অন্তরালের ছায়া, পর্ব ৪ ছায়ার ভিতর লুকিয়ে থাকা আলো

in আমার বাংলা ব্লগ8 days ago

পর্ব ৪ : ছায়ার ভিতর লুকিয়ে থাকা আলো


1000107184.jpg

বৃষ্টি পড়ছিলো হালকা হালকা, সেই বিকেলে বখতিয়ারের ফোনে অচেনা এক নম্বর ভেসে উঠলো । গলা তুলে বললো,
— "হ্যালো?"
— “আমার নাম অর্ণব… আমি কথা বলতে চাই…”

সঙ্গে সঙ্গে বখতিয়ার বাকরুদ্ধ । গোয়েন্দা ইউনিট তৎক্ষণাৎ একটি ক্যাফেতে অর্ণবের সঙ্গে দেখা করে ।

অর্ণবের চোখজোড়া যেন আতঙ্কে জমাট বেঁধে আছে । তার কণ্ঠে ঘাম আর অপরাধবোধ মিশে আছে—
— “আমি অনেক ভেবেছি… আর পেরে উঠছি না… তোমাদের সব বলবো…"

অর্ণব জানায়, ছয় মাস আগে এক রাতে নিশি তার সঙ্গে দেখা করতে চায় । সেই রাতে নিশি ছিলো অদ্ভুত রকম রাগান্বিত, চোখে অদ্ভুত ঝাঁজ ।

— “তুমি কি আমার জন্য কাউকে খুন করতে পারবে?” —নিশি হঠাৎ করে বলে ওঠে ।

অর্ণব হতবাক!
— “তুমি পাগল হয়েছো?”—অর্ণব
— “তুমি যদি না করো, তাহলে আমি তুমার সংসার ভেঙে দেবো । তোমার বউয়ের কাছে সব বলে দেবো! তোমার আর আমার সম্পর্কের কথা, প্রতিটা ছবি আমি তুলে রেখেছি…” —নিশি

অর্ণব ছিলো বিবাহিত । সমাজে তার সম্মান, পরিবার—সবকিছুই ছিল ঝুঁকিতে । আর নিশি? সে যেন অন্ধ প্রতিশোধে উন্মাদ ।
নিশি তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী, অনন্যাকে শেষ করতে চায় ।

আর অর্ণব… সে একাই ছিল না ।

সে সাহায্য চায় তার ছোট ভাইয়ের মতো প্রিয় বন্ধু, আরিয়ানের ।
আরিয়ান তখনই জানে, তারা খুন করবে না—একটা “দুর্ঘটনা” ঘটাবে ।
অনন্যা এমনিতেই ছিল এক অ্যালকোহলিক নারী ।
এক রাতে তারা অনন্যাকে জোর জবরদস্তি মদ পান করায় ।

চোখজোড়া ঝাপসা হয়ে আসে, গাড়িতে উঠানো হয় অনন্যাকে ।
পাহাড়ি পথে গাড়ি ছুটে চলে…
আর তারপর এক মুহূর্তে… ধাক্কা, শব্দ, নদীতে ডুবে যাওয়া ।
সবকিছু চুপচাপ ।

পুলিশ তদন্ত করে—তাতে ধরা পড়ে অনন্যা খুবই মাতাল ছিল, গাড়ির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিল ।
কেস ক্লোজড ।

তবে প্রশ্ন রয়ে যায়—
অর্ণব হঠাৎ এত কিছু বলল কেন?
সে কি অনুশোচনায় ভুগছে, নাকি ভয় পেয়েছে, নাকি কেউ তার পিছু নিয়েছে?

বখতিয়ার ও তার দল তখনও জানতো না—এই স্বীকারোক্তির পেছনে আরও বড় ছায়া অপেক্ষা করছে ।


চলবে…


অন্তরালের ছায়া, পর্ব ৩ : অদৃশ্য ছায়ার ঠিকানা


লেখক পরিচিতি


আমি বখতিয়ার রশিদ — গল্প বলার ফাঁকে সময় খুঁজি, আর সময়ের ফাঁকেই খুঁজে পাই গল্প । ক্রাইম থ্রিলার হোক বা অদ্ভুত, আমি সবসময় খুঁজি মানুষ আর মনের রহস্য । ছায়া, অন্ধকার আর মানবিক টানাপোড়েনে গাঁথা আমার চরিত্ররা কখনো নায়ক নয়, কখনো খলনায়কও নয়—তারা শুধু মানুষ । আমি বিশ্বাস করি, গল্প হোক বা সিনেমা অথবা সিরিজ—প্রতিটি লাইন, প্রতিটি সংলাপ একটা জীবন্ত স্পর্শ ছুঁয়ে দিক পাঠকের হৃদয়ে । কেননা
—“ছায়ার আড়ালে লুকিয়ে থাকে গল্প… আর সেই গল্প খোঁজে বখতিয়ার।”