**ইকোপার্কে কাটানো সূর্যাস্তের কিছু সুন্দর মুহুর্তের গল্প**
![]() |
---|
Hello,
Everyone,
ইতিমধ্যে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে শুরু করেছে। সবেমাত্র খাওয়া-দাওয়া শেষ করে পোস্ট লিখতে বসলাম। আসলে আজ সকাল থেকে বাড়িতে বেশ কিছু কাজ ছিলো। যাইহোক সে বিষয়ে অন্য কোনো পোস্টে কথা হবে, তবে এই পড়ন্ত বিকেলে আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করবো, ইকো পার্কে কাটানো পড়ন্ত বিকেলের গল্প।
আশাকরছি আমার লেখা গত দুটো পোস্টে ইকোপার্কে বান্ধবীদের সাথে কাটানো কিছু মুহূর্তের গল্প আপনাদের ভালো লেগেছে। ছবির মাধ্যমে মুহূর্তগুলো আপনারাও বেশ কিছুটা উপভোগ করেছেন। তাহলে চলুন আজ কিছু পড়ন্ত বিকেলের মুহূর্ত এই পোস্টের মাধ্যমে আপনাদের সামনে তুলে ধরি।
![]() |
---|
আগের পোস্টে যেমন আপনাদেরকে জানালাম, আইফেল টাওয়ারটা পার্কের একেবারে শেষ প্রান্তের দিকে। তাই অনেকটা হেঁটে সেখানে পৌঁছাতে হয়েছিলো। তবে হাঁটার পথটা খুব সুন্দর। একেবারে ঝিলের পাশ দিয়ে সুন্দর করে রাস্তা তৈরি করা, আর তার পাশেই রয়েছে বসার জায়গা। তবে সবথেকে যা আকর্ষণীয় ছিলো, তা ছিলো সেখানকার ঘাস গুলো।
![]() |
---|
কাঠ দিয়ে তৈরি বসার সুন্দর সুন্দর চেয়ার ছেড়ে প্রত্যেকেই সেই ঘাসের উপরে বসতেই পছন্দ করছে। আমরাও তাদের ব্যতিক্রম নই। তাই সকলে মিলে একটা ফাঁকা জায়গা দেখে, ব্যাগ পত্র নিয়েই বসে পড়লাম। অনেকটা হেঁটে আসার জন্য প্রথমে খানিকক্ষণ বসে বিশ্রাম নিলাম।
সেই সময় বসে ট্রেন টাইমও দেখে নিলাম। কারণ কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের ওখান থেকে রওনা দিতে হবে। প্রথমে বাসে করে স্টেশন পর্যন্ত পৌঁছাতে হবে, তারপর ট্রেন ধরে বাড়ি। তাই বসে থাকাকালীনই বাসের সময় হিসেব করে, কোন ট্রেন আমরা ধরবো সেটা ঠিক করে নিলাম।
![]() |
---|
ইতিমধ্যে পার্কের সকল লাইট গুলো জ্বলতে শুরু করেছে। ল্যাম্পপোস্টের আলো গুলো দেখতে সত্যিই সুন্দর লাগছিলো। তাছাড়া ঝিলটাকে ঘিরে যে বড় রেলিং ছিলো, সেই রেলিং গুলোর মাঝেও সুন্দরভাবে লাইট লাগানো ছিলো। আর সবথেকে যেটা ভালো লাগছিলো, সেটা হলো দূর থেকে ভেসে আসার রবীন্দ্র সংগীত।
![]() |
---|
গোটা পার্ক জুড়ে বিভিন্ন জায়গাতে স্পিকার লাগানো আছে। বিকেল হতেই এখানে সুন্দর রবীন্দ্র সংগীত কিংবা আধুনিক গান চালানো হয়, তবে সবটাই বাংলা। আমি যতবার পার্কে গিয়েছি আমি অন্ততপক্ষে বাংলা গান শুনেছি। তবে হিন্দি গান চালানো হয় কিনা সে বিষয়ে সত্যিই আমার কোনো ধারণা নেই।
পড়ন্ত সূর্যের লাল রং, সূর্য ডোবার মুহূর্তের হালকা অন্ধকার, পার্কের চারিপাশে জ্বলে ওঠা লাইট, আর দূর থেকে ভেসে আসা রবীন্দ্র সংগীত, এই সমস্ত কিছু মিলে যে এক অসামান্য মুহূর্ত তৈরি হয়েছিলো, সেটা সত্যিই লিখে বোঝানো সম্ভব নয়।
![]() |
---|
আমরা যেখানে বসেছিলাম ঠিক তার সামনেই দুজন বসেছিলো। একে অপরের সাথে অনেকক্ষণ ধরেই সুন্দর মুহূর্ত কাটাচ্ছিল ওরা। এক মুহূর্তের জন্য ওদেরকে দেখে শুভকে মিস করলাম।
আসলে এইরকম মুহূর্ত কাটানোর ইচ্ছা বোধহয় প্রত্যেকেরই হয়। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। তবে শুভ বরাবর বড্ড বেশি ঘরকুনো। তাই এই রকম ভাবে আমাদের কখনো সময় কাটানো হয়ে ওঠেনি। এখন আর এই সমস্ত মুহূর্তগুলো কাটানোর মতো মানসিকতা নেই, কিন্তু তবুও যখন পুরনো ইচ্ছে গুলো মনকে নাড়া দেয়, তখন কিছুক্ষণের জন্য হলেও মনটা ভারাক্রান্ত হয়।
![]() |
---|
যাইহোক আজ এইসব কথা থাক। আপনারা ঝিলের মাঝখানে যে সবুজ রঙ্গে লাইট গুলো দেখতে পারছেন, ওগুলো কিন্তু ওখানকার রিসোর্টের লাইট। এই ঝিলের মধ্যে প্রচুর রাইডিং এর ব্যবস্থাও আছে এবং জলের মধ্যে তৈরি করা ছোট্ট ছোট্ট রিসোর্ট গুলোতে চাইলে আপনারা থাকতেও পারেন। সেখানে আলাদা করে রেস্টুরেন্ট তো আছেই, এবং থাকার জন্য ছোট বড় বিভিন্ন রুমের ব্যবস্থাও রয়েছে।
সেখানে ফ্যামিলি নিয়ে কিংবা বন্ধুদেরকে নিয়েও আপনারা থাকতে পারেন। লাইটগুলো জ্বলার পর রিসোর্ট গুলো দেখতে আরো বেশি ভালো লাগছিলো। রাতের বেলায় জলের মাঝখানে এইরকম একটা রিসোর্টে থাকার অনুভূতি নিশ্চয়ই ভালো হবে।
![]() |
---|
আমরাও ওখানে বসে আলোচনা করছিলাম যদি একটা রাত এখানে আমরা থাকতে পারি। জানিনা আদেও কোনোদিনও এটা সম্ভব হবে কিনা, তবে যদি কখনো হয় সেই অনুভূতি তো অবশ্যই আপনাদের সাথে শেয়ার করব।
যাইহোক দেখতে দেখতে আমাদেরও বাড়ি ফেরার সময় হয়ে আসছিলো। কিন্তু ফিরতে ইচ্ছে করছিল না কিছুতেই। একটা গোটা দিন বান্ধবীদের সাথে খুব সুন্দর ভাবে উপভোগ করেছিলাম।
![]() |
---|
![]() |
---|
ফেরার আগেই বেশ কিছুক্ষণ ফটোশুট হলো আমাদের। প্রথমে সকলেই সিঙ্গেল সিঙ্গেল ছবি তুললো। তারপর শুরু হলো দলবদ্ধভাবে পাগলামি। আশাকরছি ছবিগুলো দেখে আপনারাও বুঝতে পারবেন আমরা কি কি করেছি।
তবে যাই বলুন না কেন, পড়ন্ত বিকেলে আইফেল টাওয়ারের সামনে, সবুজ ঘাসের উপরে বসে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুনতে শুনতে যে সুন্দর মুহূর্ত গুলো আমরা কাটিয়েছিলাম, তা যেন অবিশ্বাস্য ছিলো। হয়তো আরো কিছুক্ষণ সময় যদি কাটাতে পারতাম, তাহলে আরো সুন্দর মুহূর্ত উপভোগ করা সম্ভব হতো। তবে যেহেতু আমাদেরকে আবার বাড়িতে ফিরতে হবে এবং পার্কটি আমাদের বাড়ি থেকে অনেকটাই দূরে, তাই আর বেশিক্ষণ বসা সম্ভব হয়নি।
![]() |
---|
রাত আটটা পর্যন্ত পার্ক খোলা থাকে আমার বিশ্বাস সেই রাতের সৌন্দর্য্য আরো অনেক বেশি সুন্দর হয়। তবে যাদের বাড়ি খুব কাছাকাছি তাদের পক্ষেই কেবলমাত্র সেগুলো উপভোগ করা সম্ভব। সত্যি বলতে আমরা যখন গেট দিয়ে বেরিয়ে আসলাম, তখনো বহু মানুষ তার নিজের মনের মানুষ কিংবা পরিবারের সকলকে নিয়ে পার্কে প্রবেশ করছিলো।
তারা আরো বেশ কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে গেট বন্ধ হওয়ার পূর্বেই হয়তো বেরিয়ে আসবে। তবে আমাদের পক্ষে তা সম্ভব ছিল না বলে, আমরা বেরিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলাম। এরপর আর কি, বাস ধরে স্টেশন, সেখান থেকে ট্রেন ধরে বাড়ি।
![]() |
---|
ফেরার পথে আমার স্টেশনে সবার আগে ছিলো, তাই ওদেরকে বিদায় জানিয়ে ট্রেন থেকে নেমে ভ্যান ধরে বাড়িতে পৌঁছেছিলাম। খুব সুন্দর একটা দিন কাটিয়েছিলাম সেদিন।
যাইহোক যদিও অনেকদিন বাদে আপনাদের সাথে পোস্টের মাধ্যমে মুহূর্তগুলো শেয়ার করলাম। তবে বিশ্বাস করুন মনের মনিকোঠায় সেই দিনের স্মৃতি আজও অমলিন। আশাকরি আপনাদের ছবিগুলো দেখতে ভালো লেগেছে। আপনাদের অনুভূতিগুলো মন্তব্যের মাধ্যমে অবশ্যই জানাবেন। সকলে ভালো থাকবেন।
