শ্রীকান্ত!!
আমার বাংলা ব্লগে,সবাইকে স্বাগতম।
আমি @emon42.
বাংলাদেশ🇧🇩 থেকে
"আমি সমস্তই দেখিলাম, সমস্ত বুঝিলাম। যে গোপনেই আসিয়াছিল, তাহাকে গোপনেই যাইতে দিলাম। কিন্তু এই নির্জন নিশীথে সে যে তাহার কতখানি আমার কাছে ফেলিয়া রাখিয়া গেল, তাহা কিছুই জানিতে পারিল না"।
উপরের এই অংশটুকু হয়তো আপনারা অনেকেই পড়ে থাকবেন। যদি না পড়েন তাহলে স্যোসাল মিডিয়ায় দেখার কথা। আর যদি সেটাও দেখে তাহলে এখন লেখাটা পড়ে নিন। এটা বাংলা সাহিত্যের বিখ্যাত একটা অংশ। আপনি আপনার ছেড়ে যাওয়া ভালোবাসা কে খুব সহজেই এই লাইনটার মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে পারবেন। এটা শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের এর "শ্রীকান্ত" উপন্যাসের প্রথম খন্ডে রয়েছে। এখানে লেখক বেশ গভীর একটা ভাবকে তুলে ধরেছেন। ভাবলেই অন্যরকম লাগে। কতটা সহজভাবে এমন কঠিন অনূভুতি তুলে ধরা যায় সেটা এই লেখাটা না দেখলে বুঝতেই পারতাম না। আপনারা আমার কথার মাথামুন্ডু নাও বুঝতে পারেন। তাহলে একটু অন্যভাবে অনূভুতি টা শেয়ার করা যাক।
বাংলা সাহিত্যের লেখকরা তাদের লেখাগুলো এমনভাবে তুলে ধরেছেন যে শত বছর পরে গিয়েও কোন একটা জেনারেশন সেটা অনূভব করতে পারবে। ঠিক যেমন বতর্মান জেনারেশন টা শরৎচন্দ্রের শ্রীকান্ত উপন্যাসের এই লাইনটা অনূভব করতে পারছে। শ্রীকান্ত শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের অন্যতম শ্রেষ্ঠ একটা উপন্যাস। যদিও তার দারুণ সব উপন্যাসের ভীড়ে এটাকে প্রথমে রাখা কষ্টসাধ্য তবে আমার কাছে বেশ পছন্দের এটা। শ্রীকান্ত হলো প্রেমের উপন্যাস। যেখানে রাজলক্ষী এবং শ্রীকান্তের জীবনের একটা বিশেষ দিক লেখক ফুটিয়ে তুলেছেন। যদিও প্রথম পর্ব টা ছিল শ্রীকান্তের বাল্যকালের কাহিনী। যেখানে ইন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ একটা ভূমিকা রেখে যায়। বহুবছর পরে আবার শ্রীকান্ত যখন রাজলক্ষীর দেখা পাই সেটা অনেক টা অনাকাঙ্খিতভাবে। শ্রীকান্ত হয়তো নিজেও ভাবেনি রাজলক্ষী বা পিয়ারী কে ঐভাবে দেখবে।
পরবর্তীতে শ্রীকান্তের মনে ফেলে আসা সেই প্রেমের কিছুটা উদয় ঘটলেও সেটা প্রকাশ করার সাহস তার হয়নি। বেশ অনেকদিন রাজলক্ষীর বাড়িতে থাকলেও শ্রীকান্ত একটা মূহূর্তের জন্যেও রাজলক্ষী কে সেটা বুঝতে দেয়নি। একপর্যায়ে শ্রীকান্ত যখন রাজলক্ষীর বাড়ি ছেড়ে চলে যায় তখন এই সংলাপটা আসে। বহু বছর পরে শ্রীকান্ত তার সেই ফেলে আসা ভালোবাসা ফেরত পেয়েছিল। কিন্তু তখন তার কিছু করার ছিল না। রাজলক্ষী যেমন গোপনে তার জীবনে এসেছিল ঠিক সেভাবেই গোপনে চলে গেল। শ্রীকান্তের মনের মধ্যে অনেক বড় একটা জায়গা করে রেখে গিয়েছিল রাজলক্ষী। কিন্তু ঐ নির্জন নিশীথে সে যে তাহার কতখানি ফেলিয়া রাখিয়া গেল তার কিছুই জানিতে পারিল না। লেখাটা এখানে একটা গভীর অপূর্ণতা প্রকাশ করেছে। পাশাপাশি প্রকাশ করেছে অপ্রকাশিত এক গভীর ভালোবাসা।
জীবনের অপূর্ণতাতেই ভালোবাসা যেন সবচাইতে গভীর। আপনি যখন আপনার ভালোবাসার মানুষকে পাবেন না তখনই তাকে বেশি অনূভব করবেন। তখনই আপনি ভালোবাসা টা বেশি করে প্রত্যাশা করবেন। যুগে যুগে সব লেখক রা যেন সেটাই বুঝিয়ে দিয়েছেন তাদের লেখার মাধ্যমে।তার শ্রীকান্তের মাধ্যমে সেটা যেন আরও গভীরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক। পৃথিবীতে সবাই তাদের মতো করে চলে যাবে। কিন্তু তাদের অজান্তেই আপনার কাছে তারা তাদের একটা বৃহৎ অংশ রেখে যাবে যেটা সম্ভবত তারা নিজেরাও জানে না। লেখার মতো কিছুই পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ শ্রীকান্ত উপন্যাসের এই লাইনটা মনে পড়লো। এইজন্যই নিজের অনূভুতি এবং বইটার সমন্বয়ে লিখে ফেললাম।
সবাইকে ধন্যবাদ💖💖💖।
অনন্ত মহাকালে মোর যাএা অসীম মহাকাশের অন্তে। যারা আমাদের পাশে আছে তারা একটা সময় চলে যাবেই, এটা তাদের দোষ না। আমাদের জীবনে তাদের পার্ট ওইটুকুই। আমাদের প্রকৃত চিরশখা আমরা নিজেই, তাই নিজেই যদি নিজের বন্ধু হতে পারেন, তাহলে দেখবেন জীবন অনেক মধুর।তখন আর একা হয়ে যাওয়ার ভয় থাকবে না।
আমি ইমন হোসেন। আমি একজন বাংলাদেশী। আমি একজন ছাএ। তবে লেখাপড়া টা সিরিয়াসলি করি না হা হা। লেখালেখি টা বেশ পছন্দ করি। এবং আমি ফুটবল টা অনেক পছন্দ করি। আমার প্রিয় লেখক হলেন জীবনানন্দ দাস। আমি একটা জিনিস সবসময় বিশ্বাস করি মানিয়ে নিতে এবং মেনে নিতে পারলেই জীবন সুন্দর।।