"রাধা অষ্টমীর দিনটি যেভাবে কাটিয়েছিলাম, তার কিছু মুহূর্তের গল্প"
![]()
|
---|
Hello,
Everyone,
আশাকরি আপনারা সকলে ভালো আছেন, সুস্থ আছেন এবং আপনাদের সকলের আজকের দিনটি খুব ভালো কেটেছে। গত রবিবার ছিলো রাধাঅষ্টমী। বাঙালি কিংবা বলা ভালো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের জন্য এটি একটা বিশেষ দিন।
যদিও এর পূর্বে আমি কখনো রাধাঅষ্টমী পালন করি নি। কারণ আমার বাপের বাড়িতে কখনোই রাধা কৃষ্ণের পূজা হতো না। মূলত লক্ষীদেবীর আরাধনাই করা হতো। আমার বিয়ের পর থেকে আমার শ্বশুর বাড়িতে আমি প্রথম এই রাধাকৃষ্ণ পুজো শুরু করি। আলাদা বিশেষ কোনো নিয়ম আছে এরকমটা নয়, তবে কিছু মন্ত্র আছে যেগুলো আলাদাভাবে আমাকে শিখতে হয়েছে।
জন্মাষ্টমী, রাধাঅষ্টমী এই দিনগুলোকে কিভাবে উদযাপন করা হয়, সেগুলো এখানে এসে শিখেছি। শাশুড়ি মায়ের মুখে শুনেছি, আমাদের প্রত্যেকেরই জীবনে অন্তত একবার জন্মাষ্টমী ব্রত পালন করা উচিত। আর যারা আরও বেশি করতে পারবে তাদের জন্য আরও ভালো। জন্মাষ্টমী ব্রত পালন করলেও রাধাঅষ্টমী সেই ভাবে কখনো পালন করা হয়নি। এমনকি এইবারও সম্পূর্ণ নিয়ম নিষ্ঠা মেনে যে আমি পালন করেছি এরকমটা নয়, তবে সকাল থেকে নির্জলা উপবাস করে রাধারানীর পুজো দিয়েছিলাম।
খুব সত্যি কথা বলতে, গল্পের বই পড়ার নেশা আমার খুব একটা নেই, আর পৌরাণিক বই পড়ার আগ্রহ আমার মধ্যে বরাবর একটু কম ছিলো। এই কারণেই পুরানের সমস্ত গল্প বা চরিত্রের নাম আমার কাছে মোটামুটি অজানাই। তবে আজকাল চেষ্টা করি ইউটিউবের মাধ্যমে এই সকল জিনিসগুলো জানার। তাই রাধা অষ্টমীর দিন সকাল বেলাতে আমি ইউটিউব থেকে ভিডিও চালিয়েছিলাম এবং এই দিনটির তাৎপর্য সম্পর্কে যেটুকু জানলাম, তা মনে বেশ আগ্রহের সৃষ্টি।
![]()
|
---|
জন্মাষ্টমী শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিন হিসেবে পালিত হয়, ঠিক তার ১৫ দিন বাদেই পালিত হয় রাধা অষ্টমী অর্থাৎ শ্রীরাধিকার জন্ম দিবস।
কথিত আছে রাজা বৃষভানু এবং তাঁর স্ত্রী কীর্তি, তাদের বিয়ের বহু বছর পরেও কোনো সন্তান লাভ করেননি। তারা তাদের প্রজাদেরকে সন্তান রূপে ভালোবাসতেন এবং তাদের কষ্ট দূর করার জন্য সর্বদা পাশে থাকতেন। তবে নিজের সন্তানের আকাঙ্ক্ষা তাদের সব সময় ছিলো।
একবার বৃষভানু পুকুরের কাছে গিয়ে একটা সুন্দর পদ্ম ফুল দেখতে পান। যে ফুলটি অসম্ভব সুন্দর ছিলো দেখতে এবং একটা অসাধারণ জ্যোতি যেন চারিদিক আলোকিত করেছিলো। কৌতুহলবশত তিনি ফুলটি দেখার জন্য এগিয়ে যান এবং শিশু রাধারানীকে ওই ফুলের ওপরে শুয়ে থাকতে দেখেন।
অপূর্ব সুন্দর ছিল তার মুখশ্রী। চারদিকে যেন আলোর ছটা ছড়িয়ে পড়েছিলো তার উপস্থিতিতে। তিনি ফুলটির উপর থেকে শিশু রাধারানীকে বাড়িতে নিয়ে আসেন এবং স্ত্রীর কোলে দেয়। দুজনেই রাধারানীকে পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন এবং তারা সন্তান স্নেহে তাকে বড় করবেন, এই সিদ্ধান্ত নেন। তাই সেই দিনটিকেই রাধা রানীর জন্মদিন হিসেবে ধরা হয়।
তবে ঈশ্বরের লীলা বোঝা বড় কঠিন। সন্তান স্নেহে বড় করে তুললেও রাধারানী কিছুতেই চোখ খুলতেন না, কোনো কথাও বলতে না। এই বিষয়টি খেয়াল করে বৃষভানু এবং কীর্তি অনেক বেশি চিন্তিত হয়ে পড়ে পড়েন। তারা আশঙ্কা করেন হয়তো রাধারানী আজীবনকাল অন্ধ হয়ে থাকবেন।
কথিত আছে বৃষ ভানু ও শ্রীকৃষ্ণের পালক পিতা নন্দ খুব ভালো বন্ধু ছিলেন। শ্রীকৃষ্ণকে যশোদা ও নন্দের কাছে রেখে আসার পর, একদা রাধারানীর জন্মদিনে বৃষ ভানু তাদেরকে আমন্ত্রণ জানান এবং তারাও শ্রীকৃষ্ণকে সাথে নিয়ে রাধারানীর বাড়িতে উপস্থিত হন। সেই সময় শ্রীকৃষ্ণ রাধারানীর সামনাসামনি আসেন এবং সেই মুহূর্তেই তিনি চোখ খুলে তাকান। অর্থাৎ রাধারানী তার চোখ খুলে পৃথিবীতে প্রথম যা দেখেছিলেন, তা হলো ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখ।
![]()
|
---|
কাহিনীটি আমি সেদিন ইউটিউবে শুনেছি। আপনাদের মধ্যে কারা এই কাহিনীটি জানতেন, অবশ্যই জানাবেন। যাইহোক রবিবার শুভর ছুটি থাকায় ও বাড়িতেই ছিলো। এই কারণে ওকে বলেছিলাম সকালে উঠে, বাজার থেকে আমাকে একটা পদ্ম ফুল এবং একটু মিষ্টি এনে দিতে। আমি সকালে উঠে ঘরের কিছু কাজ সেরে নিয়ে, স্নান করে পুজোর যোগাড় করলাম। আর শুভ হোক ঘুম থেকে উঠে, চা খেয়ে, ফ্রেশ হয়ে, বাজারে চলে গিয়েছিলো। সেদিন পদ্মফুলের যা দাম ছিলো, তা প্রায় অবাক হওয়ার মতো।
তবে এই সকল দিনগুলোতেই মূলত ফুল ব্যবসায়ীদের ইনকাম। কারণ এই সকল দিনগুলোতে যতই দাম হোক না কেন বছরের এই একটা দিন আমরা সকলেই চেষ্টা করি ঠাকুরকে তার প্রিয় জিনিসটা দেওয়ার। শুভ দোকান থেকে ফিরে এসে বলছিল ফুলের চাহিদার কথা এবং তার পাশাপাশি দামের কথাও। ও নিজে চার পাঁচটা দোকান ঘুরে তবে ফুল পেয়েছিলো।
যাইহোক তারপর আমি সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে, পুজো সেরে নিয়েছিলাম। আর তারপর গীতা পাঠ করে, জল পান করেছিলাম। তারপর তো শুভ ও ওর বন্ধুর জন্য মটন রান্নাও করেছিলাম, যার রেসিপি আমি ইতিমধ্যেই আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। আপনাদের কার কার বাড়িতে এই রাধা অষ্টমী পালন করেছেন, অবশ্যই মন্তব্যের মাধ্যমে জানাবেন। সকলে ভালো থাকবেন। শুভরাত্রি।
(ছবিগুলো এডিট করার কারণে তারিখ পরিবর্তিত দেখাচ্ছে।)