জেনারেল রাইটিং- রূপ বদলের মুখোশ: স্বার্থের দাস মানুষ
আসসালামু আলাইকুম
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন আমার প্রিয় সহযাত্রী ভাই বোনেরা? আশা করি সবাই আল্লাহর রহমতে অনেক ভালো আছেন। আমিও আপনাদের সবার দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি। আশা করি সবার দিনটা ভাল কেটেছে। আজকে আপনাদের সবার মাঝে আমার আরও একটি পোস্ট নিয়ে হাজির হলাম। আজ আমি একটি জেনারেল রাইটিং নিয়ে আপনাদের সবার মাঝে হাজির হয়েছি।আশা করি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে। তাহলে চলুন আজ আমার জেনারেল রাইটিংটি দেখে আসি যে কি বিষয় নিয়ে লেখলাম। হ্যাঁ বন্ধুরা আজ আমার জেনারেল রাইটিং এর বিষয় হলো "রূপ বদলের মুখোশ: স্বার্থের দাস মানুষ ।"

মানুষ সমাজবদ্ধ প্রাণী। সে সহানুভূতির কথা বলে, সম্পর্কের যত্ন করে, আত্মার বন্ধনে আবদ্ধ থাকে — এমনটিই আমরা শুনে এসেছি ছোটবেলা থেকে। কিন্তু বাস্তব জীবনে যতই অভিজ্ঞতা বাড়ে, ততই যেন চোখ খুলে যায় এক নির্মম সত্যের দিকে: মানুষ নিজের স্বার্থ রক্ষার্থে কত সহজেই যে রূপ বদলে ফেলে, তা ভাবলে আতঙ্কিত হতে হয়।
প্রাণীজগতে টিকে থাকার জন্য আত্মরক্ষা ও স্বার্থসিদ্ধির প্রবণতা স্বাভাবিক। কিন্তু মানুষ যেহেতু যুক্তিবোধ, বিবেক ও নৈতিকতার দাবিদার, তাই তার আচরণে একটি মানবিক মাত্রা থাকা উচিত। কিন্তু দেখা যায়, এই মানবিক মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকে এক স্বার্থপর, হিসেবি মন। যখন নিজের লাভ-ক্ষতির প্রশ্ন আসে, তখন সেই মুখোশ খুলে পড়ে, বেরিয়ে আসে প্রকৃত রূপ। শৈশবে অনেকেই বন্ধু বানায় নিঃস্বার্থ ভালোবাসা থেকে। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অনেক সম্পর্কেই ঢুকে পড়ে স্বার্থ। এমন অনেক ঘটনা দেখা যায়, যেখানে এক বন্ধু তখনই যোগাযোগ রাখে, যখন তার কিছু দরকার হয়। আপনার কষ্টের সময়ে পাশে থাকে না, অথচ নিজের সমস্যায় আপনাকে প্রথমে মনে করে। সম্পর্কের এই স্বার্থনির্ভরতা প্রমাণ করে, মানুষ কতটা রূপ পাল্টাতে পারে নিজের প্রয়োজনে।
পরিবার, যা ভালোবাসা আর নির্ভরতার আরেক নাম — সেখানেও স্বার্থবোধ ঢুকে পড়ে মাঝে মাঝে। সম্পত্তি ভাগাভাগি, দায়িত্বের বোঝা, কিংবা পছন্দ-অপছন্দের ভিন্নতায় অনেকেই কাছের মানুষকেও পর করে ফেলে। যেসব ভাই-বোন একসঙ্গে বড় হয়েছে, এক টেবিলে খেয়েছে, তারা কখনো কখনো সম্পত্তির লোভে একে অপরের বিরুদ্ধে হয়ে দাঁড়ায়। আত্মীয়তার রূপ বদল দেখে তখন মনে হয়, সম্পর্কগুলো যেন আসলে একটা চুক্তি — যতক্ষণ পর্যন্ত তা স্বার্থে লাগে, ততক্ষণই তা টিকে থাকে।
প্রেমের সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি প্রত্যাশা থাকে নিঃস্বার্থতার। কিন্তু বাস্তবতা অনেক সময় ভিন্ন। অনেকেই ভালোবাসে, কিন্তু সেই ভালোবাসায় লুকিয়ে থাকে লাভ-লোকসানের হিসেব। কেউ চায় নিরাপত্তা, কেউ অর্থ, কেউ সামাজিক অবস্থান। যখন এই চাওয়া পূরণ হয় না, তখন ভালোবাসার মুখোশ খুলে পড়ে, দেখা যায় একেবারে ভিন্ন একজন মানুষ। অনেক সম্পর্ক টিকে থাকে শুধু তখনই, যখন উভয়ের স্বার্থ পূরণ হয়।
অফিস বা কর্মক্ষেত্রে মানুষ সবচেয়ে বেশি রূপ পাল্টায়। সহকর্মীরা একে অপরের সঙ্গে হাসি-তামাশা করে, কিন্তু প্রমোশনের সময় সেই মানুষটাই হয়ে ওঠে প্রতিদ্বন্দ্বী। ঊর্ধ্বতনের মন জোগাতে কেউ কারো পিছনে নালিশ করে, কারো অর্জন হেয় করার চেষ্টা করে। এমনকি অনেকেই কাজ না জেনেও “ব্র্যান্ডিং” করে নিজেকে বড় করে তোলে। এই মুখোশের পেছনে লুকিয়ে থাকে এক আত্মকেন্দ্রিক স্বার্থপরতা।
রাজনীতি হলো সেই ক্ষেত্র, যেখানে রূপ পরিবর্তন যেন এক শিল্প। ক্ষমতার পালাবদলের সঙ্গে সঙ্গে আদর্শ পাল্টে যায়, ভাষা বদলে যায়, সম্পর্কের রং পাল্টায়। যিনি একদিন ঘোরতর বিরোধিতা করেছেন, পরদিনই দেখা যায় তিনি একমনে প্রশংসা করছেন। সাধারণ মানুষ বিভ্রান্ত হয়, হতাশ হয় — কিন্তু রাজনীতিকদের কাছে এসব যেন স্বাভাবিক। কারণ তাদের কাছে সবচেয়ে বড় বিষয় হলো নিজের অবস্থান, নিজের লাভ।
বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমও মানুষকে স্বার্থান্বেষী করে তুলেছে। এখানে মানুষ নিজেকে দেখায় যেমন সে চায় — বাস্তব নয়, বরং এক সাজানো রূপ। কারো বিপদে একটি "সাধারণ পোস্ট" করেও সে সহানুভূতির বাহবা চায়। আবার অন্যের সফলতায় “মুখে হাসি” দিলেও মনে জ্বলে ঈর্ষার আগুন। লাইক, কমেন্ট, ফলোয়ার — এগুলোই এখন অনেকের আত্মসম্মান। তাই নিজের আসল রূপ ভুলে গিয়ে তৈরি হয় এক "অনলাইন মুখোশ"।
এই প্রশ্নটি স্বাভাবিকভাবেই উঠে আসে। মানুষ যখন নিজের স্বার্থে এতটাই রূপ পরিবর্তন করতে পারে, তখন কি মানবিকতা কেবল বইয়ের পাতায় রয়ে যাবে? না, তা নয়। পৃথিবীতে এখনও অনেক মানুষ আছে, যারা নিঃস্বার্থভাবে কাজ করে, অন্যের উপকারে নিজেকে বিলিয়ে দেয়। কিন্তু সংখ্যা হয়তো কমে আসছে। কারণ আজকের সমাজ আমাদের শিখিয়েছে, "নিজেকে আগে দেখতে হয়"।
মানুষ যখন নিজের স্বার্থে অতিরিক্ত রূপ বদলাতে শুরু করে, তখন সম্পর্কগুলো হয়ে পড়ে অস্থায়ী। বিশ্বাস হারায়, ভরসা কমে যায়। চারপাশে তখন তৈরি হয় এক "নকল ভালোবাসা"র জগৎ, যেখানে কেউ কারো পাশে সত্যিকার অর্থে থাকে না। সেই একাকিত্বে মানুষ হয়ে পড়ে বিষণ্ণ, হতাশ, এবং মাঝে মাঝে নির্দয়ও।
মানুষ যখন নিজের স্বার্থের কারণে রূপ পরিবর্তন করে, তখন তা হয়তো মুহূর্তের সুবিধা এনে দেয় — কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে তা সম্পর্কের ভিত্তি নষ্ট করে দেয়, সমাজে বিশ্বাসের সংকট তৈরি করে। তাই দরকার একটুখানি সৎ চর্চা, একটু মানবিকতা, আর আত্মসমালোচনার সাহস। বিশ্বটা তখনই বদলাবে, যখন আমরা নিজের মুখোশ নিজেই খুলে ফেলব — এবং অন্যকেও সে সাহস দেখাতে শেখাব।
