ইউরেনিয়াম- শক্তি, ব্যবহার ও বাস্তবতা।।
বাংলা ভাষার কমিউনিটি
হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন।
বর্তমানে একটি পদার্থ আলোচনার শীর্ষে রয়েছে, আর সেটা হলো ইউরেনিয়াম। মানব সভ্যতার অগ্রযাত্রায় কিছু উপাদান বিপ্লব ঘটিয়েছে। যেমন-লোহা শিল্পযুগের সূচনা করেছে, আবার সিলিকন দিয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির আলো। তেমনি ইউরেনিয়াম (Uranium) এমন একটি উপাদান, যা বিশ্বকে দিয়েছে সীমাহীন শক্তি উৎপাদনের ক্ষমতা এবং একই সাথে ভয়ঙ্কর ধ্বংসযজ্ঞের ইতিহাসও। আপনারা অবশ্যই শুনেছেন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পারমাণবিক অস্ত্র কিংবা পানির নিচে চলা পারমাণবিক সাবমেরিনের কথা। এগুলোর মূল জ্বালানি উপাদান হলো এই ইউরেনিয়াম। চলুন জেনে নিই, ইউরেনিয়াম আসলে কী, কোথায় পাওয়া যায় এবং এর ব্যবহার কতটা বিস্তৃত।
ইউরেনিয়াম একটি ভারী ধাতু, যা পৃথিবীর মাটির ভেতরে প্রাকৃতিকভাবে পাওয়া যায়। এর রাসায়নিক প্রতীক হলো U এবং পারমাণবিক সংখ্যা ৯২। এটি রেডিও-অ্যাকটিভ উপাদান, অর্থাৎ এর ভেতর থেকে ক্রমাগত বিকিরণ বা Radiation বের হয়। প্রাকৃতিক ইউরেনিয়ামে মূলত দুটি আইসোটোপ থাকে—U-238 এবং U-235। এর মধ্যে U-235 তুলনামূলকভাবে বিরল হলেও এটিই বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং পারমাণবিক অস্ত্রে ব্যবহার করা হয়।
ইউরেনিয়ামের ব্যবহার বহুমুখী। তবে সবচেয়ে আলোচিত ক্ষেত্র হলো শক্তি উৎপাদন ও সামরিক প্রযুক্তি। আধুনিক পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে ইউরেনিয়াম ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। মাত্র এক কেজি ইউরেনিয়াম কয়লার কয়েক হাজার কেজি সমপরিমাণ শক্তি উৎপাদন করতে পারে। এজন্য ইউরেনিয়ামকে শক্তির ভাণ্ডার বলা হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের হিরোশিমায় যে অ্যাটম বোমা নিক্ষেপ করা হয়েছিল, সেটি ইউরেনিয়াম দিয়েই তৈরি। আজও পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে এই উপাদান ব্যবহার করা হয়। তবে এর ধ্বংসাত্মক ক্ষমতার কারণে এটি সবচেয়ে বিতর্কিত ব্যবহার।
পারমাণবিক সাবমেরিন ও যুদ্ধজাহাজ আধুনিক নিউক্লিয়ার সাবমেরিন এবং এয়ারক্রাফ্ট ক্যারিয়ারগুলোতে ছোট আকারের পারমাণবিক রিঅ্যাক্টর থাকে, যেখানে ইউরেনিয়াম জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। একবার চার্জ করলে এসব সাবমেরিন কয়েক মাস কিংবা বছরের পর বছর পানির নিচে ভেসে থাকতে পারে, তেলভিত্তিক জ্বালানি দরকার হয় না। ইউরেনিয়ামের বিকিরণ চিকিৎসা বিজ্ঞানে ক্যান্সারের টিউমার ধ্বংসে এবং গবেষণাগারে বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় ব্যবহৃত হয়।
ইউরেনিয়াম সাধারণত মাটির গভীরে বিভিন্ন খনিজে পাওয়া যায়, যেমন uraninite, carnotite ইত্যাদি। মাটি থেকে উত্তোলনের পর জটিল প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটিকে আলাদা ও পরিশোধিত করতে হয়। শক্তি উৎপাদনের জন্য ব্যবহৃত U-235 প্রকৃতিতে মাত্র ০.৭% পরিমাণে পাওয়া যায়, তাই "Enrichment Process" এর মাধ্যমে এর ঘনত্ব বাড়ানো হয়।
বিশ্বে কয়েকটি দেশ ইউরেনিয়ামের ভাণ্ডার ও উৎপাদনে এগিয়ে রয়েছে। অস্ট্রেলিয়াতে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইউরেনিয়াম রিজার্ভ রয়েছে।কাজাখস্তান বর্তমানে সবচেয়ে বড় ইউরেনিয়াম উৎপাদনকারী দেশ। কানাডা উচ্চ মানসম্পন্ন ইউরেনিয়ামের জন্য খ্যাত। এছাড়াও রাশিয়া, নামিবিয়া, নাইজার, উজবেকিস্তান, যুক্তরাষ্ট্র প্রভৃতি দেশেও উল্লেখযোগ্য ইউরেনিয়ামের ভাণ্ডার রয়েছে।
ইউরেনিয়াম মানব সভ্যতার জন্য এক বিশাল আশীর্বাদ, আবার একই সাথে এটি বড় অভিশাপও হতে পারে। বিদ্যুৎ উৎপাদনে এটি পরিবেশবান্ধব বিকল্প হলেও এর সামরিক ব্যবহার ধ্বংস ডেকে আনে। তাই ইউরেনিয়াম ব্যবহারে সর্বোচ্চ সতর্কতা, আন্তর্জাতিক আইন এবং কূটনৈতিক সমঝোতা জরুরি।
ইউরেনিয়াম শুধু একটি ধাতু নয়, এটি শক্তির উৎস, আবার ভয়াবহ ধ্বংসের কারণও। সঠিকভাবে ব্যবহার করলে ইউরেনিয়াম মানবতার উন্নয়নে আলো ছড়াতে পারে, যেমন- বিদ্যুৎ উৎপাদন ও বৈজ্ঞানিক গবেষণা। কিন্তু ভুল ব্যবহারে এটি মানবজাতিকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতে পারে। তাই বলা যায় ইউরেনিয়ামের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে মানুষের সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার ওপর।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server