"জীবনের অপূরণীয় ক্ষতি"
![]() |
---|
Hello,
Everyone,
আজ দুপুরে ঘরের সকল কাজ শেষ করে স্নান করতে যাবো, সেই মুহূর্তে ফোনের রিং শুনে ঘরে এসে ফোন তুলতেই, অন্য প্রান্তে শ্বশুরমশাইয়ের গলা পেলাম। বেশ কিছুদিন হলো আমার শাশুড়ি মা ও শশুর মশাই বাড়িতে নেই। একটু প্রয়োজনে শাশুড়ি মায়ের বাপের বাড়িতে গিয়েছিলেন, কিন্তু সকলে মিলে ওনাদেরকে সেখানে আরও কয়েকদিন থাকার জন্য জোর করায়, ওনরা রয়ে গেছেন।
যাইহোক শশুর মশাই এর কাছ থেকে যে খবরটা শুনলাম সেটার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না। তবে আমাদের জীবনে এমন অনেক ঘটনা ঘটে, যেগুলো আমাদের হাতে থাকে না। যাইহোক ওনার সাথে কথা বলার শেষ করে, ফোন রেখে স্নান করে আসার পর, পুজো দিতে বসার আগেই দেখলাম আরো দু-তিনবার ফোন এসেছিলো। নম্বরটা দেখে বুঝলাম আমার ননদ ফোন করেছিলো, তাই ওনার সাথে কথা বললাম এবং সেই একই বিষয়ে কথা হলো।
ননদের সাথে কথা বলাকালীন আরো একটা নাম্বার থেকে ফোন এসেছিলো। তবে ননদ ফোন রেখে দেওয়ার পরে, সাহস করে আর সেই নম্বরে ফোন করতে পারিনি। তবুও শেষ রক্ষা হলো না। মুহূর্তের মধ্যে পুনরায় সেই একই নাম্বার থেকে ফোন বেজে উঠলো। তখন আর ফোনটাকে এড়ানো গেল না কিছুতেই।
ফোনটা রিসিভ করতেই অন্য প্রান্ত থেকে হাউমাউ করে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেলাম।আমি জানতাম এমন কিছুই হতে চলেছে, তবে কিছু বলতে পারলাম না। একেবারে নির্বাক হয়েই ফোনটা ধরে রইলাম কিছুক্ষণ।
কিছুক্ষণ বাদে অপরপ্রান্ত থেকে আমার একজন জ্যাঠতুতো ননদ জিজ্ঞাসা করলেন কোনো খবর পেয়েছো?
উত্তরে শুধু হ্যাঁ বললাম।
এরপর আসলে আর কিছু বলার ছিল না। কিছু কষ্টের কোনো সান্তনা হয় না। তাই চুপচাপ ফোনটা ধরে তার আর্তনাদ শুনে গেলাম।
এবার আপনাদের আসল কথা বলি, উপরে যে বাচ্চার ছবিটি দেখতে পারছেন, মাত্র তিন দিন আগে সে এই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করেছিল। শুরুতে একটু শ্বাসকষ্ট ছিলো বাচ্চাটির তবে ২৪ ঘন্টা অবজারভেশন এ রেখে বাচ্চাকে মায়ের কাছে দিয়েছিলো। তারপর আর সমস্যা হয়নি। বাচ্চা একদম ঠিক ছিলো শুনেছিলাম। আর গতকাল রাতেই সে এই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেছে। আমার জ্যাঠতুতো ননদের নাতি অর্থাৎ ছেলের ছেলে হয়েছিল। এর আগে অবশ্য ওনার একটা মেয়ে আছে সাত আট বছরের। তারপর ঘর আলো করে এসেছিল এই ছেলে।
বাড়ির প্রতিটি সদস্য মেতে উঠেছিল আনন্দ উচ্ছ্বাসে। যেন এই দিনটিরই অপেক্ষা করছিল সকলে, তিনদিন আগেও এই দিদির নম্বর থেকেই আমার কাছে ফোন এসেছিলো। আর সেদিন ফোনটা রিসিভ করে তার সেই আনন্দ উচ্ছ্বাসে ভরা গলার স্বর, মাত্র দু-তিন দিনের মধ্যে যে এমন আর্তনাদে পরিণত হবে। সত্যিই ভাবতে পারিনি।
সেদিন ফোন করে এই খুশির খবরটাই দিয়েছিলো। হোয়াটসঅ্যাপে ছবিও পাঠিয়েছিলো বাচ্চাটির। বছর দুয়েক আগে দিদি দিদির হাসবেন্ডকে হারিয়েছেন। কোথাও যেন দিদি বিশ্বাস করছিলেন, হয়তো নাতির মাধ্যমে তিনি আবার এই বাড়িতেই ফিরে এসেছেন। আর আজ মুহুর্তের মধ্যেই সব শেষ। এমন একটা খবরের জন্য সত্যিই প্রস্তুত ছিলাম না।
দিদি বেশ কিছুক্ষণ কথা বললেন, কান্না করলেন। ওনার ছেলে বৌমার কষ্টের কথা বলছিলেন। সত্যিই সেই বাবার মায়ের কষ্টের কোনো আন্দাজ আমরা কেউ করতে পারবো না যারা এতগুলো মাস ধরে একটু একটু করে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার স্বপ্ন দেখেছেন. ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর তাকে নিয়ে আনন্দ করেছেন. আর আজ তাদের কোল শূন্য। যদিও আমরা বরাবর মায়ের অনুভূতি নিয়ে কথা বলি, তবে বাবার অনুভূতিও কিন্তু অনেক গভীর। তাই কষ্টটাও অনেক বেশি।
আপনারা হয়তো অনেকেই আমার সাথে সহমত হবেন যে, আমাদের সমাজের বেশিরভাগ মানুষ এখনো বিশ্বাস করেন যে পুত্রসন্তান মানেই সে বংশ রক্ষা করবে। এই দিদিও কান্না করতে করতে এই আক্ষেপই করছিলেন যে, তার বংশের প্রদীপ এসেও থাকলো না। বাচ্চাটা কিভাবে মারা গেলো তা আর জিজ্ঞেস করিনি। এমন প্রশ্ন আসলে করা যায় না। তাতে ক্ষত আরও বেড়ে যায়।
যদিও ব্যক্তিগতভাবে আমি বংশ রক্ষার বিষয়টি বিশ্বাস করি না। তবে হ্যাঁ আমি বর্তমানে আমাদের গ্রামের বাড়িটা দেখে এটুকু বিশ্বাস করি যে, একটা ছেলে থাকলে অন্তত পক্ষে বাড়িটা বাড়ি থাকে, পোড়ো বাড়ি হয়ে যায় না। আজ যদি আমার কোনো দাদা বা ভাই থাকতো, তাহলে ওই বাড়িটায়ও হয়তো প্রাণ থাকতো। তবে আজকাল নিজেদের বাড়িটা দেখে বাড়ি বলে মনে হয় না।
দিদিও হয়তো এমনটাই চেয়েছিলেন, যেহেতু তার ছেলের ঘরে একটা মেয়ে রয়েছে। আর যদি এই ছেলে বেঁচে থাকতো, তাহলে সব ইচ্ছেই পূরণ হতো। তবে হ্যাঁ আমি সেই মায়ের মনের দ্বিধা নিয়ে কোনো প্রশ্ন করতে চাই না। ওনার কাছে সন্তানই হয়তো সবথেকে বড় ছিলো, সে ছেলে হোক কিংবা মেয়ে। তবে ছেলে হলে সকলেই একটু বেশি আনন্দিত হবে, এটা খুব স্বাভাবিক একটা বিষয়। কিন্তু সন্তান হারানোর কষ্ট সব সময়ই এক হয়, সেটা ছেলে হোক অথবা মেয়ে। আলাদা করে আর সত্যিই কিছু বলার নেই। তবে ঈশ্বর কেন এই পাওনাটুকু সবার ভাগ্যে লেখেন সত্যিই জানিনা।
সন্তান যদি নাও হতো তবুও মেয়েকে নিয়ে হয়তো ওনরা সকলে ভালো ভাবেই জীবন কাটাতে পারতো। কিন্তু এই সন্তান গর্ভে আসা থেকে শুরু করে, তাকে তিলে তিলে নিজের ভিতরে বড় করা, প্রসব যন্ত্রণা সহ্য করে পৃথিবীতে আনার তিন দিনের মধ্যেই মায়ের কোল শূন্য হয়ে গেলো। এতোটুকু আয়ু নিয়ে বাচ্চাটি পৃথিবীতে এসেছিলো। সকলকে মায়ায় বেঁধে, তার মা কে সারাজীবনের অপূরনীয় ক্ষত দিয়ে চলে গেলো।
সেই তাহলে সেই বেদনা কতখানি গভীর, হয়তো আমরা সেই মায়ের মতন করে আন্দাজ করতে পারবো না। তবে এমন একটা খবর পেয়েও মন ভারাক্রান্ত হবে না, এমন পাষণ্ড মানুষও বোধহয় নই। তাই সত্যিই খবরটা শোনার পর থেকে মনটা খুব খারাপ হয়ে আছে। ঈশ্বর ওনাদের পরিবারকে এই গভীর ক্ষত সহ্য করার শক্তি দিক, এইটুকুই প্রার্থনা। ভালো থাকবেন সকলে। শুভরাত্রি।
@sampabiswas
তোমার মামার ছেলের মৃত্যু, যে তিন দিন বেঁচে ছিল, তোমাদের সকলের জন্য খুবই দুঃখের মুহূর্ত ছিল। আসলে, আমরা সবাই তাকে চিনি, কেউ আগে, কেউ পরে।
TEAM 8
Congratulations! Your post has been upvoted through @steemcurator08. Good post here should be..Thank you for your support @okere-blessing. 🙏