শিক্ষক দিবসে শৈশবের স্মৃতি
নমস্কার বন্ধুরা, সকলে কেমন আছেন ?আশা করছি সকলেই ভালো আছেন। আজকে আবারো নতুন একটা পোস্ট নিয়ে হাজির হয়েছি আপনাদের মাঝে আশা করছি সকলেরই ভালো লাগবে।
*আজ ৫ই সেপ্টেম্বর ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানের জন্মদিন। এই দিনটিকে আমরা শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করে থাকি। ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ ছিলেন বন্ধুসুলভ শিক্ষক। তার সমস্ত ছাত্রদের কাছে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় ছিলেন। তাই একদিন তার সমস্ত ছাত্ররা অনুরোধ করে ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ এর জন্মদিন পালন করে। সেই থেকেই এই দিনটিতে আমরা সকলে সমস্ত শিক্ষক শিক্ষিকাদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্যই শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করে থাকে। আজ সকাল থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া খুললেই একের পর এক শিক্ষক দিবস নিয়ে পোস্ট চোখে পড়ে। শিক্ষক দিবসের কথা শুনলে আমার সেই শৈশবের দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। শৈশবে স্মৃতিগুলো মনে পড়লেই প্রথমেই মনে পড়ে যায় আমাদের কৃষ্ণনগরে মামার বাড়ির কাছেই দাসপাড়া বলে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল। এই বিদ্যালয়টি আমাদের একদমই বাড়ির কাছে। বিদ্যালয়টি খুবই ছোট শুধুমাত্র কয়েকজন শিক্ষিকা ছিলেন। তারাই বিদ্যালয় টাকে পরিচালনা করত। বিদ্যালয়টি বেসরকারি ছিল তাই দিদিমনিরা তেমন কোন বেতন পেত না। বিনা পরিশ্রমে আমাদের পড়াশোনা শেখাতো। এমনকি খুব যত্ন সহকারে সমস্ত শিক্ষা দিত।
প্রাথমিক স্কুলের সমস্ত দিদিমনির কথায় মনে পড়ে। সেই প্রাথমিক স্কুল আমার কাছে জ্ঞানের প্রথম দোরগোড়া। তখনকার দিনে শিক্ষক দিবস মানে ডক্টর সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ এর ছবিতে গাঁদা ফুলের মালা দেওয়া। তেমন কোনো আয়োজন ছিল না। কিন্তু ভক্তি ছিল অফুরন্ত। শিশু মনে শিক্ষিকা মানেই তখন রাশভারী। একটু এদিক থেকে ওদিক হলেই কত মার খেয়েছি। নয়তো বাড়িতে মামাদের ধরে বলে দিত। বাড়িতে এসে আবারো পিটুনি খেতে হতো। এখনো আমার মনে পড়ে আমাদের স্কুলের বড়ো দিদিমণি ছিল পার্বতী পাল। একদিন স্কুলে পড়া করে যেতে ভুলে গিয়েছিলাম ।সেদিন সকাল বেলাতেই সকলের সামনে পিঠের ওপর পড়ল দুমদাম করে। যাই হোক স্কুল থেকে মার খেয়ে এসে আবারো পৌঁছে গিয়েছিল মামাদের কানে। বাড়িতে এসেও খেতে হয়েছিল পিটুনি। দিনগুলোর কথা মনে পড়লে সত্যি অবাক লাগে। ওই বিদ্যালয় থেকে আমার তিন মামা, মা সকলেই পড়াশোনা করেছে। তাই দিদিমনিরা খুব ভালো করে আমাকে চিনতো। যেমন অন্যায় করলে মারতেন ।তেমনি ভীষণ ভালোবাসতেন।
একটু বড় হলাম। এবারে যখন একটু বোধ বুদ্ধি হল। তখন হাই স্কুলে গিয়ে তখন প্রচুর শিক্ষিকাদের মাঝে পড়েছিলাম। অনেক দিদিমণি কার নাম ছেড়ে কার কথা বলব। হাইস্কুলে পড়ারও প্রচুর অভিজ্ঞতা রয়েছে। সেখানেও অন্যায় করলে ক্লাসরুমের বাইরে নীল ডাউন করে বসিয়ে রেখেছে। আবারো ক্লাসের বাইরে কান ধরে দাঁড় করিয়ে রাখত। কখনো বা কোন দিদিমণি যদি মামাকে চিনত ।তিনিও মামার কানে পর্যন্ত পৌঁছে দিত। অনেক সময় এইরকম হয়েছে যে পড়াশোনা করে গিয়েও হয়তো বান্ধবীরা পড়াশোনা করে যেত না তাদের পাল্লায় পড়ে কোনদিন দিদিমনি দের পড়ায় দেওয়া হতো না। তাই পুরো ক্লাস ৩০ মিনিট ধরে কান ধরে দাঁড়িয়ে কাটিয়ে দিতাম। এইরকম প্রচুর অভিজ্ঞতা রয়েছে।
আজ এই শিক্ষক দিবসে মনে হয় শিক্ষক শুধু বিদ্যালয়ে ছিল এমনটা নয়। যেকোনো শিক্ষার শেষ নেই ।শিক্ষা যে কোনো বয়সে গ্রহণ করা যায়। মানুষের ব্যবহারই হল সব থেকে ভালো শিক্ষা। পরিচিত, অপরিচিত এমনকি পথের ধুলোতে ও শিক্ষকতা লুকিয়ে থাকে। কারোর কঠোরতা, কারো স্নেহে, কারোর ভালোবাসায় আমরা শিখে যাই এই জীবনের পাঠ। জীবনে স্বল্প যাত্রা পথেই বহু শিক্ষক-শিক্ষিকার ছোঁয়া পেয়েছি। তারা পথ-প্রদীপের মত জ্বলে থেকেছেন আমার সামনে। সেই আলোকচ্ছটা মনের মনিকোঠায় অমিল থেকে যাবে। শিক্ষক- শিক্ষিকা মানেই জীবনে আলোর পথ দেখানো। আলোর যেমন ঠিক অন্ধকার সরে যায় তেমনি শিক্ষক -শিক্ষিকার মনের আগুন আমাদের অজ্ঞতার আঁধার মুছে দেয়। সেই আগুনে আমাদের বাঁচিয়ে রাখে এবং এগিয়ে নিয়ে যাই ।আমাদের আগামী দিনের দিকে সেই আলোতেই আমরা হাঁটছি এমনকি আগামী দিনগুলোতে হাঁটব। শিক্ষক দিবসের শুভেচ্ছা শ্রদ্ধা ও অনেক ভালোবাসা সব শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। সকলেই ভালো থাকবেন ।ছবি গুলো pixabay থেকে নেওয়া।
আজ এইখানেই শেষ করছি, আবার নতুন কোন পোস্ট নিয়ে হাজির হব আগামীকাল।