শোকাহত
নমস্কার বন্ধুরা, সকলে কেমন আছেন ?আশা করছি সকলেই ভালো আছেন ?আজকে আবারও নতুন একটা পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি আপনাদের মাঝে। আশা করছি সকলেরই ভালো লাগবে।
আজ ১৫ ই আগস্ট। আজকের দিনে আমাদের দেশ ভারতবর্ষ স্বাধীন হয়েছিল। তাই আজকের দিনটিকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করা হয়। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আজকে চারিদিকে মানুষের আনন্দে পতাকা উত্তোলন করতে ব্যস্ত। এরই মধ্যেই সকাল বেলায় পৌঁছায় দুঃসংবাদ। সকালবেলা থেকে মনটা ভীষণ খারাপ। আজকে আপনাদের সাথে এই দুঃসংবাদ কিছুটা শেয়ার করব। আজকে ১৫ ই আগস্ট এর দিনে যেমন প্রত্যেক বছর ভারত স্বাধীনতা হওয়ার আনন্দের দিন।ঠিক তেমনি আজকের দিনে এক মায়ের কোল থেকে তার সন্তান হারিয়ে যাওয়ার কথা আপনাদের মাঝে শেয়ার করছি। গত ১৩ই আগস্ট আমাদের পাড়ার একটা ভাইয়ের এক্সিডেন্ট হয়। গত দু'বছর আগে এই ভাইয়ের পরিবার তার বাবাকে হারিয়েছে ।বাবাকে অকালে হারিয়ে সমস্ত সংসারের দায়িত্ব এই ভাইয়ের কাঁধে ছিল। সমস্ত কিছু নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে দিব্যি চলছিল তাদের মা, বোনের সঙ্গে ছোট্টো সুখের সংসার।তিন বছর পর হঠাৎ আজকেই সবকিছু যেন থমকে গেল।
১৪ ই আগস্ট ছিল ওই ভাইটির বোনের জন্মদিন ।সেই আদরের বোনের জন্য ১৩ তারিখে রাত্রিবেলায় মিষ্টি আনতে গিয়েছিল পাশেরই দোকানে।আমাদের কৃষ্ণনগর থেকে করিমপুর যাওয়ার রাস্তাটা ভীষণই আশঙ্কাজনক । প্রত্যেকদিন যেন কারো না কারো প্রাণ কেড়ে নিচ্ছে। তবুও মানুষ সতর্ক হচ্ছে না।এই অসতর্ক তার জন্য আরো একটি প্রান কেড়ে নিল।রাত্রিবেলা ওই ভাইটি একটা গরুকে বাঁচাতে গিয়ে বাইক থেকে ছিটকে পড়ে যায়। তারপরে আবার হঠাৎ করে অ্যাম্বুলেন্স মেরে দিয়ে চলে যায়। বুঝতে পারি না মানুষ জন কেন পশু গুলো এভাবে ছেড়ে রাখে।ছেলেটি রাস্তাতেই রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকে। আশেপাশে তেমন কারোরই নজরে পড়েনি। তারপরেই আসে ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি। বৃষ্টির মধ্যে হয়তো কারোর চোখে পড়েছিল। কিন্তু চোখে মুখে রক্তাক্ত অবস্থা দেখে ছেলেটিকে কেউ চিনতে পারেনি। অনেকক্ষণ পর এর ওর মাধ্যম দিয়ে চিনতে পেরে পরে আমাদের কৃষ্ণনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।
এরপর বাড়িতে ওর মা আর বোনকে খবর দেওয়া হয়। যে ছেলেটির অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছে। তখন ওর মা হুটো পাটা করে চলে গিয়েছিল হাসপাতালে। কিন্তু আমাদের শক্তিনগর জেলা হাসপাতাল ছেলেটিকে ভর্তি নিতে চায়নি।ওখান থেকে রেফার করা হয় অন্য হাসপাতালে। ছেলেটি অ্যাক্সিডেন্ট পর অলরেডি নাক দিয়ে, মুখ দিয়ে, কান দিয়ে প্রচুর পরিমাণে ব্লাড বের হয়ে গিয়েছিল। তাই ওখান থেকেই অ্যাম্বুলেন্স করে নিয়ে চলে গিয়েছিল রানাঘাট মনোরমা হাসপাতালে। ছেলেটি হয়তো অ্যাম্বুলেন্সে যেতে যেতেই মারা গিয়েছিল। কিন্তু কিছু কিছু হাসপাতাল রয়েছে টাকা নেওয়ার জন্য বসে থাকে। তাই বাড়িতে এটা ওটা বুঝিয়ে যতটা পরিমাণে পারে 14 ই আগস্ট সারাদিনটা টাকা খেয়েছে। কিন্তু ছেলেটি কোন রেসপন্স করছিল না। এদিকে হাসপাতাল থেকে বলা হচ্ছিল যে অপারেশন করতে হবে।গত কাল সারা দিন কেটে যাওয়ার পর আজ হঠাৎই সকাল বেলায় খবর আসে ছেলেটি নাকি মারা গেছে। এদিকে হাসপাতালে এক লাখ ৭০ হাজার টাকা ডিউ রয়েছে। টাকা না দিলে ছেলেটির বডি ছাড়া হবে না।
পাড়ার সকল ছেলেরা মিলে টাকা তুলে এই টাকা হাসপাতালে দেওয়ার ব্যবস্থা করছিল । যাই হোক এর থেকে মর্মান্তিক ঘটনা হতেই পারে না। ছেলেটি আমার থেকে প্রায় তিন বছরের ছোট। একসাথে স্কুলে গিয়েছি কত খেলাধুলা করেছি। সব স্মৃতি আজ মনে করিয়ে দিচ্ছে। ছেলেটি না থাকায় একটা সংসার নিঃস্ব হয়ে গেল। আজকের দিনে কোন মা তার সন্তানকে হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে গেল। আবারো কোন বোন তার দাদাকে হারিয়ে সে অসহায় হয়ে শোকে পাথর হয়ে রয়েছে। দুঃখের বিষয় ছেলেটির ঠাকুমা এখনো বেঁচে রয়েছে। ছেলেটির ঠাকুমা গত তিন বছরে তার ছেলে, মেয়ে,জামাই, নাতি সকলকে হারিয়ে ফেলল। এর মত দুঃখজনক ঘটনা আমার জীবনে আর নেই। আমার বলার কোন ভাষা নেই।
শ্রাবণ মাসে শেষ সোমবারে প্রায়ই ৪৫ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে মহাদেবের মাথায় জল ঢালতে গিয়েছিল ছেলেটি। হয়তো এটাই ছিল তার শেষ ইচ্ছে। মহাদেব তার জীবনে পথচলা এখানেই থামিয়ে দিল। আরও একটি দুঃখের বিষয় হল একটি মেয়ের সাথে সম্পর্ক জড়িয়ে ছিল। ইতিমধ্যে তাদের রেজিস্ট্রি ম্যারেজ হয়ে গিয়ে ছিল। শুধুমাত্র সামাজিক মতে বিয়ে করা বাকি ছিল। সেই অসহায় মেয়েটিকে দেখে আমার ভীষণ খারাপ লাগছে। আজকের দিনে আমাদের পাড়াতে এই ঘটে যাওয়া ঘটনাটি আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম। তবে ছোট থেকে একসাথে বড় হলে বড় হওয়ার পর যে যার জীবন নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম ।তাই আমার কাছে তেমন কোন ছবি নেই। আমি সোশ্যাল মিডিয়া থেকে একটি মাত্র ছবি সংগ্রহ করেছি। এই ছবিটি আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম। ওর আত্মার শান্তি কামনা করি। ভালো থাকুক না ফেরার দেশে।
সকলে ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন ।আবারো নতুন কোন পোস্ট নিয়ে হাজির হব আপনাদের মাঝে ।আজ এইখানেই শেষ করলাম।