়েছি, এরপরে বাজারের ব্যাগটা কে এই দোকানের রেখে আমি গিয়েছিলাম একটা মুরগির দোকানে সেখান থেকে পরিষ্কার করে মুরগী নিলাম ৫ কেজি ১২০০ টাকা। এরপরে আর কি করছি বলেন তো , ও হ্যাঁ গিয়েছিলাম কাঁচা বাজারে সেখানে গিয়ে সবজি কিনলাম বেগুন, করলা, ঢেঁড়স, আলু, কাঁচা মরিচ, পিঁয়াজ।

এরপরে গিয়েছিলাম একটা কাপড়ের দোকানে, সেখান থেকে প্রায় আট গজের মত কাপড় কিনেছি শাশুড়ি আম্মার জন্য, আমি এখানে প্রায় ১৫০০ টাকার মতো কাপড় কিনেছি, ভাইরে ভাই বর্তমান বাজারের যে দাম তা বাজারে বাজার করতে না আসলে বোঝা যাবে না।

এর মাঝে শুরু হয়েছে মুষল ধারায় বৃষ্টি কেমন লাগে বলুন এমনিতেই প্রচুর কষ্ট হয়েছে, কি আর করার বৃষ্টি হলো আল্লাহ তালার রহমত তাই একটা দোকানে দাঁড়িয়ে রইলাম এবং অপেক্ষা করতে থাকলাম বৃষ্টি কতক্ষণে থামে।

কিছুক্ষণ পরে বৃষ্টি থামলো আর এরপরে আর কোথায় ও না দাঁড়িয়ে একটা অটো নিয়ে একদম বাসার সামনে আসে নামি। যা কষ্ট হয়েছে এরপরে আর কথা বলার মত কোন মন নেই, বাসায় এসে হাতমুখ ধুয়ে সোজা বিছানায় চলে গিয়েছিলাম। কারণ, শরীরটা তখন বড্ড ক্লান্ত লাগছিলো,জানি এই বাজার গুলো আমাকে গুছিয়ে রাখতে হবে তবে ওই সময়টা তে একদমই মন চাইছিল না আর কিছুতে হাত দেই।

সত্যি আজকে বাজার করতে গিয়ে এবং প্রতিটা মুহূর্তে আমার মনে হচ্ছিল আমার শ্বশুরের কথা, এইতো গত পাঁচ মাস আগেই তো তিনি ছিলো। আমাকে কখনো এমনটা ভাবতেই হয়নি যে আমি নিজে বাজার করবো।আর আজ সে না নাই, পরিস্থিতি মানুষকে কত কিছু শিখায়,,।

যত দিন যাচ্ছে তত বুঝতে পারছি, একজন পুরুষ মানুষ বাড়ি তে না থাকলে একটা মেয়ে সংসার চালিয়ে নিয়ে যাওয়া যে কতটা কষ্টের। আর সে যদি হয় আমার মতন পড়ালেখা,সন্তান, সংসারের সমস্ত দায়িত্ব মাথার উপরে তাহলে তো কি অবস্থা বুঝতেই পারছেন,, ।

যাইহোক, এই যাননি আমার অনেক দিন মাস বছর চলবে,যতদিন পর্যন্ত আমার হাজব্যান্ড তার কাছে আমাকে না নিবে কারণ, সেখানে গেলে বাজার করার দায়িত্ব তখন আমার থাকবে না। আর যদি না নেয় তাহলে তো এরকম মাসের পর মাস আমাকে বাজার করতেই হবে,আর একটা হতে পারে যখন সে চাকরি থেকে রিটার্ডে যাবে ।

জানিনা ততদিন সৃষ্টিকর্তা আমাকে বাঁচিয়ে রাখবে কিনা তবে যদি থাকে নসিবে ,,। যাই হোক সবাই দোয়া করবেন আমি যত পরিশ্রম করি না কেন, যেন এই ছোট্ট সংসার টা নিয়ে আমি একটু ভালো থাকতে পারি, পরিবারের মানুষগুলো কে যেন একটু ভালো রাখতে পারি।তাহলেই আমার শান্তি।

আল্লাহ হাফেজ।

Sort:  
Loading...
 last month 

এটা ঠিক যে দায়িত্ব মানুষকে তার বয়সের তুলনায় অনেকটাই বড় করে দেয় ।আপনার শশুড় যতদিন বেচে ছিলেন ততদিন আপনাকে বাজারের চিন্তা করতে হয় নাই ।আমার শশুড়ও আপনার শশুড়ের মতোই ছিলেন ।আল্লাহ তাদেরকে বেহেশত নসীব করুক ।
বাজার দিয়ে জীবনের এক নতুন পথে পা বাড়ালেন।দিন যাবে আরো নতুন নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে ।ভালো থাকবেন সবসময় ।