একদিন ছুটি হবে ,অনেক দূরে যাবো ।
ইউটিউব থেকে নেয়া ভিডিও |
---|
কিছুক্ষণ আগেই রোজাবেল এর কথা পড়লাম। যার জন্মের আগে তার বাবা হাসান তার মাকে ছেড়ে ১১ বছর দেশের বাইরে যাননি। শুধু তার স্ত্রী রাবেয়াকে নিয়ে দৌড়েছেন সারা পৃথিবী জুড়ে একটি সন্তানের আশায়।
অনেক চেষ্টার পরে অবশেষে টেস্টটিউবের মাধ্যমে রাবেয়ার গর্ভে সন্তান আসে। তারা দুজনেই আনন্দে আত্বহারা হয়ে উঠেন।
সন্তানের সুস্থ ডেলিভারির উদ্দেশ্যে তিনি তার স্ত্রীকে বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত দেশ যুক্তরাষ্ট্র পাঠিয়ে দেন এবং খ্যাতিমান ডাক্তারদের তত্ত্বাবধানে রাখেন।
অবশেষে তাদের ১১ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটে।
রাবেয়া - হাসান দম্পতি এক নবজাতক কন্যা সন্তানের মুখ দেখতে পান এবং তারা তার নাম রাখেন রোজাবেল।
কিন্তু ভাগ্যের লিখন পাল্টানো যায় না। রোজাবেলা হার মানে মাইলস্টোন স্কুল এন্ড কলেজের কাছে। সে তখন মেহেরিন ম্যামের ক্লাস করতে ছিলো।
আর তখনই যেন হঠাৎ বিকট শব্দে থমকে যায় পুরো পৃথিবী এবং প্রশিক্ষণরত ফাইটার প্লেন এসে পরে তাদের ক্লাসের উপরে। না, রোজাবেলা আর নেই।
হাসান রাবেয়ার দম্পতির অতি আদরের একমাত্র সন্তান রোজাবেলা পুড়ে হয়ে গেছে। ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালে বার্ন ইউনিটের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন হাসান -রাবেয়া তাদের অঙ্গার হয়ে যাওয়া সন্তানের সামনে।
শুধু রোজাবেলাই না, এমন অসংখ্য বাচ্চার কথা পড়তেছি গত দুইদিন থেকে। একমাত্র রোজাবেলার ক্লাসই যে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন না, সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ক্লাস থ্রির সেকশন ব্লু-য়ের বাচ্চারা।
আর রোজাবেলার সেই ক্লাসটিচার মেহেরিন ম্যাম সেদিন শুধু একজন শিক্ষক হয়েই ছিলেন না বরং সে যেন ওইদিন সৃষ্টিকর্তার পাঠানো একজন দেবদূত হয়ে উঠেছিলেন।
তিনি ক্লাস থেকে বের হবার সুযোগ পেয়েও সেটাকে কাজে লাগান নাই। তিনি তার ক্লাসের বাচচাদের বলতেছিলেন , ভয় পেওনা , তোমরা দৌড়াও, আমি তোমাদের সাথে আছি। আর এভাবেই তিনি একজন একজন করে বের করে আনেন প্রায় ২০/২২ জন শিশুকে।
একসময় তার পুরো শরীরে আগুন ধরে যায়। যখন তাকে বের করা হয় তখন তার শরীরের প্রায় নব্বই পার্সেন্ট পুড়ে গেছে। ঐদিনই রাত এগারোটার দিকে তিনি মারা যান।
আজকে সারাদিনই তার স্বামীর সাক্ষাৎকার চোখে পরতেছিলো । এখানে দেখলাম তিনি তার তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে বলতেছিলেন যে, তাকে তিনি জিজ্ঞেস করেছিলেন যে তুমি কি একবারও আমাদের দুই সন্তানের কথা ভাবলে না।
তার উত্তরে তিনি বলেছিলেন যে ওদেরকে ফেলে কি করে আসতাম ওরাও তো আমার সন্তান।
হসপিটালে তিনি তার স্বামীর কাছে খাবার চেয়েছিলেন তিনি । তার স্বামী তাকে কয়েক ফোটা পানি ছাড়া আর কিছু দিতে পারেন নাই ডাক্তারদের নিষেধাজ্ঞার কারণে। হয়তো সারাজীবন তিনি এই কষ্টবোধ থেকে বের হতে পারবেন না। তিনি তার স্বামীকে বলেছিলেন তার হাত ধরতে যদিও তার হাত ধরার মতো অবস্থায় ছিলো না।
তারপরও তার স্বামী কোনমতে তার হাত ধরেছিলেন।সেসময় তিনি তার স্বামীকে বলেছিলেন, তোমার সাথে আমার আর কোনদিন দেখা হবে না।
কথাগুলো শুনতে শুনতে ঝাপসা হয়ে যাচ্ছিলো চোখ।
ভাবতেছিলাম প্লেনের পাইলটের কথাও। বার বার মনে পরতেছিলো কয়েক বছর আগে আরেকটা বিধ্বস্ত হওয়া প্রশিক্ষন বিমানের চালক লারার কথা।
লারার মা লেখিকা সেলিনা হোসেন এর লেখা "লারা " বইটা পড়েছিলাম। সেখানে তিনি লিখেছিলেন তিনি একটাবার লারাকে দেখতে চেয়ে বারবার অনুরোধ করেছিল্রন এই বলে যে, হয়তো পুড়ে গেছে তাতে কি হয়েছে, আমারইতো মেয়ে।
জানিনা কবে শেষ হবে এই মৃত্যুর মিছিল।
বাচচাদের গাওয়া "একদিন ছুটি হবে, অনেক দূরে যাব " গানটা শুনতেছিলাম আর ভাবতেছিলাম যে ওরা আসলেই ওদের গাওয়া গানের মতোই নীল আকাশে হারিয়ে গেছে। জানি কল্পনা তারপরও প্রচন্ড রকমের মন খারাপের মাঝেও কিছুটা হলেও ভাবতে ভালো লাগছিলো এটা ভেবে যে, হয়তো রংধনুর ওইপাশে মেহেরিন ম্যাম তার প্রিয় বাচচাদের সাথে খেলা করতে করতে তার বাচচাদের গাওয়া সেই গান গান শুনতেছেন ।
ও নদীরে তুই যাস কোথায় রে
কলকলাইয়া ছলছলাইয়া
কোন সাগরে
যাস যেথা নে না তুই আমারে।
সবকটা ছবিই সোশ্যাল মিডিয়া থেকে নেয়া ।
◦•●◉✿ Thanks Everyone ✿◉●•◦
◦•●◉✿ Thanks Everyone ✿◉●•◦