প্রিয়ন্তীর মেহেদী সন্ধ্যা

in Incredible Indialast month
IMG_20250531_232337.jpg

Hello,

Everyone,

সকল ধর্মেরই শুভ বিবাহ অনুষ্ঠানে বিভিন্ন রীতিনীতি থাকে । ধর্ম বিশেষে বিবাহ রীতিনীতি ভিন্ন হয়ে থাকে ।কিছু কিছু নিয়ম হয়তোবা কারো সাথে মিলে যেতে পারে। ইদানিং ,হলুদ সন্ধ্যা এবং মেহেদি সন্ধ্যা খুব গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে। বিবাহ অনুষ্ঠানের একদিন অথবা দুই দিন আগে মেহেদি সন্ধ্যা করা হয় ।

এটি মুসলিম ধর্মে বেশি করা হয় । কিছুদিন আগেও আমাদের সনাতন ধর্মে বিবাহ অনুষ্ঠানের মেহেদি পড়া নিষেধ ছিল। সেদিনের কথা ধরা যাক, আমার বিয়েতে আমি মেহেদি পড়তে পারিনি কারণ আমার জেঠিমা, আমার মাসিমা বারণ করেছিল মেহেদি পড়তে ।তখন তারা বলেছিল, মেয়েদের হাতে মেহেদী থাকলে জজ্ঞ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা যাবে না ।জানিনা, এর বিশেষ কোন কারন আছে কিনা।

IMG_20250531_232042.jpgIMG_20250531_232157.jpg

তবে অনলাইন মাধ্যম ঘাটাঘাটি করে জানতে পারলাম , এর একটি কারণ হিসেবে ধরা হয় ”যুদ্ধে আহত গরুর রক্ত থেকে মেহেদি গাছের উৎপত্তি” ।আরও অনেক কারন অনলাইনে পেতে পারেন।হয়তো সেই কারণে বিয়েতে মেহেদি পড়া বারণ ছিল ।কিন্তু বর্তমান সময়ে এখন আর সেই বাধা-নিষেধ অনেকেই মানে না ।এখন মেহেদী রঙে হাত রাঙাতে নববধূ খুবই পছন্দ করে ।তবে এখন শুধু অর্গানিক মেহেদী নয় আর বিভিন্ন ধরনের মেহেদি পাওয়া যায় ।যা কনের হাত রাঙিয়ে দেয়।

IMG_20250531_185056.jpg

আমার মা তো বলতেন, ”হাতে মেহেদি দিলে গীতা পাঠ করা যাবে না, ঠাকুর পূজা করা যাবে না ” তাই আমি বিয়ের আগে মেহেদি পড়তে পারিনি। জানিনা, এটা কতটা ঠিক বা কতটা ভুল। তবে মেহেদি পাতার অনেক আয়ুর্বেদিক গুণ আছে তা আমরা সকলেই জানি। যেমন:- রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখে , মাথাব্যথা নিরাময় করে, খুশকি দূর করে , পায়ের জ্বালাপোড়া কমায়0 , চুলকানি বা ঘা শুকাতে সাহায্য করে , ঘুমের সমস্যা দূর করে, পা ফাটা কমাতে সাহায্য করে ইত্যাদি গুন রয়েছে।

মুসলিম ধর্মে মেহেদি পাতাকে অনেক গুরুত্ব দিয়ে থাকেন কারন তাদের ধারণা ছিল ,মেহেদি পাতা নবীজি তার দাড়িতে দিয়েছিলেন, চুলে দিয়েছিলেন তাইতো অনেকে সম্মান করে মেহেদি পাতা পায়ে দেয় না ।কিন্তু ইদানিং অনেকেই দেখি মেহেদি পাতা পায়েও দেয়। যাইহোক এত নিয়ম-কানন আমি বুঝিনা, আমার মেহেদি রঙে হাত রাঙাতে খুব ভালো লাগে ।আমি মেহেদি নিজে পড়তেও ভালোবাসি এবং অন্যকে পড়াতে ভালোবাসি।

প্রিয়ন্তীর বিয়ের দুদিন আগের রাতে মেহেদি সন্ধ্যার ছোট্ট একটি প্রোগ্রাম হল ।এখানে আমরা অনেকেই মেহেদি পড়লাম। নতুন কনে মেহেদি পরল , তার দুহাত মেহেদির রঙে রাঙালো । প্রিয়ন্তীর হবু বরের নামটিও মেহেদির রঙে রাঙালো । মেহেদির রং এ লেখা হল চন্দন নামটি ।হবু বরের নাম ছিল ” চন্দন দাস” । অনেকে বলে , হাতে বরের নাম লিখলে যদি বেশি উজ্জ্বল হয় তবে তার বর তাকে বেশি ভালোবাসে ।

IMG_20250531_201127.jpg

আমি জানি না এটা কতটা সত্য ।আমিও আর্মি বাবুর নাম লেখলাম আমার হাতে ।আমার বিয়ের সময় আমি এভাবে তো সাজতে পারেনি ,আমাদের অনেক বাধা নিষেধ ছিল। আমার সেই ছোট ছোট শখগুলো আজ পূরণ করছি ।এখনকার ছেলেমেয়েরা সেই আগের দিনের বাধা-নিষেধ খুব কমই মেনে চলে। তাদের শখটাই বেশি পূরণ করে থাকে। তাদের ধারণা বিয়ের তো এক দিনই হবে ,বারবার তো বিয়ে হবে না, আর এই স্মৃতিটুকু ধরে রাখার জন্য নিজেকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে নিতে হবে, তাইতো এখনকার বিয়েতে মেয়েরা মাথা নিচু করে বসে থাকে না ,মেয়েরা মাথা উঁচু করে হাসে, কথা বলে, খুব আনন্দের সাথে বিবাহ অনুষ্ঠান উদযাপন করে ।

IMG_20250531_185105.jpg

মেহেদি পড়ানো একটি আর্ট ও শিল্প তাইতো যে আপুটি আমাদের সবাইকে মেহেদি পরিয়ে দিয়েছিল তাকে এজন্য পারিশ্রমিক দেওয়া হয়েছিল । কনের হাতে মেহেদি পড়ানোর জন্য তাকে ২৪০০ টাকা দেয়া হয়েছিল । আমার দুই হাতে জন্য ৪০০ টাকা নিয়েছিলেন । আপু নিজেই অর্গানিক মেহেদি নিয়ে এসেছিলেন। তার একটি মেহেদির মূল্য রেখেছিল ১২০ টাকা করে । আমাদের হাতে মেহেদি পড়াতে আপুর ৪ ঘন্টা লেগেছিল।এই ৪ ঘন্টায় আপু ৪,২৪০ টাকা বিল নিয়েছিল ।

IMG_20250531_222352.jpg

যেহেতু আপু বরিশাল সদর থেকে গ্রামে এসেছিল তাই তার চার্জ একটু বেশি ছিল ।সঙ্গে তার হাজবেন্ড এসেছিল ।ওদের যেতে যেতে রাত ১১ টা বেজে গিয়েছিল ।আপু আজকে তিনটে বিয়ের কনেকে সাজিয়েছিল ।তাহলে চিন্তা করুন মেহেদি পরিয়ে কত টাকা উপার্জন করা যায় ।আজ মেয়েরা শুধু চাকরির পিছনে না ঘুরে ,তার কর্মদক্ষতা এবং তার চেষ্টা দিয়ে স্বাবলম্বী হতে পারেন । মাসে তিনি চাকরি করে যে টাকা পেতেন তার থেকে অনেক বেশি টাকা অর্জন করতে পারে ।

আপুটা অনেক মিশুক এবং খুব মিষ্টি একটা মেয়ে ।আমাদের সবার হাত মেহেদির রঙে রাঙিয়ে দিল। আমরা কিছু ছবিও তুললাম , কিছু ভিডিও করলাম । এই আনন্দের মুহুর্ত ক্যামেরাবন্দি করে রাখা হলো যা স্মৃতি হয়ে থাকে সারা জীবন ।আমিও বিশ্বাস করি বিয়ের সময় মুখ মলিন না করে হাসিখুশি ভাবে বিবাহ অনুষ্ঠান উদযাপন করা উচিত।

এটাই ছিল আমাদের মেহেদি পড়ার অভিজ্ঞতা ,আপনাদের সাথে তা শেয়ার করলাম। আজ এখানেই বিদায় নিচ্ছি। নতুন কিছু নিয়ে আবার কথা হবে সেই পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন এবং সুস্থ থাকুন।


◦•●◉✿ শুভ রাত্রি✿◉●•◦

Thank You So Much For Reading My Blog📖

3YjRMKgsieLsXiWgm2BURfogkWe5CerTXVyUc6H4gicdRPmPayXPfM22kXaj3xKw37oQ9tua3JfrnuMRWWqGHfhuyA1UYheY5qjiFbP3BW...JWNUaLb1UAxtVkvpEzFvrbCpiTVHr2qys8cnVHpyrfv38wVPMc1Luya71X8AzcNNuKjF1rHwqMTUWN8r39rGXHzGTLWtLUbqpNh6DHaWG6eK2zUkgnx8ShFKdg.png

Sort:  
Loading...