জেনারেল রাইটিং- বিশ্বাসের পরিণতি: ক্ষতিই যার একমাত্র উপহার
আসসালামু আলাইকুম
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। আশা করি সবার দিনটা ভাল কেটেছে। আজকে আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আজ আমি একটি জেনারেল রাইটিং নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি।আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার জেনারেল রাইটিংটি দেখে আসি যে কি বিষয় নিয়ে লেখলাম। হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আমার জেনারেল রাইটিং এর বিষয় হলো "রূপ বদলের মুখোশ: স্বার্থের দাস মানুষ ।"

বিশ্বাস — একটি শব্দ, যার মধ্যে লুকিয়ে থাকে সম্পর্কের শিকড়, অনুভবের গভীরতা, আর মানবিকতার সৌন্দর্য। কিন্তু বর্তমান সমাজে দাঁড়িয়ে যখন আমরা জীবনকে একটু গভীরভাবে দেখি, তখন অনেকের মুখে উঠে আসে একটি কঠিন সত্য — “মানুষকে বিশ্বাস করলে নিজের ক্ষতি ছাড়া আর কিছুই হয় না।”
এই কথাটি শুনতে কঠিন, তিক্ত, আর কিছুটা আত্মকেন্দ্রিক মনে হলেও বাস্তব জীবনের বহু ঘটনা যেন এরই প্রমাণ। ছোটবেলা থেকেই আমরা শিখি — মায়ের উপর বিশ্বাস করো, বন্ধুর উপর ভরসা রাখো, সম্পর্কগুলোকে বিশ্বাসের ভিত্তিতে গড়ে তোলো। তখন আমাদের মন ছিল নিষ্পাপ, চাওয়া-পাওয়া সীমিত, এবং বিশ্বাস ছিল নিঃস্বার্থ। কিন্তু ধীরে ধীরে যখন বড় হতে থাকি, সমাজের নানা চেহারা দেখি, তখন বুঝি — সবাইকে বিশ্বাস করা যায় না। বিশ্বাস করে অনেকেই হারিয়েছে টাকা, সম্পর্ক, সম্মান, এমনকি জীবনও। বন্ধুত্ব হলো সেই সম্পর্ক, যেখানে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজের কষ্ট, দুর্বলতা, আর গোপন কথা ভাগ করে নেয়। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় অনেকেই উপলব্ধি করে, সেই বিশ্বাসই হয়ে দাঁড়ায় সর্বনাশের কারণ। বন্ধুর কাছে বলা গোপন কথা একদিন হয়ে ওঠে অপমানের অস্ত্র। যাকে জীবনের অংশ মনে করা হয়েছিল, সে-ই একদিন পিছনে কথা বলে, সুযোগে বিশ্বাস ভেঙে দেয়। তানিয়া একটি গোপন পারিবারিক সমস্যার কথা তার সবচেয়ে কাছের বন্ধুকে বলেছিল। কয়েকদিন পরই সেটা ছড়িয়ে পড়ে পুরো অফিসে। যন্ত্রণাটা শুধু বিশ্বাসভঙ্গের নয়, বরং সম্মানহানিরও।
অনেকে ভাবেন পরিবারে তো অন্তত বিশ্বাস রাখা যায়। কিন্তু বাস্তবতা কখনো কখনো ভয়ানক। ভাই-বোন,আত্মীয়-স্বজন — কারো মধ্যেই যখন লোভ, হিংসা ঢুকে পড়ে, তখন সম্পর্কের সৌন্দর্য মলিন হয়ে যায়। সম্পত্তির জন্য ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলা, স্বার্থের জন্য মা-বাবার দেখভাল না করা — এইসবই কি বিশ্বাসের অপমান নয়? একজন বৃদ্ধ পিতা তার ছেলেকে বিশ্বাস করে নিজের জমি লিখে দিলেন। ছেলে কিছুদিনের মধ্যে বাবাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিল। এটাই কি আমাদের সমাজে বিরল? ভালোবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠে বিশ্বাসের উপর। কিন্তু আজকালকার যুগে এই বিশ্বাসটাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রেমে দেওয়া প্রতিশ্রুতি, একসাথে থাকার স্বপ্ন — সবই শেষ হয়ে যায় হঠাৎই, যখন একপক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় বেরিয়ে যাওয়ার। তখন যার উপর বিশ্বাস করা হয়েছিল, সে-ই হয়ে যায় সবচেয়ে বড় কষ্টের কারণ। কর্মক্ষেত্রে সহকর্মী, সিনিয়র, বা জুনিয়রের প্রতি বিশ্বাস রাখা অনেক সময় জরুরি। কিন্তু সেই বিশ্বাসই যখন কেউ ব্যবহার করে নিজের উন্নতির জন্য, তখন ক্ষতির সীমা থাকে না। আপনার আইডিয়া কেড়ে নিয়ে কেউ প্রমোশন পেয়ে যায়, আপনার ভালো কাজে কেউ দোষ খুঁজে নিয়ে বসের কাছে বদনাম করে — এই অভিজ্ঞতা অনেকেই পেয়েছেন। যখন একের পর এক বিশ্বাসভঙ্গের অভিজ্ঞতা জমতে থাকে, তখন মানুষ হয়ে পড়ে সন্দেহপ্রবণ। সবাইকে নিয়ে সন্দেহ, কেউ কিছু ভালো করলেই মনে হয় "এর পিছনে নিশ্চয়ই স্বার্থ আছে!" এই সন্দেহ আবার সম্পর্ককে করে তোলে দুর্বল, মনকে করে তোলে ক্লান্ত।
কিন্তু কষ্টগুলো এমনভাবে জমা হয় যে মনে হয়, "বিশ্বাস না করলেই ভালো ছিল!" অনেকেই একটা বা একাধিক বিশ্বাসভঙ্গের পর পুরো জীবনকে নেতিবাচকভাবে দেখতে শুরু করেন। কিন্তু এটা ঠিক নয়। যেমন সব ফল খারাপ হয় না, তেমনি সব মানুষও বিশ্বাসঘাতক নয়। কিছু মানুষ থাকে, যারা চুপচাপ থেকে যায়, কিন্তু ঠিক সময়ে হাতে হাত রাখে। তাদের জন্যই জীবনে বিশ্বাস টিকে থাকে।বিশ্বাস করা এক ধরনের সাহস। কিন্তু সে সাহস যদি বারবার কষ্টে পরিণত হয়, তাহলে মানুষ এক সময় আবেগহীন হয়ে পড়ে। তবে বিশ্বাসহীন এক সমাজ কখনোই ভালোবাসার, বন্ধনের, মানবিকতার সমাজ হতে পারে না। তাই সঠিক মানুষকে, সঠিক সময় দেখে বিশ্বাস করুন। নিজের হৃদয়কে সুরক্ষিত রাখুন, কিন্তু সম্পর্ককেও মরুভূমি বানিয়ে ফেলবেন না।
