Incredible India monthly contest December #2 || My gifts from Santa.

শুভসকাল বন্ধুরা, আজ শুক্রবার ৭ই পৌষ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ, ২২ ডিসেম্বর ২০২২, সবাই কেমন আছেন, আশা করি সকলেই ভালো অবস্থায় আছেন এবং অত্যন্ত সুন্দরভাবে দিন কাটাচ্ছেন। আর কয়েকদিন পরেই ২৫শে ডিসেম্বর, ক্রিসমাস ডে । বিশ্বব্যাপী এই দিনটি অত্যন্ত ধুমধাম এর সাথে পালন করা হয়। ক্রিসমাস ইভে সাদা দাড়ি,লাল পোশাক, লাল সাদা টুপি আর কাঁধে মস্ত এক ঝোলা নিয়ে জিংগেল বেলস গান গাইতে গাইতে হাজির হন সান্টা ক্লজ। শুধুমাত্র ছোট বাচ্চারাই নয়, অনেক প্রাপ্তবয়স্করা আজও মনে করেন সান্টা ক্লজ এই দিনে তাদের কাছে এসে উপহার দিয়ে যাবেন। বহুদিন ধরেই চলে আসছে এই রীতি। ক্রিসমাস ইভে ঘরের কোন স্থানে মোজা ঝুলিয়ে অপেক্ষা করা হয় সান্টা ক্লজের দেওয়া উপহারের। এই সান্টা ক্লজ এর কাছে আমি এবারের ক্রিসমাসে কি উপহার চাই তাই নিয়ে আজকের লেখা।

সান্টা ক্লজ এর কাছে আমি এবারের ক্রিসমাসে যে উপহার চাই তা হল হুমায়ূন আহমেদের বই। আমার অনেক দিনের ইচ্ছা হুমায়ুন আহমেদের সকল বই দিয়ে আমার ব্যক্তিগত লাইব্রেরী ভরিয়ে ফেলা। আমাদের বাংলা সাহিত্যের অগ্রগতিতে লেখক হুমায়ূন আহমেদের কোন তুলনা নেই। সেই সত্তরের দশক থেকে শুরু একবিংশ শতাব্দিতে এসেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার জনপ্রিয়তা ছিল আকাশচুম্বী। বর্তমান সময়ে এসে ও তার জনপ্রিয়তার কোন কমতি নেই এবং তার মত জনপ্রিয় কোন লেখক নেই বললেই চলে।

হুমায়ূন আহমেদের লেখা আমার খুবই পছন্দ। তার লেখা প্রায় সবগুলো বই আমার পড়া শেষ। কোন কোন বই তো ২-৩ বারেরও বেশি পড়া হয়ে গিয়েছে। তবে তার বেশিরভাগ বই আমি পড়েছি পিডিএফ আকারে। বর্তমানে ইন্টারনেটের যুগে পিডিএফ এর সহজলভ্যতার কারণে বই কিনে পড়ার চেয়ে পিডিএফ পড়াই সহজ বলে মনে হয়। কিন্তু এতে বই পড়ার মজা শতভাগ পূর্ণ হয় না। যতই পিডিএফ পড়ি না কেন হাত দিয়ে স্পর্শ করে বই পড়ার মধ্যে যে আনন্দ রয়েছে তা কখনো পাওয়া যাবে না। তাই হাতের কাছে যখনই হুমায়ূন আহমেদের বই পাই, সব কাজ বাদ দিয়ে সাথে সাথে পড়া শুরু করে দেই। তাই এবারের ক্রিসমাসে সান্টা ক্লজ এর কাছে যদি কিছু চাই তবে সেটা হবে হুমায়ূন আহমেদের লেখা কিছু বই।

আমার মতে পৃথিবীর সবথেকে দামি উপহার হচ্ছে বই। বই আমাদের জীবনের সবথেকে বড় বন্ধু। দুঃখের সময় আমাদের মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলতে এবং হতাশাকে পিছনে ফেলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে বই আমাদের নতুন ভাবে উদ্যমী হতে শিক্ষা দেয়। যুগ যুগ ধরে আমাদের চিন্তা ও জ্ঞানের পরিসরকে সম্প্রসারিত করে আসছে। মানুষ উপহার হিসেবে অনেক কিছুই দিয়ে থাকে এবং উপহার হিসেবে অনেক কিছু পাওয়ার আশাও করে। তবে আমার কাছে উপহার হিসেবে বই পাওয়া সবথেকে বেশি আনন্দের। সত্যি কথা বলতে বই আমাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা লিখে শেষ করা যাবে না। এটি বর্তমান প্রজন্মকে আগামী দিনের কান্ডারী হিসেবে গড়ে তোলে। বই আমাদেরকে মানবিক অনুভূতির ভেতরে প্রবেশ করায় এবং সেখান থেকে শিক্ষা লাভ করতে সহায়তা করে।

আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই কমবেশি বন্ধু থাকে। এদের মধ্যে কেউ হয় ভালো বন্ধু আবার কোন কোন বন্ধুর পাল্লায় পড়ে জীবন ধ্বংসের দোরগোড়ায় গিয়ে পৌঁছায়। বর্তমান সময়ে প্রকৃত বন্ধু খুঁজে পাওয়া বেশ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এক্ষেত্রে বই আমাদের এমন এক বন্ধু যা আমাদেরকে কখনো ভুল পথে পরিচালিত করবে না। তবে এক্ষেত্রে আমি শুধুমাত্র পাঠ্য বইয়ের কথা বলছি না, পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি গল্প, কবিতা ও বিভিন্ন উপন্যাস থেকে আমরা বাস্তব জীবন সম্পর্কিত অনেক ধরনের জ্ঞান অর্জন করতে পারি।

আমার মতে বই আমাদের জীবনের একমাত্র উপহার যার মাধ্যমে সুশিক্ষায় শিক্ষিত হওয়া যায়, ভালো মন্দের বিচার করা যায় এর পাশাপাশি ব্যক্তি, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবনেও একজন সফল মানুষ হিসেবেনিজেকে গড়ে তোলা যায়। বই কখনো তার পাঠককে একা হতে দেয় না, সব সময়ই পাঠকের একাকীত্ব দূর করে। মানবতাবোধ, সহিষ্ণুতা সহ অন্যান্য মানবিক গুণাবলী আমরা বই থেকে শিক্ষা পেয়ে থাকি। তাই বিশাল সংগ্রহশালা তৈরি করা সম্ভব না হলেও আমাদের প্রত্যেকেরই উচিত নিজ বাসায় পছন্দের বই দিয়ে ছোট ছোট লাইব্রেরী তৈরি করা এবং নিয়মিত বই পড়ার অভ্যাস তৈরি করা।

আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি যে, যদি সত্যিকার অর্থেই মন থেকে কোন কিছু চাওয়া হয়, তবে তা পাওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে শুধু মনে মনে ইচ্ছা করলেই হয় না, ইচ্ছাপূরণের জন্য চাই কঠোর পরিশ্রম এবং ধৈর্য। কঠোর পরিশ্রম ধৈর্য ছাড়া জীবনের কোন ক্ষেত্রেই সাফল্য অর্জন করা যায় না। মনের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য চাই নিরলস প্রচেষ্টা। শতো বাধা বিপত্তি পার হয়ে পৌঁছতে হয় কাঙ্খিত গন্তব্যে। আমার এরকম অনেক মনের ইচ্ছাই পূরণ হয়েছে। আমি এমনই একটি গল্প আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।

তখন আমি পড়ালেখার পাশাপাশি একটি প্রাইভেট অফিসে জব করতাম। তবে আমার বেতন খুব বেশি ছিল না। কোনরকমে নিজের খরচ টা চালিয়ে নিতে পারতাম। দেখতে দেখতে ঈদ চলে আসে। আমি আমার পরিবারের সবার ছোট ছেলে তাই বড় ভাইবোনদের কাছ থেকে প্রতি ঈদে অনেক উপহার পেতাম। কিন্তু সেবার আমার মনে প্রথমবারের মতো ইচ্ছা জাগে আমার বাবা-মা, ভাই, বোন এবং তাদের ছেলে মেয়ে সবার জন্যই কিছু উপহার কেনার। কিন্তু আমি যা বেতন পেতাম তাতে সবার জন্য উপহার কিনা তো দূরে থাক, নিজের খরচ চালানোটাই কষ্টকর হয়ে যেত। তাই সেই ঈদে আর কারো জন্য উপহার কেনা হয়নি।

তবে আমার খুব ইচ্ছা ছিল সবার জন্য ব্যাগ ভর্তি উপহার নিয়ে বাড়ি যাওয়ার। তাই ঈদের পর ঢাকায় ফিরে এসে প্রতিমাস এই অল্প অল্প করে কিছু টাকা জমাতে শুরু করি এবং অফিসে ওভারটাইম করা শুরু করি । এভাবে দেখতে দেখতে এক বছর কেটে যায় এবং পরের বছর ঈদের ছুটিতে জমানো টাকা দিয়ে পরিবারের সকলের জন্য কেনাকাটা করে তারপর বাড়ি যাই। অনেক চেষ্টা এবং পরিশ্রমের পর যখন আমার মনের ইচ্ছা পূরণ হয় তখন যে কি আনন্দ লাগছিল তা আসলে ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। তাই কোন কিছু মন দিয়ে চাইলে তা অবশ্যই পাওয়া যায়।

এই ছিল আমার এই বছরের শেষ কনটেস্টে অংশগ্রহণমূলক পোস্ট। আমি @sakib012, @saha10 এবং @xhadhin ভাইকে ইনভাইট করছি অংশগ্রহণ করার জন্য।