"হারিয়ে ফেলেছি আরও একজন কাছের মানুষ.................!"
![]() |
---|
2/09/2025 দিনটা আমার জন্য অনেক বেশি ভয়ঙ্কর ছিল। কিন্তু তারপরেও সুন্দরভাবে কাটানোর চেষ্টা করেছিলাম। এক তারিখে বাড়িতে ছিলাম না কারণ ওই দিন মেজো ননদ বাসা পরিবর্তন করেছিল। তাই তার সাথে কিছু কাজে সাহায্য করার জন্য তার বাসায় চলে গিয়েছিলাম। ভালো মানুষ চেয়ার এর মধ্যে বসে খাবার খাচ্ছিলেন, যাওয়ার সময় বলে গিয়েছিলাম, বাবা আমি চাটখিল যাচ্ছি আপনার কিছু লাগবে কিনা। আমাকে দুইবার জিজ্ঞেস করেছিল আমি খাবার খেয়েছি কিনা। ওনার কথার উত্তর দিয়ে বিদায় নিয়ে চলে গেলাম। কখনো কল্পনা করিনি এটাই উনার সাথে আমার শেষ কথা হবে। আসলে হারিয়ে যাওয়ার পর এখন বুঝতে পারছি কেন এমনটা করলাম। সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল দুপুর বেলা খাবার খেয়েছিলাম বিকেলে ঘুমিয়ে ছিলেন সন্ধ্যার পর থেকেই খারাপ লাগা শুরু হয়ে গেল।
বারবার মোবাইলের মধ্যে কোন কিছু দেখে নিজের মন ভালো রাখার চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু কেন জানি মন ভালো হচ্ছে না, তাই বাড়িতে কল করলাম জিজ্ঞেস করলাম সবাই কেমন আছে, বলল সবাই ভালো আছে। যাই হোক রাত তিনটায় আমার ঘুম ভেঙে গেল কেন সেটা জানিনা। হাজারবার চেষ্টা করেও আর ঘুমাতে পারছিলাম না। সকাল ছয়টার সময় বাড়িতে আবার কল করলাম জিজ্ঞেস করলাম সবাই কেমন আছে বলল সবাই ভালো আছে। কিন্তু আমার আর কেন জানি ভালো লাগছে না। সকাল সাতটার সময় ওনাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। বাড়িতে এসে দেখলাম শ্বশুর মশাই সবকিছু নষ্ট করে রেখেছে প্রস্রাব পায়খানা করে, একেবারে ঘরের অবস্থা খারাপ। কি আর করব তাড়াতাড়ি করে সব কিছু পরিষ্কার করে নিয়েছিলাম এটা এখন নয়। বিগত আরো এক থেকে দেড় মাস আগে থেকেই এই সমস্যা। যখন আমার ছোট ননদের মেয়ের বিয়ে ঠিক হয়েছিল তখন থেকেই।
![]() |
---|
তখন যেই অবস্থা হয়েছিল তখন হয়তোবা আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেলে মনকে সান্ত্বনা দিতে পারতাম। কিন্তু এই বিয়ের ঝামেলার মাঝেও উনাকে নিয়ে আমরা অনেক বেশি হয়রানি হয়েছি, হসপিটালে ভর্তি হয়েছে তখন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়েছিল হাঁটাচলা করেছিলেন। খাবার দাবার খেয়েছিলেন। কিন্তু সুস্থ হওয়ার পর এভাবে চলে যাবেন এটা কখনো কল্পনাও করিনি। যাইহোক সবকিছু পরিষ্কার করতে আমার অনেকটা সময় লেগে গেল। দুপুরবেলায় জিজ্ঞেস করেছিলাম খাবার খাবেন কিনা বললেন একটু খাবার দিতে, আমি চামচ সহ একটু খাবার দিলাম সামনেই বসে রইলাম জিজ্ঞেসও করেছিলাম খাবে কিনা আমি যদি খাইয়ে দেই, কোন সমস্যা আছে কিনা বললে কোন সমস্যা নেই। তো নিজের হাতে খাইয়ে দিলাম কথা বলতে পারছিল না ইশারায় সব কিছু বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন।
এভাবেই দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়েছিল আবারও প্রস্রাব করে সবকিছু নষ্ট করে ফেলে। তাড়াতাড়ি সবকিছু ধুয়ে পরিষ্কার করে দিয়েছিলাম চিন্তা করলাম রাতে যদি আবার বেশি হয়ে যায়। এরপর ওনার রুম পরিস্কার করে দিয়েছিলাম কিন্তু সন্ধ্যার পরে ওনার কাছে কোন কিছুই ভালো লাগছিল না। বারবার ডাকাডাকি করছিল তারপর গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে বলল আমি আর এখানে ঘুমাতে চাই না, আমাকে সামনের রুমে নিয়ে চলো। এরপর উনাকে সামনের রুমে আমি নিয়ে আসার আগেই উনি নিজে নিজে হেঁটে সামনের রুমে চলে আসলেন। তারপর বারবার মাথায় পানি ঢাললাম শরীর অতিরিক্ত জ্বালাপোড়া করছিল, শরীর ঠান্ডা পানি দিয়ে মুছে দিচ্ছিলাম।
![]() |
---|
এরপর জিজ্ঞেস করেছিলাম কিছু খাবে কিনা বলল না কিছুই ভালো লাগছে না। এটাই হয়তোবা ওনার মৃত্যুর আগমনের খবর ছিল। ধীরে ধীরে রাত গভীর হতে লাগলো খাবার দাবার কোন কিছুই ভালো লাগছিল না ছেলেরা ঘুমিয়ে পড়েছে, আমি আর আমার শাশুড়ি শশুর কে পাহারা দিতে লাগলাম। দেখলাম ঘুমিয়ে পড়েছে আমি ওনার পায়ের কাছে একটু শুয়ে পড়েছিলাম, কিন্তু ঘুম আসছে না বুকের ভেতরটা কেমন যেন করছে মনে হচ্ছে আমি কোন কিছু হারিয়ে ফেলতে চলেছি। রাত তখন একটা বেজে দশ মিনিট হঠাৎ করেই নিঃশ্বাস নিতে পারছিলেন না। চোখে ঘুম নেই তাড়াতাড়ি উঠে জিজ্ঞেস করলাম কি হয়েছে, কিন্তু কোন কিছুই বলতে পারছে না শরীরে অতিরিক্ত ঘাম। আমি আর শাশুড়ি বারবার কালেমা পড়তে লাগলাম। শাশুড়ি বারবার মুখের মধ্যে পানি দিতে লাগলো। কিন্তু পানি খাওয়ার শক্তি অনেক আগেই হারিয়ে ফেলেছেন। পানি আর গিলতে পারছিলেন না আর এভাবেই আমাদের সামনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন।
যখন পানি মুখ থেকে গড়িয়ে পড়ছিল তখন বুঝতে বাকি রইল না উনি আর আমাদের মাঝে নেই। চোখের সামনে এই অবস্থা গুলো দেখার পর কি করব কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। হাউমাউ করে কান্না করতে লাগলো শাশুড়ি বারবার আমাকে জিজ্ঞেস করছিল কি হয়েছে উনি এখনো ভালো আছে। কিন্তু উনাকে কিভাবে বোঝাবো উনি আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেছে, রাত একটা ৪৫ মিনিটে উনি আমাদেরকে ছেড়ে এই দুনিয়া ছেড়ে পরকালে গমন করেছেন। আসলেই খুব কাছ থেকে এমন দৃশ্য দেখার পর মনে হচ্ছে, এই পৃথিবী কোন কিছুই না। যে কোন মুহূর্তে যেকোনো সময় সেটা রাত হোক কিংবা দিন আমাদেরকে চলে যেতে হবে। কারো কাছে হয়তো বা কিছু বলতেও পারবো না কাউকে কিছু বোঝাতেও পারবো না। চুপচাপ নিজের রাস্তায় নিজেকে হাঁটতে হবে। ভালো থাকুক পরকালে আল্লাহ তায়ালা ওনাকে যেন জান্নাতুল ফেরদাউস দান করেন। সবাই অবশ্যই আমার শ্বশুরের জন্য দোয়া করবেন, তিনি যেন ভাল থাকেন।
আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ