স্বর্ণ: নিরাপদ সম্পদ নাকি অস্থির বাজারের খেলার সঙ্গী?
বাংলা ভাষার কমিউনিটি
হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন।
বিশ্ব অর্থনীতির ইতিহাসে স্বর্ণকে সবসময় একটি বিশেষ মর্যাদার সম্পদ হিসেবে দেখা হয়েছে। প্রাচীন যুগ থেকে আধুনিক সভ্যতা পর্যন্ত স্বর্ণ শুধু অলঙ্কার নয়, বরং শক্তি, ক্ষমতা ও সম্পদের প্রতীক। মুদ্রা ব্যবস্থার মূল চালিকাশক্তি হিসেবে ব্যবহৃত হওয়ার পর থেকে এটি আজও বিনিয়োগকারীদের কাছে নিরাপদ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত হয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে স্বর্ণের দাম বিশ্ববাজারে দ্রুত বাড়ছে, যার প্রভাব বাংলাদেশসহ প্রতিটি দেশের অর্থনীতি ও সাধারণ মানুষের ওপর পড়ছে। প্রশ্ন হচ্ছে দিন দিন কেন এই মূল্যবৃদ্ধি হচ্ছে, এবং ভবিষ্যতে স্বর্ণের অবস্থান কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে?
কেন স্বর্ণকে বিশেষ সম্পদ বলা হয়?
দুর্লভতা ও সীমিত সরবরাহ: পৃথিবীতে স্বর্ণের ভাণ্ডার সীমিত, আর উত্তোলন ব্যয়বহুল। তাই এর বাজারমূল্য দীর্ঘমেয়াদে সবসময় উঁচুতেই থাকে।
আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা: যেকোনো দেশেই স্বর্ণকে মূল্যবান সম্পদ হিসেবে গণ্য করা হয়। ডলার, ইউরো কিংবা টাকার মতো মুদ্রা ঝুঁকিপূর্ণ হলেও স্বর্ণের মূল্য স্থায়ী।
মূল্যস্ফীতি থেকে সুরক্ষা: যখন বাজারে দ্রব্যমূল্য বেড়ে যায়, তখন কাগুজে টাকার মূল্য কমে। কিন্তু স্বর্ণ সবসময় নিজের মান বজায় রাখে। এজন্য বিনিয়োগকারীরা মুদ্রাস্ফীতির সময় স্বর্ণের দিকে ঝুঁকে পড়ে।
স্বর্ণের দাম বাড়ার কারণ
বিশ্ব অর্থনৈতিক অস্থিরতা: রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনা, কিংবা বৈশ্বিক মন্দার আশঙ্কা বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত করে তোলে। এই পরিস্থিতিতে তারা স্টক মার্কেট ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে স্বর্ণে বিনিয়োগ করে।
মার্কিন ডলারের দুর্বলতা: আন্তর্জাতিকভাবে স্বর্ণের দাম ডলারের সাথে সম্পর্কিত। যখন ডলার দুর্বল হয়, তখন স্বর্ণের দাম বেড়ে যায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর চাহিদা: সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ কিনছে রিজার্ভ হিসেবে রাখার জন্য। এর ফলে বাজারে সরবরাহ কমে গিয়ে দাম বেড়েছে।
মূল্যস্ফীতি ও সুদের হার: বিশ্বব্যাপী মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষ কাগুজে সম্পদের চেয়ে স্বর্ণকে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
বিনিয়োগকারীদের মানসিকতা: শেয়ার বাজার বা ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো অস্থির বিনিয়োগ মাধ্যমের তুলনায় স্বর্ণ অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য।
বাংলাদেশে সাধারণ মানুষ মূলত গহনা কেনার মাধ্যমে স্বর্ণে বিনিয়োগ করে। সম্প্রতি স্থানীয় বাজারে স্বর্ণের দাম প্রতি ভরি ১,৮০,০০০ টাকারও বেশি ছুঁয়েছে, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। বাংলাদেশ জুয়েলার্স সমিতি আন্তর্জাতিক বাজারের সাথে সামঞ্জস্য রেখে এই দাম নির্ধারণ করে। অনেকে গহনা কেনার পাশাপাশি স্বর্ণকে ‘সঞ্চয়ের বিকল্প’ হিসেবেও ব্যবহার করছেন।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
দীর্ঘমেয়াদে উর্ধ্বমুখী প্রবণতা: বিশেষজ্ঞদের মতে, বৈশ্বিক উত্তেজনা এবং ডলার সংকট দীর্ঘস্থায়ী হলে স্বর্ণের দাম আরও বাড়তে পারে।
ডিজিটাল গোল্ড বা গোল্ড ETF: ভবিষ্যতে শুধু শারীরিক স্বর্ণ নয়, বরং ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মেও স্বর্ণ বিনিয়োগ জনপ্রিয় হবে।
অর্থনৈতিক ঝুঁকি মোকাবিলা: দেশগুলো রিজার্ভ শক্তিশালী করতে স্বর্ণ কিনতে থাকবে, ফলে এর চাহিদা স্থায়ীভাবে উচ্চ পর্যায়ে থাকবে।
ক্রিপ্টোকারেন্সির বিকল্প নয়: অনেকেই মনে করেন ক্রিপ্টো ভবিষ্যতের স্বর্ণ, কিন্তু এখনো তা অনিশ্চিত। বরং সংকটময় সময়ে প্রমাণিত নিরাপদ সম্পদ হিসেবে স্বর্ণের গুরুত্ব আরও বাড়ছে।
স্বর্ণ শুধুই গহনা নয়, বরং এটি এক ধরনের আর্থিক ঢাল। বৈশ্বিক অর্থনীতির অনিশ্চয়তায় মানুষ বারবার এই ধাতুর প্রতি আস্থা রাখছে। তাই স্বর্ণের দাম দিন দিন বাড়ছে এবং ভবিষ্যতেও এর মূল্য ধরে রাখার প্রবণতা অব্যাহত থাকবে বলে ধারণা করা যায়। তবে বিনিয়োগকারীদের সচেতন থাকা প্রয়োজন, কারণ স্বর্ণের বাজারে হঠাৎ উত্থান-পতন ঘটতে পারে। সঠিক সময়ে বিনিয়োগই পারে আপনার সম্পদকে সুরক্ষিত করতে।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server