ব্লাড কিলার — পর্ব ৪ : অন্ধকারে শিকার

in আমার বাংলা ব্লগ3 days ago

পর্ব ৪ : অন্ধকারে শিকার


1000116226.jpg

রাত গভীর হয়ে গিয়েছে । বৃষ্টিও এখন প্রায় থেমে গেছে তবুও হালকা ঝিরঝির ঝরে যাচ্ছে । বখতিয়ারের ঘরে হালকা বাতাস ঢুকছে আর একে একে মোমবাতি নিভতে শুরু করেছে । বখতিয়ার কাগজপত্র গুছিয়ে উঠে দাঁড়ালেন । চোখে ক্লান্তি থাকলেও ভেতরে একটা চাপা অস্থিরতা ।

তিনি আবিদকে আবারো ফোন দিয়ে বললেন,

— “রনির খোঁজ কালকেই নিতে হবে । তুমি তোমার ইনফরমারদের কাজে লাগাও, ওদের দিয়ে খবর বের করতে হবে । আমি রনির খোঁজ কাল সকালেই চাই ।”

আবিদ বখতিয়ারের কথায় রাজি হলো । সেই রাতটা গেলো উদ্বেগ আর অচেনা শূন্যতায় ।

পরদিন সকাল । থানায় গমগম করছে, লোকজন আসছে-যাচ্ছে । বখতিয়ার চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে জিজ্ঞেস করলেন,
— “রনির কোনো খোঁজ পাওয়া গেছে?”

আবিদ মাথা নাড়লেন, “না স্যার, এখনো কোনো তথ্য আসেনি ।”

আবিদ এগিয়ে এসে ধীরে বললো,
— “স্যার, তাহলে এখন আমরা কী করবো?”

বখতিয়ার গম্ভীর চোখে তাকালেন,
— “তুমি বলতে পারবে, শেষবার ওকে কোথায় দেখা গেছিল?”

আবিদ রেকর্ড চেক করে বললো,
— “স্যার, রনিকে সর্বশেষ কিশোরগঞ্জ রেলস্টেশনে দেখা গেছে ।”

বখতিয়ারের চোখ হঠাৎ জ্বলজ্বল করে উঠলো ।
— “আমার মনে হচ্ছে, ও কারও কাছ থেকে টাকা নিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে । আর সবচেয়ে সম্ভাব্য জায়গা হলো—মোহাম্মদপুর ।”

আবিদ ভয়ভরা গলায় বললো,
— “মোহাম্মদপুর তো খুবই ভয়ংকর জায়গা স্যার । সেখানে আমাদের আওতা নেই, লোকাল গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে । তদন্ত চালানো কি সম্ভব?”

বখতিয়ার টেবিলে মুঠো চাপড়ে বললেন,
— “আমরা বসে থাকলে কোনো অগ্রগতি হবে না । যত ভয়ংকরই হোক, ওকে বের করতেই হবে ।”

আবিদ কিছুটা দ্বিধায় বললো,
— “তাহলে লোকাল থানার সাপোর্ট লাগবে ।”

— “ঠিক তাই । তুমি মোহাম্মদপুর থানায় যোগাযোগ করো । আমি প্রস্তুত ।”

কিছুক্ষণ পর আবিদ এসে জানালো,
— “স্যার, ওসি অনুমতি দিয়েছে । আমাদের সাথে ওদের একজন কনস্টেবলও থাকবে ।”

বখতিয়ার হালকা হাসলেন, “চলো আবিদ, আর দেরি করা যাবে না ।”

চার ঘণ্টার যাত্রা শেষে ।
ঢাকার ভিড়, ধুলা, আর গলিপথের জটিলতায় গাড়ি এগোতে কষ্ট হচ্ছিল । মোহাম্মদপুর থানায় পৌঁছে তারা একসাথে নামলো । জায়গাটা এমন যে অন্ধকার গলিতে ঢুকলেই কেউ নজরে রাখছে বলে মনে হয় ।

বখতিয়ার চারপাশে চোখ বুলিয়ে বললেন,
— “আবিদ, কেউ আমাদের ফলো করছে ।”

আবিদ বিস্মিত, “কোথায়?”

বখতিয়ার হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ে একটা লোককে ধরে ফেললেন ।
— “কেন আমাদের পিছু নিচ্ছিলে?”

লোকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো, “আমি তো এমনি ঘুরাঘুরি করছিলাম । আপনাদের সমস্যা?”

বখতিয়ার ঠান্ডা চোখে তাকালেন । বুঝলেন, এখানে সময় নষ্ট করলে বিপদ বাড়বে । তাই ছেড়ে দিলেন ।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আবছা আলোয় দেখা গেল—রনি! ওদের চোখে পড়তেই রনি ছুট দিলো দৌড়ে ।

— “আবিদ! কনস্টেবল! ধরো ওকে!”

শুরু হলো ভয়ংকর ধাওয়া । গলি থেকে গলিতে, অন্ধকার ছাপিয়ে, কাদাজল ছিটিয়ে রনি পালাচ্ছে । বখতিয়ারদের শ্বাস ভারী হয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তাদের দৃঢ়তা ভাঙছে না ।

ঠিক তখনই দেখা গেল, কয়েকজন গুণ্ডা দল বেঁধে তাদের পিছু নিল । বখতিয়ার গর্জে উঠলেন,
— “এই এলাকাটা অপরাধীদের আস্তানা । ওরা রনিকে বাঁচাতে নামছে!”

চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা শুরু হলো । গলির ভেতরে ইট ছোঁড়া, লাঠির শব্দ, গালাগালি । বখতিয়ার হঠাৎ ঝাঁপিয়ে পড়ে রনির জামার কলার ধরে ফেললেন । রনি চিৎকার করছে, হাত-পা ছুঁড়ছে ।

কনস্টেবল আর আবিদ মিলে লড়াই করতে করতে কোনোভাবে রনিকে টেনে পুলিশ ভ্যানে তুলতে সক্ষম হলো । কিন্তু বিপদ এখানেই শেষ নয় । ভ্যানের সামনে একের পর এক মোটরসাইকেল এসে দাঁড়ালো, রাস্তায় বাঁশ ফেলে অবরোধ তৈরি হলো ।

আবিদ স্টিয়ারিংয়ে বসে ঘামতে ঘামতে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
— “স্যার, যদি এখন ব্রেক কাটি, ওরা আমাদের শেষ করে দেবে!”

বখতিয়ার চিৎকার করলেন,
— “গাড়ি চালাও আবিদ! কিছু হলে আমি সামলাবো!”

অভূতপূর্ব দক্ষতায় আবিদ বাঁক ঘুরিয়ে, গাড়ি ছুটিয়ে, ভ্যানকে অবশেষে নিরাপদে থানায় নিয়ে এল ।

থানার বাতাসে স্বস্তির ছোঁয়া । রনি ক্লান্ত, ভয়ে ঘেমে যাচ্ছে । কিন্তু বখতিয়ারের চোখে তখন শুধু একটাই আগুন—“এবার সত্য বের করে আনবো ।”

জিজ্ঞাসাবাদ কক্ষের দরজা বন্ধ হলো…
ভেতরে শুরু হতে চললো এক নতুন খেলা ।


চলবে...


ব্লাড কিলার – পর্ব ৩ : ভাঙা মুখোশ


লেখক পরিচিতি