শত ব্যস্ততাকে ভুলে গিয়ে একান্তে কিছুটা সময়
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই ? আশা করি আপনারা সবাই বেশ ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি। আজ আমি নতুন এটি ব্লগ নিয়ে হাজির হলাম। প্রতিটি মানুষের জীবনে কিছুটা আনন্দ প্রয়োজন। প্রয়োজন কিছুটা স্বস্থি। কিন্তু স্থতি তখনই আসে যখন হাজারও ক্লান্তিকে দূরে ঠেলে দিয়ে মানুষ নিজের মত করে বাচঁতে শিখে। আর বাচঁতে শিখে বিদায় তারাই হয় সুখী। আর আমার মনে হয় এমন সুখ বা স্বস্থি ঠিক তখনই আমাদের মাঝে আসে যখন আমরা আমাদের মত করে এগিয়ে নিতে পারি। তো যাই হোক অনেক দিন পর কিছুটা সুন্দর সময় কাটিয়ে আজ চলে আসলাম সেই অনুভূতিটুকু আপনাদের মাঝে শেয়ার করতে। আশা করি আপনাদের কাছেও ভালো লাগবে।

বাসায় গ্যাস নেই কদিন হলো তাই আমরা এখন প্রায়ই বাইরে খাওয়া দাওয়া করছি। প্রতিদিনই একটা ঝামেলা হয়ে দাঁড়িয়েছে ঘরে রান্না না থাকার কারণে। তবে এই ঝামেলার মাঝেও কিছু ভালো দিক আছে। মাঝে মাঝে বাইরে খাওয়ার ফলে একটু পরিবর্তন আসে জীবনে। আর আজকের দিনটা আমার জন্য অনেক স্মরণীয় হয়ে থাকবে। আজ ছিল আপনাদের আপুর ছুটি। আমি প্রতিদিনই দেখি ও কতটা কষ্ট করে পুরো সপ্তাহটা পার করে। ভোর থেকে রাত পর্যন্ত কাজের ভিড়ে নিজেকে সময় দেওয়ার সুযোগ খুব কমই পায়। তার উপর সারাটা সপ্তাহ ধরে প্রচণ্ড গরমে আর ব্যস্ততায় শরীরটা কেমন অবসন্ন হয়ে পড়ে। তাই গত রাতেই আমি ঠিক করেছিলাম আজকের দিনটা কেবলমাত্র ওর বিশ্রামের জন্য হবে। আমি স্পষ্ট করে বলে দিয়েছিলাম যে আজ সারাদিন শুধু ঘুম আর বিশ্রাম। কোনো ধরণের কাজের ঝামেলা থাকবে না। আমার কথায় ওর মুখে যে আনন্দের হাসি ফুটে উঠেছিল সেটাই আমার জন্য অনেক বড় সুখ।

সকালের দিকে ও অনেকটা দেরি করেই ঘুম থেকে উঠল। আমি চাইছিলাম ওর ঘুমটা ভাঙুক নিজে থেকেই, জোর করে নয়। সারাদিনের জন্য শরীর আর মনকে হালকা করার জন্য ঘুমের মতো ওষুধ আর কিছু নেই। আমি যখন দেখলাম ও শান্তিতে ঘুমাচ্ছে তখন সত্যিই আমার ভেতরটা ভরে উঠেছিল। দুপুরে আমরা দুজনে মিলে ঠিক করলাম বাইরে খেতে যাব। বাসার ভেতর যেহেতু রান্নার সুযোগ নেই তাই বাইরে যেতেই হবে। তবে হুট করে কোথাও যাওয়ার বদলে আমরা বেছে নিলাম আমাদের দুজনের প্রিয় রেস্টুরেন্ট সাব লাভার। জায়গাটা খিলগাঁও তালতলায় অবস্থিত আর আমাদের কাছে অনেকটা বিশেষ হয়ে আছে। যখনই চাইনিজ খাবারের ইচ্ছে হয় তখনই এই রেস্টুরেন্টের কথা মাথায় আসে।

রেস্টুরেন্টে ঢুকে আমরা আসন নিলাম আর অর্ডার করার আগে একটু গল্পে মেতে উঠলাম। খাওয়ার অপেক্ষার সময়টা যেন আলাদা এক আনন্দ দিয়ে ভরে যায় যখন দুজন মিলে হাসি ঠাট্টা করা যায়। বাইরে খেতে আসলেও সবচেয়ে আনন্দের বিষয়টা হলো একসাথে কাটানো মুহূর্তগুলো। আমরা বেশ কিছুক্ষণ কথা বললাম, হাসলাম আর একটু হালকা সময় কাটালাম। মনে হলো অনেকদিন পর আপনাদের আপু একটু শান্তিতে আছে। ওর চোখেমুখে যে প্রশান্তি আর খুশির ছাপ দেখলাম সেটা আমার জন্য দিনের সবচেয়ে সুন্দর উপহার।

খাবার অর্ডার দিয়েছিলাম আমাদের চিরচেনা চাইনিজ আইটেমগুলো। ফ্রাইড রাইস, ফ্রাইড চিকেন, কেসোনাট সালাদ, চিলি চিকেন আর সাথে ঠান্ডা ড্রিংকস। খাবার আসতে কিছুটা সময় লেগেছিল তবে অপেক্ষাটা মোটেও বৃথা ছিল না। যখন একে একে খাবারগুলো টেবিলে এলো তখন রঙ আর ঘ্রাণেই মনে হচ্ছিল ক্ষুধা আরও বেড়ে গেছে। ফ্রাইড রাইসের সাথে চিকেনের স্বাদ ছিল অসাধারণ, চিলি চিকেনের ঝালমাখা স্বাদ মুখে একদম জমে গেল। কেসোনাট সালাদের টক মিষ্টি স্বাদ খাবারের সাথে দারুণ মানিয়ে গেল। আর ফ্রাইড চিকেন তো সবসময়ই আমাদের পছন্দের তালিকায় থাকে। খাওয়ার মাঝে মাঝে আমরা দুজনেই গল্প চালিয়ে যাচ্ছিলাম। প্রতিটা মুহূর্ত যেন জমে উঠছিল। মাঝে মাঝে আমি খেয়াল করছিলাম আপনাদের আপুর চোখে সেই ক্লান্তির ছাপ নেই যেটা সাধারণত সপ্তাহের অন্যদিনগুলোতে থাকে। বরং একধরনের হালকা মেজাজে ও সময় কাটাচ্ছিল। আমি তখন ভেতর ভেতরই ভাবছিলাম কত সহজ কিছু মুহূর্তই মানুষকে কতটা সুখ দিতে পারে।

খাওয়ার শেষে আমরা কিছুক্ষণ রেস্টুরেন্টেই বসে রইলাম। তাড়াহুড়োর কোনো প্রয়োজন ছিল না। বাইরে বের হয়ে আমরা আরেকটু হাঁটাহাঁটি করলাম। দিনের আলাদা একটা আবহ ছিল মনে। যেন কোনো বিশেষ দিন উদযাপন করছি আমরা দুজনে। আজকের দিনটা আমার কাছে খুব মূল্যবান হয়ে থাকলো। শুধু খাওয়া বা বাইরে যাওয়া নয় বরং আমার কাছে আসল আনন্দের বিষয় ছিল আপনাদের আপুর হাসি। অনেকদিন পর ওকে এভাবে শান্তি আর আনন্দে ভরা দেখলাম। সারাদিন শুধু বিশ্রাম আর কিছুটা সময় একসাথে কাটানো ওর জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেটা আজ বুঝতে পারলাম।

আমি মাঝে মাঝে ভাবি জীবনটা আসলে খুব জটিল কিছু নয়। ছোট ছোট মুহূর্তের ভেতরেই লুকিয়ে থাকে আসল সুখ। বাসায় গ্যাস নেই এটা যেমন একটা ঝামেলা ঠিক তেমনি এই ঝামেলার ভেতরেই আজ আমরা পেয়েছি একটুখানি আনন্দ। বাইরে খেতে যাওয়া, একটু গল্প করা, একসাথে হাঁটাহাঁটি করা এগুলো হয়তো সাধারণ ঘটনা কিন্তু এর ভেতরে যে ভালোবাসা আর শান্তি মিশে থাকে সেটাই আসল বিশেষত্ব। আজকের দিনটা আমাকে শিখিয়েছে ভালোবাসা মানে সবসময় বড় কিছু করা নয়। ভালোবাসা আসলে ছোট ছোট খেয়াল রাখা। যেমন আমি চাইছিলাম আপনাদের আপু একটু ঘুমাক, একটু বিশ্রাম করুক, ওর মুখে হাসি ফুটুক। হয়তো এই যত্নই ওর কাছে অনেক বড় ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি নিজের মধ্যেও একধরনের তৃপ্তি পেয়েছি কারণ আমি জানি আমি ওর দিনটা একটু হলেও সহজ করে দিতে পেরেছি।

দিনের শেষে যখন আমরা বাসায় ফিরলাম তখন মনে হলো পুরোদিনটা সত্যিই একেবারেই অন্যরকম কেটেছে। ঘরের কাজের চাপ, রান্নার চিন্তা কিংবা অন্য ঝামেলার কিছুই আজ ওর জীবনে ছিল না। বরং আজকের দিনটা কেবল বিশ্রাম আর হাসির ভেতর দিয়েই কেটেছে। আমি জানি এই দিনটা আমাদের দুজনের কাছেই স্মৃতি হয়ে থাকবে। এভাবেই আমি বুঝতে পারলাম আসলে জীবনে সুখী হওয়ার জন্য অনেক কিছু দরকার হয় না। মাঝে মাঝে শুধু একটুখানি যত্ন আর ভালোবাসা থাকলেই সবকিছু সহজ হয়ে যায়। আজকের দিনটা তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ।
জানিনা আমার আজকের পোস্টটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে। আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।
পোস্ট বিবরণ
শ্রেণী | লাইফ স্টাইল |
---|---|
ক্যামেরা | Vivo y22s |
পোস্ট তৈরি | @kawsar7731 |
লোকেশন | ঢাকা , বাংলাদেশ |
পরিচিতি
আমি কাউছার আহমেদ। আমার ইউজার নাম @kawsar7731। আমি পেশায় একজন চাকুরী জীবি। ঘুরে বেড়াতে আর প্রিয় মানুষের সাথে হাসি মুখে কথা বলতে আমি বেশ পছন্দ করি। তবে সেই সাথে বিভিন্ন ধরনের মজার মাজার গল্পের বই পড়তে, ফটোগ্রাফি করতে এবং গল্প করতে। নতুন কে আবিস্কার করা এবং নতুন কে নিয়ে এগিয়ে চলতেও আমি বেশ পছন্দ করি।
.gif)
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy
