"প্লাস্টিক সার্জেন্ট এর সাথে সাক্ষাৎ"
![]() |
---|
Hello,
Everyone,
সকলকে জানাই শুভ পঞ্চমীর শুভেচ্ছা। আশাকরি আপনারা সকলে ভালো আছেন, সুস্থ আছেন এবং আপনাদের সকলের আজকের দিনটি অনেক ভালো কেটেছে। আমার দিনটিও মোটামুটি ভালোই কেটেছে।
কয়েকদিন আগেই আপনাদেরকে জানিয়েছিলাম ননদের বড় ছেলের হাতে ব্যথা লাগার কারণে ওকে নিয়ে অর্থোপেডিকের কাছে গিয়েছিলাম। তবে তিনি আমাদেরকে একজন প্লাস্টিক সার্জেন্ট দেখানোর সাজেশন দিয়েছিলেন। তাই আর দেরি না করে আমরা সেই দিনই অনলাইনে অ্যাপার্টমেন্ট নিয়ে নিয়েছিলাম, পরদিন প্লাস্টিক সার্জেন্টকে দেখানোর।
আমি ভেবেছিলাম হয়তো ননদের হাজব্যন্ড যাবে। কিন্ত তিনি ফোন করে জানালেন যে, যেহেতু মাসের শেষ এবং সামনেই পুজো, তাই অফিস বন্ধ করা সম্ভব হবে না। এই কারণে আমাকে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। আর সত্যি বলতে আমিও মুখের উপরে না করতে পারিনি।
![]() |
---|
যদিও আমার সেদিন অন্য একটা প্ল্যান ছিলো, কিন্তু তবুও সেই প্ল্যানটা ক্যান্সেল করে আমি ওকে নিয়ে প্লাস্টিক সার্জেন্টকে দেখাতে যাওয়ার জন্য রাজি হয়েছিলাম। কারণ আমার মনে হয়েছিলো ওটাই বেশি জরুরী।
সত্যি বলতে জীবনে অনেক সময় এমন অনেক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি, যখন মনে হয়েছে আর কারো জন্যই কিছু করবো না। তবে সেটা সেই ক্ষণিকের অভিমান বা খারাপ লাগা বলতে পারেন। যখন প্রয়োজনে কেউ ডেকেছে তখন কাউকেই না করতে পারিনি।
সকালবেলা বাড়ির সকল কাজ বাজ সেরে, স্নান করে, পুজো দিয়ে নিয়েছিলাম. যেহেতু সেদিন বৃহস্পতিবার ছিলো তাই পুজো দিতে অনেকটা সময় অতিবাহিত হয়েছিল। দুপুরের দিকে বাড়ি থেকে বেরোলাম। তখন প্রচন্ড রোদ্দুর ছিলো। প্রথমে ননদের বাড়িতে গিয়েছিলাম, সেখান থেকে ননদের ছেলেকে নিয়ে বারাসাতের উদ্দেশ্যে রওনা করেছিলাম।
বারাসাত পৌঁছে আবার অটো বদল করে তারপর আমাদের পৌঁছাতে হতো নারায়ণা হসপিটালে। ননদের বাড়ি থেকে রওনা করার কিছুক্ষণ বাদে রাস্তার প্রচন্ড জ্যাম ছিলো গাড়ির। আসলে রাস্তার দুপাশে বড় বড় বাস দাঁড়িয়েছিলো। রাস্তার পাশেরই একটা অনুষ্ঠান বাড়িতে কিছু প্রোগ্রাম চলছিলো, সেখানেই বাসে করে মানুষজন এসেছিলো।
![]() |
---|
তবে বাসগুলো রাস্তার পাশে দাঁড় করিয়ে রাখাতে মাঝখান থেকে গাড়ি চলাচল করতে খুবই অসুবিধা হচ্ছিলো। আমরাও বেশ অনেকক্ষণ ধরেই জ্যামের মধ্যে আটকে ছিলাম। পরে সিভিক ভলেন্টিয়ারদের তত্ত্বাবধানে ধীরে ধীরে জ্যাম কাটলো, আর আমরাও এগিয়ে গেলাম। সেই মুহূর্তে গাড়ির ভিতরে বসে প্রচন্ড গরম লাগছিলো, কারণ রোদ্দুরের তাপ ছিল অনেক।
এইটুকুতেই যা সময় অতিবাহিত হয়েছে, এরপর বারাসাত পৌঁছে খানিকটা হেঁটে গিয়ে উল্টো দিকের অটোতে বসতেই, কিছুক্ষণের মধ্যে পৌঁছে গেলাম নারায়না হসপিটালে।
![]() |
---|
যাওয়ার পথে হঠাৎ করেই চোখ পড়লো রাস্তার পাশে। দেখলাম জায়গায় জায়গায় কাশফুল ফুটে আছে। দেখে মনটা আনন্দে ভরে উঠলো। কত বছর বাদে যে এরকম কাছ থেকে কাশফুল দেখলাম তার হিসাব নেই। ছোটবেলায় আমাদের যমুনা নদীর পাড়ে গেলেই প্রচুর কাশফুল দেখা যেতো। তবে আজকাল সেখানেও কাশফুল দেখা যায় না।
![]() |
---|
অথচ রাস্তার পাশের জমিতে, লড়ি স্ট্যান্ডে কিছু কিছু জায়গার কয়েকটা করে কাশফুল ফুটেছে, এটাই তো প্রকৃতির অদ্ভুত নিয়ম। চারিপাশ থেকে জানান দিচ্ছে শরৎ এসেছে। মায়ের আগমনী বার্তা এইভাবেই আকাশ, বাতাস ও প্রকৃতির মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে।
যাইহোক নারায়ণা হসপিটালে পৌঁছে, সেখানে জিজ্ঞাসা করে ও পি ডি সেকশনে গিয়ে, ডাক্তার বাবুর নাম বলাতে আমাদেরকে একটা রুমের সামনে বসতে বলা হলো।
![]() |
---|
আর ননদের ছেলের হাতে একটা ব্যান্ড পরিয়ে দিলো, যেখানে ওর নাম লেখা ছিলো। তবে সেখানে ছবি তোলার আর কোনো সুযোগ ছিল না এবং আমাদের খুব বেশিক্ষণ অপেক্ষাও করতে হয়নি। কিছুক্ষণ বাদে আমাদের নাম ধরে ডেকে নিলো এবং ডাক্তার বাবুর সাথে কথা বলে আমরাও বেরিয়ে এসেছিলাম।
ডাক্তারবাবুর বক্তব্য অনুযায়ী অপারেশন করা যেতে পারে, তবে অপারেশনের পর হাতে দেড় মাস প্লাস্টার রাখতে হবে এবং তারপর আরো এক মাসের মতন চলবে ফিজিওথেরাপি। তবে এই মুহূর্তে অপারেশন হবে কিনা সেই সিদ্ধান্ত অবশ্যই ননদ ও ননদের হাজব্যান্ড নেবে। আমি শুধু সমস্ত ইনফরমেশন গুলো ডাক্তারবাবুর কাছে শুনে এসে ওনাদেরকে জানিয়েছিলাম।
![]() |
---|
যাইহোক ফেরার পথে আকাশ কালো করে মেঘ করেছিলো, বৃষ্টি আসবে এমনটা আশঙ্কা করছিলাম। তবে রাস্তার মাঝখানেই যে এতো জোরে বৃষ্টি নামবে তা ভাবিনি। অটোতে বসে দুজন প্রায় ভিজে গিয়েছিলাম।
বাড়িতে ফিরে ননদকে সমস্ত বিষয়টা বুঝিয়ে বললাম এবং যে প্রেসক্রিপশন ছিলো সেটার ছবি তুলে ননদের হাসবেন্ডকে পাঠিয়ে দিলাম। কারণ এর পরবর্তীতে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার সেটা অবশ্যই ওনাদেরকে নিতে হবে।
বাড়ি আসার পরিকল্পনা করছিলাম, কিন্তু তখনও বাইরে বৃষ্টি হচ্ছিলো অঝোরে। তাই বেশ কিছুক্ষণ আমাকে বাধ্য হয়ে বসতে হয়েছিলো। তারপর বৃষ্টি একটু কমার পর আমি বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করলাম।
![]() |
---|
ফেরার পথে শুভর জন্য একটু চপ নিয়ে এসেছিলাম। আমার নিজেরও বেশ খিদে পেয়েছিলো। ননদের বাড়িতে জোর করেছিল খাওয়ার জন্য কিন্তু তখন সন্ধ্যা প্রায় হয়ে গেছে বলে আমার আর ভাত খেতে ইচ্ছে করেনি। তাই বাড়িতে এসে আমি আর শুভ অল্প মুড়ি দিয়ে চপ খেয়ে নিয়েছিলাম।
তারপর যথারীতি কমিউনিটির কাজ শুরু করে, সেইদিনের বাকি কাজ নিয়মানুসারে করেছিলাম। এইভাবে কেটেছিলো সেদিন সারাদিন। তবে যাওয়ার সময় প্রচন্ড রোদ্দুর, ফেরার সময় বৃষ্টির জলে মোটামুটি ভিজে গিয়েছিলাম, তাই রাতের দিকে শরীরটা বেশ খারাপ লাগছিলো।
যাইহোক শেষ পর্যন্ত ডাক্তার দেখিয়ে এসে খানিক নিশ্চিন্ত হওয়া গেছে। এরপরে ওর ছুটি অনুযায়ী অপারেশন করা হবে কি হবে না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে সেদিন ওকে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে সময়টা কিভাবে অতিবাহিত হয়েছিলো, সেটাই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম।
সকলে ভালো থাকবেন। পুজো প্রত্যেকের খুব ভালো কাটুক, এই কামনা করে আজকের লেখা এখানেই শেষ করছি। শুভরাত্রি।