অনেক প্রতীক্ষার পর বড়মা-এর দেখা পেলাম
নমস্কার বন্ধুরা। সকলে কেমন আছেন? আজকে চলে এসেছি আপনাদের সাথে আমার গতকালের পোস্টের বাকি পর্ব টুকু শেয়ার করার জন্য। আশা করছি আপনাদের সকলের ভালো লাগবে।
গতকালকের পোস্টে আমি বলেছিলাম যে অনেক প্ল্যান করার পর অবশেষে আমি আর আমার হবু বর, শুভায়ন চলে গিয়েছিলাম নৈহাটি বড় মায়ের কাছে পুজো দিতে। এখানকার এই মন্দির খুবই জনপ্রিয়। প্রতিদিন প্রায় হাজার হাজার ভক্ত এখানে পুজো দিতে আসে। পুজোর ডালা কেনার পর লাইনে দাঁড়াতে গিয়ে আমরা তো দুজনেই অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে ইতিমধ্যে একটা লম্বা লাইন তৈরি হয়ে গেছে। মন্দির থেকে ঘাট ছাড়িয়ে একটা গলির মধ্যে লম্বা লাইন পৌঁছে গেছে। আমরা হেঁটেই যাচ্ছি, হেঁটেই যাচ্ছি, লাইন যেন শেষ হয় না। হাঁটতে হাঁটতেই দুই একবার শুভায়নকে বকাবকিও করা শুরু করেছিলাম, কারন আমি ৪.২০ র ট্রেনে আসাটাই সাজেস্ট করেছিলাম। কিন্তু ওর জন্যই লেট হয়ে গেল। যাইহোক শেষমেশ এক লম্বা লাইনের শেষে গিয়ে আমরা দাঁড়ালাম।
যেহেতু পুজো দেওয়ার পর আমাদের আরো এক জায়গায় যাওয়ার কথা ছিল তাই তাড়াতাড়ি পুজোটা সেরে ফেলতে পারলেই আমাদের সুবিধা হতো। সেই জন্যই এই লম্বা লাইন দেখে আমি ওর উপর একটু রাগ করছিলাম। আসলে নৈহাটিতে ওর কাকার মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তাই পুজো দিয়ে আমরা সেখানেই যাব বলে ঠিক করেছিলাম। একই শহরে এসে পুজো দিয়ে ফিরে গেলে দিদিভাই রাগ করত। তাই চাইছিলাম তাড়াতাড়ি যেন পুজোটা দিতে পারি। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকাকালীন অনেকে কপালে 'বড়মা' লেখা তিলক পড়াতে আসছিল। সকলকে দেখে আমারও একটু ইচ্ছে হলো। তাই আমিও কপালে 'বড়মা' লেখা তিলক পরেছিলাম।
তারপর আমরা বেশ অনেকক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। লাইনটা আস্তে আস্তে সামনের দিকে এগোচ্ছিল। আমরা দুজন গল্প করে সময় কাটাচ্ছিলাম। তারপর রাস্তায় অনেকে দন্ডি কাটছিল। আমরা সেটাও দেখছিলাম। আসলে অনেকে নিজেদের মনোকামনা মায়ের কাছে জানিয়ে যায়। তারপর যখন তাদেরকেই মনের কামনা পূরণ হয় তখন তারা গঙ্গার ঘাটে স্নান করে, সেখান থেকে মায়ের মন্দির পর্যন্ত এইভাবে ষষ্ঠাঙ্গে প্রণাম করতে করতে মায়ের মন্দির পর্যন্ত পৌঁছাই। মানুষের মনের ভক্তির শক্তি অনেক খানি। এই ভক্তির জোরেই মানুষ সমস্ত বাঁধা অতিক্রম করে নিজেদের কথা রাখতে মায়ের কাছে এসে পৌঁছায়।
প্রায় দুই ঘন্টা লাইনে দাঁড়ানোর পর অবশেষে আমরা মায়ের মন্দিরে প্রবেশ করতে পারি। সেখানেও বেশ সুন্দরভাবে রেলিং দিয়ে অনেকগুলো লাইন তৈরি করা হয়েছে। আসলে গতকাল আবহাওয়া টা খুব ভালো ছিল। একটু মেঘলা আকাশ ছিল তাই রোদ ছিল না। যার ফলে ২ ঘন্টা লাইনে দাঁড়ালেও আমাদের সেরকম কষ্ট হয়নি। মায়ের মন্দিরে প্রবেশ করার পর মাকে দর্শন করলাম। অনেক অভাব অভিযোগ মাকে জানালাম। বাঙ্গালীদের ঠাকুর দেবতার প্রতি অগাধ ভক্তি। শুধু হিন্দু বা বাঙালিই বা কেন! সমস্ত ধর্মের মানুষেরাই তাদের পূজিত ভগবানকে অনেক বিশ্বাস করে। আমরাও তার বাইরে নই। তারপর পুজো সেরে আমরা মন্দির থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম। যেহেতু প্রচুর দর্শনার্থী থাকে তাই মন্দিরের বেশিক্ষণ দাঁড়াতে দেওয়া হয় না। পুজো হয়ে যাওয়া মাত্রই বাইরে বেরোতে বলা হয়।
এরপর আমরা বাইরে বেরিয়ে, হেঁটে হেঁটে স্টেশনের দিকে যাচ্ছিলাম। যাওয়ার সময় রিক্সা ভাড়া করলেও আসার সময় আমরা কিন্তু আর রিক্সা ভাড়া করিনি। হেঁটে যেতে যেতে আমাদের অনেকটাই খিদে পেয়ে গিয়েছিল। যেহেতু আমরা অনেক সকালে বেরিয়েছিলাম তাই পুজো দেওয়ার পরেই আমরা কিছু খাব বলে ঠিক করেছিলাম। তারপর আমরা একটা ডালপুরির দোকানে ঢুকি। সেখান থেকে চারটে করে কচুরি খেয়ে নিজেদের পেট ঠান্ডা করি। তারপর ধীরে ধীরে দিদিভাই এর বাড়ির দিকে রওনা হই।
আজ তাহলে এখানেই শেষ করছি। আগামীকাল আবার অন্য কোনো লেখা নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হব। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন।
ᴀʀᴛ & ᴀʀᴛɪꜱᴛꜱ