"অর্থোপেডিক এর কাছে যাওয়ার‌‌ মুহুর্ত- সামান্য ব্যাথাও‌ বড়‌ ক্ষতি‌ করতে‌‌ পারে"

in Incredible India18 hours ago (edited)
IMG_20250924_151418.jpg
"আমাদের ‌পাড়ার পুজোর প্যান্ডেলের প্রস্তুতি"

Hello,

Everyone,

কিছুক্ষণ আগেই ফিরলাম ননদের বাড়ি থেকে। আসলে হঠাৎ করেই যেতে হয়েছিলো, তবে ননদের বাড়িতে নয়। প্রথমে গিয়েছিলাম ননদের বড় ছেলেকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে। কখনো কখনো সামান্য জিনিসকে আমরা যখন গুরুত্ব না দিই, তখন সেই জিনিসটাই বড় আকার ধারণ করে। বিশেষ করে শারীরিক সমস্যার ক্ষেত্রে।

সত্যি কথা বলতে যখন শরীরে জোর থাকে, তখন অনেক ছোটখাটো সমস্যাকে আমরা উপেক্ষা করি। কিন্তু এই ছোটো সমস্যাগুলোই বয়সের সাথে সাথে অনেক বড় সমস্যা তৈরি করে। এই বিষয়টা আমরা সকলেই জানি, কিন্তু তৎসত্ত্বেও বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে না দেখাটা বোধহয় আমাদের সহজাত প্রবৃত্তি হয়ে গেছে।

যাইহোক আপনাদেরকে আগেই জানিয়েছি, কাজের সূত্রে ননদের বড় ছেলে ছত্রিশগড়ে থাকে। সেখানে যখন নতুন নতুন কাজ শুরু করেছিলো, তখন একবার হাতে ব্যথা পেয়েছিলো, এটা আমাদেরকে জানিয়েছিল।

IMG_20250924_151406.jpg
"ভ্যানে বসে তোলা ছবি,‌আশাকরি রোদ্দুরের তীব্রতা বুঝতে পারছেন"

তখন পাশেরই ছোট্ট একটা হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিলো অফিসের স্টাফরা। সেখানে ড্রেসিং করে শুধুমাত্র কয়েকটা ব্যথা কমানোর ওষুধ, আর তার সাথে হাতের কাটা জায়গা শোকানোর একটা মলম দিয়েছিলো ব্যাস।

যদিও ফোনে ননদ অনেকবারই ওকে বলেছিল ভালো জায়গায় গিয়ে একবার এক্সরে করে নিতে।‌ সেটা করেছিলো তবে, তখন ওর মনে হয়েছিলো সামান্য ব্যথা, ওষুধ খেলেই ঠিক হয়ে যাবে। এরপর সময়ের সাথে সাথে ও বুঝতে পারে যে বাম হাতের মধ্যমা আঙুলটিতে জোর কম পাচ্ছে এবং আঙ্গুলটির মুভমেন্টও কমে যাচ্ছে।

হাতের বাকি আঙ্গুলগুলো স্বাভাবিকভাবে নড়াচড়া করাতে পারলেও, মধ্যমা আঙ্গুলটিকে ও ভাঁজ করতে পারছে না। এই বিষয়টা ফোনে না জানালেও বাড়িতে আসার পর যখন ননদ ওর ব্যথা জায়গাটা দেখতে চাইছিলো, তখন হঠাৎ করেই খেয়াল করল হাতের অন্যান্য আঙুলগুলোর তুলনায় মধ্যমা আঙ্গুলের ওপরের অংশটুকু কেমন যেন অসার হয়ে আছে।

IMG_20250924_212604.jpg
"ডাক্তার দেখাতে এই ডায়াগনোস্টিক‌ সেন্টারে গিয়েছিলাম"

কোনো কিছু তোলার সময় বাকি চারটে আঙুলের ওপরে জোর বেশি দেয়, কারণ মধ্যমা আঙ্গুলটি ততটা শক্তিশালী নেই। এই বিষয়টিকে খেয়াল করার পরেই গত সোমবার একজন অর্থপেডিকে দেখানোর জন্য নাম লেখানো হয়েছিলো, কিন্তু সেদিন ডাক্তারবাবু আসেননি।

তাই আজ সকালে ডায়াগনোস্টিক সেন্টার থেকে ফোন করে জানানো হয়েছিল ডাক্তারবাবু বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ আসবেন। সেই সময় ওখানে উপস্থিত থাকতে হবে। যেহেতু ততক্ষণে ননদের হাসবেন্ডও অফিসে পৌঁছে গিয়েছিলো এবং ননদের পক্ষে তার ছোট ছেলেকে একা রেখে যাওয়া সম্ভব ছিল না। তাই আমাকেই যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলো, আর আমিও না করতে পারিনি।

তাই দুপুরে পুজো দিয়ে লাঞ্চ করে তিনটে নাগাদ বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়লাম। আজ সারাদিন প্রচন্ড রোদ্দুর ছিলো। তবে ফিরতে যেহেতু সন্ধ্যা হবে তাই আর ছাতা নিইনি। বাড়ির সামনে দাঁড়াতেই সৌভাগ্যবশত একটা ভ্যান পেয়ে গেলাম। রৌদ্র তখন কতখানি তীব্র ছিল আশাকরি আমার শেয়ার করা ছবিটি দেখে আপনারা বুঝতে পেরেছেন।

কিছুক্ষণ এগিয়েই দেখলাম আমাদের পাড়ার পুজো প্যান্ডেল। আসলে পুজোর মধ্যে বেরিয়ে কখনো এই প্যান্ডেল দর্শন করা হয় না। তবে আজ যেহেতু প্যান্ডেল তৈরির কাজ চলছে এবং দুপুরবেলায় বেরিয়েছি তাই একটা ছবি তুলে নিলাম ভ্যানে বসেই।

IMG_20250924_155048.jpg
"ভিতরে ‌অপেক্ষা করার সময় তোলা ছবি"

আমাদের বাড়ি থেকে এই ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে যেতে খুব বেশি সময় লাগে না। পূর্বে শ্বশুরমশাইকে নিয়ে বেশ কয়েকবার যাওয়া আসা করা হয়েছে, তাই সময়ের আন্দাজ আছে বলে তেমনভাবেই বেরিয়েছিলাম, যাতে সময় মতন পৌঁছে যাই।

অন্যদিকে ননদের বাড়ি থেকে ননদের ছেলেও এসে পৌঁছালো, এরপর দুজন একসাথে গিয়ে ভেতরে অপেক্ষা করলাম। কিছুক্ষণ বাদে ওর নাম ধরে ডাকলে আমরা দুজন গিয়ে ডাক্তারের চেম্বারের বাইরে বসলাম। তখন দেখলাম একটা ১২ দিনের বাচ্চাকে নিয়ে চাইল্ড স্পেশালিস্ট এর কাছে দেখাতে এসেছে একজন মহিলা।

IMG_20250924_212648.jpg
"এই সেই ১২ দিনের বাচ্চাটা"

সেখানে বসে তাদের কথাবার্তা শুনে বুঝতে পারলাম বাচ্চাটিকে আয়া মাসি নিয়ে এসেছেন। কারণ ওর মায়ের যেহেতু সিজার হয়েছে তাই ওনার পক্ষে আসা সম্ভব ছিলো না। যাইহোক একটু পরে আমাদের ডাক পরলো। আমরাও ভিতরে গিয়ে কথা বললাম। তবে যা জানতে পারলাম সেটা খুবই খারাপ লাগার।

যখন ওর হাতে লেগেছিলো, সেই সময় উচিত ছিলো একজন ভালো অর্ধপেডিকের সাথে পরামর্শ করা। কারণ ওর আঙ্গুলের ভেতরের একটা শিরা কেটে গেছে, যেটার সাহায্য আমরা আঙুল মুভমেন্ট অর্থাৎ আঙুলগুলোকে ভাঁজ করতে পারি। যেহেতু ওই শিরাটা কেটে গেছে, তার কারণে আর আঙ্গুলটাকে ও ইচ্ছা মতো ভাঁজ করতে পারছে না।

যদি তখন ডাক্তার দেখানো হতো তাহলে সেই সময় অপারেশন করে এটাকে ঠিক করা যেতো। কিন্তু যেহেতু মাঝখানে দু-তিন মাস কেটে গেছে, তাই এখন প্লাস্টিক সার্জেন্টকে দেখাতে হবে। তবে আদেও এটা কতটা ঠিক হবে, কিংবা হবে না, সেই বিষয় নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।।

IMG_20250924_212704.jpg
"অঙ্কনের (ননদের বড় ছেলে) প্রেসক্রিপশন"

এই ডাক্তার বাবু একজন প্লাস্টিক সার্জেন্ট এর কাছে রেফার করেছেন, যিনি ওনার ক্লাসমেট। তিনি বারাসাতের নারায়ণা হসপিটালেই বসেন। ওনার কাছ থেকে নম্বর নিয়ে আমরা ডায়াগনোস্টিক সেন্টার থেকে বেরিয়ে ননদের বাড়িতে গেলাম। সেখানে সমস্ত বিষয়টা ননদকে জানালাম, তিনি হাজবেন্ডকে ফোন করলেন এবং অনলাইনে একটা অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুক করা হলো, আগামী কালকের জন্য।

IMG_20250924_212748.jpg
"অনলাইনে ডাক্তারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নেওয়ার সময়কার স্ক্রিনশট"

ননদকে বলে এসেছি ননদের হাসবেন্ডকে নিয়ে যাওয়ার জন্য, কারণ যেহেতু তাদের ছেলে তাই সার্জারির ব্যাপারে তাদের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হওয়া উচিত। জানিনা আমাকেও যেতে বলবে কিনা। আগামীকাল আমার নিজের একটা অন্য প্ল্যান ছিলো, তবে সেটি আদেও সফল হবে কিনা বুঝতে পারছি না।

যাইহোক যদি সেই সময় এই ব্যথাটাকে একটু গুরুত্ব দিয়ে দেখতো, তাহলে আজ হয়তো আর অপারেশন করার প্রয়োজন পড়তো না।** সেই সময় অপারেশন করলে আঙ্গুলের মুভমেন্ট একেবারে সঠিক থাকতো।

IMG_20250924_212909.jpg
"ননদের বাড়িতে স্যান্ডউইচ ‌খাওয়ার মুহুর্ত"

তবে ও যেখানে কাজ করে তার আশেপাশে এমন কোনো ভালো হসপিটাল ছিলো না যেখানে গিয়ে ও ভালো ডাক্তার দেখাতে পারতো। আর ও ভেবেছিল হয়তো ব্যথা আছে সেটা সময়ের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যাবে, তবে বিষয়টা যে এই জায়গায় পৌঁছে যাবে ও নিজেও বুঝতে পারেনি।

যাইহোক বিষয়টা জেনে খারাপই লাগছে। তবে এখন প্লাস্টিক সার্জেন্টকে দেখালে তবেই বোঝা যাবে আদেও অপারেশন করিয়ে এই মুহূর্তে কোনো লাভ আছে কিনা। না হলে এই ভাবেই থাকতে হবে আজীবন এবং এই আঙ্গুলটিও ধীরে ধীরে হয়তো অসার হয়ে যাবে।

তবে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করি যাতে অপারেশন করার সময় অতিক্রম না হয়ে যায় এবং অপারেশন করার পর ওর আঙ্গুল যেন ঠিক হয়ে যায়। সত্যি বলতে একেবারে বাচ্চা ছেলে, ওর সারাটা জীবন এখনো পড়ে রয়েছে তাই এখন থেকেই যদি এমনটা হয় সেটা আমাদের কারোরই কাম্য নয়।

IMG_20250924_212813.jpg
"বাড়িতে ফেরার পথে এই প্যান্ডেলটা চোখে পড়লো"

আপনারাও একটু কামনা করবেন যাতে সামান্য অপারেশন করলেই ও পূর্বের মত আঙ্গুলের জোর ফিরে পেতে পারে। যাইহোক বিকেল থেকে আজকে এই ভাবেই সময়টা পার করেছি এবং এর থেকে একটা বিষয় শিখলাম, সামান্য কোনো ব্যথাকেও উপেক্ষা করা ঠিক নয়, কারণ সামান্য কোনো কিছুই আমাদের জীবনে বড় সমস্যা নিয়ে আসতে পারে।

যাইহোক আজকের লেখা এখানেই শেষ করছি। আপনারা সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। শুভরাত্রি।

Sort:  

1000064492.gif

Curated by : lirvic
 6 hours ago 

Thank you @lirvic for your support.🙏

Loading...