বেসরকারি চাকরির ভাইবা দেওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা। (The bitter experience of giving away private job offers.)..
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারোকাতুহ।
জীবনে চলার পথে কত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় তা আমাদের সবারই জানা। প্রতি দিনই আমরা যেন কোন না কোন বিষয় সম্পর্কে ধারণা পায়। জীবনের সকল ধাপগুলো যে সহজ নয়, আমার যা চিন্তা করি সেই অনুযায়ী চলে না তা হয়ত আমরা জীবনের পদে পদে বুঝতে পারি৷ আপনারা বুঝতে পারেন কিনা জানি না, কিন্তু আমি যত দিন যাচ্ছে তত বুঝতে পারতেছি। গত পোষ্টে আপনারা জানতে পেরেছিলেন আমি আমার চাকরির পরিক্ষা আর ভাইবা দেওয়ার জন্য ঢাকাতে আসছি৷ গত ১৮ তারিখ আমার বেসরকারি চাকরির পরিক্ষা আর ভাইবা ছিল। আমার সমস্যা হচ্ছে আমি ঢাকা শহরের বেশির ভাগ জায়গা ঠিক মতো চিনি না, বা ওই জায়গায় যেতে কত সময় লাগবে তাও বুঝতে পারি না৷
আমি মূলত একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্টের পদে পরিক্ষা দিতে যাব। এটা ঢাকা মোহাম্মদপুর এলাকাতে। আর আমি আগের দিন সাভারে আমার চাচাতো ভাইয়ের বাসায় এসেছিলাম। পরিক্ষার দিন আমি ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়। কারণ ঢাকার পথ না চিনলেও এটা জানি ঢাকাতে জ্যামে পরলে অনেক সময় দাড়িয়ে থাকতে হয়। এজন্য আমি ভোর ৬ টার সময় বাসা থেকে বের হয়। যদিও বের হওয়ার আগে গুগল ম্যাপে জায়গাটা দেখে নিয়েছিলাম।
কিন্তু যেহেতু আগে জায়গাটাতে যায় নাই, এজন্য আগেই বের হলাম যাতে দেরি না হয়৷ বাসা থেকে বের হয়ে একটা অটোতে করে মেইন রাস্তার দিকে চলে আসলাম। গত দুই দিন ধরে আবার বৃষ্টি হচ্ছিল যার জন্য রাস্তা ঘাটে পানি জমে আছে। হেটে রাস্তায় আসা যায় না, যার জন্য অটোতে করে রাস্তায় আসতে হয়। রাস্তায় এসে বাসের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। সরাসরি মোহাম্মদপুরে কোন বাস যায় না। অর্ধেক গিয়ে তারপর অন্য গাড়ীতে যেতে হবে। বাসে গাবতলী পর্যন্ত চলে গেলাম। এরপর সেখান থেকে একটা অটোতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে গিয়ে নামলাম। এক ঘন্টার মধ্যে চলে গিয়েছিলাম। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। আমি বুঝতে পেরেছিলাম না এতো আগে পৌছে যাব। আসলে জায়গা চেনা না থাকলে যা হয়।
ভিতরে ঢুকতে যাব এমন সময় গেটের দারওয়ান আমাকে বলে ৮:৩০ টার আগে ভিতরে ঢোকা যাবে নাহ্। কি আর করার আমি বাইরে একটা দোকানের সামনে অপেক্ষা করতে লাগলাম। আমি সবার আগে গিয়েছিলাম। ৮:৩০ টার সময় ভিতরে ঢুকলাম। এরপর দায়িত্বরত র্গাডের কাছে খাতায় তথ্য, নাম লিখে ভিতরে প্রবেশ করা লাগল। ভিতরে গিয়ে আমি আগে পোশাক পাল্টে নিলাম। মূলত বৃষ্টির কারণে বাসা থেকে ভাইবা দেওয়ার পোশাক পরে গিয়েছিলাম না। ওয়াশরুমে গিয়ে পোশাক পাল্টে নিলাম। তারপর ভিতরে গেলাম। একটা র্গাড আমাকে নিয়ে গিয়ে একটা রুমে বসতে বলল।
৯:৩০ টার সময় টাইম দেওয়া ছিল ভাইবার। একে একে সবাই আসতে লাগল। বৃষ্টির কারণে অনেকের আসতে দেরি হয়েছিল যার জন্য শুরু করতে অনেক দেরি হয়েছিল। আমার বসে থাকতে আর ভালো লাগতেছিল না। ১১:৩০ টার দিকে আমাদের সবাইকে একটা রুমের মধ্যে নিয়ে যায় সেখানে আমাদের ২০ মার্কের লিখিত এবং ১০ মার্কের ব্যবহারিক পরিক্ষা হয়। পরিক্ষা দেওয়ার পর আমাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় অন্য আরেকটা রুমে। সেখানে আমাদের বসতে বলা হয়। মূলত এখন ভাইবা নিবে। আমাদের আগে শিক্ষক নিয়োগের ভাইবা চলতেছিল। তাদের ভাইবা শেষ হলে আমাদের ভাইবা শুরু হবে। কিন্তু বসে থাকতে থাকতে আমরা সবাই খুব অর্ধয্য হয়ে গিয়েছিলাম।
মাঝে মাঝে তো কয়েকজন বলে উঠল ভাইবা দিবো না চলেন চলে যায়। এদিকে সবার খুদাও লাগছে। হঠাৎ দেখি একটা ছেলে ট্রেতে করে আমাদের সবার জন্য বিস্কুট আর পানি আনতেছে। সবার জন্য এক প্যাকেট করে বিস্কুট দিলো আপাতত সেটা খেয়ে নিলাম। এরপর এক কাপ করে চা দিল। এবার অপেক্ষার পোহর গুনতে লাগলাম। জীবনের প্রথমবার চাকরির ভাইবা দিতে এসে এমন অভিজ্ঞতা হবে ভাবতেও পারি নাই৷ দুপুর ২:৩০ এর পরে আমাদের ভাইবা নেওয়া শুরু করল। আমার সিরিয়াল ছিল ৫ জনের পর। ভাইবা দিতে গিয়ে তেমন কোন ভয় কাজ করে নাই, যদিও প্রথমবার ভাইবা বোর্ডের মুখমুখি হতে হয়েছিল।
যাই হোক, আলহামদুলিল্লাহ ভাইবা বোর্ডে প্রশ্ন করা সকল উত্তরগুলো আমি ভালো ভাবে দিয়েছিলাম। ভাইবা শেষ করে ৩:৩০ টার দিকে আমি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হয়। তখনও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়টা নতুন ২০০১ সালে স্থাপিত। বিল্ডিং এর কাজ চলাম। তবুও ক্যাম্পাসটা অনেক সুন্দর। আমি শুধু একটা কথাই ভাবতেছিলাম বেসরকারি চাকরির ভাইবা যদি এমন হয় তাহলে সরকারিগুলো কেমন হবে।
যাই হোক প্রথমবার ভাইবা দিয়ে অনেক কিছু শিখতে পারলাম। আমি তো শুধু ডিপ্লোমা শেষ করছি আমাদের সাথে কয়েকজন বিএসসি শেষ করে এই পোষ্টে ভাইবা দিতে আসছিল। আসলে আমার রিজিক যেখানে থাকবে আমি সেখানে অবশ্যই পৌছে যাব। চাকরির ভাইবার অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। আপনাদেট কেমন লেগেছে জানাবেন, তবে আমার অভিজ্ঞতা তিক্ত। সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন। আবারও দেখা হবে আমার নতুন কোনো পোষ্ট নিয়ে।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
প্রথমেই আপনার জন্য শুভকামনা রইলো, আশা করি এখানে আপনি সিলেক্ট হয়ে যাবেন। কারণ যেমনটা আপনি লিখেছেন আপনার পরীক্ষা ভালো হয়েছে।
জীবনের প্রথম যে কোনো জিনিসের অভিজ্ঞতা পরবর্তী জীবনের পথ চলাকে আরও বেশি সহজ করে দেয়। হয়তো যেমনটা ভেবে আজ আপনি ভাইবা দিতে এসেছিলেন, তার বিপরীত ঘটনা ঘটেছে। তবে কি জানেন তো জীবনের এই ছোট ছোট ঘটনা গুলোই আমাদেরকে জীবনের বাস্তবতা শেখায়।
এর পরবর্তীতে যখন আপনি ভাইভা দিতে যাবেন তখন আপনি আপনার এই অভিজ্ঞতা থেকে যা শিখেছেন, সেটা দিয়ে আরও কিছুটা এগিয়ে যেতে পারবেন। জীবনে চলতে গেলে এইরকম পরিস্থিতির সম্মুখীন বোধহয় আমাদের সকলকে হতে হয়। তবে ধৈর্য্য ধরাটা আমাদের সকলের শেখা উচিত, সেটা কর্মক্ষেত্রের জন্য হোক বা ব্যক্তি জীবনের জন্য।
তবে যেমনটা আপনি লিখেছেন যেটা আপনার পাওনা থাকবে ঠিক সময় মত সেটাই আপনি পাবেন। তাই ধৈর্য্য ধরে অপেক্ষা করুন আশা করছি সুদিন খুব তাড়াতাড়ি আসবে। ধন্যবাদ আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। ভালো থাকবেন।
🙏🙏🙏 প্রথমেই দিদি আপনাকে জানাই অনেক ধন্যবাদ। আমার পোষ্টটা পরে সুন্দর ভাবে মন্তব্য করার জন্য।