স্বাস্থ্য সুরক্ষায় কেন আমাদের ফাস্টফুড এড়িয়ে চলা উচিত

আমি @arpita007 বাংলাদেশ থেকে। কেমন আছেন সকল বাংলাদেশী এবং ইন্ডিয়ান বন্ধু -বান্ধবীগণ? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আজকে ফিরে এলাম আপনাদের মাঝে আবার নতুন একটি ব্লগ নিয়ে ।

সোর্স

বর্তমান যুগে ফাস্টফুড আমাদের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। শহরাঞ্চলের ব্যস্ত জীবন, কাজের চাপ, পড়াশোনার ব্যস্ততা কিংবা অবসর সময়ে আড্ডার মুহূর্ত সবখানেই ফাস্টফুডের চাহিদা দিন দিন বেড়ে চলেছে। ফাস্টফুড বলতে আমরা সাধারণত বার্গার, পিজা, ফ্রাইড চিকেন, স্যান্ডউইচ, হটডগ, কোল্ডড্রিংকস ইত্যাদি বুঝি। এগুলো দ্রুত প্রস্তুত করা যায় এবং স্বাদে অনেক আকর্ষণীয় হওয়ায় শিশু থেকে শুরু করে বড় সবাই এগুলোর প্রতি আকৃষ্ট হয়। কিন্তু একটু গভীরভাবে চিন্তা করলে আমরা বুঝতে পারি, ফাস্টফুড শরীরের জন্য কতটা ক্ষতিকর। তাই সুস্থ জীবনযাপনের জন্য আমাদের ফাস্টফুড এড়িয়ে চলা উচিত।

প্রথমেই বলতে হয়, ফাস্টফুড সাধারণত উচ্চ ক্যালরি, চর্বি, লবণ ও চিনি সমৃদ্ধ। এগুলোতে প্রয়োজনীয় ভিটামিন, খনিজ ও আঁশের পরিমাণ খুবই কম। ফলে নিয়মিত ফাস্টফুড খেলে শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি জমে ওজন দ্রুত বাড়তে থাকে, যা স্থূলতার প্রধান কারণ। স্থূলতা আবার ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এমনকি ক্যানসারের মতো জটিল রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। শিশুদের মধ্যে স্থূলতা বর্তমানে একটি বড় সমস্যা, যার অন্যতম কারণ এই ফাস্টফুড সংস্কৃতি।

দ্বিতীয়ত, ফাস্টফুডে ব্যবহৃত তেল ও উপাদান বেশিরভাগ সময়ই স্বাস্থ্যসম্মত নয়। এগুলো বারবার ব্যবহার করা হয়, যার ফলে ট্রান্সফ্যাট তৈরি হয়। ট্রান্সফ্যাট শরীরে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় এবং ভালো কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়। এর ফলে হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়ে পড়ে। পাশাপাশি অতিরিক্ত সোডিয়াম বা লবণ কিডনির ক্ষতি করে এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।

তৃতীয়ত, ফাস্টফুড শুধু শারীরিক ক্ষতির কারণ নয়, এটি মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত ফাস্টফুড খায়, তারা বিষণ্ণতা, উদ্বেগ এবং মনোযোগের ঘাটতিতে বেশি ভোগে। কারণ এই খাবারগুলোতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যেমন ওমেগা-৩, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ইত্যাদি প্রায় থাকে না, অথচ এগুলো মস্তিষ্কের সুস্থতার জন্য অপরিহার্য।

চতুর্থত, ফাস্টফুড খাওয়ার অভ্যাস শিশু ও কিশোরদের জীবনধারায় নেতিবাচক পরিবর্তন আনে। তারা ঘরে রান্না করা স্বাস্থ্যকর খাবার থেকে দূরে সরে গিয়ে অল্প সময়ে মুখরোচক খাবার খেতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এর ফলে তাদের শারীরিক সক্ষমতা কমে যায়, পড়াশোনায় মনোযোগ কমে, এবং ভবিষ্যৎ জীবনে তারা বিভিন্ন দীর্ঘমেয়াদি রোগের শিকার হয়।

ফাস্টফুড এড়িয়ে চলার আরেকটি বড় কারণ হলো খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকি। অনেক সময় দেখা যায়, রাস্তায় কিংবা ছোট দোকানে বিক্রি হওয়া ফাস্টফুড নোংরা পরিবেশে তৈরি হয়। এগুলোতে ব্যাকটেরিয়া ও জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে, যা খাদ্যবাহিত রোগ যেমন ডায়রিয়া, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস ইত্যাদি ছড়াতে সাহায্য করে।

তাহলে সমাধান কী? আমাদের উচিত ঘরে তৈরি স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা। ভাত, ডাল, সবজি, মাছ-মাংস, ফলমূল ও দুধ হলো শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় সুষম খাবার। স্কুল-কলেজের টিফিন হিসেবে বা বাইরে বেড়াতে গেলে আমরা চাইলে ঘরে তৈরি স্যান্ডউইচ, সালাদ বা ফল নিয়ে যেতে পারি। এতে যেমন শরীর সুস্থ থাকবে, তেমনি খাদ্যের নিরাপত্তা ও পুষ্টি নিশ্চিত হবে।

সবশেষে বলা যায়, ফাস্টফুড স্বল্প সময়ের জন্য জিভের স্বাদ মেটালেও দীর্ঘমেয়াদে এটি শরীর ও মনের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। সুস্থ ও সুন্দর জীবনযাপনের জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে এবং নিজেকে ও পরিবারকে এই ক্ষতিকর খাদ্যাভ্যাস থেকে দূরে রাখতে হবে। স্বাস্থ্যই সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ এই উপলব্ধি থেকেই আমাদের ফাস্টফুড এড়িয়ে চলা উচিত।

আমি অর্পিতা নওশিন তিশা। আমি বর্তমানে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছি। আমার শখের মধ্যে রান্না করতে ভালোবাসি এবং গল্পের বই পড়তেও ভালোবাসি । তাছাড়া অবসর সময়ে ছবি আঁকতে,গান শুনতে এবং বিভিন্ন ধরনের কমেডি, থ্রিলার, হরর মুভি দেখতে পছন্দ করি। এছাড়াও হিন্দি ডাবিং করা নাটকগুলো দেখতে পছন্দ করি।