ঈদ উদযাপন করা আর হলো না!!

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago

19-10-2022

০৪ কার্তিক,১৪২৯ বঙ্গাব্দ


আসসালামুআলাইকুম সবাইকে


কেমন আছেন সবাই? নিশ্চয় অনেক ভালো আছেন 🌼। আমি ভালো আছি। যাক, আজকে চলে এলাম আপনাদের সাথে অতীতের কিছু স্মৃতি শেয়ার করে নেয়ার জন্য। টাইটেল দেখে হয়তো কিছুটা হলেও আন্দাজ করতে পেরেছেন!

muslim-5261111_1280.jpg

copyright free image from pixabay

তখন ছোট ছিলাম। বয়স সবেমাত্র চার বছরে পা দিলাম। ঈদ আসলেই আনন্দে মেতে উঠতাম। সব থেকে ভালো লাগার বিষয় ছিল জামা কেনাতে। রোযার ঈদের শুরুতেই গোনা শুরু করে দিতাম। আগেভাগেই জামা কাপড় কিনে সুটকেসে সাজিয়ে রেখে দিতাম। জামা কাপড় কিনে কাউকে দেখিয়ে দিলে মনে হতো আমার ঈদ চলে গেছে! ছোট ছোট বিষয়গুলোতে আনন্দ খুঁজে পেতাম। সেসময় আমার পছন্দের জুতা ছিল বিড়ালের পেপু পেপু শব্দ করা জুতাগুলো। আব্বা ছোট ছোট পায়ের জন্য বাজার থেকে ২০ টাকা দিয়ে জুতা কিনে নিয়ে আসতো। সেই জুতা পরে হাটঁতাম আর পেপু পেপু সাউন্ড করতো! এতেই যেন ভালো লাগা কাজ করতো। সারা বাড়ি জুতা পরে একবার ট্রায়াল দিতাম। বাড়ির সবাইকে আমার জুতার পেপু পেপু আওয়াজ শুনাতাম ইচ্ছে করেই। সেসময় রোযা রাখা হতো না। বলতে গেলে আম্মা রাখতে দিতো না। মিথ্যে বলে ঠিকই খাইয়ে নিতো। দুপুরে আযানের সময় খেয়ে ফেললে আম্মা বলতো একটি রোযা হয়ে গেছে! সন্ধ্যা পর্যন্ত থাকলে আরও একটি রোযা হয়ে যাবে। তখন এতো কিছু বুঝতাম না। আম্মার কথাতেই বিশ্বাস ছিল। ইফতারের সময় আগেই বসে যেতাম। বুট মুড়ি আর খিচুরি না হলে যেন ইফতার জমতই না। পরিবারের সবাই একসাথে মিলেমিশে ইফতার করা হতো।

তবে ঈদের আগে আমি কোনো না কোনো কান্ড বাধিঁয়ে দিতাম। হয় হাত কেটে যেত না হয় পা কেটে যেত! সাবধানে থাকার পরও ঈদ আসলেই কোনো ব্যথা পেয়ে বসতাম। সেই ব্যথা শরীরে বয়েই ঈদ করতে হতো। আপনাদের সাথে একটা ঘটনা শেয়ার করি। সেবার রোযা ঈদ ছিল। তখন হাফ প্যান্ট আর হাফহাতা শার্ট পরি। ঈদে জিনস এর একটি শর্ট প্যান্ট আর একটি হাফ শার্ট কিনেছিলাম। আর আমার ঐতিহ্যবাহী বিড়াল জুতা তো আছেই। হাটঁতে থাকলেই পেপু পেপু আওয়াজ করতে থাকে। ঈদের আগে আকাশে চাদঁ দেখা যায়। আমরা বাড়ির সবাই মিলে চলে যেতাম রাস্তায়। সেখানে গিয়ে একসাথে ঈদের চাদঁ দেখা হতো। বাড়িতে একটি মাত্র সাদাকালো টিভি। সেটাও আবার ১৪ ইঞ্চি টিভি। টিভি অন করতেই রোযা ঈদে স্পেশাল গান। আহ! এ গান শুনে কত যে ভালো লাগত। এ যেন এক অন্যরকম আনন্দ। সেটা হয়তো বলে বুঝানো যাবে না। ঈদের দিন সকাল বেলা খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে যেতাম। বাড়ির আশেপাশে কিছুক্ষণ হাটাঁ চলা করতাম। সকাল আটটা বাজতেই গোসল করার ধুম পরে যেত। আমাদের পুকুরে অনেক মানুষজন এসে গোসল করতো। সবাইকে নিয়ে গোসল করা হয়ে যেত। ঈদে নতুন সাবানের গন্ধও ভালো ছিল। সবাই দেখতাম নতুন নতুন সাবান নিয়ে এসেছে। সাবানের সুবাসে প্রাণ ভরে যেত। ঈদে স্যান্ডালিনা সাবান ইউজ করা হতো বেশি। পুকুরে একজনের শরীর আরেকজন মুছে দিতো।

গোসল করা শেষ হলে এবার নতুন জামা পড়ার পালা। হাফ প্যান্ট আর হাফহাতা শার্ট পরেই রেডি হয়ে যেতাম। সাথে প্রিয় জুতা। আম্মাকে সালাম করতাম। পকেটে বিশ টাকা ঢুকিয়ে দিতো। অবশ্য এই বিশ টাকা দিয়েই যেন সন্তুষ্ট থাকতাম। পকেটে বিশ টাকা নিয়ে ঈদের মাঠের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পরা। আমাদের বাড়ি থেকে ঈদগাহ মাঠ কিছুটা দূর ছিল। হেটেঁ গেলে ১৫ মিনিটের মতো লাগে। গ্রামের ছেলেদের সাথে ঈদের মাঠে হেটেঁ হেটেঁ যেতাম। বাড়ি থেকেই খানিকটা দূরে চার লেনের একটি রাস্তা। তখন সম্ভবত টেম্পু চলতো। আপনারা চিনেন কিনা জানিনা! ব্যাটারিচালিত অটো রিক্সা তখন ছিল না। ঈদের দিন রাস্তাও ফাকাঁ থাকতো। গাড়ি চলাচল তেমন দেখা যেত না। তো সেদিন আমি রাস্তার ঠিক বাম পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একজন সাইকেল আরোহর আমার শরীরের উপর সাইকেল তুলে দেয়। ভাগ্যিস মাথায় আঘাত পেয়েছিলাম। নিমিষেই আমার ঈদের জামা রক্তে লাল হয়ে যায়। আমার প্রচন্ড কান্না শুরু। মাথায় হাত দিয়ে দেখি অঝোর ধারায় রক্ত ঝরছে। শরীরের জামা খুলে সেই সাইকেল আরোহী আমার মাথায় পেঁচিয়ে দিল। বাড়িতে আম্মাকে আর আব্বাকে বলা হলো। তারা দ্রুত রিকশা নিয়ে চলে আসে। ঈদের দিন হসপিটালের ইমার্জেন্সি ইউনিট সবসময় ওপেন থাকে। আমাকে নিয়ে যাওয়া হলো হসপিটালে। মাথায় চারটা শেলাই লেগেছিল তখন। আমার সেই ঈদ করা আর হলো না। মাথায় ব্যান্ডেজ করে সোজা বাড়িতে চলে আসি। আসার পথে দশ টাকার একটি চিপস কিনে নিয়ে আসি।

এখনও আমার মাথায় সেই দাগগুলো রয়ে গেছে। হয়তো আজীবন দাগগুলো বহন করে যেতে হবে। আর রয়ে গেছে সেই স্মৃতিটুকু। আপনাদের সাথে শেয়ার করতে পেরে ভালোই লাগছে। আমার জীবনে ঘটে যাওয়া সেই ঈদের দিনের ঘটনা আমি কখনো ভুলতে পারিনি। যাক, এখন তো আর সেই আগের মতো ঈদের আনন্দ পাওয়া যায় না। সেই সাদাকালো টিভিও দেখা যায়না। এখন সবার এখানেই রঙিন টিভি। সবাই আধুনিক হয়েছে। সেই আধুনিকতার অন্তরালে আমি অনুভব করি কি যেন একটা মিসিং!



10% beneficary for @shyfox ❤️

C3TZR1g81UNaPs7vzNXHueW5ZM76DSHWEY7onmfLxcK2iNzq2MSXKSji21JRspt4nqpkXPR5ea7deLzvmJtuzVBwdLJUpBqtgAZ5gHtHPbayD2jR3CWqjkJ.png

ধন্যবাদ সবাইকে



WhatsApp Image 2021-12-23 at 19.46.54.jpeg



আমি কে?

IMG20210908180509.jpg

আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,ব্লগিং,কুকিং,রিভিউ,ডাই ইত্যাদি করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।

Sort:  
 3 years ago 
 3 years ago 

ঠিক বলেছেন ভাই আপনি রোজা ঈদ আসলে রোজা শুরু থেকে আমরা দিন গুনতে থাকতাম। জামা কাপড় কেনার বিষয় ছিল সত্যি অনেক মজার।জামা কাপড় কিনে আমরা কাউকে দেখাতাম না দেখালে মনে হয় আমার ঈদ ফুরিয়ে গেছে। আপনার আব্বু যে বাজার থেকে জুতো কিনে আনতো এই বিষয়ে আমার অনেক ভালো লেগেছে ভাইয়া। আপনারা পুকুরে গোসল করতে গিয়ে একজনের শরীল আর একজন মুছে দিতেন এই বিষয়টা সত্যি অনেক মজার ভাই।

Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.

 3 years ago 

এখন বড় হওয়ার পর মনে হয় আগের মতো আর ঈদে আনন্দ হয় না। ঈদের জামা কেনার যে কত মজা ছিল আনন্দ ছিল তার কোন কিছুই আর নেই। আপনি ঈদের দিন সাইকেল এক্সিডেন্ট করে মাথায় সেলাই দিতে হয়েছিল জেনে খুব খারাপ লাগছে।এরপর থেকে নিশ্চয়ই অনেক সাবধানে রাস্তা পার হন।জীবন অনেক কিছু শিক্ষা দেয়।

 3 years ago 

জি আপু আপনি একদম ঠিক বলেছেন। জীবন অনেক কিছুই শিক্ষা দেয়। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ 🌼

 3 years ago 

শৈশবের স্মৃতি অনেক মধুর ছিল যেটি আপনি তুলে ধরেছেন। তবে দুর্ঘটনা তো দুর্ঘটনাই যেটা ঘটে গিয়েছে,আসলে সেটায় কারো হাত নেই। যাই হোক অবশেষে ইমারজেন্সি বিভাগে ট্রিটমেন্ট নিলেন। ধন্যবাদ আপনাকে পুরনো একটি স্মৃতি শেয়ার করার জন্য।

 3 years ago 

জি ভাইয়া আপনাদের সাথে শেয়ার করে ভালোই লাগছে। ধন্যবাদ আপনাকে 🌼

 3 years ago 

আশা করি এরকম আরো স্মৃতি আমাদের সাথে তুলে ধরবেন অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 years ago 

জি ভাইয়া 😍

 3 years ago 
ছোটকালে ঈদ আসলে আগে মনে হতো, নতুন কাপড় নিতে হবে। আব্বু বাজারে গেলে বলতাম আর কয়েক দিন বাকি আছে, নতুন জামা প্যান্ট জুতা কিনে দিতে হবে। তো সব মিলিয়ে ঈদের খুশির শেষ থাকত না। আপনার বাম পাশ দিয়ে একজন সাইকেল-আরোহী সাইকেল তুলে দেয় এবং মাথায় লাগে।ছোটবেলায় ২০ টাকা দিলে যেন আমার অনেক খুশি থাকতাম। এটাই ছিল আমাদের ছোটবেলার ঈদের আনন্দ।
 3 years ago 

একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া। অল্পতেই যেন খুশি ছিলাম। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ 😍

 3 years ago 

আমার মনে হয় আমরা বাংলাদেশে যারা বাস করি তাদের সবারই ঈদ আনন্দ প্রায় এক ধরনের। আপনার শৈশব স্মৃতির সঙ্গে প্রায় আমোরো সব কিছুিই মিলে গেছে। শুধু আামি কখনো ঈদগায় গিয়ে নামাজ পড়িনি আর ঈদের দিন আপনার মত এক্সিডেন্ট করিনি। ধন্যবাদ ঘটনাটি শেয়ার করার জন্য।

 3 years ago 

একদম ঠিক বলেছেন ভাইয়া। শৈশবের দিনগুলো আসলেই রঙিন ছিল। ধন্যবাদ 😍

 3 years ago 

আপনার আজকের প্রশ্নের কথাগুলো পড়লাম পড়ে অনেক ভালো লাগলো।
সত্যি শৈশবের ঈদ আর এখনকার ঈদ দেখি আকাশ-পাতাল পার্থক্য।

শৈশবে একসেট নতুন জামা কাপড় আর কিছু টাকা হইলেই যেন মনে হতো আমার থেকে খুশি আর ঈদের দিন কেউ হয় না।।

আসলে ইচ্ছা করে কেউ কোনো দুর্ঘটনায় পড়তে চায় না এটা আকস্মিকভাবে হয়ে যায়। আসলে তখন আর কিছু করার থাকে না।।

 3 years ago 

জি ভাইয়া আপনি একদম ঠিক বলেছেন। একসেট নতুন জামা কাপড় পরেই কত খুশি হতাম। ধন্যবাদ আপনাকে 😍

 3 years ago 

আহারে। হলো হলো ঈদ এর দিনই হতে হলো। কি আনন্দের ভিতর ছিলেন। দোষটা কার ছিলো ভাই। সাইকেল আলার নিশ্চই? আসলে গ্রামে থাকলে এই মজাটা বেশি পাওয়া যায়। তবে এখন পর্যন্ত ঈদ এর দিন তেমন কোনো বড় এক্সিডেন্ট হয়নি। তবে একবার এক কাহিনী হয়েছিলো। দেখি পোস্ট আকারে শেয়ার করবো নে।

 3 years ago 

আপনার পোস্ট পড়ার অপেক্ষায় থাকলাম ভাই 🥰🥰