বিপদেই বন্ধুর পরিচয়!
09-08-2025
২৫ শ্রাবণ , ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
🌼আসসালামুআলাইকুম সবাইকে🌼
কেমন আছেন সবাই? আশা করছি সবাই ভালো ও সুস্থ্য আছেন।তো আমিও সুস্থ্য থাকার চেষ্টা করছি। তবে আপনারা হয়তো জানেন আমার বাবার ডেঙ্গু হয়েছে। হসপিটালে এডমিটেট। এজন্য একটু দৌড়ের উপর থাকতে হচ্ছে! আসলে ডেঙ্গু হলে অনেকগুলো বিষয় মাথায় রাখতে হয়। তার মধ্যে একটি হলো প্লাটিলেট কমছে নাকি বাড়ছে। ডেঙ্গু হলে শরীরের প্লাটিলেট কমে যায় যার কারণে শরীরে পানি চলে আসে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টা সেটা হলো প্লাটিলেট যেন না কমে সেদিকে খেয়াল রাখা। শুরুর দিকে আমার বাবার শরীরে প্লাটিলেট কাউন্ট ছিল ২১,০০০! যেটা তুলনামূলক অনেক কম! তার জন্য বাবার পেট ও পা ফুলে গিয়েছিল। একজন নরমাল ব্যক্তির যেখানে ১,৫০,০০০-৪,৫০,০০০ /cumm. সেখানে মাত্র ২১০০০ খুবই কম। প্লাটিলেট কাউন্ট ৩০,০০০ নিচে চলে আসলে মুখে ঘা হয়! তবে প্লাটিলেট কাউন্ট বাড়ানোর জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো ফল খাওয়া। বিশেষ করে ডাবের পানি খেতে হবে রেগুলার! ডাবের পানি খেলে আস্তে আস্তে বাড়ে।ডেঙ্গু রোগীদের দুদিন পর পর রক্তের সিবিসি টেস্ট করতে হয় এবং সেখান থেকে দেখতে হয় প্লাটিলেট কাউন্ট বেড়েছে কি না!
প্রথম দিকে প্রাইভেটভাবে ডাক্তার দেখানো হয়েছিল। তবে তেমন কোনো উন্নতি লক্ষ্য করা যাচ্ছিল না। অনেকেই অনেক পরামর্শ দিয়েছিল। প্রথমবার সিবিসি টেস্টে একুশ হাজার। আমার এক ফ্রেন্ড শোয়াইব ঢাকা মেডিকেল ফাইনাল ইয়ারে পড়ে। তাকে বলার পর সে বললো ইমিডিয়েটলি হসপিটালে এডমিট করাতে। কিন্তু আমার বাবা হসপিটালে ভর্তি হতে রাজি না। কারণ হসপিটালে এতো এতো রোগী দেখে উনি ভালো থাকতে পারবেন না! আরও একটা দিন বাসায় থাকা হলো। তারপর অবস্থার আরও অবনতি! প্রাইভেটভাবে যে ডাক্তারকে দেখালাম সে দিল আবারো সিবিসি টেস্ট করাতে! সিবিসি টেস্ট এবার প্লাটিলেট কাউন্ট দেখা গেল ১৮,০০০! সেটা খুবই কম! তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নেয়া হলো হসপিটালে ভর্তি করাতে হবে। তবে আপুদের বাসা থেকে সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালটা কাছে। হাসপাতালের ভিতরের পরিবেশটাও নাকি ভালো। দ্রুত বাবাকে নিয়ে চলে গেলাম হসপিটালে! নরমালি এমন কন্ডিশনে রোগীর শ্বাসকষ্ট হয়!
ডাক্তার সিবিসি রিপোর্ট দেখে বললো ইমার্জেন্সি এক ব্যাগ রক্ত ম্যানেজ করতে! আমি তো পুরা মাথা গরম হয়ে যায়। সোস্যাল মিডিয়ার যোগে একটা মেসেজ দিলেই হয়ে যায়। ঢাকা আমার অনেক বন্ধুরাই পড়াশোনা করে। মেসেজ দিলাম দস্তগীরকে যে আমার বাল্যকালের বন্ধু! সে বর্তমানে ঢাকা কলেজে বিবিএ ফাইনাল ইয়ারে পড়াশোনা করছে! তাকে মেসেজ দিয়ে বললাম ইমার্জেন্সি ব্লাড লাগবে। আমার বাবার রক্তের গ্রুপ বি পজেটিভ! বি পজেটিভ রক্ত নরমালি এভাইলেবল। আরেকজন বন্ধুকে ফোন দিলাম। তাকেও বলে রাখলাম ব্লাড লাগবে। সে বলেছিল পেলে জানাবে। তো দস্তগীরকে বললাম ইমার্জেন্সি ১ ব্যাগ ব্লাড লাগবে বি পজেটিভ গ্রুপের! সে নিউমার্কেট এরিয়ার দিকে থাকে। সেখান থেকে মিটফোর্ড হাসপাতালে আসতে ১ ঘন্টার মতো সময় লাগে। রাত তখন সাড়ে এগারোটার মতো বাজে। ডাক্তার বললো ব্লাড কালেক্ট করে রাখতে! ব্লাড লাগতেও পারে আবার নাও লাগতে পারে। অবস্থার উন্নতি হলে লাগবে না।
তবুও রিস্ক নিলাম না! দস্তগীর কিছুক্ষণ পর ফোন দিয়ে বললো ব্লাড ম্যানেজ হয়েছে। তারই মেসের এক ছোট ভাই ব্লাড দিবে। কিছুটা স্বস্তি পেলাম। দস্তগীর তার ছোট ভাইকে নিয়ে রাত বারোটার দিকে চলে আসে। তো ব্লাড গ্রুপ মিললেই যে ব্লাড দিতে পারবে এমন না এখন! ক্রস মেচ চেক করতে হয়। ডোনারের রক্তে কোনো ভাইরাস আছে কি না সেগুলোও টেস্ট করে দেখে। তো ছোটভাইকে নিয়ে চলে গেলাম ব্লাড ব্যাংকে যেখানে ক্রসমেচ চেক করবে! হাত থেকে কিছুটা রক্ত নিয়ে একজন রেখে দিল এবং বললো এক ঘন্টা পর আসতে। তো তারা যেহেতু দূর থেকে আসছে কিছু নাস্তা করলাম তাদের নিয়ে! তারপর হাটাহাটি করে ব্লাড ব্যাংকের এখানে চলে আসলাম! দস্তগীরের ছোটভাই ফার্স টাইম ব্লাড ডোনেট করবে। কিছুটা ভয় কাজ করছিল। তবে দস্তগীর সাহস দিচ্ছিল! ব্লাড নেয়া তিন মিনিটের মধ্যেই হয়ে যায়! তারপর ব্লাড কালেক্ট করে ওখানেই ফ্রিজিং এ রেখে দেয়। তো আমি আসলে বলতে চাচ্ছি বিপদে পরলেই আসলে বন্ধু চেনা যায়। একজন প্রকৃত বন্ধু সবসময় আপনাকে সাপোর্ট করবে সেটা হতে পারে কথার মাধ্যমে, কাজের মাধ্যমে অথবা টাকার মাধ্যমে।
আসলে রক্ত লাগবে শোনার পর আমার মাথা কাজ করছিল না। তারপর ব্লাড মেনেজ হওয়ার পর কিছুটা স্বস্তি পায়! জীবনে এমন বন্ধুত্ব নির্বাচন করুন যে আপনাকে কঠিন মুহূর্তে এগিয়ে আসবে। জীবনে আপনার খারাপ সময় আসবে, ভালো সময় আসবে। ভালো সময় আসলেই যে বন্ধুদের ভুলে যাবেন বিষয়টা কিন্তু এমন নয়। ভালো সময় অথবা খারাপ সময় দুটাই ক্ষণস্থায়ী। তো সুখের মুহূর্তটাও বন্ধুদের সাথে উপভোগ করুন আবার খারাপ সময় আসলে সেটাও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন। তবে জীবনে একটা জিনিস ভালো করে বুঝলাম। স্কুল লাইফের বন্ধুরা সেরা! আপনি যদি দশ বছর পরেও তাদের ডাক দেন, আপনি পেয়ে যাবেন যদি না সে ব্যস্ত থাকে। বন্ধু জীবনের একটা পার্ট। বন্ধুকে ভালোবাসুন, বন্ধুত্ব বজায় রাখুন।
ধন্যবাদ সবাইকে
আমি কে?
আমার নাম হায়দার ইমতিয়াজ উদ্দিন রাকিব। সবাই আমাকে ইমতিয়াজ নামেই চিনে। পেশায় আমি একজন ছাত্র। বর্তমানে ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং এর উপর বিএসসি করছি ঢাকা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যলয় (ডুয়েট) থেকে । পাশাপাশি লেখালেখি করে আসছি গত চার বছর ধরে। ভালো লাগার জায়গা হলো নিজের অনুভূতি শেয়ার করা, আর সেটা আমার বাংলা ব্লগের মাধ্যমেই সম্ভব হয়েছে। নিজেকে সবসময় সাধারণ মনে করি। অন্যের মতামতকে গুরুত্ব দেয় এবং তা মেনে চলার চেষ্টা করি। বাংলা ভাষায় নিজের অভিমত প্রকাশ করতে ভালো লাগে। তাছাড়া ফটোগ্রাফি,কবিতা লেখা,গল্প লেখা ,রিভিউ,ডাই এবং আর্ট করতে ভালো লাগে। অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ভালো লাগে। বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করি। ভবিষ্যতে প্রিয় মাতৃভূমির জন্য কিছু করতে চাই।
Upvoted! Thank you for supporting witness @jswit.
আপনার লেখাটি খুব আন্তরিক ও বাস্তব অভিজ্ঞতাপূর্ণ, যা ডেঙ্গুর মতো মারাত্মক রোগের সময় একজন পরিবারের সদস্যের জন্য উদ্বেগ, দৌড়ঝাঁপ ও সচেতনতার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছে। বাবার অসুস্থতার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি, তবে আপনার দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া, বন্ধুদের সহায়তা চাওয়া এবং সঠিক চিকিৎসা পাওয়ার চেষ্টা সত্যিই প্রশংসনীয়।
জি ভাই। এমন মোমেন্টে সঠিক সিদ্ধান্তটা নেয়াটা জরুরি ছিল।
আসলে এইরকম বন্ধুত্ব খুবই কম দেখা যায়।বিপদেই বন্ধুর পরিচয় এবং বন্ধুর বিপদের সময় পাশে আসলে নিজেকে অনেক ভালো লাগে।যাইহোক আপনার পুরো পোষ্টটি পড়ে ভালো লাগলো এবং শেষে রক্ত পেয়েছেন এটা শুনে অনেক ভালো লাগলো।ধন্যবাদ আপনাকে পোস্টটি শেয়ার করার জন্য।
হ্যা ভাই। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
বুঝতে পারছি পরিস্থিতি কতটা জটিল হয়েছিলো। সেই সাথে নিজের বাবার যদি এরকম অবস্থা হয় তখন মাথা এমনিতেই গরম হয়ে যায়। এরকম পরিস্থিতিতে আমিও বেশ কয়েকবার পড়েছিলাম তবে রংপুরের কারমাইকেলে পড়ার সুবিধার্থে ব্লাড কালেক্ট করা তেমন একটা বেগ পোহাতে হয় না। তারপরেও টেনশন থেকেই যায়। যাইহোক আপনার বন্ধু দন্তগীর এর মত বন্ধু সবার জীবনেই থাকুক। আসলেই বিপদে পড়লেই মানুষ চেনা যায়।