বাড়ছে পথ শিশু: অপুষ্টি ও মাদকের অন্ধকারে হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব।।
বাংলা ভাষার কমিউনিটি
হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন।
আমাদের চারপাশে প্রতিদিনই কিছু দৃশ্য চোখে পড়ে। রাস্তায় ভিক্ষা করা শিশু, গাড়ির কাঁচে টোকা মেরে কিছু টাকা চাইছে, কিংবা ডাস্টবিনে খাবারের খোঁজ করছে। এরা আমাদেরই দেশের শিশু, যাদের অনেকেই আজকে "পথ শিশু" নামে পরিচিত। ভয়াবহ বাস্তবতা হলো, দিন দিন এদের সংখ্যা বাড়ছে। আর এর মধ্যেও বেশিরভাগই অপুষ্টি ও মাদকের মতো ভয়ংকর সমস্যায় জড়িয়ে পড়ছে।
একটি শিশুর শৈশব হওয়ার কথা হাসি-খুশিতে ভরা, খেলাধুলা ও পড়াশোনায় কাটানো। কিন্তু আমাদের দেশের হাজার হাজার পথ শিশু সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত। বেঁচে থাকার জন্য তাদের প্রতিদিন লড়াই করতে হয়। তারা জানে না, পরের দিন তাদের জন্য খাবার জুটবে কিনা, রাত কাটানোর মতো নিরাপদ কোনো আশ্রয় মিলবে কিনা।
পথ শিশুরা দিনের পর দিন যথাযথ খাবার পায় না। অনেকে দিন পার করে মাত্র একবেলা খাবার খেয়ে। যে খাবার তারা পায় সেটিও সাধারণত বাকি খাবার বা ফেলে দেওয়া। ফলে ছোটবেলা থেকেই তারা মারাত্মক অপুষ্টির শিকার হয়। শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি না পাওয়ার কারণে তাদের বৃদ্ধি স্বাভাবিকভাবে ঘটে না, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে পড়ে।
একটু খেয়াল করলে আমরা দেখতে পাই, পথ শিশুদের অনেকেই খুবই শুকনো, শক্তিহীন এবং রোগাক্রান্ত। তাদের চোখে ক্লান্তি, শরীরে ভর নেই। অথচ এই বয়সে তাদের থাকা উচিত ছিল প্রাণচাঞ্চল্যে ভরা এক উজ্জ্বল রূপ।
অপুষ্টির পাশাপাশি আরেকটি ভয়ংকর দিক হলো মাদক। অনেকে হয়তো ভাবেন, এত ছোট শিশুরা কিভাবে মাদকে জড়িয়ে পড়ে? আসলে ক্ষুধা ও দুঃখ ভুলতে গিয়ে কিংবা কোনো সিন্ডিকেটের প্রভাবে তারা খুব সহজেই মাদকে আসক্ত হয়ে যায়। সস্তা মাদকের মধ্যে আঠা শুকানো বা ড্যান্ডির মতো জিনিস সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়।
রাস্তায় দিন কাটানো এই শিশুদের কাছে মাদক যেন একমাত্র আশ্রয়। ক্ষুধা ভুলতে, শীতের কষ্ট ভুলতে কিংবা বাস্তবের যন্ত্রণাকে আড়াল করতে তারা মাদকের কাছে চলে যায়। কিন্তু সেই মাদকই ধীরে ধীরে তাদের জীবন শেষ করে দেয়। শৈশব হারিয়ে যায় অন্ধকারে, ভবিষ্যৎ হয়ে যায় অনিশ্চিত।
আমরা যখন রাস্তায় কোনো পথ শিশুকে দেখি, তখন অনেকেই হয়তো চোখ ফিরিয়ে নেই। কেউ কেউ সামান্য টাকা বা খাবার দেয়, কিন্তু এর মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হয় না। সত্যি বলতে, এই শিশুদের সংখ্যা বাড়তে থাকায় আমাদের সমাজের ব্যর্থতাই প্রকাশ পায়। পরিবার, রাষ্ট্র ও সমাজ সবার মিলিত উদাসীনতার কারণেই তারা আজ এ অবস্থায়।
একটি শিশু জন্মের পর কখনোই চায় না রাস্তায় বড় হতে। পরিবার হারানো, দারিদ্র্য, নির্যাতন কিংবা সামাজিক অবহেলার কারণে তারা রাস্তায় নেমে আসে। অথচ তাদের প্রতি আমাদের দায়বদ্ধতা অনেক।
এ সমস্যার সমাধান সহজ নয়, তবে অসম্ভবও নয়। সরকার, এনজিও, সমাজের সচেতন মানুষ সবাই যদি একসাথে কাজ করে, তাহলে অনেক পথ শিশুর জীবন পরিবর্তন সম্ভব। যেমন-
পুষ্টিকর খাবার ও স্বাস্থ্যসেবা: নিয়মিত খাদ্য ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
শিক্ষার সুযোগ: তাদের জন্য বিনামূল্যে ও সহজলভ্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে।
পুনর্বাসন কেন্দ্র: নিরাপদ আশ্রয় ও পুনর্বাসনের উদ্যোগ বাড়ানো।
মাদক থেকে দূরে রাখা: শিশুদের মাদক থেকে দূরে রাখতে কড়া আইন প্রয়োগের পাশাপাশি মানসিক সহায়তার ব্যবস্থা করতে করা।
পথ শিশুর সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। তাদের অধিকাংশই অপুষ্টি ও মাদকের অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছে। এই শিশুরা যদি সঠিক যত্ন ও সুযোগ পেতো, তবে তারা আমাদের দেশের ভবিষ্যৎ হতে পারতো। আজকের পথ শিশুদের মধ্যেই হয়তো লুকিয়ে আছে আগামী দিনের ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিক্ষক বা শিল্পী।
আমাদের উচিত শুধু তাদের প্রতি দয়া দেখানো নয়, বরং তাদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে দেওয়া। না হলে আমরা হারাবো অসংখ্য স্বপ্ন, হারাবো এক প্রজন্ম।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server