নেপালের সরকার পতন: তরুণদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।।
বাংলা ভাষার কমিউনিটি
হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন।
৯ই সেপ্টেম্বর ২০২৫। দক্ষিণ এশিয়ার পাহাড়ি দেশ নেপাল এক ঐতিহাসিক রাজনৈতিক অস্থিরতার মুখোমুখি হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে রাজনৈতিক টানাপোড়েন, অর্থনৈতিক সংকট ও দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত নেপাল এই মাসে এমন এক ঘটনার সাক্ষী হয়েছে, যা দেশটির ক্ষমতার কাঠামোতে বড় ধরনের পরিবর্তনের সূচনা করেছে। সামাজিক মাধ্যম নিষিদ্ধকরণের মতো একটি সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত ব্যাপক বিক্ষোভ, সহিংসতা এবং শেষমেশ সরকারের পতনের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে। নেপাল সরকার Facebook, X, YouTube, Instagram সহ ২৬টি সামাজিক মাধ্যম প্ল্যাটফর্মে প্রবেশাধিকার হঠাৎ বন্ধ করে দেয়। সরকার দাবি করে, ভুয়া তথ্য ও বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট নিয়ন্ত্রণের স্বার্থেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম, এই নিষেধাজ্ঞাকে মত প্রকাশের স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত হিসেবে দেখেছে।
এই প্রজন্ম, যাদের বলা হচ্ছে Gen Z, তারা দ্রুতই রাস্তায় নেমে আসে। সামাজিক মাধ্যমের ওপর নির্ভরশীল তরুণ সমাজ শুধু যোগাযোগের মাধ্যম হারায়নি বরং এই নিষেধাজ্ঞা তাদের চোখে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের বিরুদ্ধে প্রতিরোধের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ দ্রুতই সহিংস রূপ নেয়। রাজধানী কাঠমান্ডু ও অন্যান্য শহরে বিক্ষোভকারীরা সরকারি দপ্তর, এমনকি রাজনৈতিক নেতাদের ব্যক্তিগত বাসভবনে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেনাবাহিনী ও পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে গুলি চালায়। তাতে হতাহতের সংখ্যা বাড়তে থাকে, কমপক্ষে ১৯ জন নিহত এবং শতাধিক আহত হয়।
অবস্থা এতটাই নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় যে সরকার কাফরিউ জারি করে, বিমানবন্দর সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়, এমনকি হেলিকপ্টারে করে কয়েকজন শীর্ষ রাজনৈতিক নেতাকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়। পরিস্থিতি স্পষ্ট করে দেয়, জনরোষ আর দমন করা সম্ভব হবে না।
তীব্র চাপের মুখে সরকার সামাজিক মাধ্যমের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। কিন্তু তখন ততক্ষণে জনরোষ এতটাই তীব্র হয়ে ওঠে যে শুধু একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত বদলে শান্তি ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি। দুর্নীতি, অর্থনৈতিক বৈষম্য, ক্ষমতার কেন্দ্রীকরণ এবং জবাবদিহিতার অভাবের মতো বহুদিনের ক্ষোভ একসাথে ফেটে পড়ে।
৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫ নেপালের প্রধানমন্ত্রী কে.পি. শর্মা ওলি আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগের ঘোষণা দেন। তার চতুর্থ মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত হয়। এর মাধ্যমে কার্যত নেপালের বর্তমান সরকার পতনের মধ্য দিয়ে নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ের সূচনা হয়।
এই আন্দোলনের বিশেষ দিক ছিল তরুণদের ব্যাপক অংশগ্রহণ। এটি কেবল সামাজিক মাধ্যমের প্রবেশাধিকার ফিরিয়ে আনার আন্দোলন ছিল না বরং এটি ছিল প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলা দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি এবং অকার্যকর প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভের বিস্ফোরণ।
তরুণরা এবার দেখিয়ে দিয়েছে যে তারা পরিবর্তন চায়, একটি স্বচ্ছ, জবাবদিহিমূলক ও ভবিষ্যতমুখী সরকার। কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এই রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে নেপাল কীভাবে বেরিয়ে আসবে? নতুন নেতৃত্ব কি তরুণদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারবে, নাকি দেশ আবারও অস্থায়ী সরকার ও দলীয় কোন্দলের ফাঁদে আটকে যাবে?
নেপালের সাম্প্রতিক সরকার পতন কেবল একটি দেশের ক্ষমতার পরিবর্তনের গল্প নয়, এটি একটি সামাজিক বার্তা বিশ্বজুড়ে তরুণ প্রজন্ম তাদের অধিকার ও ভবিষ্যৎ নিয়ে আর চুপ করে থাকবে না। সামাজিক মাধ্যমের মতো ছোট একটি নীতিগত ভুল কীভাবে একটি পূর্ণমাত্রার রাজনৈতিক সঙ্কটে রূপ নিতে পারে, তার বাস্তব উদাহরণ নেপাল।
নেপালের ইতিহাসে এই ঘটনাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁক হয়ে থাকবে। এখন সবার দৃষ্টি দেশটির নতুন রাজনৈতিক পথচলার দিকে যেখানে চাওয়া হচ্ছে স্থিতিশীলতা, স্বচ্ছতা এবং জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server