রাজনীতি ও সংস্কৃতি।।১০ অক্টোবর ২০২৫
হ্যালো বন্ধুরা,
রাজনীতি ও সংস্কৃতি—দুটোকে আলাদা সমান্তরাল রেখা ভাবলে আঁকাটা সহজ হয়, কিন্তু বাস্তবে তারা একে–অপরের ভেতরেই বোনা।রাজনীতি মূলত ক্ষমতার সংগঠন, বরাদ্দ ও সিদ্ধান্তের প্রক্রিয়া; সংস্কৃতি হলো অর্থ–অর্থায়ন, রীতি, রুচি, ভাষা, প্রতীক ও জীবনাচরণের নেটওয়ার্ক।এই দুই ক্ষেত্রের সংযোগস্থলেই গড়ে ওঠে সমাজের “স্বাভাবিক” বলে মানা নিয়ম,কী গ্রহণযোগ্য আর কী নয়—এবং এই স্বাভাবিকতাকে বদলানোই আবার রাজনীতির বড় কাজ।তাই তাদের সম্পর্ককে সমান্তরাল বলা কম, “সহবিবর্তনশীল” বলা বেশি যথার্থ।
সময়ের মাত্রায়ও পার্থক্য আছে।রাজনৈতিক চক্র দ্রুত: নির্বাচন, আন্দোলন, নীতি বদল ইত্যাদিতে বছর–দুইয়ে বড় টার্ন আসে।সংস্কৃতি তুলনায় ধীর, প্রজন্ম ধরে রূপ বদলায়—কিন্তু একবার রূপ বদলালে তা দীর্ঘস্থায়ী “গভীর কাঠামো” হয়ে ওঠে।আবার প্রযুক্তি বা সংকটের ধাক্কায় (যেমন মহামারি, যুদ্ধ, নতুন মিডিয়া) সাংস্কৃতিক পরিবর্তনও হঠাৎ দ্রুত হতে পারে যা পরের রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলিকে প্রভাবিত করে।এইভাবে ধীর–দ্রুত দুই ছন্দের টানাপোড়েনেই সমাজ এগোয়।
রাজনীতি যে পথে সংস্কৃতিকে রূপ দেয় তার প্রধান উপায় হলো রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠান: ভাষা–শিক্ষানীতি, পাঠ্যক্রম, সেন্সরশিপ/স্বাধীনতা, অনুদান ও করছাড়, উৎসব–অনুষ্ঠানের সরকারি স্বীকৃতি, নগর নকশা, এমনকি টাইমজোন থেকে নামকরণ পর্যন্ত।আইন বদলালে পরিবার, কাজ, অবসর, শিল্প—সব কিছুর “স্বাভাবিক” রূপ পাল্টায়।ফলে ক্ষমতা শুধু জোরে নয়, রুচি ও নর্মস–এর ভেতর দিয়েও কাজ করে।
উল্টো স্রোতও ততটাই শক্তিশালী: সংস্কৃতি রাজনীতির ভাষা, কল্পনা আর জাস্টিফিকেশনের ভাণ্ডার দেয়।লোকসঙ্গীত থেকে সিনেমা, ধর্মীয় আচার থেকে ক্রীড়া—সবই রাজনৈতিক সংগঠনের “ফ্রেম” তৈরি করে, কে “আমরা” আর কে “ওরা”—এই সীমানা টানে।ভাষা–পরিচয়, পোশাক–খাদ্যরীতি, লিঙ্গ–কাস্ট/বর্ণ–শহর/গ্রাম—এসব সাংস্কৃতিক মানদণ্ডই ভোটাভুটি থেকে নীতি–সমর্থন, প্রতিবাদ—সব কিছুর সম্ভাবনা নির্ধারণ করে।তাই সংস্কৃতির রস না বুঝে রাজনৈতিক গণিত মিলে না।
এই আন্তঃসম্পর্ক বোঝাতে সমাজতত্ত্বে কিছু উপকারী লেন্স আছে।“হেজিমনি” ধারণা বলে, ক্ষমতা কেবল দমন নয়, সম্মতি উৎপাদনের শিল্প—যেখানে সংস্কৃতি রাজনৈতিক আধিপত্যকে “স্বাভাবিক” করে তোলে।“পাবলিক স্ফিয়ার” ধারণা মনে করায়, যুক্তি–আলোচনার যে পরিসর গড়ে ওঠে তা নিজেই সাংস্কৃতিক নিয়মে বাঁধা—কী বলা যাবে, কীভাবে বলা যাবে।আবার “সিম্বোলিক পাওয়ার” দেখায়, প্রতীক–রুচি–ভাষার ক্ষমতা বস্তুগত ক্ষমতার মতোই কার্যকর।
বিশ্বায়ন ও ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এই খেলাকে আরও জটিল করেছে।অ্যালগরিদমিক কিউরেশন—যা দেখবে তাই ভাববে—এই সরল সমীকরণে সংস্কৃতির ভেতরেই এক নতুন “অদৃশ্য রাজনীতি” ঢুকে পড়ে।মিম, শর্ট ভিডিও, ফ্যানডম—সবই এখন মতামতের বাজার, যেখানে নজর (attention) সবচেয়ে দামী মুদ্রা।ফলে সাংস্কৃতিক শিল্প নিজেই নীতি–প্রভাবক হয়ে ওঠে আর “কালচার ওয়ার” রাজনীতির ভিতরে নয়, রাজনীতিই যেন সাংস্কৃতির ভিতরে।
উপমহাদেশের অভিজ্ঞতাও দেখায়, ভাষা–সাহিত্য–উৎসব–পোশাক–খাদ্য নিয়ে যে বৈচিত্র্য, সেটাই রাজনৈতিক ঐক্য–বিভেদের মঞ্চ।স্বদেশি বা খাদি ছিল অর্থনীতির পাশাপাশি এক সাংস্কৃতিক রাজনীতি; আবার সাহিত্য–থিয়েটার–সিনেমা নতুন নাগরিকতার কল্পনা বানিয়েছে।নগরীর পুজো/প্যারেড/মেলা যেমন কমিউনিটি গড়ে, তেমনই পৃষ্ঠপোষকতা ও নিয়ন্ত্রণের রাজনীতি সেখানে ঢুকে পড়ে।অর্থাৎ সংস্কৃতি হলো নাগরিক জীবনের পাবলিক অবকাঠামো, যেটি রাজনীতি ছাড়া টেকে না, রাজনীতি আবার এটিকে বদলায়।
নীতিগত পরিণতি হলো—সংস্কৃতি–রাজনীতিকে দ্বৈরথ না ভেবে শাসনের একটি ক্ষেত্র হিসাবে দেখা দরকার।অভিব্যক্তির স্বাধীনতা, সংখ্যালঘু–বহুস্বরকে জায়গা, সংস্কৃতি–শিক্ষায় সমান সুযোগ, আর্কাইভ–মিউজিয়াম–লাইব্রেরির শক্তি, সৃজনশীল শিল্পের ন্যায্য স্বত্ব ও বাজার—এসব নিশ্চিত না হলে রাজনীতির গণতান্ত্রিকতা খোয়া যায়।উল্টো দিকে, দায়িত্বশীল সাংস্কৃতিক চর্চা ও সমালোচনামুখর পাবলিক স্ফিয়ার না থাকলে নীতিনির্ধারণও বোধহীন হয়ে পড়ে।
সব মিলিয়ে রায়টা পরিষ্কার: রাজনীতি ও সংস্কৃতি সমান্তরাল দুই লাইন নয় বরং এক “ব্রেইডেড রিভার”—একটি স্রোত অন্যটিকে পাক খাইয়ে এগোয়।কোথাও তারা সহযোগী, কোথাও প্রতিদ্বন্দ্বী, কিন্তু আলাদা নয়।এই জটিল সহাবস্থানের বোধই আমাদেরকে কম উত্তেজিত, বেশি পরিণত নাগরিক করে—যেখানে সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা ও রাজনৈতিক জবাবদিহি একে–অপরের শর্ত।
VOTE @bangla.witness as witness

OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

Beauty of Creativity. Beauty in your mind.
Take it out and let it go.
Creativity and Hard working. Discord