বাংলাদেশে সিজারিয়ান ডেলিভারির বাড়বাড়ন্ত: প্রয়োজন নাকি ব্যবসা?
বাংলা ভাষার কমিউনিটি
হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন। কিছুদিন আগে আমার ছোট ভাইয়ের ছেলে বাবু দুনিয়াতে এসেছে। তবে সিজারের মাধ্যমে। তাই আজকে সিজারিয়ানের বিষয় নিয়ে একটি বিস্তারিত ব্লগ লেখার সিধান্ত নিলাম। বিস্তারিত তথ্য দিয়ে ব্লগটি প্রকাশ করবো।
বাংলাদেশে মাতৃস্বাস্থ্যের চিত্র দ্রুত বদলে যাচ্ছে। একসময় যেখানে স্বাভাবিক প্রসব ছিল সবচেয়ে প্রচলিত ও স্বাভাবিক প্রক্রিয়া, সেখানে এখন সিজারিয়ান ডেলিভারির হার আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে গেছে। শহরাঞ্চলের প্রায় প্রতিটি বেসরকারি ক্লিনিক কিংবা হাসপাতালেই এখন সিজারিয়ান ডেলিভারি বেশি করা হচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে এটা কি সত্যিই প্রয়োজনীয় চিকিৎসার কারণে, নাকি ব্যবসায়িক স্বার্থে মায়েদের সিজারিয়ান অপারেশনের দিকে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে?
বাংলাদেশে সিজারিয়ানের হার
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)-এর নির্দেশনা অনুযায়ী, কোনো দেশে সিজারিয়ান ডেলিভারির হার ১০-১৫ শতাংশ হলেই সেটিকে স্বাভাবিক বা গ্রহণযোগ্য ধরা হয়। কিন্তু বাংলাদেশে এই হার অনেক বেশি। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে দেশে ৩৫-৪০ শতাংশ ডেলিভারি সিজারিয়ানের মাধ্যমে হচ্ছে। আবার বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এই হার আরও ভয়াবহ কিছু রিপোর্টে বলা হয়েছে প্রায় ৭০ শতাংশ প্রসব সিজারিয়ান। অর্থাৎ, প্রত্যাশিত সীমার তুলনায় বাংলাদেশে এই সংখ্যা তিন থেকে চার গুণ বেশি।
বিশ্বের অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করলে দেখা যায়,
বাংলাদেশ একা নয়, সারা বিশ্বেই সিজারিয়ানের হার বাড়ছে। উদাহরণস্বরূপ কিছু দেশের সিজারিয়ান রিপোর্ট উল্লেখ করছি-
ব্রাজিল: প্রায় ৫৫%
তুরস্ক: ৫০% এর বেশি
ইরান: ৪৫% এর কাছাকাছি
ভারত: গড়ে ২১% তবে শহরাঞ্চলে ৪০% এর ওপরে
যুক্তরাষ্ট্র: প্রায় ৩২%
জাপান: মাত্র ১০% এর কাছাকাছি যায় যা WHO-এর নির্দেশনার কাছাকাছি।
তুলনা করলে দেখা যায়, উন্নত দেশ যেমন জাপান বা স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে সিজারিয়ান কেবল তখনই করা হয় যখন সত্যিই প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশসহ অনেক উন্নয়নশীল দেশে সিজারিয়ানকে ধীরে ধীরে ব্যবসায়িক মডেল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
কেন সিজারিয়ান বাড়ছে?
আর্থিক লাভ – হাসপাতাল ও চিকিৎসকরা সিজারিয়ান করিয়ে বেশি আয় করেন।
সময় বাঁচানো – স্বাভাবিক প্রসব দীর্ঘ সময় নিতে পারে, কিন্তু সিজারিয়ান কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়।
রোগী ও পরিবারের চাপ – অনেক মা ব্যথা এড়াতে সিজারিয়ান বেছে নেন।
চিকিৎসকের নিরাপদ পথ বেছে নেওয়া – জটিলতার ঝুঁকি থাকলে ডাক্তাররা দ্রুত সমাধানের জন্য সিজারিয়ান করেন।
সচেতনতার অভাব – গ্রামীণ ও শহুরে পরিবারগুলোতে সঠিক তথ্য না থাকার কারণে সিজারিয়ানকেই নিরাপদ ভেবে নেয়া হয়।
অতিরিক্ত সিজারিয়ান মায়েদের জন্য দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে, সংক্রমণ, রক্তক্ষরণ, পরবর্তীতে গর্ভধারণে জটিলতা ইত্যাদি। শিশুদের ক্ষেত্রেও শ্বাসকষ্ট ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। একইসাথে একটি সিজারিয়ান অপারেশনের খরচ গড়ে ৩০-৫০ হাজার টাকা, যা নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য বিশাল আর্থিক চাপ।
সরকারকে বেসরকারি হাসপাতালের ওপর কঠোর নজরদারি বাড়াতে হবে। WHO নির্দেশিত সীমার মধ্যে সিজারিয়ান হার আনতে সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন চালানো দরকার। মিডওয়াইফ ও স্বাভাবিক প্রসবকে উৎসাহিত করতে হবে। পরিবারগুলোকে বুঝতে হবে, সিজারিয়ান কোনো বিলাসিতা নয়, বরং জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহৃত একটি চিকিৎসা পদ্ধতি।
বাংলাদেশে সিজারিয়ান ডেলিভারির বর্তমান হার নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। উন্নত দেশগুলো যেখানে প্রয়োজন ছাড়া সিজারিয়ান করে না, সেখানে বাংলাদেশে এটি যেন ব্যবসায়িক ফাঁদে পরিণত হয়েছে। মায়েদের ও নবজাতকের স্বাস্থ্য সুরক্ষা, খরচ কমানো এবং একটি টেকসই স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে সিজারিয়ানের হার কমিয়ে স্বাভাবিক প্রসবের দিকে মনোযোগ দেওয়া এখন সময়ের দাবি।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server