বছরে দুই কোটি ১০ লাখ টন খাবারের অপচয়: আমাদের সচেতনতার অভাব
বাংলা ভাষার কমিউনিটি
হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন।
বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। এখানকার মানুষ বছরের পর বছর কষ্ট করে ধান চাষ করে, শাকসবজি উৎপাদন করে, মাছ-মাংস বাজারে আনে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, এত কষ্টের পরও আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় দুই কোটি ১০ লাখ টন খাবার অপচয় হয়। এই পরিমাণ খাবার দিয়ে লাখ লাখ ক্ষুধার্ত মানুষকে খাওয়ানো সম্ভব হতো।
খাবার শুধু খাওয়ার বিষয় নয়, বরং একটি সম্পদ। এটি উৎপাদনের পেছনে কৃষকের শ্রম, সেচের পানি, সার, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, এবং পরিবহন খরচ জড়িয়ে আছে। যখন খাবার অপচয় হয়, তখন আসলে আমরা এই সমস্ত শ্রম ও সম্পদের অপচয় ঘটাই। আজকে এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের উপদেশটা ফারিদা আখতার বলেছেন—“খাবার অপচয় এখন একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে” তা নিছক বক্তব্য নয়, বাস্তব সত্য।
কখন খাবারের অপচয় হয়?
বিয়ের অনুষ্ঠান ও দাওয়াত: আমাদের দেশে বিবাহ অনুষ্ঠান, দাওয়াত বা পার্টিতে প্রচুর খাবার রান্না হয়। অথচ এর একটি বড় অংশ ফেলে দেওয়া হয়। অতিথির সংখ্যা ও খাবারের পরিমাণ সঠিকভাবে হিসাব করা হয় না।
রেস্টুরেন্ট ও হোটেল: অনেক রেস্টুরেন্ট গ্রাহকের জন্য খাবার পরিবেশন করে, কিন্তু খাওয়া শেষ হলে অর্ধেকেরও বেশি খাবার টেবিলে পড়ে থাকে। এগুলো ফেলে দেওয়া ছাড়া উপায় থাকে না।
গৃহস্থালি পর্যায়ে: বাসায় রান্না করা খাবার প্রায়ই অব্যবহৃত থেকে যায়। অনেকেই পরে খাওয়ার জন্য রেখে আবার ভুলে যান বা ইচ্ছাকৃতভাবে ফেলে দেন।
সংরক্ষণের অভাব: বাজার থেকে সবজি বা মাছ কিনে সঠিকভাবে সংরক্ষণ না করায় তা দ্রুত নষ্ট হয়ে যায়, আর শেষ পর্যন্ত আবর্জনার ঝুড়িতে চলে যায়।
খাবার অপচয় সরাসরি অর্থনীতিকে প্রভাবিত করে। প্রতি বছর যে খাবার নষ্ট হয়, তার বাজারমূল্য হাজার হাজার কোটি টাকা। এই অর্থ দিয়ে অবকাঠামো উন্নয়ন, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা বা দারিদ্র্য দূরীকরণে বড় অবদান রাখা সম্ভব। কিন্তু আমাদের অসচেতনতার কারণে দেশকে এ বিপুল ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
বাংলাদেশে এখনো লাখো মানুষ দিনে একবেলা খাবার খেতে পারে না। দরিদ্র পরিবারের শিশুরা অপুষ্টিতে ভোগে, অনেক মানুষ ভিক্ষা করতে বাধ্য হয়। অথচ অন্যদিকে প্রচুর খাবার অযথা ডাস্টবিনে চলে যাচ্ছে। এটি একটি সামাজিক বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে।
খাবারের অপচয়ের ফলে ফেলা দেওয়া খাবার যখন পচে যায়, তখন সেখান থেকে মিথেন গ্যাসসহ ক্ষতিকর গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হয়। এটি জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ দূষণে বড় ভূমিকা রাখে।
সমাধানের উপায়
সচেতনতা বৃদ্ধি করা: মানুষকে বুঝতে হবে খাবার একটি অমূল্য সম্পদ। খাবারকে সম্মানের সাথে ব্যবহার করতে হবে।
অনুষ্ঠানে পরিকল্পিত খাবার পরিবেশন: বিবাহ অনুষ্ঠান বা পার্টিতে অতিথির সংখ্যা অনুযায়ী খাবার রান্না করা উচিত। অতিরিক্ত রান্নার পরিবর্তে পরিমাণমতো পরিবেশনের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
রেস্টুরেন্টে ছোট পরিমাণে পরিবেশন: গ্রাহকের ইচ্ছামতো ছোট প্লেট দেওয়া হলে খাবারের অপচয় কমবে।
সংরক্ষণ ব্যবস্থা উন্নত করা: বাসা বা বাজারে খাবার সংরক্ষণে ফ্রিজ, শুকনো সংরক্ষণ বা অন্য আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত।
অতিরিক্ত খাবার বিতরণ করা: রেস্টুরেন্ট বা অনুষ্ঠান শেষে অবশিষ্ট ভালো খাবার দরিদ্র মানুষকে বিতরণ করা যেতে পারে। অনেক দেশে ইতিমধ্যেই এ ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
খাবার কেবল আমাদের পেট ভরায় না, এটি কৃষকের ঘাম, প্রকৃতির উপহার এবং অর্থনৈতিক সম্পদের প্রতীক। আমরা যদি সচেতনভাবে খাবারের ব্যবহার করি, তবে সমাজে ক্ষুধা ও দারিদ্র্য কমানো সম্ভব। খাবারের প্রতি সম্মান দেখানো মানে নিজের শ্রম, অন্যের পরিশ্রম এবং প্রকৃতির সম্পদকে সম্মান জানানো। তাই এখনই আমাদের অঙ্গীকার করতে হবে
“খাবার অপচয় নয়, খাবারের সঠিক ব্যবহারই হোক আমাদের সংস্কৃতি।”
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server