ব্লাড কিলার — পর্ব ৪ : অন্ধকারে শিকার
পর্ব ৪ : অন্ধকারে শিকার
রাত গভীর হয়ে গিয়েছে । বৃষ্টিও এখন প্রায় থেমে গেছে তবুও হালকা ঝিরঝির ঝরে যাচ্ছে । বখতিয়ারের ঘরে হালকা বাতাস ঢুকছে আর একে একে মোমবাতি নিভতে শুরু করেছে । বখতিয়ার কাগজপত্র গুছিয়ে উঠে দাঁড়ালেন । চোখে ক্লান্তি থাকলেও ভেতরে একটা চাপা অস্থিরতা ।
তিনি আবিদকে আবারো ফোন দিয়ে বললেন,
— “রনির খোঁজ কালকেই নিতে হবে । তুমি তোমার ইনফরমারদের কাজে লাগাও, ওদের দিয়ে খবর বের করতে হবে । আমি রনির খোঁজ কাল সকালেই চাই ।”
আবিদ বখতিয়ারের কথায় রাজি হলো । সেই রাতটা গেলো উদ্বেগ আর অচেনা শূন্যতায় ।
পরদিন সকাল । থানায় গমগম করছে, লোকজন আসছে-যাচ্ছে । বখতিয়ার চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে জিজ্ঞেস করলেন,
— “রনির কোনো খোঁজ পাওয়া গেছে?”
আবিদ মাথা নাড়লেন, “না স্যার, এখনো কোনো তথ্য আসেনি ।”
আবিদ এগিয়ে এসে ধীরে বললো,
— “স্যার, তাহলে এখন আমরা কী করবো?”
বখতিয়ার গম্ভীর চোখে তাকালেন,
— “তুমি বলতে পারবে, শেষবার ওকে কোথায় দেখা গেছিল?”
আবিদ রেকর্ড চেক করে বললো,
— “স্যার, রনিকে সর্বশেষ কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশনে দেখা গেছে ।”
বখতিয়ারের চোখ হঠাৎ জ্বলজ্বল করে উঠলো ।
— “আমার মনে হচ্ছে, ও কারও কাছ থেকে টাকা নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে । আর সবচেয়ে সম্ভাব্য জায়গা হলো—মোহাম্মদপুর ।”
আবিদ ভয়ভরা গলায় বললো,
— “মোহাম্মদপুর তো খুবই ভয়ংকর জায়গা স্যার । সেখানে আমাদের আওতা নেই, লোকাল গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে । তদন্ত চালানো কি সম্ভব?”
বখতিয়ার টেবিলে মুঠো চাপড়ে বললেন,
— “আমরা বসে থাকলে কোনো অগ্রগতি হবে না । যত ভয়ংকরই হোক, ওকে বের করতেই হবে ।”
আবিদ কিছুটা দ্বিধায় বললো,
— “তাহলে লোকাল থানার সাপোর্ট লাগবে ।”
— “ঠিক তাই । তুমি মোহাম্মদপুর থানায় যোগাযোগ করো । আমি প্রস্তুত ।”
কিছুক্ষণ পর আবিদ এসে জানালো,
— “স্যার, ওসি অনুমতি দিয়েছে । আমাদের সাথে ওদের একজন কনস্টেবলও থাকবে ।”
বখতিয়ার হালকা হাসলেন, “চলো আবিদ, আর দেরি করা যাবে না ।”
চার ঘণ্টার যাত্রা শেষে ।
ঢাকার ভিড়, ধুলা, আর গলিপথের জটিলতায় গাড়ি এগোতে কষ্ট হচ্ছিল । মোহাম্মদপুর থানায় পৌঁছে তারা একসাথে নামলো । জায়গাটা এমন যে অন্ধকার গলিতে ঢুকলেই কেউ নজরে রাখছে বলে মনে হয় ।
বখতিয়ার চারপাশে চোখ বুলিয়ে বললেন,
— “আবিদ, কেউ আমাদের ফলো করছে ।”
আবিদ বিস্মিত, “কোথায়?”
বখতিয়ার হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ে একটা লোককে ধরে ফেললেন ।
— “কেন আমাদের পিছু নিচ্ছিলে?”
লোকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো, “আমি তো এমনি ঘুরাঘুরি করছিলাম । আপনাদের সমস্যা?”
বখতিয়ার ঠান্ডা চোখে তাকালেন । বুঝলেন, এখানে সময় নষ্ট করলে বিপদ বাড়বে । তাই ছেড়ে দিলেন ।
কিছুক্ষণের মধ্যেই আবছা আলোয় দেখা গেল—রনি! ওদের চোখে পড়তেই রনি ছুট দিলো দৌড়ে ।
— “আবিদ! কনস্টেবল! ধরো ওকে!”
শুরু হলো ভয়ংকর ধাওয়া । গলি থেকে গলিতে, অন্ধকার ছাপিয়ে, কাদাজল ছিটিয়ে রনি পালাচ্ছে । বখতিয়ারদের শ্বাস ভারী হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তাদের দৃঢ়তা ভাঙছে না ।
ঠিক তখনই দেখা গেল, কয়েকজন গুণ্ডা দল বেঁধে তাদের পিছু নিল । বখতিয়ার গর্জে উঠলেন,
— “এই এলাকাটা অপরাধীদের আস্তানা । ওরা রনিকে বাঁচাতে নামছে!”
চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা শুরু হলো । গলির ভেতরে ইট ছোঁড়া, লাঠির শব্দ, গালাগালি । বখতিয়ার হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ে রনির জামার কলার ধরে ফেললেন । রনি চিৎকার করছে, হাত-পা ছুঁড়ছে ।
কনস্টেবল আর আবিদ মিলে লড়াই করতে করতে কোনোভাবে রনিকে টেনে পুলিশ ভ্যানে তুলতে সক্ষম হলো । কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ নয় । ভ্যানের সামনে একের পর এক মোটরসাইকেল এসে দাঁড়ালো, রাস্তায় বাঁশ ফেলে অবরোধ তৈরি হলো ।
আবিদ স্টিয়ারিংয়ে বসে ঘামতে ঘামতে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
— “স্যার, যদি এখন ব্রেক কাটি, ওরা আমাদের শেষ করে দেবে!”
বখতিয়ার চিৎকার করলেন,
— “গাড়ি চালাও আবিদ! কিছু হলে আমি সামলাবো!”
অভূতপূর্ব দক্ষতায় আবিদ বাঁক ঘুরিয়ে, গাড়ি ছুটিয়ে, ভ্যানকে অবশেষে নিরাপদে থানায় নিয়ে এল ।
থানার বাতাসে স্বস্তির ছোঁয়া । রনি ক্লান্ত, ভয়ে ঘেমে যাচ্ছে । কিন্তু বখতিয়ারের চোখে তখন শুধু একটাই আগুন—“এবার সত্য বের করে আনবো ।”
জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষের দরজা বন্ধ হলো…
ভেতরে শুরু হতে চললো এক নতুন খেলা ।
চলবে...
Twitter
https://x.com/BokhtiarMr90788/status/1969037695872581913?t=FAt98mUJRTnR0QNOsRgq8w&s=19
https://x.com/PussFi_FNDN/status/1969024313052266698?t=FAt98mUJRTnR0QNOsRgq8w&s=19
https://x.com/BokhtiarMr90788/status/1969038155878920553?t=-8IPTssUXokJbuPD1I6n6A&s=19
https://coinmarketcap.com/community/post/368449234