"বিদেশ থেকে চাচার বাড়ি ফেরার আনন্দঘন মুহূর্ত "

in Incredible India24 days ago

আসসালামু আলাইকুম
প্রিয় বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই আশা করি সবাই ভাল আছেন। আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে চাই আমার বাবার বাড়ির এক আনন্দঘন দিনের গল্প। এই গল্পে আছে পরিবার ভালবাসা অতিথি আপ্যায়ন আর শিশুসুলভ নিষ্পাপ হাসির মুহূর্ত। বছরের এই সময়টাই বাবার বাড়িতে আসতে আমার খুব ভালো লাগে। চারপাশে এক অন্যরকম আবহাওয়া। মায়ের আঁচলের গন্ধ বাবার স্নেহময় ডাক আর ছোটবেলার সেই চিরচেনা উঠোনটা সবমিলিয়ে মনটা ভরে ওঠে।

IMG_20250715_124926.jpg

এবার বাবার বাড়িতে আসার পেছনে ছিল বিশেষ একটা কারণ। আমার মেজো চাচা তিন বছর পর বিদেশ থেকে দেশে ফিরেছেন। তাকে বরণ করে নেবার প্রস্তুতি চলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই। মা চাচী দাদী সবাই মিলে নানা ধরনের রান্নার পরিকল্পনা করছে। আমি ভাবলাম এই আনন্দময় সময়ে স্পেশাল কিছুতো বানাতেই হবে। তখনই মাথায় এলো আমার চাচার পছন্দের জামাই সোহাগী পিঠার কথা। তাই দেরি না করে শুরু করে দিলাম পিঠার আয়োজন।

এদিকে বাড়িতে মেহমানের আসা শুরু হয়ে গেছে। সবাই নানান কাজে ব্যস্ত কেউ অতিথি আপ্যায়নে ব্যস্ত কেউ রান্নায় ব্যস্ত আমি এদিকে আমার পিঠার আয়োজন করা শুরু করেছি। পিঠাগুলো বানাতে বানাতে বারবার চাচার মুখটা ভেসে উঠছিল। যিনি তিন বছর প্রবাসে থেকেও মাটির টান ভুলেননি।তার জন্য এমন কিছু করতে পেরে সত্যিই আনন্দ হচ্ছিল।চাচা যখন এলেন ঘরে যেন নতুন প্রাণ ফিরে এলো। মা তার মুখের দিকে তাকিয়ে বলছিলেন তোকে চিনতেই পারছি না। চাচার চোখে জল এই ভালোবাসাই তো আমরা বাংলার মানুষ নিজের হাতে গড়ে তুলি। পিঠা নিয়ে আমি যখন উঠানে এলাম চাচা বিস্মিত হয়ে বললেন এটা কি তুমি নিজে বানিয়েছ আমি হেসে বললাম আপনার জন্য একদম স্পেশাল।

IMG_20250715_124908.jpg

এক কথায় মুগ্ধ।চাচা হেসে বললেন সেই যাওয়ার আগে এমন স্বাদের পিঠা খেয়েছিলাম। সেই কথায় আমার মনটা আরো আনন্দে ভরে গেল। এদিকে আমার চাচাতো জমজ বোন মানে আমার চাচার মেয়ে তারা এখন আমার মেয়ের সমবয়সী প্রায় তিন মাসের বড় আমার চাচাতো বোনেরা। ওদের তিনজনের মধ্যে যেন এক বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে মাত্র কয়েকদিনের মধ্যেই। ছোট ছোট আনন্দ,একে অন্যকে হাত ধরিয়ে ঘরের কোনায় নিয়ে যাওয়া আবার ঝগড়াও সবই যেন বড়দের মন ভরানোর মতো দৃশ্য। ওরা দুজন মিলে মোবাইল নিয়ে বসে গেল। ওহ আপনাদের তো বলতে ভুলেই গিয়েছি এখন আমার একটা বোন তার নানু বাড়িতে বেড়াতে গেছে তাই আমার মেয়ে আর আমার চাচাতো ছোট বোনটা দুজনে একে অন্যর প্রাণ হয়ে উঠেছে।

IMG_20250715_124840.jpg

দুজন দুজন কে চোখে হারায় এমন অবস্থা। ওরা দুজন মিলে মোবাইল দেখছিল হঠাৎ আমার মোবাইলে আমার হাসবেন্ডের ছবি বের হয়েছে আর আমার মেয়ে তার বাবাকে খুব মিস করছে। ছবি দেখা মাত্রই বলছে বাবা ও বাবা আমার কাছে আসো আমাকে কোলে নাও। আর পাশ থেকে আমার চাচাতো বোন বলছে আমার বাবা দেশে আসছে তোমার বাবা কোথায়? শিশুরা এত ছোট অথচ কথায় কত বড় মায়া থাকে ওদের কথোপকথনে সবাই মুগ্ধ।এক সময় আমার মেয়ের ফোনে বাবার ভিডিও চালিয়ে নাচতে লাগলো। আর চাচাতো বোন সেই নাচ নকল করে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ল। বাড়িতে আসা মেহমানরা ওদের কাহিনী দেখে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছিল।

IMG_20250715_124856.jpg

বলল এত কেন বুদ্ধি এদের??সত্যি এই মুহূর্তগুলো অনেক দামি। বাচ্চাদের আনন্দই আসলে সবচেয়ে খাঁটি আনন্দ। আমরা সবাই ওদের এই আনন্দ দেখে অভিভূত। বিকেলের দিকে সবাই উঠোনে গোল হয়ে বসে গল্প করছিলাম। মা পুরনো দিনের স্মৃতি টেনে আনলেন আমরা ছোটবেলায় কিভাবে পিঠা বানাতাম বাবা ঘুরে ঘুরে দুধ এনে দিতেন আর আমিও আমার ভাই কাঁচা পিঠার খাম চুরি করে খেতাম। চাচা হাসতে হাসতে বললেন তোমাদের গল্প শুনতে শুনতে মনে হচ্ছে আমি যেন আবার ছোট হয়ে যাচ্ছি। পাশেই ছিল চাচি তিনি একটু চাচাকে লজ্জা দিতে লাগলো। দিন যতো গড়াচ্ছিল, সন্ধ্যা নেমে আসছিল ধীরে ধীরে।উঠোনে আলো জালানো হলো,বাচ্চারা সেই আলো থেকে হাততালি দিচ্ছে কেউবা চিৎকার করে বলছে সুন্দর আলো।

IMG_20250715_124952.jpg

এই ছোট্ট ছোট্ট আনন্দগুলো আসলে জীবনের আসল সৌন্দর্য। রাতের খাবারে আরো কিছু মুখোরোচোক আইটেম যোগ হলো।মা করলেন খিচুড়ি আর রোস্ট সাথে ছিল গরুর মাংস আরো নানার কিছু। চাচা বললেন তোমরা সবাই যেভাবে আমাকে আপন করে নিয়েছো এত ভালবাসা পেয়েছি আমি, জীবনে অনেক বছর বিদেশে থেকেও এমন কিছুই পাইনি। তার কণ্ঠ ভারী হয়ে গিয়েছিল। আমরা কিছুই বলিনি শুধু অনুভব করেছিলাম,রক্তের টান সম্পর্কের গভীরতা।

সেদিনের স্মৃতি আজও চোখে ভাসে পিঠার স্বাদ।শিশুরা ফোনে হাসছে ছবি দেখছে আর প্রিয়জনের ঘিরে সেই উষ্ণ পরিবেশ সবমিলিয়ে যেন হৃদয়ের এক মোহনীয় অধ্যায়। জীবনের এই ছোট্ট ছোট্ট ভালো লাগাগুলোই আমাদের জীবিত থাকার আসল প্রমাণ। একদিন এই দিনগুলো শুধু স্মৃতি হয়ে যাবে কিন্তু অনুভব গুলো থেকে যাবে চিরকাল মনের গহীনে। আজ তাহলে এই পর্যন্তই সবাই ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন আল্লাহ হাফেজ।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Loading...