ভাইরাল হওয়ার প্রতিযোগিতা: বর্তমান সমাজের অস্থির মানসিকতা।।
বাংলা ভাষার কমিউনিটি
হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন।
বর্তমান সময়ে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রায় প্রত্যেকটা মানুষের একটাই ইচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়াতে ভাইরাল হওয়া। ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম কিংবা টিকটক সব জায়গাতেই যেন একটাই প্রতিযোগিতা চলছে। কেউ গানের ভিডিও বানাচ্ছে, কেউ নাচের ক্লিপ, আবার কেউ মজার কন্টেন্ট তৈরির চেষ্টা করছে। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে, ভাইরাল হওয়ার অন্ধ আকাঙ্ক্ষা মানুষকে সঠিক-ভুলের সীমারেখা ভুলিয়ে দিচ্ছে।
আজকের প্রজন্মের বড় একটা অংশ মনে করছে, জীবনে সফল হওয়ার একমাত্র পথ হলো সোশ্যাল মিডিয়ায় নাম করা। তাদের ধারণা, একবার ভাইরাল হলে খ্যাতি, টাকা-পয়সা আর সম্মান সবকিছুই এসে যাবে। বাস্তবতা হলো, অনেকেই সত্যিকারের প্রতিভা দিয়ে নয়, বরং অদ্ভুত, অশ্লীল কিংবা অনৈতিক কাজের মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার চেষ্টা করছে।
আমরা প্রতিদিন দেখছি, ভাইরাল হওয়ার জন্য কেউ খাবার নষ্ট করছে, কেউ আবার রাস্তার মাঝে নাচছে, কেউবা লজ্জাজনক কাণ্ড ঘটাচ্ছে। বিশেষ করে মেয়েদের অনেকেই নিজের দেহ-প্রদর্শনকে ভাইরাল হওয়ার শর্টকাট মনে করছে। এসব ভিডিও সামাজিকভাবে যেমন অশোভন, তেমনি পারিবারিকভাবে বড় ধরনের অস্বস্তির কারণ। একজন অভিভাবক হিসেবে নিজের সন্তানকে এভাবে জনসমক্ষে দেখতে পাওয়া কতটা কষ্টকর হতে পারে, তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এ অবস্থায় অভিভাবকেরা সন্তানদের কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবে, যখন পুরো সমাজই এই ভাইরাল প্রতিযোগিতায় মত্ত?
এখানে একটি বিষয় গুরুত্ব সহকারে দেখা দরকার, সবাই যে খারাপ উদ্দেশ্যে ভিডিও বানায়, তা নয়। অনেকেই তথ্যবহুল, শিক্ষামূলক কিংবা প্রতিভাভিত্তিক কনটেন্ট তৈরি করছে, যা প্রশংসনীয়। কিন্তু সমস্যাটা হচ্ছে, নেগেটিভ কনটেন্ট বা চটকদার ভিডিও খুব দ্রুত ভাইরাল হয়। মানুষ মজার বা অশ্লীল কিছু বেশি শেয়ার করে, আর এ কারণেই সৎ ও ভালো কনটেন্ট পিছিয়ে যায়। ফলে অনেকে মনে করে, ভালো কিছু দিয়ে ভাইরাল হওয়া সম্ভব নয়, তাই বাধ্য হয়ে নেতিবাচক পথে হাঁটে।
সোশ্যাল মিডিয়ার এই প্রতিযোগিতা মানুষকে বাস্তব জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দিচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায়, পরিবারে কেউ অসুস্থ, কিন্তু পাশে থাকার পরিবর্তে ভিডিও বানিয়ে আপলোড করছে। আবার কেউ দুর্ঘটনার শিকার হলে সাহায্য করার আগে ক্যামেরা ধরছে। মানসিকতার এই পরিবর্তনই সবচেয়ে ভয়ঙ্কর।
সমাজবিজ্ঞানীরা মনে করেন, ভাইরাল হওয়ার এই আকাঙ্ক্ষা মূলত আত্মপ্রকাশের তৃষ্ণা থেকে এসেছে। মানুষ চায় অন্যরা তাকে দেখুক, চিনুক, স্বীকৃতি দিক। কিন্তু যখন এই স্বীকৃতির জন্য লজ্জা-শরম বিসর্জন দিতে হয়, তখন সেটি ভয়াবহ আকার ধারণ করে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে-সমাধান কী?
প্রথমত, পরিবার থেকেই সচেতনতা শুরু করতে হবে। সন্তানকে ছোটবেলা থেকে শেখাতে হবে কীভাবে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার করতে হয় এবং কোনটা গ্রহণযোগ্য, কোনটা নয়। দ্বিতীয়ত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেও এ বিষয়ে সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালু করা দরকার। তৃতীয়ত, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে নীতিমালা ও কড়া পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি, যেন অশ্লীল ও বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট বন্ধ করা যায়।
সবশেষে বলা যায়, ভাইরাল হওয়া জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য হতে পারে না। খ্যাতি ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু সম্মান ও মূল্যবোধ দীর্ঘস্থায়ী। যদি আমরা মানসম্মত কনটেন্ট তৈরি করি, সমাজের কল্যাণে কাজ করি, তাহলে হয়তো একদিন ভাইরাল হবো কিন্তু সেটি হবে ইতিবাচকভাবে, গর্ব করার মতো কিছু দিয়ে।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server
https://x.com/RamimHa74448648/status/1958764440972927080?t=Mc9MQ4-S1qjawPBH36WUrQ&s=19
https://x.com/RamimHa74448648/status/1958769502277312540?t=XjWvebf8tEAGnZeDD7iyzQ&s=19