"এক স্বর্গীয় অনুভূতি- লামাহাটা ঘোরার অভিজ্ঞতা- শেষ পর্ব"

in Incredible India5 days ago (edited)
IMG_20250803_203009.jpg

Hello,

Everyone,

আজ লামাহাটা পরিদর্শনের পরবর্তী অংশের অনুভূতি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। গতকাল আপনাদের জানিয়েছিলাম যতই উপরে উঠছিলাম ততই যেন বেশি কষ্ট হচ্ছিলো। সত্যি কথা বলতে জায়গাটা দেখলে হয়তো প্রথমে ততটা অনুভব করা যায় না, কিন্তু যখন ধীরে ধীরে আপনি উপরের দিকে উঠতে থাকবেন, তখন পথ যেন আরো সুদীর্ঘ মনে হবে।

যখন আমরা ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠছিলাম, তখন অনেকেই উপরের দিক থেকে নিচে নেমে আসছিলেন এবং তাদের কাছ থেকে শুনতে পারছিলাম এখনো অনেকটা উপরে উঠতে হবে। তবে সেখানে গিয়ে যে ছোট্ট লেকটি চোখে পড়বে, সেটা দেখার উদ্দেশ্যেই আমাদের এতোটা কষ্ট করা।

IMG_20250803_202858.jpg

যতো উপরে উঠছিলাম তত যেন মেঘেদের কাছাকাছি চলে আসছিলাম। হয়তো সেই সময়কার তোলা ছবিগুলো দেখে আপনারাও কিছুটা আন্দাজ করতে পারবেন। তবে নিস্তব্ধতা বাড়ছিল উপরের দিকে অনেকটা বেশি। আমার আবার একটু ভয়ও লাগছিলো, কারণ আদেও উপরে গিয়ে সেখান থেকে আবার ফিরে আসতে পারবো কিনা, এটাই কাজ করছিল মনের ভিতরে।

আমার সাথে থাকা দুই বান্ধবী অর্থাৎ পিয়ালী এবং রাখি ওরা দিব্যি এগিয়ে চলছিলো। কিন্তু আমারই যেন বেশি কষ্ট হচ্ছিল বিশেষ করে শ্বাস-প্রশ্বাসে। যতো উপরের দিকে ওঠা হচ্ছিলো অক্সিজেনের লেবেল কমে আসছিলো বলে বেশি কষ্ট হচ্ছিলো। তবে খানিক দূর যাওয়ার পরে দেখলাম বেশ কয়েকজন বয়স্ক মানুষেরা উপর থেকে নামছেন।

IMG_20250803_202834.jpg

ওনাদেরকে দেখে মনে কিছুটা হলেও সাহস এলো। তবে একটা জিনিস ভালো, এই সরু রাস্তার পাশেই ছোট্ট ছোট্ট বছর জায়গা করা আছে। সুতরাং চাইলে আপনারা ওখানে একটু বিশ্রাম করে নিতে পারেন। তবে এখানকার একটা বিষয় যেটা ব্যক্তিগতভাবে আমার পছন্দ হয়নি সেটা হলো, আপনি বাইরে থেকে কোনো কিছু সেখানে কিনে নিয়ে ঢুকতে পারবেন না অর্থাৎ পানীয় কোন জিনিসই আপনার ব্যাগে রাখা চলবে না।

আর এই ওপরে ওঠার পথে আপনি কিন্তু কোনো দোকান পাবেন না। একেবারে শেষ পর্যন্ত লোকের কাছে পৌঁছে আপনি একটা বা দুটো দোকান পাবেন। তবে রাস্তার মধ্যে যদি আপনার পিপাসা পায়, তাহলে তা নিবারণ করা আসলেই অসম্ভব।

যাইহোক আমার অনেকটা বেশি কষ্ট হচ্ছিলো দেখে ওরা দুজনও আমার সাথে সাথে ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠছিলো। তবে সেখানকার সৌন্দর্য্য এতো বেশি ছিল যে, কষ্টটাও যেন অনেকটাই কম অনুভব করছিলাম।

কিছুক্ষণ বাদে দেখলাম একটা ছোট বাচ্চা ওর বাবা এবং মায়ের সাথে উপরের দিকে উঠছে। আর মেঘ দেখে আনন্দে চিৎকার করছে। পিছন ঘুরে তাকাতেই দেখলাম শুধু ওই একটা বাচ্চা নয়, আরো একটা ছোট্ট শিশু রয়েছে ওর মায়ের কোলে। খানিক অবাকই হলাম, এতো ছোট বাচ্চাকে নিয়ে এতো উপরে ওঠার সাহস দেখালেন কি করে।

IMG_20250803_202846.jpg

তবে ওনরাও আমাদের মতনই বিশ্রাম নিয়ে ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠছিলেন। যাইহোক বাচ্চাটার উত্তেজনা দেখে বেশ ভালো লাগলো। মেঘেদের কাছাকাছি আসার আনন্দ ও বোধহয় খুব বেশি করে উপলব্ধি করেছে এখানে এসে।

আরো খানিকটা দূর এগোতেই অনুভব করলাম যেন বৃষ্টি হচ্ছে। অনেক সময় কুয়াশার মধ্যে দিয়ে চলতে গিয়ে আমরা যেমন ভিজে যাই, এই লামাহাটাতেও আপনি যতো উপরের দিকে উঠবেন যেন মনে হবে আপনি বৃষ্টিতে ভিজছেন।

IMG_20250803_202821.jpg
IMG_20250803_193633.jpg

আরো কিছুটা দূর ওঠার পরে খেয়াল করলাম খানিকটা দূরের কোনো কিছুই লক্ষ্য করা যাচ্ছে না মেঘের কারণে। পাইন বনের মধ্যে দিয়ে মেঘেদের এই আনাগোনা এতো কাছ থেকে উপলব্ধি করা সত্যিই এক স্বর্গীয় অনুভূতি। যেটা লেখার মাধ্যমে বা ছবিতে তুলে ধরা সম্ভব নয়। ব্যক্তিগতভাবে যারা এই দৃশ্য দেখেছেন, তারাই হয়তো আমার অনুভূতিটা অনুভব করতে পারবেন।

আমাদের সঙ্গে থাকা একজন দাদা আমাদের বেশ কিছুটা আগেই উপরে পৌঁছে গিয়েছিলেন। তবে আমরা অতটাও ব্যস্ততা দেখাই নি। ধীরে ধীরেই ওপরের দিকে গিয়েছিলাম। এক সময় যখন একেবারে উপরে পৌঁছালাম, তখন সেখানকার দৃশ্য দেখে কিছুক্ষণ একে অপরের দিকে তাকালাম, সত্যিই বোধহয় উপরে না এলে অনেক কিছু মিস করতাম।

IMG_20250803_202912.jpg
IMG_20250803_202955.jpg
IMG_20250803_202934.jpg

এ কথা একেবারেই বলবো না যে সেখানকার লেকটা দেখতে অসম্ভব সুন্দর ছিলো। কারণ এর থেকেও অনেক সুন্দর লেক আমি এর আগে দেখেছি। আমি শুধু সেখানকার পরিবেশের কথা বলছি, চারিদিকে শুধু পাইন বন আর তার মধ্যে দিয়ে শুধুই মেঘের আনাগোনা ছাড়া আর কিছুই নেই। এই দুটো জিনিস যে একটা পরিবেশকে এতো সুন্দর করে তুলতে পারে, সেটা বোধহয় না দেখলে বিশ্বাস করতে পারতাম না।

সেখানে ছোট্ট একটা দোকান চোখে পড়লো, যেখানে আপনি ম্যাগি, জল, চা এবং বিভিন্ন পানীয় পাবেন। সেখান থেকে একটা জলের বোতল কিনে আমরা তিনজনেই জল খেলাম। বাকি জলটা ব্যাগেই রাখা হয়েছিলো। যদি ফেরার পথে লাগে এমনটা ভেবে।

IMG_20250803_202640.jpg

সেখানে জিনিসের দাম একটু বেশি, আর হওয়াটা খুব একটা অস্বাভাবিক নয়। কারণ প্রতিদিন এতোটা কষ্ট করে ওপরে এসে যারা বিক্রি করেন, তারা একটু দাম বেশি নেবে এটা খুব স্বাভাবিক। অনেকেই সেখানে ম্যাগি ট্রাই করছিলো, কিন্তু আমরা আর আলাদা করে কোনো কিছু খাইনি, শুধু জল খেলেছিলাম।

এরপর সেখানে বসে অনেকটা সময় অতিবাহিত করলাম। বিভিন্ন ধরনের ছবি তুললাম। সেই লেকের পাশ থেকে সরু একটা রাস্তা উপরে দিকে উঠেছে। আমাদের সঙ্গে থাকা দাদা ওখানে গিয়ে দেখলেন, বড় একটা পাথর রাখা আছে। সেটা শোনার পরে আমরা তিনজনও সেই দিকেই রওনা করলাম।

IMG_20250803_202744.jpg

যখন এত কষ্ট করে উপরেই এসেছি, তখন পাথরটা দেখাইবা বাকি রাখবো কেন। একটু উপরে গিয়ে দেখলাম বিশাল বড় একটা পাথর রয়েছে। এরপর তিনজন মিলে সেই পাথরের উপরে উঠে বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও তুললাম। ভিডিওগুলো আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পারলাম না। তবে ছবিটা শেয়ার করলাম। আরো অনেক অঙ্গভঙ্গিতে ছবি তুলেছিলাম বটে, তবে তার সবগুলো আমার ফোনে নেই।

IMG_20250803_195038.jpg

যাইহোক সেখানে অনেক সুন্দর সুন্দর মুহূর্ত কাটানোর পর আবার নিচে ফিরে আসার পালা। তাই সেখানকার সৌন্দর্য্যকে বিদায় বলে ধীরে ধীরে আবার নিচে আসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সত্যিই আর কখনো ওখানে যেতে পারব কিনা জানিনা, তবে অনেক কষ্ট হওয়া সত্ত্বেও যে এই স্বর্গীয় সুখটা অনুভব করতে পেরেছি এটাই বলতে পারেন অনেক বড় প্রাপ্য।

আমাদের সঙ্গে যাওয়া আরো দুজন শুধুমাত্র উপরে ওঠার ভয়ে অর্ধেক রাস্তা থেকে ফিরে গেছে। তবে তারা না এসে ভুল করেছে, পরবর্তীতে ছবিগুলো দেখে সেই আফসোস করছিল।যাইহোক আমরা যখন নামছিলাম, তখন অনেকেই ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠছিলেন।

IMG_20250803_195110.jpg

অনেকে খুব দ্রুত ওঠার চেষ্টা করছিলেন যাতে খুব তাড়াতাড়ি পৌঁছে যায়। তবে আমরাও তাদেরকে সেই সাজেশন দিচ্ছিলাম যে, এখনো অনেকটা উপরে উঠতে হবে তাই ধীরে ধীরে ওঠাই ভালো। কারণ আমাদেরকেও সকলেই সাজেশন দিয়েছিলে এবং তাদের কথা শুনেই আমরা একটু বিশ্রাম নিয়ে নিয়ে উপরে উঠেছিলাম বলে, কষ্ট কিছুটা হলেও কম হয়েছিলো।

IMG_20250803_203051.jpg
IMG_20250803_203025.jpg

যাইহোক এরপর ধীরে ধীরে নিচে নেমেও খানিকক্ষণ বিশ্রাম করে, সেখান থেকে বিদায় নিলাম। একেবারে শেষ মুহূর্তে নিচে এসে সম্পূর্ণ লামাহাটার একটা ছবি নেওয়ার চেষ্টা করেছি, যাতে স্মৃতির খাতায় এই মুহূর্তগুলি জমা রাখতে পারি।

এটাই ছিল আমার লামাহাটা দেখার অনুভূতি, যা সত্যিই লেখার ব্যক্ত করা কঠিন। তবু আমি চেষ্টা করলাম সবটা আপনাদের সাথে শেয়ার করার। ছবি দেখে আপনাদের কেমন লাগলো অবশ্যই মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন।

ওখান থেকে বেরিয়েই আমরা লাঞ্চ করেছিলাম লামাহাটার কোলে সেই রেস্টুরেন্টে, যেখানে সবটাই বাঙালিয়ানায় মোড়া ছিলো। এরপর আমরা কোথায় গিয়েছিলাম সে বিষয়ে পরবর্তী পোস্টে আপনাদের সাথে গল্প করবো। আজকের পোস্ট তাহলে এখানেই শেষ করি। ভালো থাকবেন।

Sort:  
TEAM FORESIGHT

Congratulations!

Your post has been supported by SC-05. We support quality posts, quality comments anywhere, and any tags


1000063159.gif

 5 days ago 

Thank you for your support @sduttaskitchen ma'am. 🙏

Loading...