বিশুদ্ধ পানির অপর নাম জীবন

আমি @arpita007 বাংলাদেশ থেকে। কেমন আছেন সকল বাংলাদেশী এবং ইন্ডিয়ান বন্ধু -বান্ধবীগণ? আশা করি সবাই ভালো আছেন। আমিও আপনাদের দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।আজকে ফিরে এলাম আপনাদের মাঝে আবার নতুন একটি ব্লগ নিয়ে ।

সোর্স

পানি একটি অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদ। মানুষের জীবনধারণের জন্য যেমন অক্সিজেন অপরিহার্য, তেমনি পানি ছাড়াও জীবন কল্পনা করা যায় না। তাই বলা হয়ে থাকে—"পানির অপর নাম জীবন।" এটি কোনো অতিশয়োক্তি নয়, বরং বাস্তবতা। মানবজীবনের প্রতিটি পর্যায়ে পানির প্রয়োজন অনস্বীকার্য। শুধু মানুষ নয়, পৃথিবীর প্রতিটি জীবের অস্তিত্ব রক্ষায় পানির গুরুত্ব অসীম।

মানবদেহের প্রায় ৬০-৭০% অংশজুড়ে পানি বিদ্যমান। দেহের কোষ, রক্ত, পেশি ও ত্বকে পানি অপরিহার্য উপাদান হিসেবে কাজ করে। খাবার হজম, পুষ্টি পরিবহন, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ও বর্জ্য অপসারণে পানির ভূমিকা অতুলনীয়। একজন মানুষ প্রতিদিন গড়ে ২-৩ লিটার পানি পান করে বেঁচে থাকে। শুধু পানীয় হিসেবেই নয়, রান্না, স্নান, পরিস্কার, কৃষিকাজ, শিল্পকারখানা এমনকি বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রেও পানির ব্যবহার অপরিসীম।

প্রাণীজগতের প্রত্যেকটি প্রাণীর শরীরের গঠনেও পানি প্রধান উপাদান। পশুপাখি, জলজ প্রাণী এমনকি ক্ষুদ্র জীবাণুও পানি ছাড়া বাঁচতে পারে না। অন্যদিকে উদ্ভিদের বেঁচে থাকার জন্য পানি অপরিহার্য। গাছপালা শোষিত পানি দ্বারা খাদ্য তৈরি করে। মাটি থেকে পানি শোষণ করে গাছ তাদের জীবনীশক্তি বজায় রাখে। কৃষিকাজে সেচের জন্য পানির প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। তাই পানি না থাকলে খাদ্য উৎপাদন সম্ভব নয়, ফলে দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে।

পৃথিবীর প্রায় ৭১% এলাকা জুড়ে পানি রয়েছে। তবে এর মধ্যে মাত্র কিছু সংখ্যক হলো মিষ্টি পানি, যা মানুষের ব্যবহারের উপযোগী। এই মিষ্টি পানির উৎস হলো—নদী, হ্রদ, ঝরনা, ভূগর্ভস্থ জলাধার ও বরফ ঢাকা পাহাড়। বৃষ্টিও একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। কিন্তু এই সীমিত মিষ্টি পানির ব্যবহার বাড়তে থাকায় বর্তমানে পানি সংকট ক্রমাগত বাড়ছে।

বর্তমানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, শিল্পায়ন ও নগরায়নের ফলে পানিদূষণ একটি ভয়াবহ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কলকারখানার বর্জ্য, প্লাস্টিক, রাসায়নিক সার ও কীটনাশক নদী-নালায় পড়ে পানিকে বিষাক্ত করে তোলে। এতে মানবদেহে পানিবাহিত রোগ যেমন—কলেরা, টাইফয়েড, হেপাটাইটিস ইত্যাদির প্রাদুর্ভাব ঘটে। দূষিত পানির কারণে প্রাণিজগত ও উদ্ভিদজগতও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

অনেক সময় মানুষ পানি অপচয় করে থাকে—যথেচ্ছভাবে কল খোলা রাখা, গাড়ি ধোয়া, রাস্তা পরিষ্কার করার সময় পানি নষ্ট করা ইত্যাদি। একদিকে পানির চাহিদা বাড়ছে, অন্যদিকে অপচয়ও বেড়ে চলেছে। ভবিষ্যতে পানির জন্য যুদ্ধ পর্যন্ত হতে পারে—এমন আশঙ্কাও বিজ্ঞানীরা করছেন। তাই এখনই আমাদের সচেতন হতে হবে।

পানির অপচয় রোধে জনসচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ , পানির পুনঃব্যবহার , কলকারখানার বর্জ্য পরিশোধন এবং বৃক্ষরোপণ—এসব উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। সরকারের পাশাপাশি সাধারণ মানুষকেও এগিয়ে আসতে হবে।

পানি ছাড়া জীবনের অস্তিত্ব কল্পনাই করা যায় না। এটি শুধু একটি প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, বরং আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই পানির প্রতি আমাদের দায়িত্বশীল হতে হবে। "পানির অপর নাম জীবন"—এই বাক্যের যথার্থতা প্রতিটি মানুষকে উপলব্ধি করতে হবে। পানি রক্ষা মানেই জীবন রক্ষা, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি বাসযোগ্য পৃথিবী রেখে যাওয়া।

আমি অর্পিতা নওশিন তিশা। আমি বর্তমানে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়াশোনা করছি। আমার শখের মধ্যে রান্না করতে ভালোবাসি এবং গল্পের বই পড়তেও ভালোবাসি । তাছাড়া অবসর সময়ে ছবি আঁকতে,গান শুনতে এবং বিভিন্ন ধরনের কমেডি, থ্রিলার, হরর মুভি দেখতে পছন্দ করি। এছাড়াও হিন্দি ডাবিং করা নাটকগুলো দেখতে পছন্দ করি।