পুরোনো ঢাকার বিখ্যাত ইফতারি বড়ো বাপের পোলার উৎপত্তি নিয়ে কিছু কথা ।

in Incredible Indialast year (edited)

ramadan-5055663_1280.jpg
pixabay

সারাদিন রোজা রাখার পরে দিন শেষে যখন ইফতার করা হয় সেই সময় যে শান্তি পাওয়া যায় এটা হয়তো অন্য কিছুতে পাওয়া যায় না।
সংযমের মাস বলা হলেও আমরা আসলে মোটেও সংযম পালন করি না ,বরং রোজার সময় আসলে আমাদের খাওয়া অনেক বেড়ে যায় , বিশেষ করে ইফতারের সময়।

ai-generated-8526589_1280.jpg
pixabay

আর আমরা যারা ঢাকাতে থাকি তাদের কাছে ইফতার মানেই পুরাতন ঢাকার চকবাজারের ইফতার।প্রতি রমজানের শুরু থেকেই সকল মিডিয়ার আলোচ্য খবর হয় পুরাতন ঢাকার চকবাজারের ইফতার আর প্রথম কয়েকদিন এই খবরই দখল করে রাখে পত্রিকার প্রথম পাতার কিছু অংশ ।
ধারণে করা হয় ,চকের ইফতারি বাজারের বয়স চার শ’ বছরের পুরনো। ঢাকা গবেষকদের মতে, ঢাকার বয়সের সমান চকবাজারের ইফতারির বাজার।

আর একে ঐতিহ্যের প্রানকেন্দ্রও বলা যায়।এই চকবাজার ইতিহাসের অনেক ঘটনার ও সাক্ষ্য। তবে অনেক ইতিহাসবিদের মতে এই বাজারের অস্তিত্ত্ব প্রাচীন হলেও এখানে ইফতার বাজারের অস্তিত্ত্ব ঘটে মোগল যুগে অর্থাৎ কেটেছেঁটে প্রায় তিনশত বছরের। কিন্তু তিনশত বছরই বা কম কিসের। তৎকালিন ঢাকার প্রানকেন্দ্র ও বৃহৎ চকবাজার জামে মসজিদকে ঘিরেই গড়ে উঠেছিল এই বাজার।

চকের বিক্রেতারা বরাবরই খাবার তার বাড়িতে তৈরী করে দুপুরের পর পর পসরা সাজিয়ে বসেন। ইফতারির দাম কম খুব বেশিও হয় না , মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের কথা মাথায় রেখেই তেরী হয় সব খাবার। খাবারের মাঝেও মানভেদ আছে , ক্রেতাকে খাবার চিনে নিতে হবে।এখানকার স্হানীয়রা জানেন কোনটা ভাল বা মানসম্মত আর কোনটা অখাদ্য।
একটা সময় ঢাকার বনেদী পরিবারগুলোতে ইফতার আয়োজনে থাকত বাড়াবাড়ি রকমের আয়োজন । এর একটা কারন ছিলএকান্নবর্তী পরিবার প্রথা,বাড়ীতে রোজাকে কেন্দ্র করে পরিবারে উৎসবের আমেজ দান, মসজিদ ইফতার পাঠানো ও প্রতিবেশীদের সাথে রোজার আনন্দ বন্টন করে নেয়া ।

ai-generated-8573977_1280.png
pixabay

আহসান মন্জিলের নবাবেরা রমজানে তাদের ইফতারি টেবিলে রাখতেন রাজকীয় মোগলীয় ঘারানার সব খাবার।প্রতিদিনই সেখানে উপস্হিতি থাকতেন ,বিশিষ্ট ও সম্ভান্ত লোকজন। কয়েক বিভিন্ন ধরণের কাবাব,খাসী, মুরগী ও পাখীর রোস্ট, বিরিয়ানি, ভাজা মসলাদার খাবার,দইবড়া,ফালুদা সহ নানা পদের মিষ্টান্ন,দুধ পেস্তার জাফরানি সরবত সহ কয়েক পদের সরবত ইত্যাদি থাকতো।
ঢাকাবাসীরা সবসময় ঘরে তৈরী ইফতার গ্রহন করলেও খেজুর ও অন্যান্য ফলমূল এছাড়াও ইফতারের জন্য অত্যাবশ্যক কাবাব,পনির,বিশেষ ধরণের রুটি,জিলাপি,গোলাবি উখড়া বাজার থেকেই কিনতেন। চাহিদা আর সময়ের পরিবর্তনে সাথে সাথে এই বাজারের ব্যাপ্তি ঘটে মহল্লা থেকে সাড়া শহর।

mix-grill-7414547_1280.jpg
pixabay

আশির দশকের আগে ইফতারের এই রাজকীয় চাহিদা পূরনেই শহরবাসীকে চকবাজার আসতেই প্রায় হতো । পরবর্তীতে বিভিন্ন রেস্টুরেন্টগুলুতে বাড়তে থাকে ইফতারের বিশেষ আয়োজন।
তবে গত কয়েক বছর ধরেই একটা খাবারের নাম মিডিয়ার কল্যাণে প্রচুর পরিমানে শোনা যাচ্ছে ,আর সেটা হলো বড়ো বাপের পোলা। চক বাজার গরম করা হাকডাকে ক্রেতার কোনো অংশে কমতি নেই। যেন এক অমৃত আস্বাদনের এর টানে ছুটে আসছেন নতুন নতুন ঢাকাবাসী। এখানে পৌঁছালেই ডাক শুনবেন, আইয়ে, মহাজন,

বড় বাপের পোলায় খায়
দওনা(ঠোংগা) ভইরা লইয়া যায়।

ইদানিং পুরান ঢাকা ছাড়াও অনেক স্থানে এই খাবার বিক্রি শুরু হয়েছে । তবে মজার বিষয় হলো , পুরান ঢাকার আদি বাসিন্দাদের যে কাউকে জিজ্ঞেস করলেই সে বলবে ,'জীবনে খাই নাইক্কা'!

ধারণা করা হয় ,নবাব ও অভিজাত পরিবারের ইফতারের উচ্ছিষ্ট থেকেই এই খাবারটি আবিষ্কৃত হয়েছে।বাড়ির বিভিন্ন চাকর বাকরসহ অন্যান্য কর্মচারীরা ইফতারির যে সব খাবার বেঁচে যেত সেগুলিই একত্রিত করে মাখিয়ে খেতেন।

belief-6202982_1280.jpg
pixabay

পরবর্তীতে বকশীবাজার নিবাসী উর্দূভাষী রন্ধন কারিগর বা বাবুর্চি শেখ সুবাহ এই খাবারের সাথে যোগ করলেন আরো কয়েক পদ ও মসলা। মসলা সহ প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ পদের সংমিশ্রন।
এর মাঝে মধ্যে মুরগীর মাংসের কুচি,মুরগীর গিলা-কলিজা,সুতি কাবাব,ডিম,গরুর মগজ,গরুর মাংস ,মাংসের কিমা, চিড়াভাজা,বুটের ডাল,আলু,মিষ্টি কুমড়া,ডাবলি,ঘি,সরিষার তেল, কাঁচা ও শুকনা মরিচ সহ ১৬ থেকে ২০ পদের মসলার পাঁচমিশালীর এক সংমিশ্রন। আর এই খাবারই বর্তমান সময়ের বিখ্যাত বড়ো বাপের পোলা।



Thank You So Much For Reading My Blog

DiHLrjiPetHt6ciV9azim9NPHuTMQ59H51nYE8xqo83cHxoWjkEXJT9iFny5FDK6V87zhnX5kJcSGE6ahn1RouZuijdX8aHZSZuNzNLrHLCesrYQeLFEN3XWqtzgugDvKSjLVorzHmsDV9fsCYARi3rzgEWfrvmwA657nCqYe5UwnnVK4Dxytu7ugFVWiW3mjezc1nCAisbww4sYtHPgvEw.png

2gsjgna1uruv8X2R8t7XDv5HGXyHWCCu4rKmbB5pmEzjYSj1ATxRsaEvyH89EyziiK3D1ksn1tTDvDwLCveqrhctVcDnDqtNbsqFMtuqD1RetzrgjG.png

DiHLrjiPetHt6ciV9azim9NPHuTMQ59H51nYE8xqo83cHxoWjkEXJT9iFny5FDK6V87zhnX5kJcSGE6ahn1RouZuijdX8aHZSZuNzNLrHLCesrYQeLFEN3XWqtzgugDvKSjLVorzHmsDV9fsCYARi3rzgEWfrvmwA657nCqYe5UwnnVK4Dxytu7ugFVWiW3mjezc1nCAisbww4sYtHPgvEw.png

Sort:  
 last year 

বড় বাপের পোলায় খায় এই খাবারটা আমি একবার টেস্ট করেছিলাম। আমার কাছে মোটেও ভালো লাগেনি। আসলে হুজুগে বাঙালি যেটা মুখের কথায় জনপ্রিয় হয় সেটা নিয়েই বাড়াবাড়ি করে। আপনি ঠিকই লিখেছেন অভিজাত ও জমিদারদের বেঁচে যাওয়া উচ্ছিষ্ট খাবার যারা খেতো তারা এই খাবারটির নাম দিয়েছিল । তবে এখন অনেকে ভালো উপাদান দিয়ে খাবারটি তৈরি করে বিক্রি করে।

খুব চমৎকার ও তথ্যবহুল একটি লেখা আপনি লিখেছেন যা পড়ে খুবই ভালো লাগলো।

 last year 

আমি নিজে কখনো এই খাবারটি খাই নাই। তবে খাওয়ার খুব ইচ্ছে ছিলো।কিন্তু আমার পরিচিত কয়েকজন এর মুখে এর স্বাদ সম্পর্কে জানার পরে আমি পুরোপুরিই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।
যেটুকু বাকী ছিলো সেটুকুও শেষ হয়ে গেল আপনার কথা শুনে।
তবে এটা আপনি ঠিকই বলেছেন যে, ইদানীং অনেক ভালো জিনিস দিয়েই তৈরি হয়ে থাকে এই খাবার। যা বকশী বাজার নিবাসী শেখ সুবাহ প্রচলন করে গেছেন।

Loading...

পুরোনো ঢাকার ইফতারের বি়খ্যাত খাবার কেমন হতে পারে হয়তো আজকে আপনার পোস্ট না রড়লে বুঝতে পারতাম না ৷ আসলে ইফতার অনেক রকমের তৈরি করা যায় তার পাশাপাশি সুস্বাদু যেটা পুরোনো ঢাকায় পাওয়া যায় ৷

ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে তুলে ধরার জন্য ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন ৷

Posted using SteemPro Mobile

 last year 

পুরোনো ঢাকার ইফতারি আমি খুব একটা খাই নাই। ওই এলাকায় এতো মানুষ আর এতো জ্যাম যে ওইখানে রোজার মাসে একবার ঢুকলে দিন কাবার।
পুরোনো ঢাকায় বিভিন্ন ধরনের ইফতার সামগ্রী পাওয়া যায় এটা ঠিক তবে সব ইফতার খেতে ভালো হয় না। কোনটা ভালো জানা না থাকলে সমস্যা।
আপনার মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো। ভালো থাকবেন সবসময়ই এই শুভকামনা রইলো আপনার জন্য।