জীবন থেকে হারিয়ে ফেললাম ২৪ টা বছর।

in Incredible India28 days ago

IMG_20250711_084520.jpg

মাঝেমধ্যে নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে মুচকি হাসি, কখনো অট্টহাসি ও দিয়ে ফেলি কারণ অবাক হয়ে নিজেকে দেখে।আমাদের এই চাকচিক্যময় দুনিয়াটা অস্থায়ী, আর এই অস্থায়ী দুনিয়াটা এর মায়ায় পড়ে আমরা পরকালকে ভুলে যাই। এখানে আমার স্থায়ীভাবে থাকতে হবে এটাই মানতে পারিনা। হয়তো আজ কি বা কাল একদিন আমাদের সবাইকে চলে যেতে হবে। একটা সময় দেখা যাবে আমাদের কোন অস্তিত্বই থাকবে না।

ভাবা যায় আজ মারা গেলে বেশি না মাত্র তিন মাসের মধ্যে আপনি একদম মাটির সাথে মিশে যাবে। আর সেই আমরাই এই দুনিয়াতে বেঁচে থাকার জন্য কত কিছুই না করি, মারামারি কাটাকাটি হিংসা, অহংকার মিথ্যা কথা বলা, মায়ের পেটের ভাই পর্যন্ত ছেড়ে দেয় না নিজের স্বার্থের জন্য। সুন্দর সম্পর্ক নষ্ট করে দেয়। কিন্তু এটা ভাবি না চোখ বুঝলে সবকিছু অন্ধকার সব পড়ে থাকবে। হয়তো বড় জোর দু এক বছর মনে রাখবে যতই প্রাণের স্বামী বলি, আর বউ বলি ভালোবাসার মানুষ বলি সব ভুলে যাবে।

IMG_20250711_084501.jpg

দেখতে দেখতে জীবন থেকে ২৪ টা বছর পার করেছি৷, হঠাৎ নিজেকে প্রশ্ন করছিলাম কি করেছি, আমি এই 24 বছরে। তবে নিজেকে আঘাত দেওয়া কথা আমি বলিনি কারণ প্রথমে বলবো আলহামদুলিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ সৃষ্টিকর্তা আমাকে অনেক দিয়েছে অনেক,

শুকরিয়া আদায় করছি, তিনি আমাকে মানুষরূপে এত সুন্দর একটা পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। এত সুন্দর একটা পরিবার দিয়েছে তাদের বড় কন্যা সন্তান হিসাবে, আর আমার বাবা মা, এই পৃথিবীতে আমি এমন কিছু দেখছি না যে তাদের সাথে তুলনা করা যায়,অসাধারণ বললেও কম হয়ে যাবে।বলা যায় আমার বেঁচে থাকার কারণ। সত্যি কথা বলতে মা তো মা এর উপরে তো আর কোন কথাই নেই তবে আমি না আমার বাবাকে ও ভীষণ ভালোবাসি। আমার জন্মের পর থেকে এই অব্দি আমার বাবা কখনো আমার নাম ধরে ডাকে নি সব সময় মা বলেই ডেকেছেন।

এরপরে বড় হওয়া স্কুলে যাওয়া মাদ্রাসায় যাওয়া, বাবা কাজের জন্য বাহিরে থাকলেও আমার মা আমাকে খুব যত্ন করেই বড় করেছে,স্কুলে যাওয়া প্রাইভেটে যাওয়া বাড়ি থেকে কোথায় বের হওয়া সবকিছুই ছিলো আমার মাকে ঘিরে। যখন একটু বুঝতে শিখেছি আমার মা আমাকে ছেড়ে এটা রাত পর্যন্ত কোথাও থাকে নি। কিভাবে মানুষের সাথে ব্যবহার করতে হবে সবকিছুই বাবা-মা তাদের সাধ্য অনুযায়ী বোঝানোর চেষ্টা আমাকে করেছে। সব সময় চেয়েছে ভালো শিক্ষাটা দেওয়ার এটাও কিন্তুু আমার জীবনে অনেক বড় একটা পাওয়া।

IMG_20250711_084620.jpg

মাঝেমধ্যে আমার মনে হতো আগে বাবা-মা এত তাড়াতাড়ি আমার বিয়েটা কেন দিলো সবকিছুই তো ভালো ছিলো,কিন্তু এখন বুঝতে পারি সৃষ্টিকর্তা আমার ভালো চেয়েছিলো, তাই হয়েছিলো আমি আমার এই ২৪ বছরের জীবন নিয়ে কখনো কোনো কিছুর জন্য এক মুহূর্তের আফসোস করি না। কারণ, আলহামদুলিল্লাহ এরপরে আমি খুব ভালো একটা জীবন সঙ্গী পেয়েছি।

খানিক টা রাগ আছে তবে সত্যি মানুষটা অনেক ভালো,তা না হলে ঠিক সেই ক্লাস 10 থেকে শুরু করে এই অনার্স ৪র্থ বছর পর্যন্ত আসা আমার সম্ভব ছিল না, একটা মেয়ে বিয়ের পরে তার শ্বশুর বাড়ির টা এবং শ্বশুরবাড়ির প্রত্যেকটা মানুষের ক্যারেক্টার সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তবে এই জায়গাটাতে ও আমি খুশি অসম্ভব ভালো ছিলো আমার শশুর আর আমার শাশুড়ি এবং বাকি অন্যান্য মানুষ গুলো, সেই সাথে নিজের চেষ্টা তো অবশ্যই আছে,,দিনশেষে বলতে পারি আলহামদুলিল্লাহ ভালো-মন্দ মিলিয়ে বেশ ভালো আছি, আপনারা কিন্তু মাশাআল্লাহ্ বলতে ভুলবেন না।।

IMG_20241214_084329_917.jpg

শুধু এতটুকু না আমি আমার ছোট মেয়েকে পেয়ে অনেক খুশি ছিলাম। আর এই খুশিকে দ্বিগুণ করতে আমি আমার ছেলেকে পেয়েছি , তবে ভাববেন না আমার জীবনে কোন দুঃখ নেই অবশ্যই আছে। তবে আমি বলব সৃষ্টিকর্তা আমাকে এই ২৪ বছরে যতটুকু দুঃখ দিয়েছে তার থেকে হাজার হাজার গুন সুখে রেখেছে। আমাদের বয়স যে এত দ্রুত চলে যায় তা বোঝা অসম্ভব এইতো, মনে পড়ছে সেই শৈশবের দিনগুলো কিশোর কালে কিভাবে কাটিয়েছি,

বান্ধবীরা মিলে স্কুলে যেতাম দল বেঁধে আবার চলে আসতাম, তখন মাথায় কিন্তু কোন টেনশন ছিল না। বুঝতামই না যে টেনশন আবার কাকে বলে, চিন্তা জিনিসটা তখন মাথায় ছিল না। মাঝে মাঝে আম্মুর কাছে শুনতাম যে সে কোন একটা বিষয় নিয়ে অনেক টেনশন করতেছে। কিন্তুু,কিন্তু এখন সংসার হয়ে সব কিছুই বুঝতেছি।

IMG_20250607_094439.jpg

হয়তো মাঝেমধ্যে খারাপ লাগা কাজ করে এত দ্রুত এদিকে পা না বাড়ালেও হতো,স্বামী সংসার সন্তান এদেরকে নিয়ে আমি মাঝেমধ্যে হাপিয়ে উঠি ,, মাঝেমধ্যে মনে হয় আগে যদি নিজেকে একটু গুছিয়ে নিতাম তাহলে মন্দ হতো না,, কিন্তু দিনশেষ এই মানুষগুলো কে ভালো রাখতে পেরে এর মাঝেও একটা শান্তি খুঁজে পাই,, তাইতো খারাপ লাগা কাজ করলেও আমি এদেরকে নিয়েই আলহামদুলিল্লাহ।

কারণ, আমি এটা বিশ্বাস করি আমাদের প্রত্যেকের জীবন সুখ-দুঃখ, ও চলার পথে ঢেউ থাকবেই, তাই আমিও আমার জীবন থেকে যে কয় টা বছর চলে গিয়েছে তার জন্য বিন্দু পরিমাণে আমার আফসোস নেই, আমি কখনো এটা মনে করি না। যে কি করলাম এই জীবনে আমি সব সময় শুকরিয়া আদায় করি যে আমার এই ছোট্ট জীবনে অনেক অনেক কিছু পেয়েছি।

দোয়া করবেন যেন বাকি জীবনটা এভাবে সত্যের পথে চলতে পারি, এবং নিজে সৎ থাকতে পারি, আর বাকি রইল নিজের পায়ে দাঁড়ানো সেটা সৃষ্টিকর্তা চাইলে হয়তো বা একদিন হবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ হাফেজ।।

Sort:  
Loading...

চমৎকার অনুভূতি প্রকাশ করেছেন। প্রতিটি মানুষের জীবন থেকে একটু একটু করে সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। আপনার জীবন থেকেও ২৪ টি বছর এখন অতীত হয়েছে। আপনার বর্ণনা মতে,আপনার জীবন‌ও কষ্ট আছে তবে সুখের তুলনায় অনেক কম।আর প্রতিটি মানুষের জীবন‌ই এমন।তবে, মানুষ যদি সুখে কিংবা দুঃখে সর্বাবস্থায় মহান রবের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পারেন,তাহলে মহান রবের ঘোষণা অনুযায়ী মহান রব তাঁকে নেয়ামত দ্বারা ভরপুর করে দিবেন। কাজেই, সর্বাবস্থায় মহান রবের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাই আমাদের জন্য আবশ্যকীয়। আপনার আগামী দিনগুলো আরো উজ্জ্বল হয়ে উঠুক সেই প্রত্যাশায় শেষ করছি।

 26 days ago 

প্রথমেই আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাবো ,আর হ্যাঁ আমি সবসময় আমার অবস্থা আমি আলহামদুলিল্লাহ,বলি কারণ আমি নিজেকে একজন সুখী ব্যক্তি মনে করি ,তাই তো বলি বাকি জীবনগুলো যেন সুন্দর ভাবে কাটাতে পারি