মানসিক বিশৃঙ্খলা..😥
হ্যালো বন্ধুরা
মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি "আমার বাংলা ব্লগ"এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সকল সদস্যগণ,কেমন আছেন সবাই? আশাকরি আপনারা সকলেই ভালো আছেন,সুস্থ আছেন?পরম করুণাময় ঈশ্বরের অশেষ কৃপায় আমিও পরিবারের সবাইকে সাথে নিয়ে ভালো আছি।
আমি @bristychaki,আমি একজন বাংলাদেশী। আমার বাংলা ব্লগ এর আমি একজন ভেরিফাইড ও নিয়মিত ইউজার।আমি বাংলাদেশের গাইবান্ধা জেলা থেকে আপনাদের সাথে যুক্ত আছি। প্রতিদিনের মতো আমি আজও নতুন একটি পোস্ট নিয়ে আপনাদের মাঝে হাজির হয়েছি।আমি প্রতিনিয়ত চেষ্টা করি পোস্টের ভিন্নতা আনার।তারই ধারাবাহিকতা বজায় নতুন একটি পোস্ট আপনাদের সাথে শেয়ার করছি আশাকরি আপনাদের ভালো লাগবে!
মানসিক_বিশৃঙ্খলা,
এমন এক চরম দূর্দশা যা মানুষকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত করে আর ঠিক সেই ঘটনাটাই ঘটেছে স্বর্গীয় পলাশ সাহার সাথে।আজ কয়দিন ধরে ফেসবুক জুড়ে শুধু তাঁর মৃত্যুর খবরে গোটা দুনিয়ার মানুষের হৃদয় কে নাড়িয়ে দিয়েছে! সত্যিই এরকম মৃত্যু মেনে নেওয়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়।তাঁর মৃত্যুর প্রতিটি খবর দেখেছি সবখানেই শুধু তাঁর স্ত্রীকেই দোষারোপ করা হচ্ছে...তাঁর মৃত্যুর জন্য কি তাঁর স্ত্রী একাই দায়ী?বিষয় গুলো বিচার-বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে তাঁর স্ত্রী মা এবং পরিবারের সকলেই কমবেশি দায়ী আছেন।তাঁর মা ছেলে হারানোর শোকের চেয়ে ছেলের বউকে দোষী সাবস্ত করতেই ব্যস্ত!তার প্রতিটি কথা তার মুখের ভঙ্গি দেখলেই যেকেউ বুঝতে পারবে।
একটা মেয়ে যখন বিয়ে হয়ে অন্য একটা পরিবারে আসে তখন তার অনেক স্বপ্ন থাকে,সে কিভাবে কি করবে কিভাবে নিজের জীবন কে সাজিয়ে গুছিয়ে সুন্দর একটি জীবন উপভোগ করবে।সেই মেয়েই যদি বিয়ের পর এসে দেখে তার স্বপ্ন শুধু স্বপ্নই থেকে যাবে..!সে চাইলে তার স্বামীর সাথে ভালো করে কথা বলতে পারবে না,তার স্বামীর সাথে কোথাও ঘুরতে যেতে পারবে না তার শখের কোনোকিছু কিনতে পারবে না আরও ইত্যাদি ইত্যাদি....!তখন সেই মেয়েটার কি হতে পারে তা শুধু একজন ভুক্তভোগীই বুঝতে পারবে।আমার দেখা মতে এরকম অনেক পলাশ সাহা আছে যারা মা এবং বউয়ের অভিযোগের মাঝে দাঁড়িয়ে নীরব ভূমিকা পালন করে।তাঁরা খুবই অসহায় তাঁরা না পারে মা'কে কিছু বলতে না পারে বউকে খুশি করতে।
নিজস্ব কথা
আমার যখন বিয়ে হয় তখন আমার খুব একটা বয়স ছিলো না"আমি যে পরিবারে জন্মেছি বড় হয়েছি সেখানে আমি ছিলাম সবার আদরের বড় কন্যা,আমার বাবা কাকা সবার বড় মেয়ে তাই আমার পরিবারে আমার গ্রহণযোগ্যতা অনেক বেশি ছিলো এবং আদর ভালোবাসার কোনো কমতি ছিলো না।আদরে বড় হওয়ার কারণে কাজকর্ম কোনোকিছু তেমন আমার জানা ছিলো না।যখন বিয়ে হয়ে শ্বশুর বাড়িতে আসি প্রথম যখন আমাকে রান্না করতে হলো,তখন আমি রান্নার কিছুই জানি না,তাও আবার গোবরের মুইঠ্যা দিয়ে রান্না করতে হয়। মাছের তরকারি রান্না করতে গিয়ে কখন যে একটা গোবরের দলা তরকারিতে পড়েছে আমি নিজেও জানি না।খাবার খেতে বসে একজনের পাতে সেই গোবের দলাটা পড়েছে তখন কি যে লজ্জা পেয়েছি লজ্জায় সবার আড়ালে কান্না করেছিলাম খুব।আমি খুব রোগা পাতলা ছিলাম শাড়ি পড়তে পারতাম না কতোদিন শাড়ি পায়ে বেঁধে পড়ে গেছি তার ঠিক নেই।ডিম ঘর থেকে রান্না ঘরে আনতে ফেলে দিয়ে ভেঙ্গেছিলো তারজন্য কতো কথা শুনতে হয়েছিলো আরও কতো ঘটনা কতো কিছু হজম করতে হয়েছে তা শুধু আমিই জানি। তবে কখনো স্বামীর কাছে অভিযোগ করিনি অভিযোগ করার মতো জ্ঞান বুদ্ধি টুকুও আমার ছিলো না,এতোটাই নির্বোধ ছিলাম।তবে আমার শাশুড়ী মা আমাকে খুব সাপোর্ট করতো আমাকে ভালোবাসতো আর এটাও ছিলো আমার জীবনের আরেক দূর্দশা!সেটা অন্য সবার ভালো লাগতো না সেগুলো নিয়ে প্রায়ই ঝামেলা হতো শ্বাশুড়ি মা'কে অনেক কথা শুনতে হতো।
তারপর তো স্বামীর সাথে নতুন সংসারের আশায় গ্রাম ছেড়ে ঢাকা শহরে যাওয়া।আবারও শুরু হলো জীবনের আরেক যুদ্ধ। নির্বোধ জ্ঞানকান্ডহীন একজন মেয়ে মানুষের সংসার জীবন যে কি পরিমাণ যন্ত্রণার হয় তা শুধুমাত্র আমিই জানি।আস্তে আস্তে নিজেকে উন্নত করার চেষ্টায় উঠেপড়ে লাগলাম! মনে মনে দৃঢ়সংকল্প করি যেভাবেই হোক আমার আমি কে পরিবর্তন করতেই হবে!সময়ের সাথে সাথে নিজেকে পরিবর্তন করলাম। সমাজে সবার সাথে মেশার মতো যোগ্যতা তৈরি করলাম, এমন কোনো কাজ নেই যা আমি শিখিনি শিক্ষা-দীক্ষায় পরিপূর্ণ হলাম!আর এতেও ঘটে গেলো বিপত্তি আমার পরিবর্তনকে অনেকেই মেনে নিতে পারছিলো না!তখন আমাকে বিভিন্ন রকম অপবাদ দেওয়া হলো।আমি প্রথম দিকে মেনে নিতে পারছিলাম না খুবই ভেঙ্গে পড়েছিলাম!তারপর একটা সময় গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ি এবং বিছানায় শয্যাশায়ী যাকে বলে।আমার স্বামী তার সর্বোচ্চ টা দিয়ে চেষ্টা করেছে আমাকে সুস্থ করার।ঢাকার এমন কোনো হাসপাতাল এমন কোনো ডাক্তার নেই যে সে আমাকে দেখায়নি!যে যখন বলছে অমুক জায়গায় অমুক ডাক্তার ভালো সেখানেই আমাকে নিয়ে গেছে।কিন্তু আমার দূর্ভাগ্য শত চেষ্টা করেও আমার রোগ সারেনি, যা আমার সারাজীবনের সঙ্গী হয়ে গেছে।তারপও আমরা সকল দুঃখকষ্ট অতিক্রম করে বেশ ভালোই ছিলাম।
আমি খুবই সহজসরল প্রকৃতির মানুষ ছিলাম সবসময়ই চেয়েছি আমার আশেপাশে থাকা মানুষগুলোকে নিয়ে বসবাস করতে।কিন্তু তারা চায়নি আমি অনেক গুলো সময় অনেক গুলো বছর অপেক্ষা করেছিলাম যে একটা সময় গিয়ে হয়তো সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে!কিন্তু তাতে লাভ হয়নি।আর তাই আমিও নিজেকে সেভাবেই প্রস্তুত করতে শুরু করলাম।এখন আর কারো কথা ভাবি না কে কি বললো কে কি ভাবলো সেগুলো গায়ে মাখি না।কে সম্পর্ক রাখলো কে রাখলো না এগুলো আমাকে আর ভাবায় না!এখন আমি শুধু মনে করি আমি চাইলেও পৃথিবীর কোনো নিয়ম পরিবর্তন করতে পারবো না তাই আমি নিজেই নিজেকে পরিবর্তন করবো আর সেটাই চেষ্টা করছি।জানিনা কতোটা সফল হতে পারবো তবে কারো কাছে ভালো হওয়ার বৃথা চেষ্টা কখনোই করবো না।
পরিশেষে একটা কথায় বলতে চাই মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার আগে কোন পরিবারে বিয়ে দিচ্ছেন তাদের পারিবারিক অবস্থান কি!তারা মানুষ কেমন সেগুলো দেখতে হবে এবং বিয়ের পর মেয়ের মানসিক অবস্থার খোঁজখবর রাখতে হবে।মেয়েরা যখন লোকলজ্জার ভয়ে কাউকে কিছু বলতে পারে না।তখন দিনের পর দিন ভিতরে ভিতরে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয় পড়ে আর একটা সময় পর সে আর স্বাভাবিক আচরণ করতে পারে না।তখন তাকে সবাই ডেস্পারেট ক্রিমিনাল আখ্যা দেয় এবং সমস্ত ঘটনার জন্য তাকে দায়ী করে।আগে ঘটনা জানুন বুঝুন তারপর বিচার করুন তাহলে আসল সত্যি ঘটনা গুলো বেড়িয়ে আসবে!
গোটা দেশবাসী যেভাবে একটা মেয়েকে দোষারোপ করে যাচ্ছে...তাতে করে ভগবান না করুক সে কখন কোন দূর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে!ভগবান সহায় হোক এই প্রার্থনা করি।আমি আমার নিজের জীবন দিয়ে অনেক কিছু বুঝেছি কিন্তু আমি আমার সকল অভিজ্ঞতা গুলো শেয়ার করতে পারলাম না।তার কারণ এখানে আমার অনেক আপনজন পরিচিত আছেন আমি চাই না আমার কথাগুলো সবাই জানুক কিছু দুঃখকষ্ট একান্তই নিজের থাক।যে চলে গেছে সে তো গেছেই এখন আফসোস করে কোনো লাভ নেই, বরং যে বেঁচে আছে তাকে বাঁচতে দিন...!!!!🙏
OR
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপনার লেখাটা সত্যিই মন ছুঁয়ে গেল। একদিকে পলাশ সাহার মতো করুণ ঘটনা, আরেকদিকে আপনার নিজের জীবনের সংগ্রামের গল্প সবকিছু মিলিয়ে এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম। সমাজ যেভাবে নারীদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি রাখে এবং মেয়েদের মানসিক পরিস্থিতি কতটা উপেক্ষিত থাকে, সেটা আপনি খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরেছেন। সত্যিই, কারো জীবনের পরিপূর্ণ সত্য না জেনে শুধুমাত্র দোষারোপ করা খুবই অমানবিক। আপনার সাহস, অভিজ্ঞতা ও চিন্তাধারাকে শ্রদ্ধা জানাই। আমরা যদি সবাই একটু সহানুভূতিশীল হই, তাহলে হয়তো এমন মর্মান্তিক ঘটনা আর ঘটবে না। আপনার জন্য অনেক শুভকামনা।