স্কুলে ভালো রেজাল্ট আর পুরস্কার — সফলতার ছোট্ট সোপান

in আমার বাংলা ব্লগ2 months ago

আসসালামু আলাইকুম

কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। তবে মনমানসিকতা ভালো নেই। আর মনমানসিকতা যদি ভালো না থাকে তাহলে শরীর মন অচল হয়ে পড়ে। তারপরেও আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আজ আমি একটি শৈশবের কিছু কথা নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি।আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার শৈশবের কিছু স্মৃতির অনুভূতি জেনে আসি।


image.png

ছেলেবেলার স্মৃতির মাঝে বউচি খেলার কথা উঠলে চোখে যেন এক অন্যরকম উজ্জ্বলতা ফুটে ওঠে। আমার ও আমার বন্ধুদের জীবনের এক বিশেষ অংশ ছিল এই খেলা, যা শুধু আনন্দই নয়, কৌশল, বন্ধুত্ব আর সাহসের এক অপরিসীম উৎসব। সরকারি কোয়ার্টারের ছোট ছোট গলিগুলো বউচির জন্য আমাদের মাঠ হয়ে উঠত, যেখানে প্রতিদিন আমরা দৌড়ঝাঁপ করে, হাসাহাসি করে কাটাতাম আমাদের মূল্যবান সময়। বউচি খেলা ছিল দলবদ্ধ খেলা। একজন বউচি থাকতো, যার কাজ ছিল অন্য সবাইকে ধরার চেষ্টা করা, আর অন্যরা পালাত। খেলা শুরু হলে সবাই বেশ সতর্ক থাকত, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খেলা রূপ নেয় এক বিশাল উত্তেজনায়। পালানো আর ধরা পড়ার মাঝে আমরা যেমন শারীরিক চর্চা করতাম, তেমনি বন্ধুত্ব ও কৌশল শেখার সুযোগ পেতাম।

আমার ছোটবেলার স্মৃতিতে সবচেয়ে উজ্জ্বল একটি অধ্যায় হলো স্কুলে ভালো রেজাল্ট করে পুরস্কার পাওয়া। সরকারি কোয়ার্টারের সেই ছোট্ট ঘর থেকে স্কুল পর্যন্ত যাওয়া আসা, প্রতিদিনের পড়াশোনা আর সফলতার আনন্দ আজও আমার হৃদয়ে এক অপরিসীম উচ্ছ্বাস নিয়ে আসে। বাবা-মায়ের কঠোর পরিশ্রম আর শিক্ষকদের উৎসাহ আমাকে পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে বাধ্য করত, আর আমি সেই বিশ্বাস ও পরিশ্রমের প্রতিদানে ভালো ফলাফল করার চেষ্টা করতাম।

স্কুল জীবনের শুরু থেকেই আমি খুব যত্নসহকারে পড়াশোনা করতাম। আমার বাবা একজন সরকারি চাকুরিজীবী ছিলেন, যিনি পড়াশোনার গুরুত্ব বুঝিয়ে আমাকে নিয়মিত উৎসাহিত করতেন। আমার মা সারাদিন কাজের মাঝে সময় বের করে আমার পড়াশোনায় নজর রাখতেন, আমাকে বই কিনে দিতেন এবং পড়ার জন্য শান্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতেন। আমি ছোটবেলা থেকেই বুঝতে পারতাম যে, ভালো ফলাফল আমাদের পরিবারের মর্যাদা বাড়াবে এবং আমাকে একজন যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে।

প্রতিটি পরীক্ষা শেষ হলে আমরা ফলাফল প্রকাশের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতাম। যখনই ভালো ফলাফল হতো, স্কুল থেকে পুরস্কার দেয়া হতো। পুরস্কার হিসেবে সার্টিফিকেট, বই, কিংবা ছোটখাটো শিক্ষামূলক উপহার পাওয়া আমার জন্য ছিল এক বড় প্রাপ্তি। সেই মুহূর্তে আমার মনে হতো, আমার কঠোর পরিশ্রম সাফল্যের সোপান দিয়ে আমাকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সেই আনন্দ ছিল পরিমাপের বাইরে।

আমাদের সরকারি কোয়ার্টারের প্রতিবেশীরা আমার সাফল্যের খবর শুনে আমাকে আদর করে বলতেন, “তুমি অনেক বড় কিছু করবে।” তাদের এই উৎসাহ আমার মনোবল বাড়াত। স্কুলে আমার সাফল্য শুধু আমার জন্য ছিল না, বরং পুরো পরিবারের জন্য গর্বের বিষয়। বন্ধুরাও আমাকে উৎসাহিত করত, আর একে অপরের সঙ্গে ভালো রেজাল্ট শেয়ার করে আমরা পরস্পরের সাহস বাড়াতাম।
আমি স্মরণ করি, স্কুলের শিক্ষকরা আমাদের কঠোর পরিশ্রম করার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন। তারা শুধু পড়াশোনার বিষয়ে নয়, জীবন শিক্ষাও দিতেন। তারা আমাদের শেখাতেন ধৈর্য্য, সৎ পথ অনুসরণ এবং লক্ষ্য পূরণের জন্য কঠোর পরিশ্রমের গুরুত্ব। আমি সেই শিক্ষাগুলো মেনে চলার চেষ্টা করতাম এবং এতে আমার আত্মবিশ্বাস বাড়ত।

স্কুলে ভালো রেজাল্ট এবং পুরস্কার পাওয়া আমার জীবনের ছোট্ট সাফল্যের সোপান ছিল। তা আমাকে শিখিয়েছিল স্বপ্ন পূরণের পথে কীভাবে ধাপে ধাপে এগোতে হয়। ছোটবেলা থেকেই আমি নিজেকে বুঝতাম যে, জীবনে সাফল্য অর্জন করতে হলে অধ্যবসায় আর মনোযোগ অপরিহার্য। প্রতিটি পরীক্ষার ভালো ফল আমার মনোবল আরও দৃঢ় করত এবং আমাকে পরবর্তী চ্যালেঞ্জের জন্য প্রস্তুত করত। আজও যখন পুরনো স্মৃতিগুলো মনে পড়ে, তখন বুঝি সেই ছোট ছোট সাফল্যগুলোই ছিল আমার জীবনের ভিত্তি। স্কুলে ভালো রেজাল্ট পাওয়া, পুরস্কার পাওয়ার আনন্দ, বাবা-মায়ের গর্ব — এগুলো সব মিলিয়ে আমাকে গড়ে তুলেছে একজন পরিপক্ক মানুষ হিসেবে। সেই স্মৃতি আজও আমাকে অনুপ্রাণিত করে জীবনের নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে। আমার ছোটবেলার শিক্ষা এবং সাফল্যের গল্প শুধু আমার ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, বরং সেই সময়কার সরকারের সরকারি কোয়ার্টার জীবনের একটা অংশ, যেখানে বন্ধুত্ব, পরিবার, এবং শিক্ষা মিলেমিশে আমাকে জীবনের পথে পথপ্রদর্শক করেছে। আজকের দিনে আমি সেই ছোটবেলার গর্বকে মনে রেখে আরও বড় স্বপ্ন দেখতে পারি।

কেমন লেগেছে আপনাদের সবার কাছে আজ আমার শৈশবে ফেলে আসা সুন্দর কিছু স্মৃতি নিয়ে পোস্টটি। আশা করছি আপনাদের সবার কাছে আমার পোস্টটি পড়েও অনেক ভালো লেগেছে সবাই ভালো ও সুস্থ থাকবেন সে পর্যন্ত আগামীতে আবার নতুন ব্লগ নিয়ে আপনাদের মাঝে চলে আসবো ইনশাল্লাহ আল্লাহাফেজ।

আমার পরিচিতি

আমি মাহফুজা আক্তার নীলা। আমার ইউজার নাম @mahfuzanila। আমি একজন বাংলাদেশী ইউজার। আমি স্টিমিট প্লাটফর্মে যোগদান করি ২০২২ সালের মার্চ মাসে। আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিতে যোগদান করে আমি অনেক বিষয় শিখেছি। আগামীতে আরও ভালো কিছু শেখার ইচ্ছে আছে। আমি পছন্দ করি ভ্রমন করতে, ছবি আঁকতে, বিভিন্ন ধরনের মজার মাজার গল্পের বই পড়তে, ফটোগ্রাফি করতে, ডাই প্রজেক্ট বানাতে ও আর্ট করতে। এছাড়াও আমি বেশী পছন্দ করি মজার রেসিপি করতে। মন খারাপ থাকলে গান শুননি। তবে সব কিছুর পাশাপাশি আমি ঘুমাতে কিন্তু একটু বেশীই পছন্দ করি।

❤️ধন্যবাদ সকলকে।❤️

image.png

Sort:  

Thank you for sharing on steem! I'm witness fuli, and I've given you a free upvote. If you'd like to support me, please consider voting at https://steemitwallet.com/~witnesses 🌟