জেনারেল রাইটিংঃ অভিনয়ের আড়ালে একাকিত্বের দিনগুলো
অভিনয়ের আড়ালে একাকিত্বের দিনগুলো
কখনো কখনো জীবনে এমন কিছু মুহূর্ত আসে, যখন নিজের ভেতরের কথাগুলোই আর নিজেই বুঝতে পারি না। চাওয়া-পাওয়ার হিসাবটা যেন গুলিয়ে যায়। যা চাই তা ঠিকমতো চাওয়া হয়ে উঠছে না, কিংবা যা চাওয়া উচিত—তা বুঝে উঠতেও সময় লাগে। আজকের দিনটা ঠিক তেমনই—অদ্ভুত, ধোঁয়াটে, কেমন যেন অস্পষ্ট। বাস্তবতা খুব কাছেই, অথচ তাকে ছুঁতে পারছি না। সবকিছু যেন একটা কুয়াশার পর্দার পেছনে হারিয়ে গেছে।
মনের অবস্থা ঠিক যেন একটি পরিত্যক্ত পুরোনো ঘর—যার দেয়ালে জমে উঠেছে শ্যাওলা, জানালার পাল্লাগুলো খসে পড়েছে, আর বাতাস চলাচলের পথ বন্ধ হয়ে গেছে বহুদিন। তবুও সেই ঘরের ভেতরে একসময় আলো খেলা করত, গান শোনা যেত, হাসির শব্দ ছড়িয়ে পড়ত দেয়ালে দেয়ালে। এখন সেইসব শুধুই স্মৃতি।
মাঝে মাঝে নিজেই অবাক হই—এই ভাঙাচোরা, নীরব মনও কি এখনো কিছু চায়? অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি, চায়। গভীর কোথাও থেকে কেউ যেন ফিসফিস করে কিছু বলছে—অর্থহীন কিছু শব্দ, আবোল-তাবোল এক অনুরোধ। যদি আমাকে জিজ্ঞেস করা হয়—তুমি আসলে কী চাও? আমি হয়তো কিছুক্ষণের জন্য থেমে যাবো, তারপর বলবো, খুব বেশি কিছু নয়। শুধু দুটি জিনিস।
প্রথমত, আমি আমার হারিয়ে যাওয়া সেই গানটা ফিরে পেতে চাই। গানটির নাম ছিল শিশুকাল —যেটার প্রতিটি সুরে ছিলো একরাশ না এর মাঝেও শান্তি, একধরনের স্বপ্ন, একরকম আত্মার স্পর্শ। সেই গান এখন আর আমার মধ্যে নেই, কোথায় যেন হারিয়ে গেছে কালের ধুলোয়।
দ্বিতীয়ত, আমি আমার নিজের কণ্ঠ ফিরে পেতে চাই—যে কণ্ঠে আমি একসময় গান গাইতাম, হাসতাম, হয়তো কোনো এক নিঃসঙ্গ রাতের অজান্তে কেঁদেও ফেলতাম। সেই গলার স্বরটা এখন আমার নিজের কাছেই অপরিচিত হয়ে গেছে। সময়ের সাথে সে-ও হারিয়ে গেছে, অনেকটা আমার মতোই।
মানুষের জীবন আসলে একটা বিশাল নাট্যমঞ্চ। এখানে প্রতিদিন চলতে থাকে অসংখ্য দৃশ্য, যেখানে প্রত্যেকেই নিজের মতো করে অভিনয় করে যায়। কেউ হাসে, কেউ কাঁদে, কেউ ভালোবাসে, কেউ বিদ্রোহ করে—কিন্তু সবকিছুই যেন একটা মুখোশের আড়ালে ঢাকা। এই অভিনয়ের জগতে সবচেয়ে বড় সত্যটা হলো—সবাই একা। যত মানুষই থাকুক পাশে, যত ভালোবাসা দিয়েও কেউ ঘিরে রাখুক—মনের গভীর কোনো এক কোণে একটা শূন্যতা থেকেই যায়। একটা ফাঁকা চেয়ারের মতো, যেটা কারো জন্যই রাখা হয়নি, তবুও ফাঁকা।
মানুষ আসে, মানুষ যায়। কেউ চিরকাল পাশে থাকে না। সময় এক এক করে সবাইকে সরিয়ে দেয়, ধুয়ে নিয়ে যায় স্মৃতি, সম্পর্ক, বিশ্বাস। আমরা হয়তো চাই না কাউকে হারাতে, তবুও হারিয়ে যায়। কখনো আমরা নিজেই হারিয়ে যাই, আবার কখনো কাউকে যেতে দিতে হয়। হয়তো সেটাই জীবনের নিয়ম।
তবে হ্যাঁ, কখনো কখনো এই শূন্যতার মধ্যেও মুক্তির একটা হাওয়া বয়ে যায়। পুরোনো সেই ঘরের জানালায় ভেঙে যাওয়া কাঁচের ফাঁক দিয়ে একটুখানি আলো ঢোকে। হঠাৎ করেই মনে হয়, সব না হোক—একটু শান্তি পেয়েছি। মনের কোণে জমে থাকা ঘন অন্ধকারে হালকা বাতাস লাগে। তখন মনে হয়, আমি এখনো বেঁচে আছি। এখনো অনুভব করতে পারি, এখনো কিছু চাওয়ার সাহস রাখি।
তোমার জন্য যদি কেউ আসতে পারে, যদি কেউ সত্যিই ভালোবাসতে পারে—তবে তাকে বলো, এই দুইটি জিনিস যদি কোনোদিন দিতে চাও, চুপিসারে রেখে যেও। এমন এক সময়ে, যখন খুব করে চাইবো। যখন আমার ভেতরের ঝড় থেমে থাকবে কিছুক্ষণ। সেই সময়টা হবে নিঃশব্দ, গভীর আর নিস্তরঙ্গ। তখন হয়তো আমার হারিয়ে যাওয়া গানটা আবার বাজবে, আর আমি আমার হারানো গলার স্বর ফিরে পাবো।
আর হয়তো তখনই, এই অভিনয়ের মঞ্চে, আমি কিছুটা সত্যি হয়ে উঠবো।
আমার লিখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। অন্য কোনোদিন অন্য লিখা নিয়ে হাজির হবো। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ। |
---|
আমার পুরোনাম জোনায়েদ আহমদ । স্টিমিট আইডি @junaidahmed।
বাসা নেত্রকোনা সদর নেত্রকোনা । আমি অর্থনীতি বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি, বর্তমানে জবের পড়াশোনার পাশাপাশি স্টিমিট এ লিখালিখি করি। আমার প্রকৃতির ছবি তুলতে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে,বিশেষ করে ফুলের ছবি,সূর্যের অস্ত যাওয়ার ছবি,চাঁদের ছবি আর সাদাকালো বিভিন্ন ছবি।বিভিন্ন বিষয়ে গল্প লিখতেও ভালো লাগে। হলের বারান্দায় আমার কিছু গাছ আছে এগুলোর সাথে মাঝে মাঝে সময় কাটাই। আমি স্টিমিটে জয়েন করি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। আমার এই স্বল্প সময়ে আমার বাংলা ব্লগে ক্যারিয়ার শুরু করতে পেরে খুবই আনন্দিত অনুভব করছি। আপনাদের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়ে খুব ভালো লাগছে।



250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness

OR
টাক্সঃ
https://x.com/Junaid_2208/status/1953493677453787620