খালার বাসায় কাটানো সুন্দর মুহূর্ত

in Incredible Indialast month

আসসালামু আলাইকুম

অনেকদিন পর আমি এই প্লাটফর্মে লিখতে বসেছি। এবার লিখছি আমার খালার বাসায় কাটানো কিছু আনন্দঘন মুহূর্ত নিয়ে। শহরে কোলাহল থেকে খানিকটা দূরে হলেও খালার বাসাটা শান্ত আর স্বস্তিদায়ক। এখানে বেড়াতে এসে মনে হল যেন কিছুটা অন্যরকম পরিবেশে এসে পড়েছি। খালার বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক বিশাল সজনে গাছ। গাছটা যেন পুরো বাড়ির প্রান। সকালে বারান্দায় দাঁড়ালেই গাছের সবুজ পাতার ঝিরঝিলে শব্দ শোনা যায়।

IMG_20250827_192854.jpg

শীতল বাতাস বইছে, এমন প্রশান্তি যা শহরের ব্যস্ত জীবনে খুব কমই অনুভব করা যায়। খালা বলেছিলেন এই গাছটা তারা বাড়ি করার পরই লাগিয়েছেন। এখন গাছটিকে দেখে মনে হয় যেন তাদের পরিবারেরই একজন সদস্য। আমি অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে গাছটার দিকে তাকিয়ে ছিলাম। প্রকৃতির এই ছোট্ট ছোয়া মনকে অনেকটাই শান্ত করে দিলো। সেদিন বিকেল বেলা ছাদে উঠেছিলাম হঠাৎ মেঘ জমে এলো আকাশ জুড়ে। চারপাশে অদ্ভুত এক নীরবতা নেমে এলো, শুধু বাতাসের শীতলতার ছোঁয়া। আমি খালার সঙ্গে ছাদে দাঁড়িয়ে আকাশ দেখছিলাম।

IMG_20250827_201340.jpg

মনে হচ্ছিল, যে কোন মুহূর্তে ঝমঝম করে বৃষ্টি নামবে।ছোটবেলায় গ্রামে থাকাকালীন যখন আকাশে মেঘ জমত আমরা সবাই দৌড়ে বাইরে চলে যেতাম। খালার সঙ্গে আকাশ দেখে সেই শৈশবের স্মৃতি আবার মনে পড়ল। খালাও হাসতে হাসতে বলছিলেন মেঘ দেখলে তোমাদের ছোটবেলার সেই উচ্ছ্বাস মনে পড়ে যায়। সত্যিই কিছু মুহূর্ত থাকে যা মানুষকে বারবার শৈশবে ফিরিয়ে নিয়ে যায়। আমার খালার দুই ছেলে, বড়টার নাম জিহাদ আর ছোটটার নাম জিসান। ওরা দুজনেই খুব আদুরে আর প্রাণবন্ত। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে খালার বাসায় পৌঁছানোর পর থেকেই তারা খুশিতে আত্মহারা হয়ে গিয়েছিল।

সারাক্ষণ ওকে কোলে নিচ্ছে খেলছে একসঙ্গে ছবি তুলছে মনে হচ্ছিল যেন অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করছিল ওর জন্য। জিহাদ স্কুলের জন্য তৈরি হচ্ছিল ইউনিফর্ম পড়ে ব্যাগ কাঁধে ঝুলিয়ে দাঁড়িয়েছিল। তখনই আমার মেয়ে বায়না ধরল সেও যাবে তার সঙ্গে স্কুলে। এই দৃশ্যটা আমার চোখে জল এনে দিল। শৈশবের সেই অভিমান স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ সবকিছু আমার মেয়ের ভেতর আবার নতুন করে দেখলাম। জিসান যেটা ছোট সে তো একেবারেই মিশে গেল আমার মেয়ের সঙ্গে।

IMG_20250827_200621.jpg

সারাক্ষণ খেলা গল্প দুষ্টমী এক মুহূর্তের জন্য আলাদা হলো না। দুজনের হাসি খুশি দেখে মনে হচ্ছিল যেন এরা একে অপরের চিরচেনা। জিহাদ জিসানের এই ভালোবাসা আমার মেয়ের মনে যে আনন্দ ছড়িয়েছে তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।খালা নিজেও খুব খুশি ছিলেন আমাদেরকে পেয়ে। তিনি সবসময় আপন করে নেন যেন আমি তার নিজের মেয়েই। একসঙ্গে বসে গল্প করা, রান্নাঘরের সাহায্য করা আর আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে হাসি সব মিলিয়ে সময়টা আমার কাছে অমূল্য মনে হয়েছে।

খালার বাসায় এই কয়েকটা দিন যেন একেবারেই অন্যরকম ছিল। সজনে গাছের সবুজ মেঘলা আকাশের নীরবতা খালার আন্তরিকতা আর আমার খালাতো ভাইদের ভালোবাসা সব মিলিয়ে আমি ভরে গিয়েছিলাম আনন্দে। শহরে কোলাহল ভুলে এমন কিছু মুহূর্ত সত্যি মানুষকে নতুন ভাবে বাঁচার শক্তি দেয়।

পরিশেষে বলবো জীবনের আনন্দ অনেক সময় বড় কোনো ঘটনার মধ্য নয় বরং এমন ছোট ছোট মুহূর্তে লুকিয়ে থাকে। খালার বাসায় কাটানো এই সময় খালার স্নেহ ভাইদের উচ্ছ্বাস আর আমার মেয়ে ছোট্ট অভিমান সবকিছু আমার জীবনের পাতায় চিরদিন অমূল্য স্মৃতি হয়ে থাকবে।

Sort:  

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

Loading...