লাইফ স্টাইল পোস্ট -“শুক্রবারের আয়োজন যখন বাহিরে খাওয়া” || Written by @maksudakawsar ||
আসসালামু আলাইকুম
কেমন আছেন সবাই ? আশা করি আপনারা সবাই বেশ ভালো আছেন। আমিও ভালো আছি। বেশ ব্যস্ততায় যাচেছ সময়। সেই সাথে তো রয়েছে প্রচুর মানসিক চাপ। সব মিলিয়ে বেশ হিমশিম খেতেই হরো চ্ছে। তবুও এরই মধ্যে চলে যাচ্ছে সময় আর দিন। আর সেই সাথে জীবন থেকে চলে গেল আরও একটি ঈদ। বুঝতেই পারলাম না এবারের ঈদ কখন আসলো আর কখন গেল। যাই হোক আমিও চলে আসলাম আজ আবার আপনাদের মাঝে নতুন করে নতুন একটি পোস্ট নিয়ে। আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।

Image created- maksudakawsar, with AI Tools


ভাড়া বাসায় থাকার অভিজ্ঞতা অনেক সময় সুখকর হয় না। জীবনের নানা সমস্যার সাথে লড়াই করতে করতে কখনও কখনও বাসার সমস্যাগুলো আরও বড় হয়ে দাঁড়ায়। আমি যে বাসায় ভাড়া এসেছি সেখানে একটি বড় সমস্যা হলো গ্যাসের অভাব। রান্নার সময় হঠাৎ গ্যাস চলে যায় বা গ্যাসের চাপ থাকে না। এর ফলে প্রতিদিনই যেন কষ্টের জীবন কাটাতে হয়। রান্না ঠিক মতো করা যায় না, খাবার সময়মতো তৈরি হয় না আর সব মিলিয়ে জীবনকে মনে হয় এক যন্ত্রণার চক্র। তবে মানুষ যেমন সব কিছুর মাঝেই একটু আনন্দ খুঁজে নেয় আমরাও তেমন চেষ্টা করি।

আমার জীবনে শুক্রবার একটি বিশেষ দিন হয়ে উঠেছে। প্রতি শুক্রবারেই যেন আলাদা এক অনুভূতি তৈরি হয়। সারাদিনের ক্লান্তি ভুলে আমরা চেষ্টা করি কিছু ভালো সময় কাটাতে। আর সেই সুযোগে খাওয়াদাওয়া একটু জমকালো হয়। সাধারণ দিনগুলোতে গ্যাস সমস্যার কারণে বাড়িতে ঠিক মতো রান্না হয় না তাই শুক্রবারে বাইরে গিয়ে খাওয়া যেন একধরনের আনন্দের উৎসব হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমি কখনোই একা একা খেতে যাই না। সবসময় আমার বোনদের সাথে নিয়ে বাইরে যাই। পরিবারের সাথে বসে খাওয়ার মধ্যে যে আনন্দ আছে সেটা একা খেয়ে কখনো পাওয়া যায় না। তাই প্রতি শুক্রবার আমরা ঠিক করি কোথাও না কোথাও খেতে যাবো। একসাথে বসে গল্প করতে করতে খাওয়ার মজা অনেক গুণ বেড়ে যায়।

গত শুক্রবারের কথাই ধরা যাক। সেদিন আমরা খিলগাঁও এর মুক্তা বিরানীতে গিয়েছিলাম। জায়গাটি বেশ পরিচিত এবং খাওয়ার মানও ভালো। তবে এখানে খাওয়ার একটি আলাদা নিয়ম আছে। যে কেউ চাইলে সোজা গিয়ে বসতে পারবে না। প্রথমে লাইনে দাঁড়াতে হয়। একটি সিট খালি হলে তবেই বসার সুযোগ মেলে। কখনও কখনও অনেকক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু মানুষ তবুও ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করে কারণ খাবারের স্বাদ সত্যিই অসাধারণ। সেদিন আমরা মোরগ পোলাও খেয়েছিলাম। খাবারের গন্ধে মন ভরে গিয়েছিল। ভাতের সাথে মশলার মিশ্রণ আর মুরগির টুকরোগুলো এমনভাবে রান্না করা ছিল যে প্রতিটি কণা মুখে দেওয়ার পরই নতুন স্বাদের অনুভূতি দিত। স্বাদের এই জাদুর কারণেই মুক্তা বিরানীর জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়ে চলেছে। শুধু আমাদের মতো পরিবার নয় খিলগাঁও এবং আশেপাশের অনেক মানুষই এখানে আসে তাদের ক্ষুধা মেটাতে আর স্বাদে তৃপ্তি পেতে।

যদিও এখানকার খাবারের দাম একটু বেশি তবুও স্বাদে মন ভরে যায় বলে মানুষ দামের কথা ভুলে যায়। অনেকে পরিবার নিয়ে আসে আবার কেউ বন্ধুবান্ধব নিয়ে আসে। সারাক্ষণ ভিড় লেগেই থাকে। বসার জায়গা পাওয়া যায় না তবুও সবাই অপেক্ষা করে। মানুষের এই ভালোবাসাই প্রমাণ করে যে খাবারের মান কতটা উন্নত। সেদিন আমরা শুধু খাওয়া নয় বরং অনেক আনন্দও পেয়েছিলাম। খাবারের সাথে হাসি আনন্দ আর গল্প মিলেমিশে এক অন্য রকম পরিবেশ তৈরি করেছিল। আমার বোনদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে সময় কেটে যাচ্ছিল। কখন যে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কেটে গেল বুঝতেই পারিনি। বাইরে খাওয়ার আরেকটি বড় সুবিধা হলো রান্না করার ঝামেলা নেই। গ্যাসের সমস্যা নিয়ে ভাবতে হয় না, শুধু খেতে হয় আর উপভোগ করতে হয়।

এই ভিন্ন স্বাদের অভিজ্ঞতা প্রতি শুক্রবার আমাদের জীবনে একধরনের আনন্দ নিয়ে আসে। পুরো সপ্তাহের ক্লান্তি আর একঘেয়েমি যেন মুছে যায়। আমরা সবাই আবার নতুন করে উদ্যম পাই। জীবনের কষ্ট আর সমস্যা থাকলেও এই ছোট ছোট সুখের মুহূর্তগুলো আমাদের টিকে থাকার শক্তি দেয়। খিলগাঁও এর মুক্তা বিরানী শুধু একটি খাবারের জায়গা নয় বরং মানুষের কাছে এটি আনন্দ ভাগাভাগির জায়গা। এখানে এসে শুধু ক্ষুধা মেটে না, মনও ভরে যায়। মানুষের মুখে হাসি ফোটে। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে বয়স্ক সবাই খাবার খেতে এসে খুশি হয়। প্রত্যেকের চোখে মুখে আনন্দের ঝিলিক দেখা যায়। খাবারের স্বাদ মানুষকে এক অদ্ভুতভাবে একত্রিত করে। আমরা নিজেরাও সেটা উপলব্ধি করেছি। মুক্তা বিরানীতে গিয়ে মনে হয়েছে খাবারের পাশাপাশি সম্পর্কও আরও গভীর হয়। পরিবারের সাথে কাটানো এই মুহূর্তগুলো আসলে অমূল্য। প্রতিটি হাসি, প্রতিটি গল্প, প্রতিটি স্বাদের কণা হয়ে ওঠে স্মৃতির অংশ। যেদিন আমরা মোরগ পোলাও খেয়েছিলাম সেদিনের স্মৃতি আজও আমার মনে গেঁথে আছে। খাবার পরিবেশন ছিল চমৎকার, গরম ধোঁয়া ওঠা প্লেট টেবিলে আসতেই মন ভরে গিয়েছিল। প্রতিটি লোকই খুশি মনে খাচ্ছিল। পরিবেশের ভিড় আর হাসি কোলাহল সব মিলিয়ে যেন এক উৎসবের পরিবেশ তৈরি করেছিল।

বস্তুত জীবনের কষ্টের মাঝে এই ছোট ছোট আনন্দগুলোই আসল সম্পদ। গ্যাসের সমস্যার কারণে আমার প্রতিদিনের জীবন হয়তো কষ্টময় তবে শুক্রবারের এই বাইরে খাওয়া আমাকে নতুন শক্তি দেয়। মুক্তা বিরানীতে বসে খাওয়ার অভিজ্ঞতা আমার কাছে শুধু খাবারের নয় বরং জীবনের আনন্দের অংশ।আমাদের প্রত্যেকের জীবনেই নানা সমস্যা থাকে। কিন্তু সমস্যা ভেদ করে যখন একটু আনন্দ পাওয়া যায় তখন সেটি হয়ে ওঠে বিশেষ। আমার কাছে শুক্রবার মানেই মুক্তি, মানেই ভিন্ন স্বাদ, মানেই পরিবারকে নিয়ে বাইরে খাওয়া।

জীবনকে সুন্দর করতে বড় কিছু লাগে না। শুধু দরকার কাছের মানুষের সাথে কিছু সময় কাটানো, কিছু হাসি ভাগ করে নেওয়া আর কিছু ভিন্ন স্বাদের অভিজ্ঞতা তৈরি করা। সেই দিক থেকে খিলগাঁও এর মুক্তা বিরানীতে কাটানো প্রতিটি শুক্রবার আমার জীবনে নতুন রঙ যোগ করেছে। যতদিন গ্যাস সমস্যার এই দুর্বিষহ জীবন চলছে ততদিন হয়তো প্রতি শুক্রবারের অপেক্ষাই আমার একমাত্র আশার আলো হয়ে থাকবে। খাবারের স্বাদ, পরিবারের সাথে সময় আর আনন্দের মুহূর্তগুলোই আমাকে শক্তি দেয় সামনে এগিয়ে যেতে।
পোস্ট বিবরণ
শ্রেণী | লাইফস্টাইল |
---|---|
ক্যামেরা | Vivo y18 |
পোস্ট তৈরি | @maksudakawsar |
লোকেশন | বাংলাদেশ |
আমার পরিচিতি
আমি মাকসুদা আক্তার। স্টিমিট প্লাটফর্মে আমি @maksudakawsar হিসাবে পরিচিত। ঢাকা হতে আমি আমার বাংলা ব্লগের সাথে যুক্ত আছি। আমি একজন গৃহিনী এবং চাকরিজীবী। তারপরও আমি ভালোবাসি আমার মাতৃভাষা বাংলায় নিজের মনের কথা গুলো আমার বাংলা ব্লগের প্লাটফর্মে শেয়ার করতে। আমি ভালোবাসি গান শুনতে এবং গাইতে। আমি অবসর সময়ে ভ্রমন করতে এবং সেই সাথে সুন্দর কিছু ফটোগ্রাফি নিজের ক্যামেরায় বন্দী করতে ও ভালোবাসি। মাঝে মাঝে নিজের মনের আবেগ দিয়ে দু চার লাইন কবিতা লিখতে কিন্তু আমার বেশ ভালোই লাগে। সর্বোপরি আমি ভালোবাসি আমার প্রাণপ্রিয় মাকে।
.gif)
VOTE @bangla.witness as witness
OR
SET @rme as your proxy
